উত্তরপ্রদেশ পর্যটন
ভারতের উত্তর অংশে কৌশলগতভাবে অবস্থিত উত্তরপ্রদেশ (নাম প্রস্তাব দেওয়া হয়), বৃহৎ পরিসরে ধারাবাহিকভাবে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য করেছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই রাজ্য থেকে দশজনের মধ্যে সাতজন দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।
অবিস্মরণীয় কাল থেকে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে উত্তরপ্রদেশর ভূমি পরিপুষ্ট। পুরাণ, ধর্ম এবং ইতিহাসের পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এখানে অসংখ্য আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থলের সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বাগ্রে প্রসিদ্ধ তাজমহলকে ভারতের পর্যটনের প্রতীক হিসাবে গন্য করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম, এই স্মৃতিস্তম্ভের সৌন্দর্যের বর্ণনা কোন শব্দ দ্বারা অবর্ণনীয়। উত্তর প্রদেশ পর্যটনে, দৃঢ় মার্বেলের উপর কবিসুলভ মহান মনুষ্যসৃষ্টের সহজাত সৃজনী ক্ষমতার পরিচিতি পরিলক্ষিত হয়।
উত্তরপ্রদেশ ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে বিশ্বের প্রাচীনতম শহর বারাণসীতে। হাজার হাজার বছরের পুরনো মন্দির ও ভারতীয় সন্ন্যাসীরা আপনাকে মনোরম অতীতে নিয়ে যাবে।
উত্তরপ্রদেশের জনপরিসংখ্যান |
---|
অবস্থান | ভারতের উত্তর অংশে, পূর্বে বিহার, দক্ষিণে মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমে রাজস্থান, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ানা, উত্তরে উত্তরাঞ্চল। |
অক্ষাংশ | 24 ডিগ্রী 31 মিনিট উত্তরের মধ্যে |
দ্রাঘিমাংশ | 77 ডিগ্রী 84 মিনিট পূর্বের মধ্যে |
আয়তন | 2,36,286 বর্গ কিলোমিটার |
জলবায়ু | গ্রীষ্মকাল – গরম, শীতকাল – ঠান্ডা |
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা | 43 ডিগ্রী সেলসিয়াস |
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা | 4 ডিগ্রী সেলসিয়াস |
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত | 120 সেন্টিমিটার |
রাজধানী | লখনউ |
জনসংখ্যা | 16,60,52,859 |
ভাষা | হিন্দি, উর্দু |
ধর্ম | হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনধর্ম |
পরিদর্শনের সেরা সময় | অক্টোবর থেকে মার্চ |
পরিধান | গ্রীষ্মকালে – সূতি, শীতকালে – পশমী |
উত্তরপ্রদেশে পৌঁছানোর উপায়
উত্তরপ্রদেশ তাজমহলের আবাসস্থল হিসাবে জনপ্রিয়। এই রাজ্যে বারাণসী, লখনউ-এর ন্যায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রখ্যাত আরও গন্তব্যস্থল রয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এই সমস্ত গন্তব্যস্থল ও আরও অনেক কিছুর আকর্ষণে, এই রাজ্যে সফর করে। পর্যটন, উত্তরপ্রদেশের একটি প্রধানতম শিল্প এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখে। এটি উত্তরপ্রদেশের পরিকাঠামো বৃদ্ধিকে যথেষ্ট সহায়তা করে।
বিমান মাধ্যমে
এই রাজ্যে চারটি অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর আছে যথা আগ্রা, কানপুর, লখনউ, এবং বারাণসী। এখানে সমস্ত প্রধান গন্তব্যস্থলগুলি বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থা দ্বারা নিয়মিত উড়ানের মাধ্যমে দিল্লি, মুম্বাই-এর মত গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে সংযুক্ত।
সড়ক মাধ্যমে
একটি বিস্তৃত সড়ক সংযোগের মাধ্যমে এই রাজ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জড়িত। ২,২৫,২৬,২৭,২৯ ও ৪৫-নং জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য মহাসড়ক এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত গন্তব্যস্থল আগ্রা, দিল্লি থেকে প্রায় ৪ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
রেল মাধ্যমে
আগ্রা, বারাণসী, লখনউ-এর ন্যায় রাজ্যের উল্লেখযোগ্য পর্যটক গন্তব্যগুলি দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সুবিধাজনকভাবে রেল দ্বারা সু-সংযুক্ত। অনেক দ্রুতগামী, অতি দ্রুতগামী এবং যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়মিত ভিত্তিতে এই সব স্টেশনগুলিতে পরিষেবা দিয়ে থাকে।
উত্তরপ্রদেশের দর্শনীয় স্থান
উত্তর প্রদেশের পর্যটন গন্তব্যস্থলগুলির সম্পর্কে আলোচনা করলে, হিমালয়ের পাদদেশের চিত্র অনুপম স্থানগুলির কথা বিস্তারিতভাবে বলতেই হয়! হিমালয়ের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে স্থিত, উত্তর প্রদেশ পর্যটন স্থল প্রকৃতপক্ষে, পর্যটকদের আহ্লাদিত করে তোলে।
আগ্রা
তাজমহল, লাল কেল্লা ও ফতেপুর সিক্রী- আগ্রাকে বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম আগ্রহদীপ্ত গন্তব্যস্থল হিসাবে গড়ে তুলেছে। আগ্রা তার সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও ধর্মীয় দর্শনশাস্ত্রের জন্য সুপরিচিত, যা শতকের পর শতক ধরে মনুষ্য চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করে এসেছে। আগ্রা বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য – তাজমহলের আবাসস্থল।
আগ্রায় পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
দিল্লী, খাজুরাহো ও বারাণসীর সঙ্গে ইন্ডিয়ান এয়্যারলাইনস্-এর দ্বারা আগ্রা সুসংযুক্ত রয়েছে। খেরিয়া বিমানবন্দর গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া ট্যূরিস্ট অফিস (ভারত সরকারের পর্যটন দপ্তর) থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
রেলপথ মাধ্যমে
আগ্রা প্রধান রেল পথের উপর দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকের বিশিষ্ট রেলওয়ে জংশন বা সংযোগস্থল। শতাব্দী এক্সপ্রেস (দিল্লী ও ভূপালের মধ্যবর্তী) এবং তাজ এক্সপ্রেস (দিল্লী ও গোয়ালিয়রের মধ্যবর্তী) আগ্রায় পৌঁছানো সহজলব্ধ করে তুলেছে।
সড়ক মাধ্যমে
আগ্রা থেকে বেশ কয়েকটি জায়গার সড়ক দূরত্ব হল; ভরতপুর – ৫৪ কিলোমিটার, দিল্লী – ২০৪ কিলোমিটার এবং গোয়ালিয়র – ১১৯ কিলোমিটার।
আগ্রায় পর্যটন আকর্ষণ
মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর প্রিয় রাণী মুমতাজের এক স্মারক হিসাবে তাজমহল নির্মাণ করেন। এটি ১৬৫৩ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত হয়। এটি ভারতের সবচেয়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মৃতিসৌধ।
আকবরের দ্বারা নির্মিত, হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যের এক শ্রেষ্ঠ মিশ্রন রূপে সিকান্দ্রা ফোর্ট, তাঁর দর্শন ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। এটি আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর ১৬১৩ খ্রীষ্টাব্দে সম্পূর্ণ করেন।
মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৬৫ খ্রীষ্টাব্দে এই দূর্গটির নির্মাণ শুরু করেন, তবে অবশেষে তাঁর প্রপৌত্র শাহজাহানের সময়কালে এটির কাজ সুসম্পন্ন হয়।
এটি হল আকবরের রাজ দরবারে নিবেদিত একজন ফরাসি মির্জা ঘিয়াস বেগ-এর সমাধিস্থল। এই সমাধিসৌধটি ১৬২২-১৬২৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাণী, নূরজাঁহান নির্মাণ করেছিলেন।
রাধাস্বামী ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার পবিত্র বিভুতি এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এই প্রাঙ্গনে একটি সুন্দর মন্দির রয়েছে।
এলাহাবাদ
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, সৃষ্টিকর্তা ভগবান ব্রহ্মা এলাহাবাদকে সমম্ত তীর্থকেন্দ্রের সেরা বলে অভিহিত করেন। এলাহাবাদ, তিনটি নদী গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত বারাণসী থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ভারতের এক সবচেয়ে প্রাচীনতম শহর ও তীর্থস্থান। এলাহাবাদ কুম্ভ এং অর্ধকুম্ভ মেলার জন্য বিখ্যাত।
এলাহাবাদ, উত্তর প্রদেশের সবচেয়ে এক প্রসিদ্ধ পর্যটন গন্তব্যস্থল। এলাহাবাদের ভ্রমণমূলক স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে –
- সঙ্গম।
- এলাহাবাদ ফোর্ট।
- খুসরু বাগ।
- এলাহাবাদ মিউজিয়াম।
- আনন্দ ভবন।
- স্বরাজ ভবন।
- এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়।
এলাহাবাদে পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
নিকটবর্তী বিমানবন্দর ১৪৭ কিলোমিটার দূরে বারাণসী ও ২১০ কিলোমিটার দূরে লখনউ-তে অবস্থিত।
রেল মাধ্যমে
এলাহাবাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন – কলকাতা, দিল্লী, পাটনা, গুয়াহাটি, চেন্নাই, মুম্বাই, গোয়ালিয়র, মীরাট, লখনউ, কানপুর ও বারাণসীর সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে।
সড়ক মাধ্যমে
এলাহাবাদ ২-নং এবং ২৭-নং জাতীয় সড়কের উপর অবস্থিত। এখান থেকে আগ্রা – ৪৩৩ কিলোমিটার, কানপুর – ২০০ কিলোমিটার এবং আহমেদাবাদ – ১২০৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এলাহাবাদে পর্যটন আকর্ষণ
এখানে তিনটি পবিত্র নদী গঙ্গা, যমুনা, এবং সরস্বতীর একত্রীকরণ ঘটেছে।কুম্ভ মেলা এবং অর্ধ কুম্ভ মেলা চলাকালীন এটি সমগ্র দেশের অসংখ ভক্তদের আকৃষ্ট করে।
সম্রাট আকবর ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদী তীরে এই সুউচ্চ দুর্গটি নির্মাণ করেন।২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এক অতি প্রাচীন পালিশ করা বেলেপাথরের অশোক স্তম্ভ এই দুর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে।
এটি সম্ভবত এশিয়ার সেরা বিদেশী ক্যাথিড্রাল। এটি সেই সমস্ত মানুষের স্মরণে নিবেদিত যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন। এটি ত্রয়োদশ শতকের গথিক স্থাপত্য শৈলীর একটি নিদর্শন। এটি স্যার উইলিয়াম এমারসন দ্বারা পরিকল্পিত এবং যার মধ্যদিয়ে ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের প্রতিফলন ঘটে।
হনুমান মন্দির সঙ্গমের নিকটে অবস্থিত। এই মন্দিরের অভ্যান্তরে প্রভু হনুমানের একটি বৃহৎ মূর্তি রয়েছে।
এখানে আপনি একটি স্বর্গীয় যাত্রা উপভোগ করতে পারেন। চাঁদের একটি নকশা এই গ্রহমণ্ডলীতে প্রদর্শন করা হয়।
বারাণসী
বারাণসী বিশ্বের একটি প্রাচীন প্রাণবন্ত শহর। বারাণসীর সর্বপ্রথম বিবরণ পাওয়া যায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ এবং সেইসাথে মহাভারত মহাকাব্যে। পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তী এবং ধর্মের সঙ্গে এর সংযোগ সারা পৃথিবী থেকে বহু সংখ্যক তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে।হিন্দু পুরাণে বারাণসীর গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।
বারাণসী ওরফে বেনারস, উত্তরপ্রদেশ পর্যটক আকর্ষণের একটি অপরিহার্য অংশ। বারাণসীর প্রধান আকর্ষণ গুলি পরিদর্শনযোগ্য –
- ঘাট।
- সারনাথ।
- রামনগর।
- অশোক স্তম্ভ।
বারাণসী পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
ভারতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা পরিচালিত হয় বাবতপুর বিমানবন্দর থেকে। এই বিমানবন্দর বারাণসী থেকে ২২ কিলোমিটার এবং সারনাথ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। একটি সরাসরি দৈনিক ফ্লাইট বারাণসী এবং নয়া দিল্লীর মধ্যে পরিষেবা প্রদান করে।
রেল মাধ্যমে
বারাণসী একটি বিশিষ্ট রেল জংশন। দেশের সকল মেট্রো এবং প্রধান শহর থেকে বহু ট্রেন এই শহর দিয়ে যাতায়াত করে।বারাণসী স্টেশনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন হল – কাশী বিশ্বনাথ এক্সপ্রেস (বারাণসী-দিল্লী), শ্রমজীবী এক্সপ্রেস (পাটনা – বারাণসী – দিল্লী), ফারাক্কা এক্সপ্রেস (মালদা শহর – বারাণসী – ভিওয়ানি), এবং সরযূ-যমুনা এক্সপ্রেস (মুজফফরপুর-বারাণসী-দিল্লী)।
সড়ক মাধ্যমে
বারাণসী মোটরোপযোগী সড়ক দ্বারা ভারতের বাকি অংশের সাথে সুসংযুক্ত। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দূরত্ব হল – আগ্রা – ৫৬৫ কিলোমিটার, এলাহাবাদ – ১২৮ কিলোমিটার, এবং ভোপাল – ৭৯১ কিলোমিটার।
বারাণসীর পর্যটন আকর্ষণ
এটি স্বর্ণ মন্দির নামেও পরিচিত। বারাণসীর এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা প্রভু শিবকে নিবেদিত। বারাণসীর মন্দিরের এই শিবলিঙ্গের ধর্মীয় তাৎপর্য ঘাট এবং গঙ্গার থেকেও বেশী।
সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ হাইয়ার তিবেতান স্টাডিজ – সমগ্র বিশ্বের মধ্যে এটি এই ধরনের সেরা প্রতিষ্ঠান। এখানে তিব্বতি ভাষায় শিক্ষা প্রদান করা হয়। বর্তমানে এটি সারনাথে অবস্থিত। এটি তিব্বতি পাণ্ডুলিপি, বৌদ্ধ গ্রন্থ এবং অন্যান্য পত্রিকার বিরল সংগ্রহের জন্য সুবিখ্যাত।
মহারাজা বেনারস বিদ্যা মন্দির মিউজিয়াম
মহারাজা বলবন্ত সিং মূলত (১৭৪০ – ৭০ খ্রীষ্টাব্দে) রামনগর দুর্গ নির্মাণ করেন। বেনারস বিদ্যা মন্দির মিউজিয়াম রামনগর দুর্গে অবস্থিত। এই মিউজিয়ামের সংগ্রহ গুলি হল – বস্ত্র, আলংকারিক শিল্পকলার নিদর্শন, প্রাচীন পালকি, আসবাবপত্র ও পাণ্ডুলিপি।
দেওঘর
দেওঘর উত্তরপ্রদেশের বর্তমান ললিতপুর জেলায় অবস্থিত। দেওঘর মহাকাব্যিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক দিক দিয়ে উত্তর প্রদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। ভারতীয় ইতিহাসের কাহিনীতে উত্তর প্রদেশের দেওঘরের নাম অনেক বার উল্লিখিত রয়েছে। দেওঘর ভারতীয় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। উত্তর প্রদেশের দেওঘরের নাম গুপ্ত, গোন্ডদের রাজত্বকালে এবং দিল্লিতে মুসলিম শাসনামলে খুঁজে পাওয়া গেছে। উত্তর প্রদেশের দেওঘর ব্রিটিশ রাজত্বের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
উত্তরপ্রদেশের দেওঘরের দশাবতার মন্দির গুপ্তযুগের একটি সুন্দর বিষ্ণু মন্দির। উত্তর প্রদেশের দেওঘরের এই হিন্দু মন্দির পূর্বে উত্তর ভারতের পঞ্চায়তন মন্দির নামে পরিচিত ছিল এবং এছাড়াও ‘দেওঘরের মণি’ নামেও অভিহিত হত। এই মন্দির তার রথিকা প্যানেলের জন্য জনপ্রিয় এবং এটি তার শিখর সহ ভারতের প্রথম মন্দির হিসাবে পরিগণিত হয়।
দশাবতার মন্দির ছাড়াও উত্তরপ্রদেশের দেওঘর জৈন কেন্দ্রের জন্য ভারতে বিখ্যাত। বর্তমানে, উত্তরপ্রদেশের দেওঘর প্রায় ৩১-টি অসাধারণ প্রাচীন জৈন মন্দিরের অধিকারী। এই জৈন মন্দিরের ভেতরের প্যানেলগুলিতে জৈন পুরাণের পরিদৃশ্য বর্ণনা করে হয় ও এই মন্দিরের দেওয়ালে তীর্থঙ্করের চিত্র, ব্রত স্তম্ভ এবং ব্রত ফলক খোদাইকৃত রয়েছে। উত্তর প্রদেশের দেওঘরের এই স্থানটি ষষ্ঠ থেকে সপ্তাদশ শতকের সময় বিখ্যাত জৈন কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হয়। এই মন্দির দেওঘর দুর্গে অবস্থিত।
দেওঘর প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়ামে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওঘরের পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে সংগৃহীত বহ প্রাচীন শিল্প ও সেরা ভাস্কর্য রয়েছে।
কালিঞ্জর
কালিঞ্জর শহর এবং দূর্গের মধ্যযুগীয় সময়ের সুকৌশলী গুরুত্ব ছিল। এটি জেজাকভূক্তি নামে অভিহিত বুন্দেলখন্ডের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে অবস্থিত। নবম থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত কালিঞ্জর দূর্গ, চান্ডেলার শক্তিকেন্দ্র ছিল এবং মুঘলদের সময় পর্যন্ত এটি তার গুরুত্ব হারায় নি।
অবশেষে, আকবর ১৫৬৯ সালে জয়লাভ করেন এবং এটি তাঁর দরবারের “নবরত্ন”-এর মধ্যে অন্যতম প্রতিভাশীল বীরবলকে উপহার দেন। পরবর্তীকালে, ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশদের দ্বারা অবরোধ হওয়ার আগে, এটি কিংবদন্তী বুন্দেলা যোদ্ধা ছত্রসাল এবং পান্নার হরদেব শাহ-র ক্ষমতাধীনে চলে যায়।
কালিঞ্জর দুর্গ
এই দুর্গ বিন্ধ্য পর্বতমালার উপর ৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।এই দুর্গ সাতটি প্রবেশপথ দ্বারা প্রবেশযোগ্য, যথা – আলমগীর দরওয়াজা, গণেশ দ্বার, চৌবুরজি দরওয়াজা, বুদ্ধ ভদ্র দরওয়াজা, হনুমান দ্বার, লাল দরওয়াজা, এবং বড় দরওয়াজা।এই দুর্গের মধ্যে দুটি প্রাসাদ রয়েছে যথা – রাজা মহল ও রানী মহল।
এই দুর্গের অন্যান্য বিশিষ্ট অংশগুলি হল নিম্নরূপ –
- সীতা সেজ – একটি পাথরের বিছানা এবং বালিশ সহ এটি একটি ছোট গুহা যা একদা তপস্বীদের দ্বারা ব্যবহৃত হত।
- বুদ্ধ বুদ্ধি তাল – এই জল কিছু রোগ নিরাময় গুণাবলীর অধিকারী বলে বিশ্বাস করা হয়।
- মৃগধারা – এটি দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি ঝরণা
- কৈতো বার্থ -এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান যেখানে কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়
- নীলকণ্ঠ মন্দির – এই মন্দিরটি পরমর্দি দেব দ্বারা নির্মিত। চান্ডেলা শাসক আল ভৈরবের একটি আঠারটি অস্ত্রসমৃদ্ধ চিত্র ও প্রভু শিবের একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টিভঙ্গি হল এই স্থানের একটি প্রধান আকর্ষণ।
- ভংখনদেশ্বর মহাদেব মন্দির – কালিঞ্জরের এই মন্দির শিবসারি গঙ্গার উৎসে অবস্থিত।
কপিলবস্তু
কপিলবস্তু শাক্য বংশের প্রাচীন রাজধানী ছিল।শাক্য শাসক বুদ্ধদেবের জনক ছিলেন। ২৯ বছর বয়সে বুদ্ধদেব কপিলবস্তুর প্রাসাদ ত্যাগ করেন এবং ১২ বছর পরে জ্ঞানার্জনের পর আবার ফিরে আসেন।কপিলবস্তু পিপরাহবা এবং গনভরিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত।কপিলবস্তুর একটি বৃহৎ স্তূপে বুদ্ধের অস্থিভস্ম রয়েছে বলে মনে করা হয়।
কপিলবস্তুর উৎসব
কপিলবস্তু বুদ্ধমহোৎসব : উত্তর প্রদেশ পর্যটন বিভাগ ২৯-শে ডিসেম্বর থেকে ৩১-শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উৎসব আয়োজন করে।
কার্তিক পূর্ণিমা / শ্রাবণ মেলা
এটি নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পালিত হয়। এটি একটি পবিত্র দিন হিসেবে গণ্য হয় যখন বারাণসী ঘাট হাজার হাজার মাটির প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়। বহু সংখ্যক পরিদর্শক এই আকর্ষণীয় দৃশ্য দেখতে এই সময় এই স্থানে আসেন।
এটি মকর সংক্রান্তিতে শুরু হয় এবং মহা শিবরাত্রিতে সমাপ্ত হয়। মাঘ মেলা কুম্ভ মেলার বার্ষিক সংস্করণ হিসাবে পরিচিত। এটি এলাহাবাদের সঙ্গমে সঞ্চালিত হয়। এই সময় সঙ্গমে একটি পবিত্র স্নান গ্রহণ করা অত্যন্ত মঙ্গলময় বলে বিশ্বাস করা হয়।
দশেরা উৎসব ভারতের এক অন্যতম বিখ্যাত উৎসব। এই উৎসব সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে পালিত হয়। প্রথম নয়টি রাত্রি দেবী দুর্গার উপাসনা হয় এবং এই রাত্রি “নবরাত্রি” হিসাবে পরিচিত। দশেরার দশম দিনে দুর্গা দেবীকে নিবেদন জানানো হয়।
কপিলবস্তুর পর্যটক আকর্ষণ
এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ১৯৭৩-৭৪ সালের মধ্যে উৎখননের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়। এখানে যেই মোহর এবং শিলালিপি গুলি উৎখননের মাধ্যমে পাওয়া গেছে সেগুলি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন বড় পৃষ্ঠপোষক কনিষ্কের আমলের অন্তর্গত বলে মানা হয়।
ডঃ কে.এম. শ্রীবাস্তব ভগবান বুদ্ধের পিতা রাজা শুদ্ধোদনের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষকে খননকৃত করেন।ভগবান বুদ্ধ তার জীবনের প্রথম ২৯-টি বছর এখানে অতিবাহিত করেছেন বলা মানা হয়।
মথুরা
মথুরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত। এটি যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি দিল্লীর দক্ষিণ-পূর্বে ১৪৫ কিলোমিটার দূরে এবং আগ্রার উত্তর-পশ্চিমে ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি সমানভাবে বৌদ্ধ, জৈন এবং ব্রাহ্মণদের দ্বারা সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানে, মথুরা উভয়ই ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ।
মথুরা পৌঁছানোর উপায়
বিমান মাধ্যমে
নিকটতম বিমানবন্দর হল খেরিয়া (আগ্রা) – ৬২ কিলোমিটার।
রেলপথ মাধ্যমে
মথুরা মধ্য ও পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান লাইনে অবস্থিত। গোয়ালিয়র, কলকাতা, দিল্লী, আগ্রা, মু্ম্বই, লখনউ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ শহর মথুরার সঙ্গে সুসংযুক্ত।
সড়ক মাধ্যমে
ভারতের সমস্ত প্রধান শহরগুলির সঙ্গে মথুরা জাতীয় সড়ক দ্বারা যুক্ত। উত্তর প্রদেশ , মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও হরিয়ানা রাষ্ট্রীয় বাস পরিষেবা এই রাজ্যকে ভারতের বাকি অংশগুলির সাথে সংযুক্ত করে।
স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যম : ব্যক্তিগত বাস, টেম্পো, এবং রিকশা।
মথুরার পর্যটন আকর্ষণ
এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসকে হনন করার পরে এখানে বিশ্রাম করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
এই মন্দিরের ভাস্কর্য এবং চিত্রাঙ্কণ এর প্রধান আকর্ষণ। এটি শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত।
এটি শহরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির।হোলি, জন্মাষ্টমী এবং দীপাবলীর সময় এই মন্দিরটিকে ব্যপকভাবে সুসজ্জিত করা হয়।
আবো-ইন নবীর-খান ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মিত করেন। এটি উজ্জ্বল রঙ্গিন মোজাইক সহ চারটি সুউচ্চ মিনার যার মধ্যে কয়েকটি প্যানেল বর্তমানে বিদ্যমান।
এটি গুপ্ত এবং কুষান আমলের (৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব- ১২০০ খ্রিস্টাব্দ)-এর কিছু বিরল পণ্য সহ মথুরার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। এটি ডামপিয়ার পার্কে অবস্থিত।
কনৌজ
কনৌজ শহর, ভারতর উত্তর প্রদেশের কানপুরের থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উত্তর প্রদেশের কনৌজ পবিত্র গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় ভারতীয় ইতিহাসে উত্তর প্রদেশের কনৌজ একটি আধিপত্যকারী স্থান অধিকার করে আছে। সপ্তম শতাব্দীর সুপ্রসিদ্ধ শাসক হর্ষবর্ধনের শাসনামলে কনৌজ তার রাজধানী হিসাবে পরিণত হয়।
দ্বাদশ শতাব্দীতে উত্তর প্রদেশের কনৌজকে জয়চাঁদের রাজধানী করা হয়। রাজা জয়চাঁদ, সক্রিয়ভাবে বিশ্বাসঘাতক আক্রমণকারী মোহম্মদ ঘোরীর সাথে সক্রিয়ভাবে সমর্থনের দ্বারা তিনি দিল্লি থেকে রাজপুত শাসকদের সাথে একইসঙ্গে পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন। বর্তমানে, উত্তর প্রদেশের কনৌজ আতরের জন্য বিখ্যাত যা সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অজয় পালের প্রাচীন মন্দির এখনও ভারতের উত্তর প্রদেশের কনৌজে রয়েছে যা কনৌজের গৌরবময় অতীতের ইতিহাসের কাহিনীকে বর্ণনা করে।
২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে কনৌজের আনুমানিক জনসংখ্যা হল ৭১.৫৩০। কনৌজের গড় শিক্ষার হার হল ৫৮ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশের কনৌজের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য হল নিম্নরূপ –
- লাখ বাহোসি পক্ষী অভয়ারণ্য।
- অন্নপূর্ণা মন্দির।
- কনৌজ মিউজিয়াম।
- গৌরী শংকর মন্দির।
- হাজী শরীফের দরগাহ।
কনৌজের লাখ বাহোসি পক্ষী অভয়ারণ্য একটি জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ। প্রকৃতি প্রেমী এবং পক্ষী পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় এবং পরিযায়ী পাখিদের বিপুল বৈচিত্র্য দেখতে শীতকালে এই পক্ষী অভয়ারণ্যে ভিড় করে আসে।কনৌজ মিউজিয়ামে হস্তনির্মিত বস্তু সংরক্ষিত রয়েছে যেগুলির চমৎকার প্রত্নতাত্ত্বিক তাৎপর্য রয়েছে। আপনি এখানে প্রাচীনকালের অন্তর্গত মৌর্য যুগ, সুদাগ যুগ, কুষান যুগ, গুপ্তযুগ, পরবর্তী গুপ্ত যুগ এবং হর্ষ যুগের শিল্পকলা এবং ভাস্কর্যের একটি মূল্যবান সংগ্রহ দেখতে পাবেন।
উত্তরপ্রদেশের কনৌজের প্রাচীন মন্দির গৌরী শংকর, অন্নপূর্ণা এবং হাজী শরীফের দরগাহ অতীতের সময় থেকে প্রধান ধর্মীয় স্থান হিসাবে পূজিত হয়ে আসছে যা প্রচুর দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে যারা দূর দুরান্ত থেকে ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে এখানে আসেন।
বৃন্দাবন
বৃন্দাবন যমুনা নদীর তীরে মথুরার উত্তরে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। একটি ধর্মীয় স্থান হিসাবে বৃন্দাবনের গুরুত্বও মথুরার থেকে কোন অংশে কম নয়। এই স্থান ঘনিষ্ঠভাবে কৃষ্ণের সঙ্গে সংযুক্ত। ভারতের বৃন্দাবন মন্দির চত্বরে ভারতের কিছু বিখ্যাত মন্দির রয়েছে।
বৃন্দাবনের মন্দির সমূহ
এটি একটি আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক সংগঠন। সারা বিশ্ব জুড়ে এর ৪০০-টি কেন্দ্র রয়েছে। সারা বিশ্বের হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ও পর্যটক এই মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন।
জয়পুরের রাজা মানসিংহ ১৫৯০ সালে এটি নির্মিত করেন। এই মন্দিরটি ভারতের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের একটি দৃষ্টান্তমূলক নিদর্শন। এই মন্দিরের দেওয়ালের গড় পুরত্ব হল ১০ ফুট। এটি প্রকৃতপক্ষে সাত তলা ছিল কিন্তু তার উপরের চারটি তলা ঔরঙ্গজেবের আমলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
এটি বৃন্দাবনের দীর্ঘতম মন্দির। এটি ১৮৫১ সালে শেঠ গোবিন্দ দাস এবং শেঠ লক্ষ্মী চাঁদ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্য নিদর্শনের একটি নমুনা।
এটি উত্তর ভারতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। ১৮৬০ সালে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। এর বিস্ময়কর স্থাপত্য ভাস্কর্য এবং বারোটি মার্বেল পাথরের সর্পিলাকার স্তম্ভ এটিকে লক্ষ্যণীয় করে তুলেছে।
এটি প্রাচীন হিন্দু স্থাপত্যের একটি অবশেষ। এটি ১৬২৬ সালে নির্মিত হয়। এই মন্দিরটি সপ্তাদশ শতাব্দীতে ধ্বংস হয়।
এই মন্দিরটির শৈলী অনেকটাই মদনমোহন মন্দিরের অনুরূপ। জয়পুরের একজন সেখাওয়াত রাজপুত রাই শিলজি এই মন্দিরটি নির্মান করেন।
এর উজ্জ্বল কাঁচের কাজ এটিকে অনন্য করে তুলেছে।
মুলতানের কাপুর রাম দাস এটি নির্মিত করেছেন বলে মনে করা হয়। এটি বৃন্দাবনে কালীঘাটের নিকটে অবস্থিত। ঔরঙ্গজেবের আমলে মদনমোহনের প্রকৃত চিত্রটি কারাউলিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
কুশীনগর
কুশীনগর বৌদ্ধ তীর্থের এক প্রধান কেন্দ্র। কুশীনগর মিনারের তিনটি পৃথক বিভাগ হল – নির্বাণ মন্দিরের মূল স্থান কেন্দ্রীয় স্তূপ এবং পার্শ্ববর্তী মন্দির, দক্ষিণ-পশ্চিমের মাথাকুয়ার মন্দির এবং রম্ভার স্তূপ। এই স্থানে ভগবান বুদ্ধ তার দেহ ত্যাগ করেন এবং মহাপরিনির্বাণ অর্জন করেন।
কুশীনগর উৎসব
এপ্রিল বা মে মাসের পূর্ণিমার রাতে বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয় যা বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, ভগবান বুদ্ধের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে পালন করা হয়।
কুশীনগরের পর্যটক আকর্ষণ
ইঁট দ্বারা তৈরি এই বিশাল স্তূপ ১৮৭৬ সালে কারলাইল দ্বারা আবিস্কৃত হয়। এটি ২.৭৪ মিটার উচ্চ। এই স্থানে একটি তামার পাত্রে কিছু লিপি পাওয়া যায় যেখানে এই স্থানে ভগবান বুদ্ধের দেহাবশেষ স্থাপন করার কথা বর্ণনা করা আছে।
৬ মিটারেরও দীর্ঘ বুদ্ধের এক শায়িত মূর্তি এখানে স্থাপন করা রয়েছে। ১৮৭৬ সালের খননকার্য থেকে এই মূর্তিটির সন্ধান পাওয়া যায়। এই মূর্তিটি চুনার বেলেপাথরে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে যা সম্ভবত পঞ্চম শতাব্দীর অন্তর্গত।
এই মন্দির পরিনির্বাণ স্তূপ থেকে প্রায় ৪০০ গজ দূরে অবস্থিত। প্রভু বুদ্ধের একটি কালো পাথরের মূর্তি এখান থেকে পাওয়া গেছে। ভগবান বুদ্ধ এখানে তার অন্তিম বক্তৃতা এখানে দিয়েছিলেন।
এটি ৪৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি বৃহৎ স্তূপ যা মাথাকুয়ার মন্দির থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে ভগবান বুদ্ধের শবদাহ করা হয়। এই স্তূপ প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুসারে মুকুট-বন্ধন বিহার হিসাবে উল্লিখিত।
ভগবান বুদ্ধের একটি সুন্দর মূর্তি এই স্থানের প্রধান আকর্ষণ।
বস্তুত জাপানের অষ্ট ধাতুর তৈরি ভগবান বুদ্ধের একটি সুন্দর মূর্তি কুশীনগরের এই মন্দিরে রয়েছে।
উত্তর প্রদেশে কেনাকাটা
উত্তরপ্রদেশে কেনাকাটা করা একটি প্রকৃত আনন্দের বিষয়। এই রাজ্য হস্তশিল্প ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা উত্তরপ্রদেশ কে কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় করেছে। উত্তরপ্রদেশের দক্ষ কারিগরদের হাতে পাথর খোদাই, সূচিকর্ম ও বয়ন পরিপূর্ণতা লাভ করে ও একটি উচ্চতা অর্জন করে। যেখানে মথুরা এবং বারাণসী পাথর খোদাই কার্যে উন্নত সেখানে আগ্রা এবং রাজ্যের রাজধানী লখনউ সূচিকর্মে প্রসিদ্ধ।
উত্তরপ্রদেশের যেকোন জায়গায় আপনি সূক্ষ্ম পাথর খোদিত পণ্য যেমনঃ মার্বেল বক্স, ওয়াল প্লেট, টেবিল টপ্ এবং অবশ্যই তাজমহলের অসংখ্য প্রতিলিপি খুঁজে পাবেন। অধিকাংশই মার্বেল, বেলেপাথর, এবং মূল্যবান ও আংশিক মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি। লখনউ-এর চিকনকারী সূচিকর্ম এবং আগ্রার জারদৌসি হল অভিভূতকর সুন্দর শিল্পকর্মের এক নিদর্শন, যা উত্তর প্রদেশে কেনাকাটা করার সময় আপনার পছন্দের জিনিষ বেছে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাকে হতবু্দ্ধিকর করে তুলবে।
এছাড়াও উত্তরপ্রদেশে কেনাকাটার জন্য আরও অনেক অন্যান্য জিনিস রয়েছে যেমন কানপুরের চর্মজাত দ্রব্য, ফিরোজাবাদের কাচের জিনিস।
উত্তর প্রদেশের কেনাকাটা করার সময়, সন্ধান করুন :
জারদৌসি | পাথর খোদিত পণ্য |
সিল্ক শাড়ী | কাঁচের পাত্র |
চিকনকারী | চামড়ার কারুশিল্প |
অলংঙ্কার | মৃৎশিল্প |
ধাতু শিল্প | কঙ্কণ |
আপনি রাজ্যের যেকোন জায়গায় এইসব কেনাকাটা করতে পারেন। উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গন্তব্যস্থল এবং শহরগুলিতে সরকারি দোকান এবং ব্যক্তিগত দোকানগুলি আপনাকে কেনাকাটা করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেবে। বিচিত্র হস্তনির্মিত ভাণ্ডারের সাঙ্গে একটি বর্ণময় বাজার আপনর চক্ষু সার্থক করবে।
উত্তর প্রদেশের হোটেল
উত্তরপ্রদেশ সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির একটি সম্মিলন। এর ফলে, সারা বছর ধরে মানুষকে এই রাজ্যে আসতে দেখা যায়। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানকার পর্যটন স্থলগুলির পাশপাশি ধর্মীয় স্থানগুলিও ভ্রমন করে। পর্যটক এবং ভ্রমণকারীদের সমন্বয়বিধান করার জন্য, উত্তরপ্রদেশে অনেক হোটেল আছে যা সব ধরনের ভ্রমণকারীর চাহিদা পূরন করে। এখানে বাজেট হোটেল, মাঝারি মানের হোটেল থেকে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল এবং রিসর্ট রয়েছে। সুতরাং উত্তরপ্রদেশে থাকার জায়গার কোনো অভাব নেই। উত্তর প্রদেশের জনপ্রিয় হোটেল গুলির মধ্যে কয়েকটি হল :
- ওবেরয় অমরিভলাস, আগ্রা।
- ট্রাইডেন্ট, আগ্রা।
- রেডিসন ব্লু আগ্রা তাজ পূর্ব গেট।
- আইডিয়াল-এর হোটেল রিভাটাস, বারাণসী।
- তাজ-এর ভিভান্তা-গোমতী নগর, লখনউ।
- দ্য কন্টিনেন্টাল্ ক্লার্কস ইন্, লখনউ।
- হোটেল ইয়াএিক, এলাহাবাদ।
- ব্রিজওয়াসি ল্যান্ডস্ ইন্, মথুরা।
- ক্লার্কস ইন্, বেরিলি।
- গডউইন হোটেল, মীরাট।
- লিটল্ শেফ্ হোটেল, কানপুর।
|