ত্রিপুরার উপর তথ্যাবলী |
|
---|---|
আধিকারিক ওয়েবসাইট | www.tripura.nic.in |
স্থাপনের তারিখ | 21 জানুয়ারি, 1972 |
আয়তন | 10,486 বর্গ কিলোমিটার |
ঘনত্ব | 350/বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা(2011) | 3,673,917 |
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) | 1,874,376 |
মহিলা জনসংখ্যা(2011) | 1,799,541 |
জেলার সংখ্যা | 8 |
রাজধানী | আগরতলা |
নদীসমূহ | বুড়িমা, গোমতী, খোয়াই, ধলাই, মুহুরি, ফেনী, জুরি ইত্যাদি |
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান | ক্লাউডেড লিওপার্ড জাতীয় উদ্যান, রোওয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বিশোন’স জাতীয় উদ্যান, তৃষ্ণা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য |
ভাষা | বাংলা, ককবরক, ইংরাজী, নোয়াখালি, চাকমা |
প্রতিবেশী রাজ্য | আসাম, মিজোরাম |
রাষ্ট্রীয় পশু | ফায়রের লেঙ্গুর |
রাষ্ট্রীয় পাখি | গ্রীন ইম্পেরিয়্যাল পায়রা |
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ | আগর |
রাষ্ট্রীয় ফুল | নাগেশ্বর |
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) | 50750 |
সাক্ষরতার হার (2011) | 79.63% |
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা | 961 |
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র | 60 |
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র | 2 |
ত্রিপুরা ভারতের উত্তরে-পূর্বে অবস্থিত সাতটি ভগিনী রাজ্যগুলির মধ্যে এক অন্যতম। বস্তুত এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং ১০,৪৮৬ বর্গ কিমি অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। রাজ্যটি উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত। পূর্ব দিকে এটি আসাম ও মিজোরাম রাজ্য দ্বারা বেষ্টিত। আগরতলা, এই রাজ্যের রাজধানী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যা হল ৩৬,৭৩,০৩২। ত্রিপুরার জনসংখ্যা, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৩ শতাংশ। ত্রিপুরার ৩০ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে বসতি স্থাপন করে থাকা ভারতের এক তপসিলি সম্প্রদায় যাদের, এস.সি (সিডুল কাস্ট) বলে অবিহিত করা হয়। এই রাজ্য ১৯ ধরেনের উপজাতির অন্তর্গত এবং এটি একটি পরিবেশ বান্ধব ও দূষণ মুক্ত রাজ্য।
এই রাজ্যের প্রধান কথ্য ভাষাগুলি হলো – ককবরক ও বাংলা। বহু শতাব্দী ধরে এই রাজ্য ত্রিপুরি সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। ব্রিটিশ–শাসনের সময় থেকে এটিকে একটি দেশীয় রাজ্য বলে বিবেচনা করা হয়। ১৯৪৯ সাল থেকে ত্রিপুরা স্বাধীন ভারতের একটি অংশ হয়ে ওঠে। রাজ্যের একত্রীকরণের পর থেকে এখানে বাঙ্গালি ও আদিবাসীদের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং বিরোধের জন্য দেশে নানা রকমের টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীকালে এক স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী সংগঠন ও বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি অনুকূল অবস্থায় আনা হয়। ৪৪-নং জাতীয়সড়ক, এই রাজ্যের এক মাত্র মহাসড়ক যা এই রাজ্যকে দেশের অন্যান্য রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করে।
সংস্কৃত ভাষায় ত্রিপুরা শব্দের অর্থ হলো ‘তিনটি শহর’। জীবাশ্ম কাঠ থেকে তৈরি প্রস্তর যুগের বিভিন্ন সরঞ্জাম খোয়াই এবং হাওড়া উপত্যকায় পাওয়া গেছে। সমস্ত ভারতীয় মহাকাব্য যথা- মহাভারত, পুরাণ এবং অশোকের শিলালিপিতে এই রাজ্যের উল্লেখ আছে। কিরাত দেশ হল ত্রিপুরার পুরাতন নাম কিন্তু কিরাত দেশ আধুনিক ত্রিপুরার সাথে সমব্যাপ্ত কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই রাজ্যের সমগ্র অঞ্চল বহু শতাব্দী ধরে ‘ত্বিপ্রা’ রাজত্বের শাসনাধীন ছিল। কালের পরিবর্তনে এই রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন হতে থাকে। এখানকার বিভিন্ন রাজকীয় প্রাসাদ ও মন্দিরগুলি সারা পৃথিবীর পর্যটক ও অবকাশযাপনকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাজ্যের রাজধানী আগরতলা হল একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
ভারতে ব্রিটিশ–শাসনের সময় থেকে এটি দেশীয় রাজ্য হিসাবে বিবেচিত হত। এই রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত উদয়পুর ছিল ত্বিপ্রা রাজত্বের রাজধানী। বীর চন্দ্র মানিক্য ব্রিটিশ-ভারত প্রশাসনের কাঠামোকে অনুসরণ করেন। তিনি আগরতলা নগর নিগম এর উন্নতিতে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনতা প্রাপ্ত হওয়ার পর তিপ্যেরা জেলা পূর্ব পাকিস্থানের একটি অংশ হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে মহারানী রিজেন্ট ত্রিপুরা মিলনাত্মক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৫৬ সালে এই রাজ্য একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৯৬৩ সালে এখানে একটি নির্বাচিত মন্ত্রালয় স্থাপিত হয়।
সিকিম ও গোয়ার পর ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাজ্য হলো ত্রিপুরা। এখানে পৌঁছানোর জন্য আপনি জাতীয় সড়কপথ ব্যাবহার করতে পারেন। এই সড়কপথ মিজোরাম ও আসাম রাজ্যের মমিত ও করিমগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এই রাজ্যের প্রধান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হল এখানকার সমতল ভূমি, পাহাড় ও উপত্যকা। এখানকার ৫-টি অপনত পর্বতমালা উত্তর থেকে দক্ষিণে নেমে গেছে। এরা আবার পূর্ব দিকে শাখাঁ, লংথারাই , জম্পুই পাহাড় এবং অথমুরা এবং পশ্চিমে বরোমুরা হয়ে গেছে। এদের মধ্যস্থ ও নিয়ন্ত্রক অঞ্চলগুলি হল- আগরতলা-উদয়পুর, কমলপুর –আম্বাসা, খোয়াই- তেলিয়ামুড়া, ধরমনগর-কাঞ্চনপুর এবং কৈলাশহর ও অনেক উপত্যকা। এই রাজ্যের সর্বোচ্চ বিন্দুটি হল– বেটলিং শিব যেটি জম্পুই পর্বতমালায় অবস্থিত। বেটলিং শিব এর উচ্চতা হল ৩,০৮১ ফুট অথবা ৯৩৯ মিটার।
এই রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো পাহাড়গুলিকে টিলা বলা হয়। অন্যদিকে পশ্চিমে অবস্থিত সংকীর্ণ পাললিক উপত্যকাগুলিকে লুঙ্গা বলা হয়। এই সমস্ত ছোট পাহাড় থেকে সৃষ্ট অনেক নদী বাংলাদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে। উত্তরে বয়ে চলেছে ধলাই, খোয়াই, জুরি, লোঙ্গাই এবং মনু, দক্ষিন-পশ্চিমে বইছে ফেনি ও মুহুরি এবং পশ্চিমে বইছে গোমতী নদী। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এখানে শীতকাল, মে থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল, গ্রীষ্ম ও প্রাক-বর্ষা হলো মার্চ থেকে এপ্রিল এবং বর্ষা-পরবর্তী হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। বর্ষাকালে প্রচণ্ড পরিমানে বৃষ্টিপাতের কারণে এই রাজ্যে ঘনঘন বন্যা দেখা যায়।
ভারতের উত্তর-পূর্বভাগের জনসংখ্যার হার অনুযায়ী ত্রিপুরা, আসাম এর পরের স্থান অধিকার করে আছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যা হলো ৩৬,৭৩,৯১৭।
দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই রাজ্যের জনসংখ্যার হার হল মাত্র ০.৩ শতাংশ। এই রাজ্যের মহিলা ও পুরুষের অনুপাত হলো ১০০০ : ৯৬১, যেটি ১০০০ : ৯৪০ মহিলা–পুরুষ এর জাতীয় অনুপাতের হারের থেকে বেশী। এই রাজ্যের জনঘনত্ব হল ৩৫০ জন প্রতি বর্গ কিমি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই রাজ্যের শিক্ষার হার ছিল ৮৭.৭৫ শতাংশ, যা জাতীয় শিক্ষার হার ৭৪.০৪ শতাংশ তুলনায় বেশী। এই রাজ্যের বেশ অনেকটা অঞ্চল বাঙ্গালি জাতির অন্তর্গত।
এই রাজ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার অন্তর্গত মোট ১৯-টি জাতি গোষ্ঠী ও উপজাতি গোষ্ঠী আছে। এই রাজ্যের এক বৃহত্তম গোষ্ঠী হলো ত্রিপুরি যারা ককবরক ভাষায় কথা বলে। এই রাজ্যের বাকি জনগোষ্ঠীগুলি হল- রিয়াং, চাকমা, জামাতিয়া, ভাগ মোগ, হালাম, কুকি, মুন্ডা এবং গারো। রাজ্যে বাঙ্গালি গোষ্ঠী অনেক বেশী হওয়ার ফলে এখানকার বেশীর ভাগ মানুষেরই কথ্য ভাষা বাংলা। আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ভাষা হল ককবরক।
ত্রিপুরা গণতান্ত্রিক সংসদীয় মাধ্যমের শাসনাধীন। এখানকার জনগণরা সার্বভৌমিক অধিকার প্রাপ্ত। এই রাজ্যের সরকারের তিনটি শাখা হল – বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ এবং কার্য বিভাগ। ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য ও বিভিন্ন পদাধিকারীরা বিভিন্ন সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। বিধানসভার অধ্যক্ষ বিধানসভার সমাবেশ ও সম্মেলন নিয়ন্ত্রণ করেন। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে সহকারী–অধ্যক্ষ সম্মেলন নিয়ন্ত্রণ করেন। বিধানসভার সদস্যদের ৫ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। বিচার পতি তথা ম্যাজিস্ট্রেট, মহা বিচারালয় দ্বারা নির্বাচিত হন। এছাড়া ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে এবং রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে মন্ত্রী পরিষদে মন্ত্রী নিয়োগ করে থাকেন। ত্রিপুরা থেকে একজন প্রতিনিধি রাজ্যসভায় এবং দুজন প্রতিনিধি লোকসভায় পাঠানো হয়। স্থানীয় সদস্য দ্বারা রাজ্যের গ্রামগুলিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। এই রাজ্যের দুটি রাজনৈতিক দল হলো– ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম ফ্রন্ট।
এই রাজ্যের বিদ্যালয়গুলি বেসরকারি সংস্থা, রাজ্য সরকার ও কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা চালিত হয়। শিক্ষার মাধ্যম হল বাংলা অথবা ইংরাজি। এছাড়াও কিছু কিছু অঞ্চলে এখানকার স্থানীয় ভাষা ককবরক ব্যাবহৃত হয়। এই রাজ্যের বিদ্যালয়গুলি সি.বি.এস.ই, এন.আই.ও.এস, টি.বি.এস.ই এবং সি.আই.এস.সি.ই পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা ২ বছরের জন্য উচ্চবিদ্যালয় অথবা ছোটো-খাটো কলেজগুলিতে ভর্তি হয়। বিদ্যালয় এবং কলেজগুলি কেন্দ্রীয় পর্ষদ অথবা ত্রিপুরা মাধ্যমিক পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। বহু ছাত্র-ছাত্রী বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা এই তিনটি বিভাগের মধ্যে যেকোনো একটি বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করে।
উচ্চ–মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্র ছাত্রীরা বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলার মধ্যে যেকোনো একটি বিভাগ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীরা ঔষধ, আইন বা প্রযুক্তি বিদ্যার মত পেশাদার ডিগ্রী কোর্সের জন্যও নথিভুক্ত করতে পারে। এখানকার বিদ্যালয়গুলিতে অনেক আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হয়। রাজ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়াও কিছু সাধারন মহাবিদ্যালয়, আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, ঔষধ, কলা এবং সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় ইত্যাদি দেখা যায়। কিছু পলিটেকনিক কলেজও এখানে গড়ে উঠেছে।
রাজ্যের অর্থনীতির প্রাথমিক ক্ষেত্র হল – খনিজ সম্পদ, বনজ সম্পদ ও কৃষি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটি হল উৎপাদন ও শিল্প যা এই রাজ্যের জি.ডি.পি-কে এক উচ্চ শতাংশ অনুদান করে। রাজ্যের বেশীর ভাগ শ্রমিক কৃষির পরেই খুচরো-বিক্রয় ক্ষেত্রে নিযুক্ত। এর পরেই নির্মাণ ক্ষেত্র, জনপ্রশাসন ও শিক্ষা অনুসারিত হয়। এই রাজ্যের বহু সংখ্যক মানুষ অন্যান্য কার্যকলাপ ও কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। রাজ্যের প্রধান শস্য হল– ধান। রাজ্যে উৎপাদিত অন্যান্য ফসলগুলি হল- পাট, ডাল, মেসতা, আখ ও আলু। প্রধান উদ্যানজাত পণ্য হল আনারস ও কাঁঠাল ।
রাজ্যে বিভিন্ন রকমের জনগোষ্ঠী থাকার জন্যে এখানকার সংস্কৃতিও বিভিন্ন রূপের। এখানকার বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীগুলি হল– বাঙ্গালি, ত্রিপুরি, মণিপুরী, রিয়াং, জামাতিয়া, কোলোই, নোয়াতিয়া, চাকমা, মুরাসিং, গারো, হালাম, মিজো, কুকি, মুন্ডা, মোগ, সাঁওতাল, উচোই ও ওঁরাও। এই রাজ্যের বাঙ্গালি জাতিগোষ্ঠী অনেক বেশী। এই কারনে এই অঞ্চলের প্রধান সংস্কৃতি হল বাংলা সংস্কৃতি। শহরে বসবসকারী বহু সংখ্যক আদিবাসী পরিবার বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। ত্রিপুরি রাজাদের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক মহান পৃষ্ঠপোষক বলে মানা হত। এমনকি বাংলা এখানকার আদালত এরও ভাষা ছিল। শহরাঞ্চলে বাঙ্গালি রান্না, সঙ্গীত, সাহিত্যের প্রচলন অনেক বেশী। ত্রিপুরা রাজ্য বাঁশ এবং বেতের হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। বেত, কাঠ ও বাঁশ, প্রধানত বাসন, আসবাব, পাখা, মাদুর প্রতিকৃতি, ঝুড়ি, নানান ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, মূর্তি ইত্যাদি তৈরিতে কাজে লাগে। নৃত্য ও সঙ্গীত হল এই রাজ্যের সংস্কৃতির একটি প্রধান অংশ। এখানে কিছু স্থানীয় উপকরণ যেমন – সুমুই (এক ধরনের বাঁশি), চংপ্রেং ও সারিন্দা (এক ধরনের বাদ্য যন্ত্র) দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের কিছু সঙ্গীত ও নৃত্য সংগ্রহ রয়েছে যা তারা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, বিবাহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে। জামাতিয়া ও ত্রিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন গোরিয়া পূজায় ‘গোরিয়া নৃত্য’ প্রদর্শন করে। ত্রিপুরার কিছু নৃত্য কলা হল – ঝুম নৃত্য, মমিত নৃত্য, লেবাং নৃত্য, মোসাক সুল্মানি নৃত্য ইত্যাদি।
উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে সবথেকে বেশি ব্যাবহৃত হয় বাংলা ও ককবরক ভাষা। এছাড়াও এই রাজ্যে অল্প সংখ্যক অন্যান্য ভাষারও প্রচলন আছে। সরকারি কাজকর্মে ইংরাজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। বাঙ্গালি জনসংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কারনে এখানে বাংলা ভাষা ব্যাপক ভাবে উচ্চারিত হয়। অন্যদিকে আদিবাসীদের মধ্যে ককবরক ভাষার প্রচলন খুব বেশি লক্ষণীয়। আদিবাসী সম্প্রদায় সবরম ও চক্র প্রমুখ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বেশ কিছু সংখ্যক লোক রাঙ্খাল ও হালাম ভাষায় কথা বলে। এই ভাষার উৎপত্তি হালাম ভাষা থেকে ।
আপনি যদি এই রাজ্য পরিদর্শন করতে চান, তাহলে এখানে অবস্থিত অনেক সুন্দর জায়গা আপনার চোখে পড়বে। এই রাজ্যের বহু প্রাকৃতিক আকর্ষণ আছে। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পর্যটকদের আনন্দদায়ক এবং কমনীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই রাজ্যে বহু বিস্ময়কর স্থাপত্য আছে যেমন– কুঞ্জবন ও নীরমহল প্রাসাদ। একে ভারতের উত্তর-পূর্ব ভাগের আদর্শ পর্যটন স্হল বলা হয়। আপনি কিছু পবিত্র স্থানও এখানে পরিদর্শন করতে পারেন যথা– কমলাসাগর কালী ও ভুবনেশ্বরী মন্দির। বহু পর্যটক ও তীর্থ যাত্রী ত্রিপুরার বিখ্যাত মন্দিরগুলি দর্শন করতে আসে। ত্রিপুরায় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আকর্ষণও আছে। বন্যপ্রাণী প্রেমীদের বন্যপ্রাণী গন্তব্যস্থল পরিদর্শন করার জন্য অবশ্যই এই জায়গায় আসতে হবে। গোমতী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হাতি, হরিণ ও বাইসন দেখতে পাওয়া যায়। সিপাহিজলা অভয়ারণ্য হলো প্রবাসী পক্ষীদের আবাসালয়। তৃষ্ণা ও রোওা অভয়ারণ্য বন্যপ্রাণী প্রজাতির জন্য বিখ্যাত। ত্রিপুরায় কিছু আকর্ষক সুন্দর প্রাসাদ দেখা যায় যেমন – নীরমহল প্রাসাদ। এটি একটি বিখ্যাত প্রাসাদ যা হিন্দু ও মুসলিম কলাকে অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছে। ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ হল এখানকার আরও একটি সুপরিচিত পর্যটন কেন্দ্র। কুঞ্জবন প্রাসাদও তার সুন্দর দৃশ্যপটের জন্য বিখ্যাত।
জাতীয় মহাসড়ক (এন.এইচ) ৪৪ দেশের বাকি রাজ্যগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এটি ত্রিপুরার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত সাবরুম থেকে আরম্ভ হয়ে উত্তরে আগরতলার দিকে যায়। পরে এটি পূর্ব, উত্তর-পূর্ব হয়ে আসামে প্রবেশ করে। এছাড়াও এই মহা সড়কপথকে ‘আসাম রোড’ বলা হয় এবং এটিকে রাজ্যের জীবনরেখা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই মহাসড়কপথ এর অবস্থা খুবই খারাপ। ত্রিপুরা রাজ্যের মনু শহর, মিজোরামের রাজধানী আইজল শহরের সাথে মহাসড়কপথ (এন.এইচ ৪৪-A)দ্বারা যুক্ত।
আগরতলা, বিমান পথের সাথে ভালো ভাবে যুক্ত। আগরতলায় অবস্থিত বিমানবন্দর ভারতের অনান্য শহরগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এছাড়াও ত্রিপুরার সাথে মুম্বাই, আহমেদাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, গুয়াহাটি, আইজল, শিলচর, দিল্লি, ইম্ফল ও কলকাতা বিমানবন্দরের সংযোগ আছে। উত্তরে-পূর্বের, গুয়াহাটি বিমানবন্দরের পরেই আগরতলা বিমানবন্দর হল দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমান বন্দর। ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা হলো ৮৫৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা ও আগরতলার মধ্যে বাস পরিষেবাও লক্ষণীয়।
* সর্বশেষ সংযোজন : ১০ই- ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
|