হিমাচল প্রদেশ মানচিত্র

Himachal Pradesh Map in Bengali

হিমাচল প্রদেশ মানচিত্র
* জেলা, রেলপথ, নদী, প্রধান সড়ক সংযোগ সহ হিমাচল প্রদেশ মানচিত্র৷

হিমাচল প্রদেশের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.himachal.gov.in
স্থাপনের তারিখ 25 জানুয়ারি, 1971
আয়তন 55,673 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 123/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 6,864,602
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 3,481,873
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 3,382,729
জেলার সংখ্যা 12
রাজধানী সিমলা
নদীসমূহ রবি, বিপাশা, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, যমুনা
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান পিন ভ্যালি জাতীয় উদ্যান, বৃহৎ হিমালয় জাতীয় উদ্যান, রেণুকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, চৈল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কালাতোপে খাজ্জিয়ার বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সিম্বালবারা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ভাষা হিন্দি, ইংরাজী, পাঞ্জাবি, কিন্নৌরি, পাহাড়ি, কাঙ্গরি এবং দোগ্রি
প্রতিবেশী রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড
রাষ্ট্রীয় পশু বরফি চিতা
রাষ্ট্রীয় পাখি পশ্চিমী ট্রাগোপান
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ দেবদারু
রাষ্ট্রীয় ফুল গোলাপী রডোডেনড্রন
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 65535
সাক্ষরতার হার (2011) 68.74%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 974
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 68
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 4

হিমাচল প্রদেশ সম্পর্কে

দেব ভূমি বা “ল্যান্ড অফ গড” নামে অভিহিত হিমাচল প্রদেশ, উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমে পাঞ্জাব, দক্ষিণে উত্তর প্রদেশ এবং পূর্বে উত্তরাঞ্চল দ্বারা সীমান্তবর্তী রয়েছে। “হিমাচল” শব্দের অর্থ হল তুষারের আবাস। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী হল সিমলা এবং রাজ্যের মোট এলাকা হল ৫৫,৬৭৩ বর্গকিলোমিটার। এই রাজ্য অপরিমেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত এবং নিঃসন্দেহে, বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় গন্তব্য স্থল। এলাকার অধিকাংশই পর্বতময় -মহৎ পর্বতশ্রেণী, গভীর উপত্যকা, আন্দোলিত জলপ্রপাত ও ঘন সবুজ বন দ্বারা আবৃত। স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে এখানকার জলবায়ুও পরিবর্তিত হয়, কোনও কোনও এলাকায় ভারী বর্ষণ হয় আবার অন্য কিছু জায়গায় একেবারেই বৃষ্টিপাত হয় না। উচ্চতর উচ্চতায় রাজ্যের অধিকাংশ অংশে তুষারপাত একটি অতি সাধারণ দৃশ্য। এই রাজ্যে ১২টি জেলা রয়েছে, যেগুলিকে আবার প্রশাসনিক সুবিধার্থে ব্লক, শহর এবং গ্রামে বিভক্ত করা হয়েছে। হিমাচল প্রদেশ, দেশের অন্তত কম দুর্নীতিগ্রস্ত দ্বিতীয় রাজ্য হিসাবে পরিচিত। বিপুল আপেলের উৎপাদনের জন্য, হিমাচল প্রদেশ “আপেলের রাজ্য” হিসাবেও পরিচিত।

ইতিহাস

সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন গোত্রের মানুষের বসবাসের জন্য, হিমাচল প্রদেশের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। সিন্ধু সভ্যতার যুগের অধিবাসীরাই হল প্রাচীনতম, যারা খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর সময়কালে গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে এখানে এসেছিল, শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপনের জন্য। শীঘ্রই মোঙ্গলীয়রা এই অঞ্চল দখল করে এবং ক্রমে আর্যরা। ভারতীয় মহাকাব্য অনুযায়ী, হিমাচল প্রদেশ কিছু ছোট প্রজাতন্ত্র বা জনপদের সমষ্টি ছিল, যা এক-একটি রাজ্য ও তার সংস্কৃতির একক স্বরূপ। এরপর মুঘলেরা এখানে আসে এবং মুঘল রাজারা যেমন মেহমূদ গজনভী, সিকন্দর লোদী, তিমূর ইত্যাদিরা তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তাগিদে রাজ্যের অনেক স্থান অধিকার করে।

তাদের রাজত্বের পতনের সময়, গোর্খারা এই স্থান দখল করে কিন্তু আ্যংলো-গোর্খা যুদ্ধের সময়ে,এই অঞ্চল হাতছাড়া হয় ও ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। ব্রিটিশরা এই এলাকার সৌন্দর্য দ্বারা সম্পূর্ণরূপে মুগ্ধ হয়ে পড়ে এবং ১৮৫৮ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত এই জায়গায় তাদের আধিপত্য অব্যাহত রাখে। স্বাধীনতার পর, ১৯৪৮ সালে এলাকার ৩০টি অঞ্চল একত্রিত করে হিমাচল প্রদেশ গঠিত হয়। যখন পাঞ্জাব ভৌগোলিকগতভাবে পুনর্গঠন পায় তখন নতুন করে কিছু অংশ এর অন্তর্গত হয়। ১৯৭১ সালে, ভারতীয় সংগঠনে ১৮-তম রাজ্য হিসাবে এটি আবির্ভূত হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান

পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত, হিমাচল প্রদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই রাজ্য, পশ্চিম থেকে পূর্বে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু। ভৌগোলিকগত দিক দিয়ে, এই এলাকাকে তিনটি বিস্তারিত শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে- হিমালয়ের বর্হিভাগ(শিবালিক), হিমালয়ের অর্ন্তভাগ(কেন্দ্রীয় অঞ্চল) এবং বৃহত্তর হিমালয়(অ্যালপাইন অঞ্চল)। বিস্তৃত উপত্যকা, বরফাবৃত পর্বত, সুন্দর হ্রদ ও নদী ,বেগবান ঝরণা ইত্যাদির জন্য হিমাচল প্রদেশ সুপরিচিত। মোট এলাকার প্রায় ৬৪ শতাংশ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত – যা আর্দ্র দেবদারু বৃক্ষ, বান ওক অরণ্য, আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ পর্ণমোচী অরণ্য, সরলবর্গীয় বন, অ্যালপাইন চারণভূমি, রডোডেনড্রন গুল্মজাতীয় বৃক্ষের অরণ্য দ্বারা গঠিত। জলবায়ু প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে আধা গ্রীষ্মমন্ডলীয়তে পরিবর্তিত হয়।

গ্রীষ্মকালে, এপ্রিল থেকে জুন মাস- এক আরামপ্রদ জলবায়ু অনুভূত হয় অন্যদিকে শীতকালে চরম তুষারপাতের কারণে খুবই শীতল অনুভূত হয়। বর্ষাকাল এই জায়গার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলতে থাকে। নদী ও ঝরণা এসময় পুনরায় ভরে ওঠে এবং সবুজ গাছপালার চমকপ্রদ দৃশ্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখানকার প্রধান নদীগুলি হল চন্দ্রভাগা, বিপাশা, শতদ্রু এবং রবি। নদীগুলি সারাবছর প্রবাহিত হয় এবং এগুলি প্রধানত পাহাড়ের হিমবাহ দ্বারা প্রতিপালিত হয়। হিমাচল প্রদেশের কয়েকটি হিমবাহ হল বড়া শিগরি, ভাগা, চন্দ্র।

সরকার এবং রাষ্ট্রনীতি

রাজ্যটি ১২টি জেলা, ৭৫টি তালুক, ৫২টি উপবিভাগ, ৭৫টি ব্লক এবং প্রায় ২০০০০-এরও বেশি গ্রাম এবং ৫৭টি শহরে বিভক্ত রয়েছে। স্বাধীনতার পর গঠিত হওয়ার জন্য, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভার কোনও পূর্ব-সংবিধান ছিল না। তবে, রাজ্যের এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমাবেশে প্রায় ১৪টি ঘরোয়া সংগঠন সহ ৬৮টি আসন রয়েছে। এটির লোকসভার জন্য ৪টি আসন এবং রাজ্যসভার জন্য ৩টি আসন রয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে, কেবলমাত্র ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস(আই.এন.সি) এবং ভারতীয় জনতা দল(বি.জে.পি) ক্রমানুসারে হিমাচল প্রদেশে তাদের নিজস্ব সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ভারতীয় অন্যান্য রাজ্যগুলির ন্যায়, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর চরম ক্ষমতা থাকে এবং সরকারের প্রধান কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন।

শিক্ষা

হিমাচল প্রদেশ ব্রিটিশ ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল এবং অতঃপর এখানকার প্রাথমিক ও পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার মান দেশের বাকিদের তুলনায় বেশ খানিকটা উন্নত মাপের। রাজ্যের সাক্ষরতার হার সমস্ত ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ, বিশেষভাবে হামিরপুর, এমন একটি জেলা যেখানে সাক্ষরতার হার শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এখানে হাজারেরও বেশি বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি শিশুদের, প্রাথমিক সহ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করে এবং এগুলি সি.বি.এস.ই এবং আই.সি.এস.ই পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। স্থানীয় সরকার এই রাজ্যকে দেশের নতুন “শিক্ষাসংক্রান্ত কেন্দ্রস্থল” হিসাবে গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। বস্তুত, হিমাচল প্রদেশই, দেশের প্রথম রাজ্য যেখানে প্রত্যেকটি শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার সম্ভাব্য সুযোগ গড়ে উঠেছিল।

এখানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে যেখানে উচ্চাকাঙ্খী প্রার্থীদের জন্য পেশাদারি বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এগুলির পাশাপাশি, এখানে বেশ কিছু সাধারণ ডিগ্রী কলেজও রয়েছে যেখানে রাজ্য, নিজেরাই ছাত্রদেরকে তাদের নিজস্ব মৌলিক উচ্চ শিক্ষায় এগোতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই রাজ্যে কিছু নন গভর্নমেন্ট অরগ্যানাইজেশন(এন.জি.ও) দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও সফলভাবে চলছে।

অর্থনীতি

হিমাচল প্রদেশ এমন একটি রাজ্য, যেটি সবচেয়ে অনগ্রসর রাজ্য থেকে, দেশের সর্বোচ্চ উন্নত রাজ্য হিসাবে নিজেদেরকে রূপান্তরিত করেছে।

অর্থনীতির ৫০ শতাংশ রাজ্যের কৃষি থেকেই আসে, যা এখানকার অধিবাসীদের আয়ের এবং কর্মসংস্থানের প্রাথমিক উৎস হিসাবে ধরা হয়। রাজ্যে উৎপাদিত অন্যান্য ফসলগুলি হল চাল, গম, বার্লি, ভূট্টা ইত্যাদি। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত হওয়ায়, হিমাচল প্রদেশ ফল চাষের জন্য উপযুক্ত উর্বর জমি দ্বারা ধন্য হয়েছে, যা এই রাজ্যের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আপেল, এমন একটি ফল যার চাষ করে, রাজ্য বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয় করে। অন্যান্য কিছু ফল, যেগুলির এখানে চাষ হয় -সেগুলি হল ডুমুর, জলপাই, হপ, বাদাম, মাশরুম, জাফরান, লাল তরমুজ। আনুষঙ্গিক ভাবে উদ্যান ভিত্তিক উৎপাদন যেমন মধু এবং বিভিন্ন ফুলের চাষও এই রাজ্যে ভালো হয়। স্থানীয়দের ক্ষেত্রে পর্যটনও আয়ের একটি উৎস যা রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। এখানকার পর্যাপ্ত বৈদ্যূতিক সচলতার উপর আস্থা রেখে কিছু ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে। রাজ্যের দূষণ মুক্ত পরিবেশ-এই রাজ্যে কিছু বৈদ্যূতিন কমপ্লেক্সের বিকাশে সহায়তা করেছে যা, বর্তমানে রাজ্যের দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে বাস্তবায়িত করেছে।

জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হিমাচল প্রদেশের মোট জনসংখ্যা হল ৬৮,৬৪,৬০২- যেটি দেশের মোট জনসংখ্যার একটি সংক্ষিপ্ত শতাংশ মাত্র। হিমাচল প্রদেশ সেইসব রাজ্যগুলির মধ্যে একটি যাদের সর্বোচ্চ হিন্দু জনসংখ্যা রয়েছে, প্রায় ৯০ শতাংশ। তাদের মধ্যে, প্রধান সম্প্রদায় হল রাজপুত, যারা দীর্ঘদিন আগে এই জায়গায় আসে এবং এখানে বসতি স্থাপন করে। ব্রাক্ষণ এবং রাঠীরা রাজ্যের জনসংখ্যার এক প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। ঘীর্থ সম্প্রদায় বা চৌধুরী সম্প্রদায়দের মানুষ প্রধানত কাংড়া জেলায় দেখতে পাওয়া যায়, তারা সাধারণত জমিদার এবং তারা তাদের জমিগুলি চাষ করার জন্য গরিব কৃষকদের ভাড়া হিসাবে দেয় এবং বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করে। অন্যান্য সম্প্রদায়গুলি হল কান্নেৎ, কোলি, গাড্ডী, গুজ্জর, লাহাৌলি এবং পাঁগাওয়াল।

রাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে জাতিভেদ প্রথা রয়েছে তবে, আধুনিকতার সাথে সাথে এটিরও পরিবর্তন ঘটছে। হিমাচল প্রদেশে বেশ ভালো সংখ্যক তিব্বতী বসবাস করে সুতরাং, হিন্দুধর্মের পরেই যে ধর্ম বেশী অনুসৃত হয় তা হল, বৌদ্ধধর্ম । তারা, প্রধানত তিব্বত থেকে উদ্বাস্তু রূপে আসে এবং সার্বজনীনভাবে লাহাৌল এবং কিন্নৌর জেলায় থাকতে শুরু করে। যেহেতু রাজ্যটির পাঞ্জাবের সাথে একটি সাধারণ সীমানা রয়েছে, সেহেতু শিখ সম্প্রদায়ের কিছু মানুষকে এখনকার শহর ও নগরগুলিতে থাকতে দেখা যায়। মুসলিমরা রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসাবে রয়েছে।

পর্যটন

নিঃসন্দেহে, হিমাচল প্রদেশ তার সুবিশাল ভূ-সংস্হানিক বৈচিত্রের জন্য একটি সেরা দর্শনীয় স্থান। বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা মানুষকে আকর্ষিত করার জন্য, এই রাজ্যে সমস্ত কিছুই আছে যথা-তুষারাবৃত পর্বত, সবুজ অরণ্য অথবা লাল আপেলের বাগান এবং শুদ্ধ বাতাসের স্নিগ্ধতা। সিমলা, মানালি, ছাম্বা ইত্যাদি জায়গাগুলি, সারা বছর ধরে মধুযামিনী দম্পতিদের সবচেয়ে বেশি প্রলুব্ধ করে। অন্যথায়, যে সমস্ত পর্যটক পাহাড়ে চড়ার উত্তেজনা অনুভব করতে ভালোবাসেন তারা নদীতে নৌকা-বিহার, আইস স্কেটিং, প্যারা গ্লাইডিং এবং স্কাইং ইত্যাদি উপভোগ করতে পারেন, এছাড়াও এখানে শান্তিপূর্ণ ছুটি কাটানো যেতে পারে। ভ্রমণার্থীদের আকর্ষিত করার জন্য এখানে মন্দির, গির্জা, মঠ, নদী, পাহাড়ী এলাকা, স্থাপত্যের নির্দশন,বাজার ইত্যাদি আছে।

ধরমশালা, সবচেয়ে শীতলতম পাহাড়ী এলাকা- যেখানে যে কেউ বরফাবৃত প্রসারিত উপত্যকার সাক্ষী হতে পারেন, ঘন উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত, পরিবেশের স্নিগ্ধতা- যা প্রকৃতিমাতা মনুষ্যজাতিকে উপহার দিয়েছেন। পর্যটকরা সিমলার মধ্যে জাখ্খু পর্বত, সেতু, লাক্কার বাজার, সেন্ট মাইকেল’স ক্যাথিড্রাল, স্টেট মিউজিয়াম-এর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন অথবা মল রোডের চারিপাশে ঘোরাঘুরিও করতে পারেন। এই সুন্দর রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত মাশোর্বা, কূফরী, ফাগু- শহরতলির এই কিছু জায়গার আকর্ষনীয় দৃশ্যাবলী প্রকৃতি প্রেমিকদের মুগ্ধ করে তোলে। কুলু, চৈল, কাসৌলি, মণিকরন, ডালহৌসি ইত্যাদি হিমাচল প্রদেশের দর্শনীয় স্থান। নগর, পাহাড়পুর এবং রূকখালা- শহুরে দর্শকদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করায়।

হিমাচল প্রদেশ শহরের দর্শনমূলক স্থান

  • ছাম্বা
  • কাংড়া
  • রোটাং গিরিপথ
  • সিমলা
  • কুলু
  • মানালি
  • ডালহৌসি
  • সোলান

সমাজ ও সংস্কৃতি

হিমাচল প্রদেশ, ভারতের একটি বহুভাষী এবং বহুবর্ণ সংস্কৃতির রাজ্য। যেহেতু প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাতি এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে, তাই এই রাজ্য ভিন্ন সংস্কৃতির ও বর্ণের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা প্রদর্শিত হয়-ভিন্ন প্রকারের রঙিন পোষাক, সঙ্গীতের সুর, উচ্ছসিত অনুষ্ঠান, নৃত্য ভঙ্গি এবং সরল-সাধারণ সমৃ্দ্ধ জীবনধারা দ্বারা। কলা এবং হস্তশিল্প এখানকার সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই রাজ্যের বিশেষত্ব হল পশমিনা শাল বয়ন যা নিয়মিত ভাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও, স্থানীয়দের দ্বারা তৈরি করা হয় কাঠের আসবাব-পত্র, ধাতব গহনা, পাত্র, বড় ধরনের নৌকা ইত্যাদি। সঙ্গীত এবং নৃত্য হিমাচলবাসীদের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য অংশ। লোকসঙ্গীত গুলি প্রধানত দেবদেবীর আহ্বানের সময় গাওয়া হয়। ভারতীয় রাগ-এর উপর ভিত্তি করে, সংস্কার গান – এখানকার লোকেদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রাজ্যের কিছু বিশেষ নৃত্য শৈলী হল শোনা, গী, বূরাহ, লোশার, নাটী ইত্যাদি। বিভিন্ন উৎসব এখানে মহান উদ্যোগ এবং জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়। আন্তর্জাতিক হিমালয় উৎসব প্রতিবছর ধরমশালায় উদযাপিত হয়। স্থানীয় উৎসব যেমন চীসু ও লাহৌলিদের জন্য লাহৌল এবং কাংড়া জেলায় হরিয়ালী উৎসব চরম ধুমধাম ও উচ্ছলতার সঙ্গে পালিত হয়। জাতীয় উৎসব যেমন দীপাবলি, লোহরী, বৈশাখী এবং খ্রীষ্টমাস হিমাচল প্রদেশের মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষা

দেশের উত্তর অংশে রাজ্যটি অবস্থিত হওয়ায়, হিমাচল প্রদেশের সমস্ত অধিবাসী হিন্দি ভাষায় কথা বলতে এবং বুঝতে পারে।

এছাড়াও, সংস্কৃত এবং প্রাকৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি হওয়া পাহাড়ি বা “পার্বত্য ভাষা” এখানকার মানুষদের দ্বিতীয় কথ্য ভাষা হিসাবে প্রচলিত। এখানে ভাষার তিনটি ধরন রয়েছে, উত্তুরে পাহাড়ী, পশ্চিমী পাহাড়ী এবং পূর্বী পাহাড়ী। হিমাচল প্রদেশের মানুষদের দ্বারা দ্বিতীয় ধরনটিই গৃহীত হয়েছে এবং তারা এটিতেই ভিন্ন উপভাষায় কথা বলে। হিমাচলে ব্যবহৃত পাহাড়ীদের কিছু উপভাষা হল চূরাহী, হিমাচলি, মান্ডেয়ালি, কূলুহি ইত্যাদি। এই রাজ্য পাঞ্জাবের নিকটবর্তী হওয়ায় পাঞ্জাবি আরও একটি জনপ্রিয় ভাষা যেটিতে এখানকার কিছু মানুষ কথা বলে। অধিকাংশ কেন্দ্রীয় পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হল ইংরাজী এবং মোটামুটি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কাংড়ী, ডোংরি, কিন্নৌরি-ও এই অঞ্চলের কিছু অধিবাসীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। তিব্বত ছেড়ে আসা তিব্বতীরা এখানে তিব্বতী ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করে। এছাড়াও, ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা অধিবাসীরা- যেমন মারওয়াড়ী, গুজরাটি, বিহারি, বাঙালী ইত্যাদি তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজস্ব ভাষায় কথা বলে।

পরিবহন

হিমাচল প্রদেশের অধিকাংশ ভাগ পার্বত্যময় হওয়ায়, উপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন কঠিন ছিল। তবুও, সরকার সড়ক সংযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং বর্তমানে দেশের সমস্ত পার্বত্য জায়গাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনত্বের সড়ক হিসাবে হিমাচল প্রদেশ পরিচিত। এখানে ৮টি জাতীয় সড়ক রয়েছে যেগুলি রাজ্যকে দেশের বাকিদের সঙ্গে সংযোগ রাখতে সাহা্য্য করেছে। রাজ্যের অভ্যন্তরে, ভ্রমণার্থীদের সুবিধার্থে সমস্ত পর্যটন স্থানগুলি সড়ক মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। শহরের অভ্যন্তরে, মানুষেরা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যক্তিগত বাহন এবং বাসই পছন্দ করে। কালকা সিমলা রেলওয়ে এবং পাঠানকোট-জোগিন্দর নগর রেলওয়ে, রাজ্যের এই দুটি রেলপথ- রাজ্যটিকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। আরও উন্নত সংযোগ ব্যবস্থার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক আরও কিছু রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজ্যের সংযুক্ত তিনটি বিমানবন্দর- রাজধানীর নিকটবর্তী সিমলা বিমানবন্দর, কাংড়া জেলার নিকটবর্তী গগ্গল বিমানবন্দর, কুলু জেলার নিকটে অবস্থিত ভূঁটর বিমানবন্দর দ্বারা হিমাচল প্রদেশে পৌঁছানো যায়। তবে, অনুপযুক্ত প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ দিনই বেশিরভাগ বিমান হয় উড়তে বিলম্ব করে নয়তো বাতিল হয়, ফলস্বরূপ যাত্রীদের অনেক অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।

সর্বশেষ সংযোজন : ২০- শে জানুয়ারী, ২০১৫