বিহার মানচিত্র

Bihar Map in Bengali

বিহার মানচিত্র
* মানচিত্রে প্রধান শহর, রেলপথ, নদী, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি দেখানো হয়েছে৷

বিহারের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.gov.bih.nic.in
স্থাপনের তারিখ 1912 বিহার রূপে, ( ওড়িশা প্রদেশ-বিহার), 26 জানুয়রি, 1950
আয়তন 94,163 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 1,102/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 104,099,452
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 54,278,157
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 49,821,295
জেলার সংখ্যা 38
রাজধানী পাটনা
নদীসমূহ কোশী, গঙ্গা, গন্ডক, কমলা, পানার এবং পুন-পুন
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান বাল্মীকি জাতীয় উদ্যান, রাজগির বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ভীমবাঁধ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, গৌতম বু্দ্ধ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, উদয়পুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ভাষা হিন্দি, ভোজপুরী, মৈথিলী, অঙ্গিকা, মগধী
প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিম বঙ্গ
রাষ্ট্রীয় পশু বলদ
রাষ্ট্রীয় পাখি চড়ুই
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ বট গাছ
রাষ্ট্রীয় ফুল গাঁদা
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 20708
সাক্ষরতার হার (2011) 63.82%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 916
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 243
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 40

বিহার সম্পর্কে

বিহারের প্রাচীন নাম ছিল “ভিহারা” যার অর্থ হল আশ্রম। এটি ভারতবর্ষের পূর্বদিকে অবস্থিত। এলাকার ভিত্তিতে বিহার, ভারতের দ্বাদশ বৃহত্তম রাজ্য এবং তৃতীয় জনবহল রাজ্য হিসাবে গণ্য হয়। এই রাজ্যের উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল গঙ্গা নদীর দ্বারা সমৃদ্ধ যেটি বাংলার ব-দ্বীপ অঞ্চলের মধ্যে বিস্তৃত হওয়ার আগে বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেইসঙ্গে বিহারে একটি বিশাল বনভূমি রয়েছে যা বিহারের ৬,৭৬৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে আচ্ছাদিত। এই রাজ্যটি ভাষাগত দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী, বিভিন্ন ভাষায় এখানে কথা বলা হয় যেমন ভোজপুরি, মৈথিলী, মাগাহী, বাজ্জিকা ও অঙ্গিকা। বিহারের রাজধানী হল পাটনা যেটি পূর্বে পাটলিপূত্র নামে পরিচিত ছিল। বিহার, ভারতের কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট যথা- সমুদ্রগুপ্ত, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য, বিক্রমাদিত্য এবং অশোক ইত্যাদি সম্রাটদের নিয়ন্ত্রাধীনে ক্ষমতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপকেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠে। সেইসময়ের শিক্ষার প্রধান দুটি শিক্ষাকেন্দ্র বিক্রমশীলা এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এখানেই অবস্থিত ছিল। এখনও বিহারের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে যে বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক স্মৃতিসৌধগুলি রয়েছে তা এই রাজ্যের ৩০০০ বছর পুরানো ইতিহাসের জীবন্ত প্রমাণ দেয়, এই স্মৃতিসৌধগুলি সারা বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটক দেখতে আসেন। এই রাজ্যে অবস্থিত মহাবোধি মন্দির ইউনেস্কো দ্বারা একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বিহারের ইতিহাস

সহস্র বছর ধরে, প্রাচীন বিহার যা মগধ নামে পরিচিত ক্ষমতা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ৩২৫ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে এই মগধে, মৌর্য্য সাম্রাজ্য নামে প্রথম ভারতীয় সাম্রাজ্যের উদ্ধব হয়ে ছিল এবং রাজধানী ছিল পাটলিপূ্ত্র (বর্তমান পাটনা)। ২৪০ খ্রীষ্টাব্দে মগধে গুপ্ত সাম্রাজ্য তাদের অস্তিত্ব স্থাপন করে। গুপ্তদের নেতৃত্বে ভারত বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য অর্জন করে। ১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে বিহারের সাসারামের পশতুন নেতা শের শাহ সুরি উত্তর ভারতের শাসনভার গ্রহন করেন। মুঘল যুগের সবচেয়ে প্রগতিশীল শাসক হিসাবে তাঁর শাসনাধীনে বিহার কুসুমিত হয়ে ওঠে। মুঘলদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে বিহার, বাংলার নবাবদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

বিহারের ভৌগোলিক অবস্থান

বিহারের সঠিক অবস্থান হল ২৪ডিগ্রী ২০” এবং ২৭ ডিগ্রী ৩১” উত্তর অক্ষাংশ, এবং ৮২ ডিগ্রী ১৯” এবং ৮৮ ডিগ্রী ১৭” পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এইভাবে, বিহার ভারতের উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থান করছে। বিহার একটি ভূমিবেষ্টিত রাজ্য, যার অর্থ এই রাজ্য পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরে নেপাল এবং দক্ষিণে ঝাড়খন্ড রাজ্য দ্বারা বেষ্টিত। বিহারের প্রাকৃতিক উর্বর মাটির উৎস সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির গাঙ্গেয় পলল, পশ্চিম চম্পারণ জেলার পাদদেশীয় জলা মাটি এবং তরাই মাটি উত্তর বিহারে দেখতে পাওয়া যায়। গঙ্গা এবং তার উপনদীগুলি বিহারের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিক বরাবর প্রবাহিত হয়েছে। বিহারের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা, যার উৎপত্তি আসলে নেপালে এবং এর দক্ষিণ দিক জুড়ে রয়েছে কৈমুর মালভূমি এবং ছোটনাগপুর মালভূমি।

বিহারের সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

স্বাধীনতার পর থেকেই বিহারের অর্থ-সামাজিক অবস্থার নিম্নগামী প্রবণতা দেখা গেছে এবং এই রাজ্যটিকে দেশের অনগ্রসর রাজ্যগুলির মধ্যে গণনা করা হয়। বিহারের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হল এন.ডি.এ যা ভারতীয় জনতা পার্টি, জনতা দল এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতৃত্বাধীনে জোট হিসাবে গঠিত। রাজ্যের উন্নতির জন্য বিহার রাজ্যকে ৯টি বিভাগে এবং ৩৮টি জেলায় বিভাজিত করা হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী জরুরি অবস্হার সময়ে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বাধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান দ্বারা বিহার বাকি দেশের কাছে গণতন্ত্রের উপর একনায়কতন্ত্রকে বেছে নেয়। ১৯৯০ সালে জনতা দল, বিহারের ক্ষমতায় আসে এবং লালু প্রসাদ যাদব এই রাজ্যের মু্খ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠেন। তবে, তিনি বিহারের উন্নতি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন এবং যখন তার ওপর দুর্নীতির অভিযোগ চরম জায়গায় পৌঁছে যায় তখন তিনি তার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তার স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। সেই সময়ে বিহার ,সমাজের সমস্ত দিকে প্রচন্ড ক্ষতির অভিজ্ঞতা অনুভব করেছিল।

বিহারের শিক্ষা

উন্নয়নের জন্য শিক্ষিত মস্তিষ্কের প্রয়োজন, সুতরাং শিক্ষাই একটি দেশের বা রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে। বিহার এই ক্ষেত্রে উন্নতি করছে; কিন্তু এটা অনেকটা গোড়া থেকে শুরু করার মতন। বর্তমানে বিহারে শিক্ষার পরিকাঠামোয় অভাব লক্ষ্য করা গেছে, যার প্রভাবে চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে এক বিশাল ফাঁক তৈরী হয়েছে। বিহারের শিক্ষক অনুপস্থিতির হার ৩৭.৮ শতাংশ এবং ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত এবং ছাত্র-শ্রেণীকক্ষের অনুপাতও এখানে সর্বোচ্চ। বিহারে প্রায় ১০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিষ্কার পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই।

বিহারে “স্কুল ছুটের হার” লক্ষ্যনীয়। তবে, এটা ধীরে ধীরে ভলোর দিকে উন্নতি করছে। ছাত্রদের স্কুল ছুটের হার ২০০৬ সালে ছিল ১২.৮ শতাংশ, যেটা ২০০৭ সালে ৬.৩ শতাংশে নেমে এসেছিল। বিহারে জওহর নভোদয় বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সেন্ট্র্যাল স্কুল (কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়) রয়েছে, এর পাশাপাশি খ্রীষ্টান ধর্ম যাজক দ্বারা পরিচালিত বেসরকারি মিশনারি বিদ্যালয় এবং মুসলিম যাজক দ্বারা পরিচালিত মাদ্রাসাও রয়েছে। রাজ্য বিদ্যালয়গুলির অধিকাংশই বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা পর্ষদ (বি.এস.ই.বি)অনুসরণ করে। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সহ, বিহারের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি আই.সি.এস.ই এবং সি.বি.এস.ই পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত।

বিহারের অর্থনীতি

স্বাধীনতা পরবর্তী বিহারের অর্থনীতি এখনকার মতো ভালো ছিল না। যখন নীতিশ কুমার সরকারে ছিলেন তখন তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল “ন্যায়বিচারের সাথে উন্নয়ন”, যার নেতৃ্ত্বে বিহারের অর্থনীতি চরম উন্নতির দিকে গিয়েছিল, যা এন.ডি.টি.ভি দ্বারা “নীরব রূপান্তর” হিসাবে নামকরণ করা হয়েছিল। ২০০৭-০৮ সালে বিহারের মাথাপিছু আয় ছিল ১১,৬১৫ টাকা (অর্থাৎ, সর্ব ভারতীয় গড়ের ৩২.৪ শতাংশ)। তবে, ২০১১-১২ সালে এই অনুপাত বেড়ে ৪২.০৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। সুতরাং, বিহার এবং ভারতের মাথাপিছু আয়ের মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধির হার বজায় রাখা হয়েছিল। বিহারের মাথা পিছু আয়ের পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হল জেলা গুলির মধ্যে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণের অসমতা।

বিহারের সংস্কৃতি

বিহার হল গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর জৈন-র জন্মস্থান। অতএব, বিহারের আজকের সংস্কৃতি তার বিশাল ঐতিহাসিক অতীতের বাহক । দীপাবলী ছাড়াও আরও কিছু কিছু উৎসব বিহারে আত্মিকভাবে পালন করা হয়। যার মধ্যে একটি হল ছট্ পূজা। এখানে সূর্যদেবতাকে খুবই শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজো করা হয়। এখানকার মিথিলায়, শীতকালে যখন হিমালয় পর্বতমালা থেকে পরিযায়ী পাখিরা এই অঞ্চলে আসে তখন শামা চকেভা উৎসব খুবই উৎসাহের সঙ্গে পালন করা হয়। মকর সংক্রান্তি হল বিহারের অন্য আরেকটি খুব জনপ্রিয় উৎসব। এই রাজ্যের বিভিন্ন লোক সংগীত এবং লোক নৃত্য রয়েছে যেগুলি বিশেষ অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় বা প্রদর্শন করা হয়। শিশুর জন্মের সময় “শোহার” গান , বিবাহের সময় গাওয়া হয় “সুমঙ্গলী”, প্রথম ধান বপনের সময় “কাটনীগীত” এবং ফসল তোলার সময় “রোপনিগীত” নামের গান গাওয়া হয়। বিহারের বেশ কিছু বিখ্যাত লোকনৃত্য শৈলীগুলি হল গঁদ নাচ, ধোবি নাচ, ঝুমুর নাচ, জিতিয়া নাচ ইত্যাদি।

বিহারের ভাষা

বিহার এবং তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলি যে ভাষায় কথা বলে বিহারী শব্দটি হল তার প্রতিশব্দ। অঙ্গিকা, বাজ্জিকা, ভোজপুরি, মাগাহী এবং মৈথিলী হল বিহারের প্রচলিত ভাষা। মৈথিলী ছাড়া, অন্য ভাষাগুলি বিহারে প্রবলভাবে ব্যবহৃত হলেও এগুলিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। হিন্দী বিহারের প্রধান ভাষা; শিক্ষা এবং দপ্তরের কাজকর্মে হিন্দী ও উর্দূ ভাষারই ব্যবহার করা হয়। মাগাহী ভাষাটি মাগাধি প্রাকৃত-এর নাম থেকে এসেছে যেটি একসময় মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সরকারি ভাষা ছিল এবং এই ভাষাতেই প্রভু বুদ্ধ কথা বলতেন। মাগাহী দেবনগরী লিপি অনুসরণ করত। এই ভাষা বিহারের ৮টি জেলা এবং ঝাড়খন্ডের ৩টি জেলায় বেশী ব্যবহৃত হয়। ভোজপুরি হল বিহারের খুবই জনপ্রিয় ভাষা এবং ভারতের তৃতীয় কথ্য ভাষা হিসাবে পরিচিত।

বিহার পরিবহন

বিহারের পরিবহন সংযোগ ব্যবস্থা ভারতের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য যথেষ্ট বড়। বিহারে মোট ২৯টি জাতীয় সড়ক এবং অনেক রাজ্য সড়ক রয়েছে এবং সেগুলি যথাক্রমে ২৯১০ কিলোমিটার এবং ৩৭৬৬ কিলোমিটার লম্বা। বিহার রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম অনেক শোভনীয় এবং বিলাসবহুল বাস পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন যার মাধ্যমে বিহারের বিভিন্ন শহরগুলির মধ্যে মানুষ যাতায়াত করে। সম্প্রতি বিহারের বিভিন্ন অংশে ভাড়া গাড়ি পরিষেবাও শুরু হয়েছে যেমন ইজিক্যাব। বিহারের রেল ব্যবস্থা দেশের প্রধান শহরগুলি যেমন দিল্লী, মুম্বাই এবং কলকাতার সঙ্গে রাজ্যের সংযোগ স্থাপন করেছে। বিহারের কিছু সেরা সংযুক্ত রেল স্টেশনগুলি হল পাটনা, মুজফফরপুর, দ্বারভাঙ্গা, গয়া, কাটিহার, বারৌনি, ছাপরা এবং ভাগলপুর।

সর্বশেষ সংযোজন : ০৬ই জানুয়ারী , ২০১৫