কলকাতা পর্যটন
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

কলকাতা পর্যটন

Kolkata Travel in Bengali

কলকাতা পর্যটন

কলকাতা ভ্রমণ করতে গিয়ে যে কেউ একটি ঔপনিবেশিক অতীতের অদ্ভুত মিশ্রণ, সমসাময়িক সাংস্কৃতিক স্পন্দন ও রাজনৈতিক অভিব্যক্তি সহ সমৃদ্ধ একটি শহরের সম্মুখীন হবেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, শিবের স্ত্রীর দেহচ্ছেদ যখন হয়েছিল, তাঁর একটি আঙুল যে স্থানে পড়েছিল তা এখন কালীঘাটের কালীমন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দিরটির নাম কলিকাতার নামানুসারে দেওয়া হয়েছে, ব্রিটিশদের দেওয়া নাম ক্যালকাটা ছিল কলিকাতারই ইংরাজি রূপান্তর।

দেশের পূর্বাংশ পরিদর্শনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ হল পর্যটকদের প্রথম গন্তব্য। পাশ্চাত্য শিল্পের মিশ্রন, প্রাচ্য স্থাপত্য এবং শিল্পশৈলীতে ভরপুর কলকাতায় যে কেউ বহু আকর্ষণীয় পর্যটন স্হল পাবেন। ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে নির্মিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতের এক অন্যতম সুন্দর মিনার, যা শাস্ত্রীয় ইউরোপীয় স্থাপত্য ও মুঘল বিষয়বস্তুর অনন্য সমন্বয়কে প্রতিনিধিত্ব করে। কলকাতার অপর একটি নিদর্শন হাওড়া সেতু। এই ঝুলন্ত সেতু এক প্রকৌশলমূলক বিস্ময়। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেতু এবং যেখানে প্রায় ২ কোটি মানুষের দৈনিক পারাপার হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্ববিদ্যালয় নগরী শান্তিনিকেতন হল সবার জন্যই একটি অবশ্যক পরিদর্শনমূলক স্থান। হিন্দু সৌর পঞ্জিকার অন্য উৎসবের পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এবং এইসময় পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ আনন্দদায়ক। কলকাতা থেকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যে কেউ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ মোহনা ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সর্ববৃহৎ আবাস্থল সুন্দরবন যেতে পারেন।

কলকাতা পৌঁছনোর উপায়

কলকাতা (পূর্ব নাম ক্যালকাটা) হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। ২০১১ এর হিসাবে এই শহর ভারতের তৃতীয়তম সর্বাধিক জনবহুল মহানগরী। সড়ক, বিমান ও রেলপথে সহজেই কলকাতা শহরে পৌঁছনো যায়। ৩০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং স্পন্দনশীল সাংস্কৃতিক পটভূমি সহ মুগ্ধকারী শহর হল কলকাতা।

বিমানপথ দ্বারা :
মূলত কলকাতা বিমানবন্দর, সুভাষচন্দ্র বসু বিমান বন্দর নামের আগে, দমদম বিমান বন্দর নামে পরিচিত ছিল। এটি সিটি সেন্টার থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

  • কলকাতা যাওয়ার বিমান –

এখানকার বেশীরভাগ অন্তর্দেশীয় বিমান কলকাতা থেকে ভারতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর যথা- দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, পাটনা, বারাণসী ও লখনউ-এ সরাসরি পরিষেবা আছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে যাওয়ার বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিমান কলকাতায় পাওয়া যায়।

রেলপথ দ্বারা :
ভারতীয় রেলপথের একটি বিস্তৃত সংযোগব্যবস্হা দ্বারা কলকাতা ভারতের বাকি অংশের সাথে সু-সংযুক্ত। এই শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন হল –হাওড়া ও শিয়ালদহ।

  • কলকাতা যাওয়ার রেল –

দেশের অন্যান্য অংশ থেকে কলকাতা আসার ট্রেন সহজলভ্য। অতি দ্রুত ট্রেন যেমন রাজধানী এক্সপ্রেস এবং শতাব্দী এক্সপ্রেস এই শহরকে ভারতের অন্যান্য রাজ্য ও প্রধান শহরগুলির সাথে সংযুক্ত করে। কলকাতার চক্ররেল সমগ্র শহরকে ঘিরে আছে এবং বর্তমানে তার গমনপথ বাড়ানো হচ্ছে।

সড়কপথ দ্বারা :
কলকাতা ভারতের বেশীরভাগ শহরগুলির সাথেই সড়কপথ দ্বারা সংযুক্ত। ২-নং ও ৬-নং জাতীয় সড়ক ভারতের অন্যান্য শহর ও রাজ্যগুলির সাথে এই শহরের সংযোগ স্থাপন করে। কলকাতায় সরকারি ও বেসরকারি বাসের একটি বিস্তৃত সংযোগ ব্যবস্হা রয়েছে।

কলকাতা রাজ্য পরিবহণ সংস্থা (সি.এস.টি.সি), কলকাতা ট্রাম পরিষেবা কোম্পানি (সি.টি.সি), পশ্চিমবঙ্গ পৃষ্ঠ পরিবহণ সংস্থা (ডাব্লু.বি.এস.টি.সি) প্রত্যহ বহু বাস পরিষেবা প্রদান করে থাকে। শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ড এই শহরের প্রধান বাস স্ট্যান্ড।

কলকাতা পর্যন্ত দুরত্ব:

  • জামশেদপুর থেকে – ২৯১ কিলোমিটার
  • রাঁচি থেকে – ৩৬৯ কিলোমিটার
  • কটক থেকে – ৪৩০ কিলোমিটার
  • ভুবনেশ্বর থেকে – ৫৫২ কিলোমিটার
  • গয়া থেকে – ৪৭৭ কিলোমিটার
  • পাটনা থেকে – ৫৮১ কিলোমিটার

কলকাতায় পরিদর্শনমূলক স্থান


কলকাতায় কেনাকাটা

কলকাতাকে তাদের জন্য ‘কেনাকাটার স্বর্গোদ্যান’ বলে বর্ণনা করা যেতে পারে, যাদের কাছে অর্থের মূল্য আছে। এই শহরজুড়ে বহু বাজার রয়েছে। ‘শসা’ থেকে ‘পণ্যসম্ভার’,’জুতার ফিতে’ থেকে ‘শাড়ি’ সবকিছুই এই শতাব্দী প্রাচীন বাজারের একই ছাদের নীচে পাওয়া যায়।

লিন্ডসে স্ট্রীটের নিউ মার্কেট কলকাতার এক প্রাচীনতম এবং বিখ্যাত বাজার। প্রতি বছর ‘দুর্গা পূজার’ সময় এখানকার বাজারগুলি এক উৎসবে মেতে ওঠে, কারন এই রাজ্য তথা প্রতিবেশী রাজ্যের বহু মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসে। কলকাতার ফ্যাশন স্ট্রীট বলে পরিচিত পার্ক স্ট্রীট এছাড়াও আর্টেরিয়াল রাস্তা, জে.এল. নেহেরু রোড, শেক্সপীয়ার সরণি, ক্যামাক স্ট্রীট ও রাসেল স্ট্রীট হল এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থান। বিভিন্ন কেনাকাটার স্থান, খাবার দোকান, মিউজিক স্টোর, বইয়ের দোকান এবং বিভিন্ন ধরনের রন্ধন প্রণালী সমৃদ্ধ রেস্তোরাঁ এখানে গড়ে উঠেছে। কলকাতার উপগ্রহনগরী সল্টলেকের চার্ণক সিটি একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তিনতলা শপিং কমপ্লেক্স। চৌরঙ্গী রোড ফুটপাত বিক্রেতাদের একটি আশ্চর্য বৈচিত্র, যেখানে জল পিস্তল থেকে নাচের পুতুল সবই পাওয়া যায়। দক্ষিনাপন শপিং কমপ্লেক্স, কলেজ পড়ুয়াদের জন্য একটি প্রিয় স্থান যেখানে তাদের বাজেট অনুযায়ী জামা-কাপড় পাওয়া যায়।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৭- ই মার্চ, ২০১৫