পশ্চিম বঙ্গ
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

পশ্চিমবঙ্গ পরিভ্রমণ মাধ্যম

Getting Around of West Bengal in Bengali

পশ্চিমবঙ্গ পরিভ্রমণ মাধ্যম

পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষের পরিবহনের অপরিহার্য মাধ্যম হল বাস। পরিবহনের এই মাধ্যমটি রেল বা কোনও নির্দিষ্ট ট্র্যাকের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাজ্যের যে কোনও দূরবর্তী স্থানেও উপপল্ধ রয়েছে। বাসগুলি শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই চলাচল করে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের এমনও কিছু প্রত্যন্ত গ্রাম রয়েছে যেখানে সারাদিনে কেবলমাত্র একটিমাত্র বাস দ্বারা পরিষেবা প্রদান করা হয়। রাজ্য-চালিত এবং বেসরকারি বাসগুলি লাখ-লাখ মানুষকে দৈনন্দিন পরিষেবা প্রদান করে চলেছে।

রাজ্য নিগম, যেমন কলকাতা রাজ্য পরিবহন নিগম, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন সংস্থা, দক্ষিণবঙ্গ রাজ্য পরিবহন নিগম এবং উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহন নিগম বাস পরিষেবা পরিচালনা করে। যদিও বেশীরভাগ বাসই বেসরকারি মালিকানাধীনে চলে। পাবলিক বাসগুলি যদিও বৃহত্তর জায়গা সহ আরামপ্রদ তবে, বেসরকারি বাসগুলির তুলনায় খুবই বেশি সময়ের অন্তরে চলে। সেগুলি বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা আছে; যেমন – লিমিটেড স্টপ্ বাস (সীমিত জায়গায় দাঁড়ানো বাস), মর্নিং – সানডাউন্ বাস (সকাল – সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলমান বাস), স্পেশ্যালস, এক্সপ্রেস সার্ভিসেস ইত্যাদি। বেসরকারিভাবে চালিত বাসগুলির মধ্যেও আবার বিভিন্ন ধরন রয়েছে; যেমন – মিনিবাস এবং চাটার্ড ও ছোট বাসও হতে পারে।

রাজ্যের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য হল প্রায় ৪৪৮১ কিলোমিটার। রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় ভারতীয় রেলপথের দুটি সদরদপ্তর রয়েছে। রেলপথের দুটি বিভাগ হল– ইস্টার্ন রেলওয়ে (উত্তর রেলপথ) এবং সাউথ-ইস্টার্ন রেলওয়ে (দক্ষিণ – পূর্ব রেলপথ)। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল, রাজ্যের উত্তর প্রান্তে পরিবহন পরিষেবা প্রদান করে এবং দার্জিলিং-হিমালয় রেলপথ হল এন.এফ.আর এবং ইউনেস্কো (ইউ.এন.ই.এস.সি.ও)দ্বারা ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যগত স্থানের একটি অংশ।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দুটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর রয়েছে। প্রথমটি হল কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অন্য আরেকটি হল শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর। বাগডোগরা বিমানবন্দর প্রাথমিক রূপে অন্তর্দেশীয় পরিষেবা পরিবেশন করত কিন্তু সাম্প্রতিককালে এটি পারো, ভূটান, ব্যাংকক ও থাইল্যান্ড-এ আন্তর্জাতিক পরিষেবা চালু করেছে। রাজ্যে প্রধান দুটি বন্দর রয়েছে, সেগুলি হল কলকাতা বন্দর এবং হলদিয়া বন্দর।

কলকাতায় ট্রামকে সম্পূর্ণরূপে “কলকাতার অতি নিজস্ব ঐতিহ্য” – রূপে আখ্যায়িত করা হয়। কলকাতার শশব্যস্ততাবহূল শহরে, যান্ত্রিক পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে এই ট্রাম তার চরিত্রগত সু্স্থির গতির মাধ্যমে দূষণমুক্ত, পরিবেশ-বান্ধবরূপে কলকাতায় সস্তায় পরিষেবা প্রদান করে। কলকাতাই ভারতের এমন একমাত্র শহর এবং বিশ্বেরও সেই কয়েকটি শহরের মধ্যে একটি যেখানে এখনও ট্রামের প্রচলন রয়েছে। কলকাতা ট্রাম সেই ১৮৭৩ সাল থেকে চলে আসছে এবং এই শহর ট্রামের সঙ্গে তাদের সেই বিশ্বের প্রাচীন চারুতাকে আজও উপভোগ করে চলেছে। একটি ব্যস্ততাহীন চলন্ত ট্রামের জানলা থেকে দেখলে এই শহরকে অবশ্যই আরোও আবেগপ্রবণ দেখায়।

পশ্চিমবঙ্গ মেট্রো রেল বা পাতাল রেল হল ভূ-গর্ভস্থ রেল সংযোগ এবং কলকাতার ব্যস্তবহূল শহরের কাছাকাছি প্রাপ্য সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়। কলকাতা মেট্রো রেল ১৯৮৪ সাল থেকে চলে আসছে এবং এটি সমগ্র ভারতের সর্বপ্রথম ভূ-গর্ভস্থ মেট্রো রেল। এটি তার দক্ষ কার্যকারীতা, পরিচ্ছন্নতা, আরামপ্রদ স্বাচ্ছন্দ্যতা ও স্বল্প-সময় মানের জন্য সারা বিশ্বের কাছে উচ্চ সম্ভ্রমতার সাথে সাদরে গৃহীত।

পরিবহনের একটি মাধ্যম রিকশা, যা পশ্চিমবঙ্গে সচরাচর সবসময় মানুষের অবলম্বন হিসাবে উপলল্ধ রয়েছে। রিকশা শব্দটি ‘জিঁরিকিশা’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, জাপানীদের কাছে যার আক্ষরিক অর্থ হল মানব-চালিত যানবাহন। ১৯০০ সালে চীনা অভিবাসীদের দ্বারা কলকাতায় এটির প্রবর্তন হয়েছিল এবং তখন থেকেই এটি পরিবহনের জনপ্রিয় মাধ্যম হিসাবে এখানে রয়ে গেছে। ডোমিনিক লেপিয়্যের – এর ‘আনন্দ নগরীর’ রিকশা পশ্চিম বাংলার বাইরের অধিবাসীদের অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু গলি-রাস্তায় নিরাপত্তার জন্য ভারী যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই সমস্ত রাস্তায় পরিবহনের একমাত্র বিকল্প হল এই রিকশা। এগুলি স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত এবং যখন কেউ তার গন্তব্যের খুবই কাছে পৌছতে চায় তখন অনেকেই এটিকে পছন্দ করেন। রিকশা অতি সহজেই যেকোনও সংকীর্ণ গলি ও রাস্তায় ঢুকে পড়ে, তাই সর্বদাই এর চাহিদা রয়েছে।

কলকাতার চক্র রেল, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহরের ধারেপাশে প্রাপ্ত পরিবহনের এক অন্যতম সুবিধাজনক উপায়। পূর্বে, অন্যান্য বড় বড় শহরের ন্যায় কলকাতার কেন্দ্রীয় অংশে কোনও রেল সংযোগ ব্যবস্থা ছিল না। ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার সাথে সাথে শহরে একটি রেল সংযোগ ব্যবস্থার চাহিদাও বাড়তে থাকে। প্রয়োজনীয় সমস্যাপূরণে চক্র রেল কলকাতায় হুগলী নদীর তীর বরাবর চালিত রয়েছে। পূর্ব রেল দ্বারা পরিচালিত এই চক্র রেল এখন সারা শহর জুড়ে চমৎকার সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

ট্রাম

কলকাতায় ট্রামকে সম্পূর্ণরূপে “কলকাতার অতি নিজস্ব ঐতিহ্য” – রূপে আখ্যায়িত করা হয়। কলকাতার শশব্যস্ততাবহূল শহরে, যান্ত্রিক পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে এই ট্রাম তার চরিত্রগত সু্স্থির গতির মাধ্যমে দূষণমুক্ত, পরিবেশ-বান্ধবরূপে কলকাতায় সস্তায় পরিষেবা প্রদান করে। কলকাতাই ভারতের এমন একমাত্র শহর এবং বিশ্বেরও সেই কয়েকটি শহরের মধ্যে একটি যেখানে এখনও ট্রামের প্রচলন রয়েছে। কলকাতা ট্রাম সেই ১৮৭৩ সাল থেকে চলে আসছে এবং এই শহর ট্রামের সঙ্গে তাদের সেই বিশ্বের প্রাচীন চারুতাকে আজও উপভোগ করে চলেছে। একটি ব্যস্ততাহীন চলন্ত ট্রামের জানলা থেকে দেখলে এই শহরকে অবশ্যই আরোও আবেগপ্রবণ দেখায়।
কলকাতায় ট্রাম শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে এবং কার্যত এটি কলকাতার প্রায় সমস্ত কোণে আবৃত রয়েছে।

  • রুট নং – ১ বেলগাছিয়া – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ২ বেলগাছিয়া – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ৩ বেলগাছিয়া – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৪ বেলগাছিয়া – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ৫ শ্যামবাজার – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৬ শ্যামবাজার – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ৭ বাগবাজার – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৮ বাগবাজার – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ৯ শ্যামবাজার – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ১০ শ্যামবাজার – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ১১ বেলগাছিয়া – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ১২ গালিফ স্ট্রীট – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ১৩ গালিফ স্ট্রীট – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ১৪ রাজাবাজার – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ১৫ হাই কোর্ট – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ১৫/১২ রাজাবাজার – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ১৬ বিধাননগর – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ১৭ বিধাননগর – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ১৮ পার্ক সার্কাস – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ২০ পার্ক সার্কাস – হাওড়া স্টেশন্
  • রুট নং – ২২ পার্ক সার্কাস – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ২৪ বালিগঞ্জ স্টেশন – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ২৪/২৯ বালিগঞ্জ – টালিগঞ্জ
  • রুট নং – ২৫ বালিগঞ্জ স্টেশন – বিবাদী বাগ
  • রুট নং – ২৬ বালিগঞ্জ স্টেশন – হাওড়া স্টেশন
  • রুট নং – ২৭ বালিগঞ্জ স্টেশন – বেহালা
  • রুট নং – ২৮ টালিগঞ্জ – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ২৯ টালিগঞ্জ – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৩০ কালিঘাট – হাওড়া স্টেশন
  • রুট নং – ৩১ কালিঘাট – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৩২ টালিগঞ্জ – হাওড়া স্টেশন
  • রুট নং – ৩৫ বেহালা – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৩৬ ক্ষিদিরপুর – এসপ্ল্যানেড
  • রুট নং – ৩৫/৩৬ বেহালা – ক্ষিদিরপুর
  • রুট নং – ৩৭ জোকা – বিবাদী বাগ

বাস

বাস, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষের জন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এক অতি অনিবার্য মাধ্যম। পরিবহনের এই মাধ্যমটি রেল বা কোনও নির্দিষ্ট ট্র্যাকের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এটি এমনকি রাজ্যের যে কোনও দূরবর্তী স্থানেও উপপল্ধ রয়েছে। বাসগুলি শহর ও গ্রাম উভয় স্থানেই চলাচল করে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের এমনও কিছু প্রত্যন্ত গ্রাম রয়েছে যেখানে সারাদিনে কেবলমাত্র একটিমাত্র বাস দ্বারা পরিষেবা প্রদান করা হয়। রাজ্য-চালিত এবং বেসরকারি বাসগুলি লাখ-লাখ মানুষকে দৈনন্দিন পরিষেবা প্রদান করে চলেছে। যদিও বেশীরভাগ বাসই বেসরকারি মালিকানাধীনে চলে। পাবলিক বাসগুলি যদিও বৃহত্তর জায়গার সঙ্গে আরোও বেশি আরামপ্রদ তবে, বেসরকারি বাসগুলির তুলনায় খুবই বেশি সময়ের অন্তরে চলে। সেগুলি বিভিন্ন ভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা আছে; যেমন – লিমিটেড স্টপ্ বাস (সীমিত জায়গায় দাঁড়ানো বাস), মোর্নিং-সানডাউন্ বাস (সকাল – সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলমান বাস), স্পেশ্যালস, এক্সপ্রেস সার্ভিসেস ইত্যাদি। বেসরকারিভাবে চালিত বাসগুলির মধ্যেও আবার বিভিন্ন ধরন রয়েছে; যেমন – মিনিবাস এবং চাটার্ড ও ছোট বাসও হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের বাসগুলির ভাড়ায় খুবই সাশ্রয়ী মূল্যের খরচ হয়। মাঝখানে অনেক স্টপেজ সহ এগুলিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি খুবই সুবিধাজনক উপায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত বাসগুলিতেই প্রতিবন্ধী, মহিলা ও বরিষ্ঠ ব্যাক্তিদের জন্য কিছু বসার আসন সংরক্ষিত করা থাকে। স্থানীয় বাসগুলির টিকিট সেই বাসেই ওঠা পরিবাহীর কাছ থেকে উপলব্ধ হয়। দীর্ঘ দূরত্বের যাওয়ার বাস টিকিট, প্রধান প্রধান বাস স্ট্যান্ডগুলিতে পাওয়া যায় এবং কখনও কখনও বাস ছাড়ার সময়ও উপলব্ধ হয়। বেশি দূরত্বের বাসগুলিতে বিনোদন ও বিলাসিতাসহ শীততাপ ব্যবস্থা উপলব্ধ রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ খুবই বিস্তীর্ণ সড়ক সংযোগ দ্বারা সু-সংযুক্ত রয়েছে। জাতীয় সড়ক, আন্তঃ-রাজ্য সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ-রাজ্য সড়ক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে পরিষেবা প্রদান করে। কলকাতা থেকে রামপুরহাট, দীঘা, বহরমপুর, শিলিগুড়ি, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার এবং আরোও অন্যান্য রুটে দৈনন্দিন ভিত্তিতে দীর্ঘ দূরত্বের বাস পরিষেবা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিবেশী রাজ্য যেমন বিহার, ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশার বাসও উপলব্ধ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাসগুলি আন্তর্জাতিকভাবে যাতায়াত করে। রাজধানী শহর কলকাতা থেকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভূটানের নিয়মিতরূপে বাস উপলব্ধ রয়েছে।

মেট্রো রেল

পশ্চিমবঙ্গ মেট্রো রেল বা পাতাল রেল হল ভূ-গর্ভস্থ রেল সংযোগ এবং কলকাতার ব্যস্তবহূল শহরের কাছাকাছি প্রাপ্য সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়। কলকাতা মেট্রো রেল ১৯৮৪ সাল থেকে চলে আসছে এবং এটি সমগ্র ভারতের সর্বপ্রথম ভূ-গর্ভস্থ মেট্রো রেল ছিল। এটি তার দক্ষ কার্যকারীতা, পরিচ্ছন্নতা, আরামপ্রদ স্বাচ্ছন্দ্যতা ও স্বল্প-সময় মানের জন্য সারা বিশ্বের কাছে উচ্চ সম্ভ্রমতার সাথে সাদরে গৃহীত।

কলকাতায় মেট্রো রেল মোট ১৬.৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সহ বর্তমানে দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়েছে। এটি ১৭-টি স্টেশন্ জুড়ে যাতায়াত করে; যেমন-বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক, মহাত্মা গান্ধি রোড, সেন্ট্র্যাল, চাঁদনী চৌক, এসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রীট, ময়দান, রবীন্দ্র সদন, ভবানীপুর, যতীন দাস পার্ক, কালীঘাট এবং রবীন্দ্র সরোবর।

টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া শেষপ্রান্ত পর্যন্ত কলকাতা মেট্রো রেলের প্রসারিত রুটটি অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে; এর মধ্যে যে সমস্ত স্টেশনগুলি রয়েছে, সেগুলি হল কূদঘাট, নিউ গড়িয়া, গড়িয়া বাজার, বাঁশদ্রোণী, প্রণবনগর এবং নাকতলা। এটি কলকাতার প্রায় সমস্ত প্রধান জনবহুল শহরগুলিকে আবৃত করায় এটি অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠবে। এই ব্যস্ত এলাকাটি আবৃত করতে একটি মসৃণ যাত্রার মাধ্যমে মাত্র ৩৩ মিনিট সময় লাগে, ব্যস্ত সময়ে যাতায়াতের অন্য মাধ্যমে এই দূরত্ব গেলে প্রায় ৯০ মিনিট সময় লাগে।

প্রতিটি মেট্রো রেল প্রায় ২৫৫৮ জন যাত্রী বহন করে এবং দিনের সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতি ৫-১৫ মিনিট অন্তর এই পরিষেবা উপলব্ধ রয়েছে। কলকাতা মেট্রো রেল উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা সুসজ্জিত রয়েছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তাই প্রধান লক্ষণীয় বিষয়। মেট্রো স্টেশন ও মেট্রো রেলগুলির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং উপযুক্ত বায়ু চলাচলের জন্য ভিতরে শীতল বায়ু প্রেরণ করা হয়। প্রতিটি মেট্রো স্টেশন থেকে দৈনিক টিকিট ও একাধিক বার চড়ার টিকিট উপলব্ধ হয়। কিছু কিছু স্টেশন এস্ক্যালেটার (চলন্ত সিঁড়ি) দিয়েও সুসজ্জিত করা রয়েছে।

রিকশা

রিকশা এখানকার পরিবহনের একটি মাধ্যম, যা পশ্চিমবঙ্গে সচরাচর সবসময় মানুষের অবলম্বন হিসাবে উপলল্ধ রয়েছে। রিকশা শব্দটি ‘জিঁরিকিশা’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, জাপানীদের কাছে যার আক্ষরিক অর্থ হল মানব-চালিত যানবাহন। তারা ১৯০০ সালে চীনা অভিবাসীদের দ্বারা কলকাতায় এটির প্রবর্তন চালু করা হয়েছিল এবং তখন থেকেই এটি পরিবহনের জনপ্রিয় মাধ্যম হিসাবে এখানে রয়ে গেছে। ডোমিনিক লেপিয়্যের-এর ‘আনন্দ নগরীর’ রিকশা পশ্চিম বাংলার বাইরের অধিবাসীদের অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। যারা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু গলি-রাস্তায় নিরাপত্তার জন্য ভারী যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই সমস্ত রাস্তায় পরিবহনের একমাত্র বিকল্প হল এই রিকশা। এগুলি স্বল্প দূরত্বে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত এবং যখন কেউ তার গন্তব্যের খুবই কাছে পৌছতে চায় তখন অনেকেই এটিকে পছন্দ করেন। রিকশা অতি সহজেই যেকোনও সংকীর্ণ গলি ও রাস্তায় ঢুকে পড়ে, তাই সর্বদাই এর চাহিদা রয়েছে।

রিকশা, পশ্চিমবঙ্গে পরিবহনের একটি দূষণমুক্ত মাধ্যম এবং সেইসঙ্গে বাস ও রেলের তুলনায় এর ভাড়াও সাশ্রয়ী মূল্যের। একজন চালক দুটি চাকায় রিক্সা টেনে নিয়ে দৌড়ায়। পশ্চিমবঙ্গে এই রিকশা বেছে নেওয়ার বেশ কয়েকটি বিকল্প রয়েছে; যেমন – সাইকেল রিকশা, হাতে টানা রিকশা এবং সাইকেল ভ্যান রিকশা। সাইকেল রিকশা এবং হাতে টানা রিকশা, এই উভয় দুটিতেই দুইজন করে বসার আসন রয়েছে, তবে বাচ্চাদের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ন্যস্ত রয়েছে। সাইকেল-ভ্যান রিকশাগুলি পণ্য বহনের কাজেও ব্যবহৃত হয়। এই রিকশাগুলি পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র জায়গায় সক্রিয় রয়েছে কিন্তু নিরাপত্তার কারণে কলকাতার কিছু নির্বাচিত অংশে এর ব্যবহার রয়েছে। ১৯০০ সালে চীনা অভিবাসীদের দ্বারা কলকাতায় এটির প্রবর্তন চালু করা হয়েছিল এবং তখন থেকেই এটি পরিবহনের জনপ্রিয় মাধ্যম হিসাবে এখানে রয়ে গেছে।

কারোর জন্য রিকশায় যাতায়াত পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। অন্যান্য কিছু মানুষ এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় উত্থাপণ করেছেন কারণ রিকশাচালকদের জন্য এটি একটি খুবই শ্রম নিবিড় কাজ।

চক্র রেল


কলকাতার চক্র রেল, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহরের ধারেপাশে প্রাপ্ত পরিবহনের এক অন্যতম সুবিধাজনক উপায়। পূর্বে, অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোর ন্যায় কলকাতার কেন্দ্রীয় অংশে কোনও রেল সংযোগ ব্যবস্থা ছিল না। ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার সাথে সাথে শহরে একটি রেল সংযোগ ব্যবস্থার চাহিদাও বাড়তে থাকে। প্রয়োজনীয় সমস্যাপূরণে চক্র রেল কলকাতায় হুগলী নদীর তীর বরাবর চালিত রয়েছে। পূর্ব রেল দ্বারা পরিচালিত এই চক্র রেল এখন সারা শহর জুড়ে চমৎকার সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গের আর অন্য কোনও স্থানে এই চক্র রেল পরিষেবা নেই।

চক্র রেলের তার নিজস্ব স্টেশন রয়েছে; যেমন – দমদম, পাতিপুকুর, বেলগাছিয়া, টালা, উল্টোডাঙ্গা রোড, বাগবাজার, শোভাবাজার, চিৎপুর, বড়বাজার, বিবাদী বাগ, প্রিন্সেপ ঘাট, হ্যাসটিঙ্গস, খিদিরপুর, রিমাউন্ট রোড, মাঝেরহাট, নিউ আলিপুর, টালিগঞ্জ, লেক গার্ডেনস, বালিগঞ্জ, স্যার গুরুদাস ব্যানার্জ্জী হল্ট, বিধাননগর রোড হয়ে পুনরায় দমদমে ফেরৎ যায়।

কলকাতা চক্র রেল দমদম থেকে জেসপ, যশোর রোড, ভি.আই.পি রোড এবং কলকাতা এয়্যারপোর্ট ডোমেস্টিক টার্মিন্যাল সড়ক হয়ে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৩.৮ কিলোমিটার প্রসারণের কাজ অগ্রগতিতে রয়েছে। অন্য আরেকটি, মাঝেরহাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত কলকাতার সমগ্র পরিধি জুড়ে ৫.৮ কিলোমিটার প্রসারণের কাজ অগ্রগতিতে রয়েছে, এটি বেহালা ও বজবজ অঞ্চলের জনসাধারণের কাছে খুবই উপযোগী হয়ে উঠবে। এই চক্র রেলের আরও প্রসারণের কাজও নিরীক্ষণের মধ্যে রয়েছে; সেগুলির রুট হল উল্টোডাঙ্গা থেকে রাজারহাট এবং ব্যারাকপুর থেকে সোনারপুর ভায়া রাজারহাট নিউ টাউন। এই চক্র রেল সংযোগ উপস্থিতি প্রকৃতপক্ষে সমগ্র শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং এক উন্নততর কলকাতা গড়ে উঠবে।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৭ - ই এপ্রিল, ২০১৫