উত্তর প্রদেশ মানচিত্র

Uttar Pradesh Map in Bengali

উত্তর প্রদেশ মানচিত্র
* প্রধান সড়ক, রেলপথ, নদী, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি সহ উত্তর প্রদেশের মানচিত্র৷

উত্তর প্রদেশের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট UP.gov.in
স্থাপনের তারিখ জানুয়ারি, 1950
আয়তন 240,928 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 828/বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 199,812,341
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 104,480,510
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 95,331,831
জেলার সংখ্যা 75
রাজধানী লখনউ
ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহ হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন
নদীসমূহ গঙ্গা, যমুনা, সরযু, গোমতী, রামগঙ্গা
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান দুধওয়া জাতীয় উদ্যান, কিশানপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ক্যাটারানিয়া ঘাট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, নবাবগঞ্জ পক্ষী সংরক্ষণ
ভাষা হিন্দি, উর্দূ, ইংরাজী, আওধি, ভোজপুরী, বুন্দেলি, ব্রজ ইত্যাদি
প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লী, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খন্ড, বিহার
রাষ্ট্রীয় পশু জলাভূমির হরিণ
রাষ্ট্রীয় পাখি সারস
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ শাল
রাষ্ট্রীয় ফুল পলাশ
রাষ্টীয় নৃত্য কত্থক
রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া ফিল্ড হকি
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 26355
সাক্ষরতার হার (2011) 77.08%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 908
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 403
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 80

উত্তর প্রদেশ সম্পর্কে

উত্তরপ্রদেশ, ইংরাজিতে আক্ষরিক অর্থে অনুদিত ‘উত্তরীয় প্রদেশ’ (‘নর্দান প্রভিন্স্’), ভারতের উত্তরে অবস্থিত একটি রাজ্য। লখনউ শহর হল উত্তর প্রদেশের রাজধানী এবং কানপুর শহর তার অর্থনৈতিক এবং শিল্প রাজধানী।

উত্তরে নেপাল ও উত্তরাখণ্ড , উত্তর-পশ্চিমে দিল্লি ও হরিয়ানা, পশ্চিমে রাজস্থান, দক্ষিণ-পশ্চিমে মধ্য প্রদেশ, দক্ষিণ-পূর্বে ঝাড়খণ্ড এবং পূর্বে বিহার এই রাজ্যকে ঘিরে রয়েছে।

এই রাজ্য ২,৪০,৯২৮ বর্গ-কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং এই রাজ্যে মোট ৭৫-টি জেলা রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে এই রাজ্য দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য এবং এখানকার জনসংখ্যা হল প্রায় ১৯,৯৮,১২,৩৪১। উত্তরপ্রদেশে বহু ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট পর্যটক কেন্দ্র আছে যথা- তাজমহল, কৌশম্বী, বারাণসী, কাশিনগর, চিত্রকূট, লখনউ, ঝাঁসি, মীরাট, এলাহাবাদ, মথুরা।

ইতিহাস

উত্তরপ্রদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক ঐতিহ্যগুলি বর্তমান উত্তরপ্রদেশকে ব্যাখ্যা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই ইতিহাস এসেছে আর্যদের সময় থেকে, যারা এই দেশের কেন্দ্রে জনবসতি স্থাপন করেছিল, যা ‘মধ্যদেশ’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ইতিহাসের বহু সাম্রাজ্য দ্বারা শ্বাসিত হয়েছিল। প্রথম খ্রীস্ট-পূর্বাব্দের মধ্যবর্তী কালে এখানে ভগবান বুদ্ধ দেবের আবির্ভাব ঘটেছিল এবং তিনিই সর্বপ্রথম বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। উত্তর প্রদেশের সারনাথে প্রভু বুদ্ধ তার প্রথম ধর্মোপদেশ প্রচার করেন। সেই সময় এই অঞ্চল মগধ-এর শাসনাধীন ছিল। পরবর্তীকালে নন্দ বংশ ও তার পরে মৌর্য বংশ এখানে শাসন চালান।

এই রাজ্যের ঐতিহাসিক পটভূমির প্রারম্ভে মুসলিম শাসনের উল্লেখ আছে। এই সময় রাজপুতদের পরাজয় ঘটে। মুঘল যুগে, বিশেষ করে সম্রাট আকবরের আমলে এই রাজ্যের সমৃদ্ধি ছিল শিখরে। মুঘল শাসনের সময় এই অঞ্চলে কিছু অভূতপূর্ব সৌধ নির্মিত হয়, যা চিরকালের জন্য ইতিহাসে নামাঙ্কিত হয়ে রয়েছে।

কালের পরিবর্তনে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উথ্থান দেখা যায়। মুঘলদের প্রভাব দোয়াব অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে উত্তরপ্রদেশের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বহু সংখ্যক রাজবংশ উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে রাজত্ব করেছেন, যথা –

  • নন্দ
  • মৌর্য্য
  • রাষ্ট্রকূট
  • মগধ
  • গুপ্ত
  • গুর্জর
  • সুঙ্গা
  • কুষাণ
  • পাল সাম্রাজ্য
  • মুঘল

উত্তর প্রদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু

উত্তরপ্রদেশ ভারতের উত্তর অংশে মোট ২,৪০,৯২৮ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং নেপালের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমানা বিভাজিত। এই রাজ্যের উত্তরাংশে হিমালয় অবস্থিত এবং বেশীরভাগ অংশ সমভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত। স্হলাকৃতি অনুসারে উত্তরপ্রদেশকে তিনটি বিভিন্নাঞ্চলে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমটি হলো উত্তরে হিমালয় অঞ্চল। এটি অত্যন্ত এবড়ো-খেবড়ো এবং বিবিধ ভূভাগ নিয়ে গঠিত। এখানে ৩০০ থেকে ৫০০০ মিটার পর্যন্ত উঁচু টিলা দেখা যায়। দ্বিতীয়টি হল কেন্দ্রে অবস্হিত গাঙ্গেয় সমভূমি। এখানে অত্যন্ত উর্বর পাললিক মাটি দেখা যায় এবং আড়াআড়ি সমতল ভূভাগ রয়েছে যেটি অনেক গুলি হ্রদ, নদী ইত্যাদি নিয়ে বেষ্টিত। তৃতীয়টি হলো দক্ষিণে অবস্হিত মালভূমি ও বিন্ধ্য পর্বত। এটি একটি শক্ত ভূস্তর এবং সমভূমি, পাহাড়, উপত্যকা এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। জল এখানে খুবই সীমাবদ্ধ। এই রাজ্য ভারতের নিম্নলিখিত রাজ্যগুলির সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নিয়েছে –

উত্তর প্রদেশের প্রধান নদী গুলি হলো যমুনা, গঙ্গা, ঘাঘরা এবং সরজু। কৃষিজ গুরুত্ব ছাড়াও এই নদীগুলির ধর্মীয় তাৎপর্য অত্যন্ত বেশি। প্রাথমিকভাবে এই রাজ্যের আবহাওয়া প্রায় ক্রান্তীয়। এই অঞ্চলে চারটি ঋতু এবং একটি আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু দেখা যায়।

উত্তরপ্রদেশের ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু উচ্চতার সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে। হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু খুব শীতল এবং সমভূমি এলাকায় বিভিন্ন ঋতুতে পরিবর্তিত হয়। এই রাজ্যে তিনটি ভিন্ন ধর্মী ঋতু দেখা যায়, যার মধ্যে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি শীত, মার্চ থেকে জুন গ্রীষ্ম এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষা দেখা যায়।

পূর্ব-সমতল এলাকায় খুব বেশী পরিমানে বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বন্যা দেখা যায় যেটি এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা এবং অনবরত বন্যার ফলে এখানকার মানুষের জীবন, সম্পত্তি এবং ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। গ্রীষ্মকাল ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ গরম ও শুষ্ক হয়, তার সাথে ধূলিঝড়ও দেখা যায়। বর্ষাকালে ৮৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত সহ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯৯০-মিলিমিটার এবং এই সময় তাপমাত্রা কিছুটা কম হয়। শীতকালে খুব ঠাণ্ডা হয় ও তাপমাত্রা ৪-ডিগ্রিতে নেমে আসে এবং বেশ কিছু অঞ্চলে ভারী কুয়াশার ফলে অবস্হা বেশ খারাপ হয়।

উত্তর প্রদেশের অর্থনীতি

অর্থনীতির দিক দিয়ে উত্তর প্রদেশ ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজ্য। এখানকার অর্থনীতির সর্ব বৃহৎ ক্ষেত্র হল কৃষিকাজ ও পরিষেবা ক্ষেত্র। পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি হল ভ্রমণ, পর্যটন ও হোটেল শিল্প, জমিজমা, আর্থিক ও বীমা পরামর্শক। উত্তরপ্রদেশের প্রধান জীবিকা হল কৃষি, যেখানে প্রধান খাদ্যশস্য হল গম এবং প্রধান বানিজ্যিক ফসল হল আখ। দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ চিনি উত্তর প্রদেশ থেকেই আসে। রাজ্যের স্থানীয় ও বৃহৎ শিল্পগুলি হল ইস্পাত, বস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স, চামড়া, তার, প্রকৌশল পণ্য, অটোমোবাইল, রেলওয়ে কোচ ও ওয়াগন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। এই রাজ্যে অনেক ক্ষুদ্র শিল্পও গড়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে সফটওয়্যার ও বৈদ্যুতিক বিভাগে অনেক বিদেশী বিনিয়োগ করা হচ্ছে। নয়ডা এবং লখনউ তথ্য প্রযুক্তিশিল্পের প্রধান কেন্দ্র স্থল।

উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যা

জনসংখ্যার দিক দিয়ে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য এই দেশে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে এবং এই রাজ্যের জনসংখ্যা ১৯৯.৮ কোটিরও বেশি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই রাজ্য নিম্নলিখিত সম্প্রদায়ভুক্ত –

  1. হিন্দু প্রায় ৮০ শতাংশ
  2. মুসলিম প্রায় ১৮ শতাংশ
  3. অন্যান্য সম্প্রদায় হল – বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ও খ্রীস্টান।

সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

ভারতীয় সংসদে সব থেকে বেশি সংখ্যক সদস্য উত্তরপ্রদেশ থেকে যায়। ভারতীয় সংসদীয় লোকসভায় এই রাজ্যের ৮০-টি আসন এবং রাজ্য সভায় ৩১-টি আসন আছে। এই রাজ্য থেকেই ৮ জন দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

উত্তরপ্রদেশ সরকার ভারতের দ্বিকক্ষ আইনসভা। এটি একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংস্হা যার প্রধান হলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। রাজ্যপাল হলেন এই রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বাকি মন্ত্রী পরিষদদের তিনিই নিয়োগ করেন। রাজ্যপাল রাজ্যের প্রধান হলেও প্রতিদিনের সরকারী কাজকর্ম মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদই পরিচালনা করে থাকেন। রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ রাজ্য মন্ত্রী, সচিব এবং উপ-মন্ত্রী নিয়ে গঠিত। রাজ্যপালের সচিব মন্ত্রী পরিষদকে সহায়তা করেন, যিনি আবার সচিবালয়েরও প্রধান।

সমাজ ও সংস্কৃতি

রাজ্যের পরম্পরা, সাহিত্য, কলা এবং ইতিহাসের মধ্যে সংস্কৃতি ও রাজ্যের সামাজিক শিকড় প্রোথিত আছে। উত্তরপ্রদেশের সংস্কৃতি বহুবর্ণের এবং সময়ের সাথে এর সমৃদ্ধি হয়েছে। এই রাজ্য বহুবর্ণের সংস্কৃতির আর্শীবাদপ্রাপ্ত। এই রাজ্যে বহু ধর্মীয় স্থান ও তীর্থস্থান দেখা যায় যেখানে ভক্তরা ভিড় করে আসে। রাজ্য দিয়ে প্রবাহিত দুটি পবিত্র নদী গঙ্গা ও যমুনার কথা ভারতীয় পূরানে পাওয়া গেছে।

উত্তরপ্রদেশ ভারতের একটি শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র। আগ্রা শহরে অবস্থিত ‘তাজ মহল’ বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি নিদর্শন। বারাণসী হল বিশ্বের সর্ব পুরাতন শহর। উত্তরপ্রদেশে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলায় ১০ কোটিরও বেশি তীর্থযাত্রীর সমাগম হয় ওই পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করার জন্য, তাই কুম্ভ মেলাকে হিন্দু ধর্মের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় সম্মেলন বলে মানা হয়।

এই রাজ্যে একটি প্রাচীন নৃত্য ও সঙ্গীতের পরম্পরা দেখা যায়। কথ্থক একপ্রকার শাস্ত্রীয় নৃত্য যার উৎপত্তি ও উন্নতি এখানেই। এখানকার রসিয়া নামক লোকগীতি রাধা ও শ্রীকৃষ্ণের স্বর্গীয় প্রেমের নির্দশন স্বরূপ। অন্যান্য লোকনৃত্য ও নাটক গুলি হল-রাসলীলা, রামলীলা, নউটাঙ্কি, খেয়াল ও কাওয়ালি ইত্যাদি।

ভারতের অন্যান্য অংশের ন্যায় এখানকার ধর্মীয় প্রথা এবং উৎসবগুলি হল ভারতীয় সংস্কৃতির এক অভিন্ন অংশ। জাতিধর্ম নির্বিশেষে এখানে বহু উৎসব পালিত হয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসবগুলি হল- দিওয়ালি, হোলি, নববর্ষ, নবরাত্রি, ঈদ, মহাবীর জয়ন্তী ও বুদ্ধ জয়ন্তী।

ভাষা

উত্তরপ্রদেশে বৈদিক সাহিত্যের বহু সংখ্যক গ্রন্থ এবং স্তবগান রচিত হয়েছিল। এই গ্রন্থ গুলিতে প্রাচীন সংস্কৃত ও প্রাচীন হিন্দু ধর্মের স্তরের কথার উল্লেখ আছে। এই রাজ্যকে ‘ভারতের হিন্দির হৃদপিণ্ড’ বলেও অভিহিত করা হয়। ১৯৫১ সালের ভাষা-ধারা অনুযায়ী হিন্দিকে আধিকারিক ভাষা বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৯ সালের সংশোধনে উর্দুকে উত্তর প্রদেশের অন্যতম স্থানীয় ভাষা বলে ঘোষণা করা হয়। এই রাজ্যের প্রধান স্থানীয় ভাষা গুলি হলো–আওধি, ব্রজ ভাষা, বুন্দেলি, কনৌজি এবং খারিবলি।

উত্তর প্রদেশের মেলা এবং উৎসব

বরাবাঁকি থেকে ১০ কিমি দূরে দেব নামক জায়গায় হাজি ওয়ারিস আলি শাহ্‌ এর পবিত্র ভূমি তে প্রতি বছর দেব মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত, এই মেলায় উত্তরপ্রদেশ এবং ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিলক্ষিত হয়। এখানে ক্রীড়া, সঙ্গীত, নৃত্য, কেনা–কাটার এক বিশাল সম্মেলন ঘটে। এটি প্রধানত একটি ধর্মীয় সম্মেলন যেখানে ভারতবর্ষ, পাকিস্থান এবং মধ্য-পূর্ব অংশ থেকে তীর্থযাত্রীরা আসেন। এটি সাধারনত মুসলিমদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। উরস তথা সুফী সাধু হাজি ওয়ারিস আলি শাহ্‌ এর স্মরণে ভারতের প্রতিটি কোণের সুফি মুসলিমরা এই স্থানে এসে উপস্থিত হয়। উত্তর প্রদেশের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উৎসব গুলি হল:-

  • হোলি
  • মহরম
  • ছট পূজা
  • দিওয়ালি
  • বুদ্ধজয়ন্তী
  • রামনবমী
  • দশেরা
  • মহাবীর জয়ন্তী
  • কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী
  • ঈদ
  • গুরু নানক জয়ন্তী
  • মহা শিবরাত্রি
  • বড়া আওফাত
  • খ্রীষ্টমাস
  • বকরি ঈদ

উত্তরপ্রদেশে শিক্ষা

উত্তরপ্রদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি আছে। ভারতের অন্যান্য উন্নত রাজ্যগুলির মতো উত্তরপ্রদেশও দেশের শিক্ষাব্যবস্হায় অবদান রেখেছে। বিগত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের সরকার শিক্ষার বিভিন্ন খাতে অনেক বিনিয়োগ করেছেন। সরকার রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতির জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বীকৃতি এবং উৎসাহ দান করেন।

উত্তর প্রদেশে পর্যটন

উত্তরপ্রদেশের পর্যটনস্হল সম্পর্কে কথা বলতে গেলে হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলের সুন্দর চিত্রের কথা বিস্তারিত বলা যেতে পারে। পর্যটনস্হল গুলির হিমালয়ের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আনন্দ দেয়। উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন ভূ-বৈচিত্র, বিবিধ সংস্কৃতি, উৎসব, সৌধ এবং প্রাচীন ধর্মীয় স্থানের কারণে প্রতি বছর ৭১ কোটিরও বেশী দেশীয় পর্যটক উত্তরপ্রদেশে ভ্রমন করতে আসে। এই রাজ্যের কিছু বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রগুলি হল বারাণসী – ‘মন্দিরের শহর’, আগ্রার ‘তাজ মহল’ হল বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি নিদর্শন , কানপুর – উত্তর প্রদেশের বাণিজ্যিক এবং শিল্পের কেন্দ্রস্থল, লখনউ – উত্তর প্রদেশের রাজধানী শহর , মথুরা, বৃন্দাবন, অযোধ্যা, ঝাঁসি, সারনাথ-যেখানে গৌতম বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন, কাশিনগর-যেখানে গৌতম বুদ্ধ তাঁর মৃত্যুর পর ‘পরিনির্বাণ’ লাভ করেন, মীরাট, মির্জাপুর, গাজিয়াবাদ, গোরখপুর, নয়ডা এবং বড় নয়ডা – আই.টি, বৈদ্যুতিক ও শিক্ষার কেন্দ্রস্থল।

উত্তর প্রদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র গুলি হল নিম্নরূপ –

  • তাজমহল
  • আগ্রা কেল্লা
  • অযোধ্যা
  • কাশিনগর
  • বৃন্দাবন
  • সারনাথ
  • ফতেপুর সিক্রি
  • মথুরা
  • লখনউ
  • বারাণসী
  • বুদৌন
  • গাজিপুর
  • এলাহাবাদ<

পরিবহন ব্যবস্থা

উত্তরপ্রদেশে, পরিবহনের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা পৌঁছানো সম্ভব। এখানে দুটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর আছে যথা– বারাণসীতে অবস্থিত ‘লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ এবং লখনউতে অবস্থিত ‘চৌধুরী চরণ সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। এছাড়াও এখানে ৪-টি অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর আছে। উত্তর প্রদেশ-এর রেল পরিবহন ব্যাবস্থা সর্ব বৃহৎ। গোরখপুর ও এলাহাবাদ হল উত্তর পূর্ব রেল পরিবহন ব্যাবস্থা এবং উত্তর মধ্য রেল পরিবহন ব্যাবস্থার সদর দপ্তর। এখানকার সড়কপথ খুব চওড়া হওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ-এর সড়কপথ দেশের ৯-টি প্রতিবেশী রাজ্যের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। উত্তর প্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা রাজ্যের ভিতর এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মধ্যে পরিষেবা প্রদান করে।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৬ই ডিসেম্বর , ২০১৪