মেঘালয় পর্যটন

Travel to Meghalaya in Bengali

মেঘালয় পর্যটন
* মেঘালয় পর্যটন মানচিত্রে, মেঘালয়ের প্রধান শহর, পর্বতমালা, পর্বতশৃঙ্গ, জলপ্রপাত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলি দেখানো হয়েছে।

মেঘালয় পর্যটন

ক্ষুদ্র রাজ্য মেঘালয়ের লম্বা পাইন গাছ ও মেঘের মধ্যে একটি চিরস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। মেঘালয় নামের আক্ষরিক অর্থ হল “মেঘের আলয়”। ব্রিটিশরা এই স্থানের প্রেমে পড়ে, একে “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড” বলে আখ্যা দেন।

তিনটি পাহাড় – খাশি, জয়ন্তিয়া এবং গারো মেঘালয়কে পরিবেষ্টন করে আছে। মেঘালয় ১৯৭২ সালে ভারতীয় ইউনিয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে পরিণত হয়।

এইদিক দিয়ে মেঘালয় ভারতের এক সর্বকনিষ্ঠ রাজ্য।যদিও মেঘালয় বিশেষ ছটা থেকে দূরে অবস্থিত, তাও এই দেশের একটি কুমারী সৌন্দর্য রয়েছে। আপনি যদি শহুরে উন্মত্ততা থেকে দূরে একটি সরল শান্ত ও মনোরম অব্যাহতি চাইছেন তাহলে মেঘালয় হল আপনার জন্য একটি আদর্শ স্থান।

মেঘালয়ের লম্বা পাইন গাছের মনোরম প্রকৃতিতে আপনি তাজা পাহাড়ি বাতাসের অনুভূতি পাবেন। কখনও আপনি শেষ জলপ্রবাহের বুদবুদের শব্দ শুনেছেন? মেঘালয়ে আসুন, এই রাজ্যে এরকম সমস্ত কিছু আপনি পাবেন।

পাহাড়ের উঁচু ভূখণ্ড থেকে উজ্জ্বল জলপ্রপাত এবং অনাবিষ্কৃত গুহার গোলকধাঁধা বা পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিবহুল স্থান, চেরাপুঞ্জির আর্দ্র ভূমি অন্বেষণ করতে মেঘালয় ভ্রমণ করুন।

এই প্রস্তরময় ভূখণ্ডে অসাধারণ গ্রাম দেখা যায়। মেঘালয় পর্যটন আধুনিকতা দ্বারা অক্ষত একটি অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ উপজাতীয় জীবনযাপনের প্রদর্শন করে।ভারতের বাকি অংশ থেকে বিপরীত এখানকার উপজাতীয় সমাজ হল মাতৃকুলভিত্তিক। কাল্পনিক এবং পৌরাণিক কাহিনী ও ইতিহাস এবং ধর্মের একটি পারস্পরিক খেলা ও উপজাতীয়দের সাধারণ রঙিন উৎসবের স্ফূর্তি পরিদর্শন করার জন্য বিশেষ উপজতি উৎসবের সময় মেঘালয় পরিদর্শন করুন।

মেঘালয় পৌঁছানোর উপায়

পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয় পূর্ব উপ-হিমালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত।মেঘালয় ভারতের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অধিকারী যেখানে প্রকৃতি বৃষ্টি এবং সূর্যালোকের প্রাচুর্যের উপহার দ্বারা সমৃদ্ধ। এখানকার ধোঁয়াটে পাহাড় এবং মেঘের চিরস্থায়ী সম্পর্ক এবং মদ্যপ সবুজ বনের বিস্তীর্ণ প্রসারণ অবিচলিতরূপে আপনার কল্পনাকে বন্দী করবে। চির-অতিথিপরায়ণ রঙিন উপজাতির দুর্বোধ্য সৌন্দর্য এই স্থানের মধ্যে মিশে আছে।

বিমান মাধ্যমে

মেঘালয়ে কোনো বিমানবন্দর নেই। নিকটতম বিমানবন্দর গুয়াহাটিতে অবস্থিত যা মেঘালয়ের রাজধানী শহর শিলং থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। একটি হেলিকপ্টার পরিষেবা গুয়াহাটি, শিলং (৩০ মিনিট) এবং তুরা (৬০ মিনিট)-র মধ্যে পরিচালিত হয় যা খুবই সুবিধাজনক এবং সাশ্রয়ী। কিছু হেলিকপ্টার ঊর্ধ্ব শিলং-এ অবতরণ করে এবং অন্যান্য গুলি শহরের নিম্নে উমরোই হেলিপ্যাডে অবতরণ করে।

সড়ক মাধ্যমে

রাজ্যের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দক্ষ এবং সুবিধাজনকভাবে এই রাজ্যকে জুড়ে রয়েছে। ৪০-নং জাতীয় সড়ক এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে চলমান সকল আবহাওয়ার উপযু্ক্ত সড়ক। এই সড়ক গুয়াহাটি ও শিলং-এর সাথে সংযোগ স্থাপন করে যা ঘুরে দেশের বাকি অন্যান্য প্রধান শহরের সাথে এই স্থানকে সংযুক্ত করে।

রেল মাধ্যমে

মেঘালয়ে কোন রেল পরিষেবা নেই। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন গুয়াহাটিতে অবস্থিত। মেঘালয়ে ও গুয়াহাটির মধ্যে সারা বছর ধরে খুব সুবিধাজনক সড়ক সংযোগ ব্যবস্থা থাকে।

meghalaya-tourist-map
মেঘালয়েরর বিস্তৃত পর্যটন মানচিত্র দেখতে ক্লিক করুন

মেঘালয়ের পরিদর্শনমূলক স্থান

মেঘালয়ের আকর্ষণীয় অসংখ্য পর্যটন স্থানগুলি মেঘালয় পর্যটনের মেরুদন্ড গঠনে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। মেঘালয়ের প্রধান আকর্ষণ গুলি হল – ক্রেম মামলুহ, ক্রেম ফিলুত, মৌসিনরাম, মৌসমাই এবং সিজু।

ক্রেম মামলুহ মেঘালয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই গুহা চেরাপুঞ্জির নিকটে অবস্থিত। ক্রেম মামলুহ থেকে পাঁচটি নদী তার গতিপথ অর্জন করেছে। ক্রেম মামলুহ-র এই গুহার উচ্চতা ৪৫০৩ মিটার।

মৌসিনরাম গুহা তার বিশাল স্ট্যালাগমাইট্ গঠনের জন্য সুপরিচিত। এটি একটি “শিবলিঙ্গের” মত দেখতে। এই গুহার অন্য নাম হল মাওজিমবুইন। এই শিলার শিখরে একটি উর্ধ্বগামী ট্রেক চমৎকার উপত্যকা, পাহাড়, বাংলাদেশের নদী ও সমতল ভূমির দৃশ্য প্রদান করে। এই দৃশ্য গুহাটিকে জনপ্রিয় করে তোলে।

মৌসমাই গুহা ক্রেম ফিলুত নামেও অভিহিত।এই গুহা নসিংথিয়াং জলপ্রপাত থেকে বেশী দূরে নয়। মৌসমাই গুহার প্রবেশদ্বার চেরাপুঞ্জির নিকটে মৌসমাইগ্রামে অবস্থিত। এই গুহা মৌসমাই গ্রাম থেকে বেশী দূরে নয়। এই গুহার প্রবেশপথ উলম্ব এবং অত্যন্ত সংকীর্ণ। মেঘালয়ের অন্যতম আকর্ষণ মৌসমাই গুহা তার বিশাল কক্ষগুলির জন্য বিখ্যাত যেগুলি বিভিন্ন অন্যান্য গুহার সাথে সংযুক্ত। এই কক্ষগুলি অ্যামি্পথিয়েটারের মত।

সিজু গুহা মেঘালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম। এটি সিজু গ্রামের নিচে এবং নাফাক হ্রদের নিকটে সিমসাং নদীর তীরে অবস্থিত। বাগমারার ৩০ কিলোমিটার উত্তর দিকে অবস্থিত এই গুহা চুনাপাথরে গঠিত। সিজু গুহার সিমসাং স্ট্যালাকটাইট, নীল গ্রোট্টো গুহার অনুরূপ যা কাপড়ি উপদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ।

ভারতের সমস্ত গুহার মধ্যে এটি তৃতীয় দীর্ঘতম বলে বিবেচিত। গুহাটি ডোবাক্কল নামেও পরিচিত যার আক্ষরিক অর্থ হল বাদুড়ের গুহা।

  • মৌসমাই
    মৌসিনরাম

  • ক্রেম বাঁধ গুহা।
  • ক্রেম কোতসাতি।
  • ক্রেম লাশিং।
  • ক্রেম মামলুহ।
  • ক্রেম সোহ শিম্পি।
  • ক্রেম উমসংকট।
  • ক্রেম সুইপ।
  • সিজু।
  • সিন্ডাই গ্রাম।
  • সিন্তু সিয়ার।
  • নারসিয়াং।
  • জয়ন্তিয়া পাহাড়।
  • জোয়াই।
  • গারো পাহাড়।
  • নকরেক চূড়া।
  • তুরা চূড়া।
  • বলপকরম্।
  • ইমিলছাং ডারে।
  • টেটেংগকোল।
  • বক বাক ডোবাকোল।

মেঘালয়ের স্থান পরিদর্শন

মৌসমাই


Mawsmai Cave

মৌসমাই-র প্রধান আকর্ষণ হল মৌসমাই গুহা। মেঘালয়ের মৌসমাই-র আরেক নাম হল ক্রেম ফিলুত। এটা নসিংথিয়াং জলপ্রপাতের নিকটে অবস্থিত। মৌসমাই গুহার প্রবেশ বিন্দু চেরাপুঞ্জির নিকটে মৌসমাই গ্রামে অবস্থিত। মৌসমাই গুহার প্রবেশ দ্বার মৌসমাই গ্রামের নিকটে অবস্থিত। উলম্ব প্রবেশদ্বার অত্যন্ত সংকীর্ণ।

আপনি একটি সাশ্রয়ী মূল্যে মেঘালয়ের মৌসমাই গুহা পরিদর্শন করতে পারেন।এই গুহা ৯-টা থেকে ৪.৩০-টা অবধি পরিদর্শকদের জন্য খোলা থাকে।

মেঘালয়ের মৌসমাই গুহার অভ্যন্তর বৃহৎ কক্ষ নিয়ে গঠিত। এই প্রত্যেকটি হল একটি অ্যামি্পথিয়েটারের মত দেখতে। এই গুহা অন্ধকারে ঢাকা। একটি টর্চের আলো বা হালকা অন্য কোন ধরনের আলো এই গুপ্ত সৌন্দর্যে বিস্ময়ের মত কাজ করে। গুহার অভ্যন্তর আলোকিত হয় এবং স্ট্যালাগমাইট্, স্ট্যালাকটাইট এবং দেওয়াল অসংখ্য স্ফটিক রং প্রতিফলিত করে।

এই গুহার একমাত্র বৈশিষ্ট্য হল এদের নানারকমের আকার এবং আকৃতি।স্ট্যালাগমাইট্, স্ট্যালাকটাইট এই গুহায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে আছে। এই গুহার অভ্যন্তর অত্যন্ত প্রশস্ত হয় তাই যে কেউ এই গুহায় নিজ ইচ্ছামত ঘোরাঘুরি করতে পারে।

চেরাপুঞ্জি হয়ে মৌসমাই গুহা পরিদর্শন সুবিধাজনক। চেরাপুঞ্জি, মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে মাত্র ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। একটি মোটরোপযোগী সড়ক চেরাপুঞ্জি এবং শিলং এই দুটি স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। শিলং থেকে সড়ক পথ হয়ে ট্যাক্সি বা বাস ধরে যে কেউ চেরাপুঞ্জি পৌঁছতে পারেন। এই সমগ্র যাত্রা দুই ঘন্টার কাছাকাছি লাগে।

শিলং পৌঁছানোর সহজতম উপায় হল বিমান বা রেল দ্বারা ভ্রমণ করে গুয়াহাটি যাওয়া এবং তারপর সেখান থেকে গাড়িতে শিলং যাওয়া। সড়কপথে গুয়াহাটি থেকে শিলং যেতে মোট ৩ ঘন্টা লাগে।

স্মিত


Smit

খাসি পাহাড়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্মিত মেঘালয়ের রাজধানী শহর শিলং থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে শিলং জোয়াই রোডে অবস্থিত। নিকটতম বিমানবন্দর এবং রেলওয়ে স্টেশনে হল ১০৪ কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটি। এটি পাকা সড়কপথ এবং মেঘালয় সড়ক পরিবহন দ্বারা সংযুক্ত যা নিয়মিত পরিষেবা প্রদান করে স্মিত এবং শিলং-র মধ্যে আন্তঃ-সংযোগ ঘটায়।

রাজধানী শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত মেঘালয়ের স্মিত একটি দূষণ মুক্ত এবং আনন্দদায়ক গ্রাম। এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মত। এখানে ব্যাপক বৈচিত্র্যের উদ্ভিদ বৃদ্ধি পায় যা রাজ্যের অর্থনীতিতে সহায়তা করে। স্মিত কৃষকেরা সাধারণত ঝুম চাষ অনুশীলন করেন। এখানে যথেষ্ট পরিমাণে মশলা পাওয়া যায়, যা প্রধানত অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি করা হয়। স্মিতের কুটির শিল্প হল রেশম চাষ বয়ন এবং এখানকার গ্রামবাসীরা পশুপালন করেন।মেঘালয়ের স্মিত এছাড়াও একটি খনিজ সমৃদ্ধ স্থান। চীনামাটি যুক্ত পাথর এখানে বিচ্ছিন্ন ভাবে পাওয়া যায়, যা ০.১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রসারিত এবং এর গড় পুরুত্ব হল ২.৭। এই চীনামাটি রাষ্ট্রের সম্পদে যোগ দান করে যা সাদা-পণ্যদ্রব্যসমূহ উৎপাদনের উপযুক্ত।

মেঘালয়ের স্মিত, কা পোমব্লাং নংক্রেম উৎসবের জন্য ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শরৎ কালে অনুষ্ঠিত এটি খাসি গণতান্ত্রিক রাজ্যের বিবর্তন (হিমা)-কে পালন করে যা বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ সূচির অধীনে কার্যকরী। পূর্বে এটা নিয়ন্ত্রণের দলিল স্বাক্ষরের দ্বারা ভারতীয় ইউনিয়ন যোগদানে সম্মত হয়েছিল। নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত, এটা দেবী কা ব্লেই সিনশরকে সমৃদ্ধ ফসলের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য একটি পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। পোমব্লাং অনুষ্ঠান এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যেখানে মানুষ হিমা(খাসি পাহাড়)-র প্রধান খাইরেম-এর সিয়েমকে ছাগল উৎসর্গ করে।

মৌসিনরাম


মৌসিনরাম গুহা তার বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত সুপরিচিত। মেঘালয়ের মৌসিনরাম গুহা মৌসিনরাম ভারত তথা সমগ্র বিশ্ব জুড়ে একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য করে তুলেছে।

মেঘালয়ের মৌসিনরাম গুহা যেতে হলে আপনাকে মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় আসতে হবে। মেঘালয়ের নিকটস্থ বিমানবন্দর গুয়াহাটিতে অবস্থিত, যা মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে।

মেঘালয়ের মৌসিনরাম শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি মৌসিনরাম গ্রামের প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তর দিকে অবস্থিত। এই স্থানটি বিশালাকারের স্ট্যালাগমাইট্, গঠনের জন্য বিখ্যাত যা একটি “শিবলিঙ্গ” আকৃতির অনুরূপ। এই গঠন একটি গুহার মধ্যে রয়েছে যার স্থানীয় নাম হল মাজিমবুইন।

এই গঠনের ভিত্তি থেকে একটি উর্ধ্বগামী ট্রেক করে শিলার শিখরে পৌঁছনো যাবে, যদিও এর জন্যে একটি ট্রেকিং দক্ষতার প্রয়োজন। এই শিলার চূড়া থেকে এই অঞ্চলকে ঘিরে থাকা উপত্যকা ও আকর্ষণীয় পাহাড়, বাংলাদেশের দ্রুতগামী নদী ও সমতল ভূমি খুব সহজেই দেখা যায় এবং এই দৃশ্যটি হল এই স্থানের সেরা আকর্ষণ।

রানীকোর-বালাত-মৌসিনরাম-শিলং মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ওইলই গ্রামের নিকটে ভূতাত্ত্বিক উপায়ে গঠিত সিমপার শিলা নামক একটি অসাধারণ শিলার গঠন দেখা যায়। এই শিলার গঠন কম বেশি সমতল। এর পরিকাঠামো এক গম্বুজের অনুরূপ যা একটি পিণ্ডের মত দেখায়। এটা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের পাহাড়ের মধ্যে থেকে হঠাৎ উত্থিত হয়েছে।

ক্রেম বাঁধ গুহা


মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত ক্রেম বাঁধ গুহা প্রকৃতি মাতার জাঁকজমক দেখার একটি আদর্শ গন্তব্য। ক্রেম বাঁধ প্রকৃতপক্ষে ভারত তথা সমগ্র উপমহাদেশের বৃহত্তম গুহা যা সম্পূর্ণরূপে বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত। এর সুবৃহৎ আকারের কারনে এখানে অনেক মানুষ আসেন। মেঘালয়ের ক্রেম বাঁধ প্রায় ১২৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে প্রসারিত।

খনিজ পদার্থ ও বালুকণা নিয়ে গঠিত এবং অন্যান্য শিলা দ্বারা এই শিলা বেলেপাথর নামে পরিচিত। এটি পাললিক শিলার একটি রূপ এবং কোয়ার্টজ বা ফেল্ডস্পার দ্বারা সমৃদ্ধ, যেগুলি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সংগৃহীত।

মেঘালয়ের ক্রেম বাঁধ একটি বিরাটকার প্রবেশদ্বার দ্বারা গঠিত যা গুহা প্রেমী ও উল্লাস প্রেমী পর্যটকদের এক মাত্র আকর্ষণ। বস্তুত, এই প্রবেশদ্বার মেঘালয়ের ক্রেম বাঁধের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও ক্রেম বাঁধ এক স্পন্দনশীল প্রবাহের মহানুভব উপস্থিতির আশীর্বাদপ্রাপ্ত যা গুহার প্রাথমিক চলাচলের পথ জুড়ে প্রসারিত। এই নদীর নীল পান্নার মত জল এই গুহাটিকে একটি নির্মল ও অকৃত্রিম পরিবেশ প্রদান করে।

বেলেপাথর প্রধানত উজ্জ্বল রঙের হয় যেমন – হলুদ বাদামী, ধূসর, লাল এবং ট্যান। অন্য আরেকটি বৈশিষ্ট্য যার জন্য বেলেপাথর আরও বেশি উপযোগী সেটি হল – এর মধ্যে বিশাল অনুপাতে বিভিন্ন ধরণের উপকরণ ধরে রাখার ক্ষমতা আছে যা একে জলধারক হিসাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তুষারপাত এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব কমই এই বেলেপাথরকে প্রভাবিত করতে পারে, বরং এই ক্রেম বাঁধ গুহা যেকোন দুর্যোগের প্রতিরোধী হিসাবে কাজ করে।

ক্রেম কোতসাতি


মেঘালয়ের রাজ্যে অবস্থিত ক্রেম কোতসাতি একটি অবর্ণনীয় গুহা সম্পদ। মেঘালয় রাজ্যে গুহার একটি সুবিশাল শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে, যেগুলি এখানকার পর্যটন গন্তব্যে রুপান্তরিত হয়েছে এবং এগুলি গুহার জাঁকজমক ও সৌন্দর্য দ্বারা অভিভূত ব্যক্তিদের দ্বারা ঘন ঘন পরিদর্শিত হয়।

বস্তুত, মেঘালয় রাজ্য ১০০০-টি বিস্ময়কর গুহার সমন্বয়ে গঠিত। এই গুহার মধ্যে উপস্থিত চুনাপাথরের গঠন সত্যিই দেখার মত।এটা আপনাকে দেখায় যে প্রকৃতি সত্যিই এক চমৎকার শিল্পী।

আপনি আঁটটি প্রবেশপথের মাধ্যমে ক্রেম কোতসাতি গুহায় প্রবেশ করতে পারেন।তবে, প্রাথমিক প্রবেশ পথটি হল জলের মধ্য দিয়ে। সুতরাং, আপনি যদি এই প্রবেশদ্বারের মাধ্যমে মেঘালয়ের ক্রেম কোতসাতি গুহায় প্রবেশ করতে চান, তাহলে আপনাকে সাঁতারে অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে। অভূতপূর্ব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য একটি গুহা অভিযানে আপনাকে অবশ্যই একটি গুহা ভ্রমণ পরামর্শদাতা নিতে হবে।

এই গুহা ৩৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে প্রসারিত হওয়ায় আপনি খুব সহজেই এখানে ঘোরাফেরা করতে পারেবেন। ক্রেম কোতসাতি জুড়ে প্রবাহিত স্বর্গীয় মনোহর নদী দুটি সম্ভাব্য উপায়ে পরিদর্শন করা যায়। একটি উপায় হল সাঁতার ও অন্য একটি উপায় হল আপনি একটি রাবার বোট দ্বারা এখানে প্রবেশ করতে পারেন যা বায়ু দ্বারা স্ফীত করা থাকে।

সকল দিক দিয়েই মেঘালয়ের ক্রেম কোতসাতি গুহা এতটাই আড়ম্বরপূর্ণ যে আপনি এর নির্মল ও অকৃত্রিম পরিবেশের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন।

ক্রেম লাশিং


জোয়াই গ্রামীণ বসতি থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ক্রেম লাশিং, মেঘালয়ের হৃদয়ে অবস্থিত ১০০০-টি গুহার মধ্যে এক অন্যতম। আপনি যদি গুহা অন্বেষণে আগ্রহী বা গুহা প্রেমী হন তাহলে মেঘালয় রাজ্য আপনাকে নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চিত করবে।

মেঘালয়ের এক অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ গুহা হল ক্রেম লাশিং গুহা। এই সুবৃহৎ গুহা ৫০ মিটার প্রস্থ এবং ৪০ মিটারের এক বিস্ময়কর উচ্চতা নিয়ে গঠিত। এক গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান সহ, মেঘালয়ের ক্রেম লাশিং গুহা এখানকার একটি প্রধান আকর্ষণ হিসাবে কাজ করে।

দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আপনার গুহা অভিযানে অবশ্যই একটি গুহা ভ্রমণ পরামর্শদতা নেবেন। আকস্মিক দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে আপনি আপনার সাথে প্রয়োজনীয় ফার্স্ট-এইড নিয়ে যেতে পারেন।

মেঘালয়ের ক্রেম লাশিং সম্পূর্ণরূপে একটি কাদাযুক্ত পুলের মধ্যে নিমজ্জিত। চটচটে হওয়া ছাড়াও এই কাদা অত্যন্ত পিচ্ছিল। সুতরাং,সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজনীয়।

সামান্য অসুবিধা সত্ত্বেও, ক্রেম লাশিং প্রকৃতপক্ষে এক চমৎকার এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী। আপনি এই চটচটে কাদা এড়াতে মার্চ মাস এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রেম লাশিং গুহা পরিভ্রমণ করতে যেতে পারেন। আরেকটি কারণ, এর ১৬৫০ মিটারের একটি বিস্ময়কর দৈর্ঘ্য মেঘালয়ের ক্রেম লাশিং দর্শকদের আকর্ষণ করে।

অতএব, ক্রেম লাশিং-এর যাত্রা অবশ্যই আপনাকে আনন্দ দেবে।

ক্রেম মামলুহ


ক্রেম মামলুহ একটি গুহা, যা পশ্চিম চেরাপুঞ্জি থেকে প্রায় অর্ধেক কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটা মামলুহ থেকে অত্যন্ত নিকটে অবস্থিত। মেঘালয়ের মামলুহ-র মধ্যে দিয়ে পাঁচটি নদী প্রবাহিত হয়। এই গুহা ৪৫০৩ মিটার লম্বা এবং ভারতে দীর্ঘতম নদীর মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছে।

এই অসামান্য গুহা পরিদর্শন করতে আপনাকে প্রথমে চেরাপুঞ্জিতে আসতে হবে। চেরাপুঞ্জি মেঘালয়ের রাজধানী শহর শিলং থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। একটি মোটরোপযোগী সড়ক চেরাপুঞ্জি এবং শিলংকে সংযুক্ত করে। এখানে সড়ক পরিবহনের সাধারণ মাধ্যম হল বাস ও ট্যাক্সি। সড়কপথ দ্বারা শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি যেতে দুই ঘন্টার কাছাকাছি লাগে।

শিলং রেলওয়ে স্টেশন বা বিমানবন্দরবিহীন, দর্শকদের আগে সড়কপথের মাধ্যমে চেরাপুঞ্জি যেতে হবে। চেরাপুঞ্জি এবং শিলং-এর মধ্যে মেঘালয় পর্যটন বাস নিয়মিত চলাচল করে। ট্যাক্সি ভাড়া করে চেরাপুঞ্জি থেকে শিলং যাওয়া যেতে পারে।

শিলং পৌঁছনোর সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল বিমান বা রেলপথ দ্বারা গুয়াহাটি পৌঁছনো এবং তারপর সড়কপথে শিলং যাওয়া।ড্রাইভ করে গুয়াহাটি থেকে শিলং যেতে তিন ঘন্টা সময় লাগে।

ক্রেম মামলুহ পরিদর্শন করতে গেলে আপনি শিলং-এ থাকতে পারেন, যা বিভিন্ন বাসস্থানের বিকল্প প্রদান করে। শিলং-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোটেলগুলি হল –

  • হোটেল পোলো টাওয়ার্স
    পোলো গ্রাউন্ড, শিলং।
  • সেন্টার পয়েন্ট
    পুলিশ বাজার, শিলং।
  • ত্রিপুরা ক্যাসল
    ক্লিভ কলোনি, শিলং।
  • পেগাসাস ক্রাউন
    ওয়ার্ডস লেক রোড, পুলিশ বাজার, শিলং।

ক্রেম সোহ সিম্পি


মেঘালয় শুধুমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্মলতার জন্য বিখ্যাত না বরং এই স্থানে বহু অদৃশ্য বিষয় আছে। এই উত্তর-পূর্ব রাজ্য বিভিন্ন বৈচিত্র্যের স্হান যা ভারতের পরম পর্যটক গন্তব্য হিসেবে স্বীকৃত। মেঘালয় একটি গুহার রাজ্য হিসাবে আখ্যায়িত যা বহু সংখ্যক গুহার অধিকারী এবং এগুলি তাদের আকার এবং আকৃতির বিষয়ে একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।

ক্রেম সোহ সিম্পি একটি বড় এবং গভীর গুহা যা পশ্চিম খাসি পাহাড়ের মাওলংয়ে অবস্থিত। ক্রেম সোহ সিম্পি গুহা এই পাহাড়ের একটি হৃদয়গ্রাহী স্থানে অবস্থিত। এই বিশাল গুহার প্রবেশদ্বার অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই গুহার সদর দরজা একটি ২০ মিটার গভীর গর্তযুক্ত এবং এই গুহার মোট দৈর্ঘ্য ৭৬০ মিটার।

এই গুহার অভ্যন্তরীণ গলি পথ সাধারণত অন্যান্য গুহার থেকে চওড়া। তাই এই গুহার ভিতরে খুব সহজেই ঘোরাঘুরি করা যায়। একটি রহস্যময় চেহারা হলেও এই বিশালাকার গুহার সৌন্দর্য অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। ক্রেম সোহ সিম্পি গুহা এতই গভীর যে এর ভিতরে প্রাকৃতিক কোন রকমের আলো প্রবেশ করেনা। কেউ এই গুহার ভিতরে যেতে চাইলে তাকে অবশ্যই সাথে কৃত্রিম আলো নিয়ে যেতে হবে। খাসি পাহাড়ের ক্রেম সোহ সিম্পি গুহা মেঘালয় রাজ্যের এক অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

ক্রেম উমসংকট


ক্রেম উমসংকট মেঘালয় রাজ্যের এক অতি লোভনীয় গুহা হিসাবে খ্যাতি লাভ করে আসছে, যা পর্যটকদের এক আকর্ষণ ও আনন্দের বিষয়। গুহা অভিযান দেখে যদিও অত্যন্ত সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু এটা সফলভাবে সম্পন্ন করতে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয়।

সারা বিশ্ব থেকে আগত বহু সংখ্যক গুহা বিচরণকারীরা মেঘালয়ের প্রতিটি গুহা স্পষ্টভাবে পর্যটন করে দেখেছেন। মেঘালয় রাজ্য প্রায় ১০০০-টি অসাধারণ গুহার অধিকারী। কিন্তু আপনি এই রহস্যপূর্ণ গুহার অন্বেষণে ইচ্ছুক হলে আপনাকে সহায়ক হিসাবে একজন পেশাদার নির্দেশক নিতে হবে যারা গুহার অভ্যন্তরীণ গোলকধাঁধার সঙ্গে পরিচিত।

বস্তুত, মেঘালয় রাজ্যের দীর্ঘতম গুহা ক্রেম লেতপ্রাহ বা উম ইমলাদিত নামে পরিচিত। এই সুবিপুল গুহা ২২.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে বিস্তৃত।

মেঘালয়ের ক্রেম উমসংকট গুহার প্রবেশদ্বার প্রায় ৩৫০ মিটার লম্বা এবং এর মেঝে স্যাঁতসেঁতে বালি দ্বারা গঠিত। একটু উঁচু স্তরে অবস্থিত এই প্রবেশপথে পৌঁছাতে হলে আপনাকে চুনাপাথরের মধ্য দিয়ে এবং পাথরকুঁচি ভেঙ্গে যেতে হবে। মেঘালয়ের ক্রেম উমসংকটের মধ্যে দিয়ে অভিযান সত্যিই খুব কঠিন, তাই গুহা বিচরণকারীদের ৯৫৫ মিটার প্রসারিত পথ যেতে হলে তাদেরকে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

মেঘালয়ের ক্রেম উমসংকট যাত্রা বেশ দুরূহ ও সময় সাপেক্ষ হলেও আপনি একবার এর শেষপ্রান্ত পৌঁছে গেলে আপনার মন আনন্দ এবং উল্লাসে ভরে উঠবে।

ক্রেম সুইপ


আপনার ভ্রমণ অভিযানে মনোহর গন্তব্য জোয়াই যাওয়ার পথে ক্রেম সুইপে একটি ছোট্ট দর্শন দিতে ভুলবেননা, কারন এর অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আপনাকে অবশ্যই চমকিত করবে। আপনি খুব সহজেই মেঘালয়ের ক্রেম সুইপ পৌঁছতে পারেন কারন এটি জোয়াই থেকে শুধুমাত্র ৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মেঘালয়ের ক্রেম সুইপের আরেকটি মূল আকর্ষণ হল এখানকার নিদারূণ স্ট্যালাগমাইট্ ও স্ট্যালাকটাইট স্তরসমষ্টি যা সত্যিই দেখার মত।বস্তুত, স্ট্যালাকটাইট স্পেলোদেম বা ‘গুহা স্তরসমষ্টি’-র একটি প্রকরণ যা গুহার ছাদ থেকে ঝোলা গৌণ খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। চুনাপাথরের প্রাচুর্য সম্পন্ন গুহায় প্রধানত এটি দেখা যায়। কখনও কখনও, গুহাগুলির দেয়াল থেকে স্ট্যালাকটাইট বেরিয়ে আসে।স্ট্যালাকটাইটের আরেকটি নাম হল “ড্রিপস্টোন”।

প্রধানত, এইগুলি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পদার্থ থেকে নির্মিত। এই গুহার শেষ প্রান্ত স্ট্যালাগমাইট্ আকারের মেঝে থেকে উত্থিত গুহাগুলির প্রতিরূপ স্ট্যালাগমাইট্ নামে অভিহিত। যদি এই দুটি কাঠামো দীর্ঘ দিন ধরে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে পরিশেষে এটি একটি গম্বুজের আকার নেয়।

একটি ছোট জলের ফোঁটা এক বিস্ময়কর স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট্ জন্ম দিতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট জাতীয় খনিজ আমানত থাকতে হবে। ধীরে ধীরে একটি ফাঁপা স্ট্যালাকটাইট টিউব গুহার ছাদের দিকে অবশ্যই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। এই প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সোডা স্ট্র হিসেবে অভিহিত।

আপনি মেঘালয়ের ক্রেম সুইপ ভ্রমন করার সময় স্ট্যালাকটাইট বা স্ট্যালাগমাইট্ স্তরসমষ্টি গুলি কখনো স্পর্শ করবেন না কারন আপনার ত্বকের তৈলাক্ত নিঃসরণ এই কাঠামো পরিবর্তন করে দিতে পারে।

এছাড়াও আপনি গ্রামের স্কুলের পিছনের পথ হয়ে মেঘালয়ের ক্রেম সুইপ পৌঁছতে পারেন।

সিজু


সিজু গুহা মেঘালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম।এটি সিজু গ্রামের নিচে এবং নাফাক হ্রদের নিকটে সিমসাং নদীর তীরে অবস্থিত। বাগমারার ৩০ কিলোমিটার উত্তর দিকে অবস্থিত এই গুহা চুনাপাথরে গঠিত। সিজু গুহার সিমসাং স্ট্যালাকটাইট, নীল গ্রোট্টো গুহার অনুরূপ যা কাপড়ি উপদ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। ভারতের সমস্ত গুহার মধ্যে এটি তৃতীয় দীর্ঘতম বলে বিবেচিত। গুহাটি ডোবাক্কল নামেও পরিচিত যার আক্ষরিক অর্থ হল বাদুড়ের গুহা।

মেঘালয়ের সিজু গুহায় অনেক অনাবিষ্কৃত গোলকধাঁধা এবং কুঠরি রয়েছে। এই গুহা বেশ গভীর যদিও এটা এখনো সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়নি। আজ পর্যন্ত এর মাত্র ১ কিলোমিটার গভীরতা অন্বেষণ করা সম্ভব হয়েছে। মেঘালয়ের সিজু গুহা এখনও সম্পূর্ণ অন্ধকারে অবস্থিত। এই গুহার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত বহুবর্ষজীবী নদী বিভিন্ন জলজ প্রানীর আবস্থল। বাদুড়ের মলের একটি পুরু স্তর এই গুহার মেঝেটিকে আবৃত করে রেখেছে। এই গুহায় অসাধারণ স্ট্যালাগমাইট্ এবং স্ট্যালাকটাইট পাওয়া যায়।

সিজু কয়েকটি চমৎকার নদীপথের অধিকারী যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত। সিজু গুহার অন্যান্য আকর্ষণ হল চুনাপাথরের অসাধারণ শিলাস্তর যা বিশেষত ভাবে ‘প্রিন্সেস ডিস চেম্বার’ নামে অভিহিত।

সিজুর আরেকটি অন্য আকর্ষণ হল সিজু – পক্ষী অভয়ারণ্য যা সিমসাং নদীর বিপরীত দিকে অবস্থিত। এখানে পাখি সহ বেশ কয়েকটি সুরক্ষিত এবং বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। সাইবেরিয়ার হাঁসগুলি শীতকালের ঠান্ডা ঋতুতে এই পক্ষী অভয়ারণ্যে স্থানান্তরিত হয়। সিজু পক্ষী অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বার থেকে ১ কিলোমিটার খাড়া আরোহন করলে একটি সুন্দর শিলা গঠনের সংকলন দেখা যায়।

সিন্ডাই গ্রাম


মেঘালয়ের সিন্ডাই গ্রাম জয়ন্তিয়া পাহাড়ের একটি বিখ্যাত গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদপ্রাপ্ত জয়ন্তিয়া উপজাতিদের মাতৃভূমি জয়ন্তিয়া পাহাড় দর্শকদের একটি নান্দনিক অনুভূতি দেয়। জয়ন্তিয়া পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে মেঘালয়ের অধিকাংশ সুন্দর এবং বিখ্যাত পর্যটক স্থান অবস্থিত।

জয়ন্তিয়া পাহাড়ে অবস্থিত মেঘালয়ের সিন্ডাই গ্রামের একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। এই গ্রাম জোয়াই- দ্বাকি সড়কে অবস্থিত এবং বহু সংখ্যক গুহার উপস্থিতির জন্য সুপরিচিত। সিন্ডাই গ্রামের এই গুহাগুলি সিন্ডাই গুহা নামে জনপ্রিয়।

মেঘালয়ের সিন্ডাই গ্রামের রহস্যময় গুহাগুলি বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। এটা বলা হয় যে, গারোরা নিজেদের আত্মগোপন করার জন্য এই গুহা ব্যবহার করত। প্রকৃতিগত দিক দিয়ে গারোরা অত্যন্ত সাহসী এবং ঐক্যবদ্ধ হয়। তারা তাদের অধ্যুষিত এবং তাদের অন্তর্গত জায়গায় তারা অন্য কোন সম্প্রদায়কে প্রবেশ করতে দেয় না। তাই তারা প্রায়সই বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে গুরুতর বিবাদে জড়িয়ে পড়ে।

সিন্ডাই গুহা যুদ্ধের সময় তাদের আত্মগোপনের জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হত।

সিন্তু সিয়ার


মেঘালয়ের সম্মোহিত দেশ অসংখ্য পর্যটক কেন্দ্রের অধিকারী যা নিঃসন্দেহে আপনার মনকে মুগ্ধ করবে। আপনি যদি এই ঐশ্বর্যশালী নাটুকে আড়ম্বরের মধ্যে কিছু মুহুর্ত অতিবাহিত করতে চান, তাহলে সিন্তু সিয়ার আপনার জন্য আদর্শ।

সিন্তু সিয়ারে একটি সুবিপুল জলাশয় রয়েছে, যা মিন্টদু নামক একটি বৃহৎ নদীর পান্না স্বরূপ নীল জল নিয়ে গঠিত। মোটামুটিভাবে অনুবাদ করা হলে এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘সোনালী ফুল’, মেঘালয়ের সিন্তু সিয়ার প্রকৃতপক্ষে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের সাথে অন্বিত এক পর্যটন গন্তব্য যা মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

মেঘালয় রাজ্যের জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলার সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থিত, সিন্তু সিয়ার মেঘালয়ের যেকোন প্রান্ত থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায়। মেঘালয়ের সিন্তু সিয়ারের উজ্জ্বল সৌন্দর্যের কারন হল, মিন্টদু নদী যা একটি সম্পূর্ণ খিলান পর্যন্ত প্রসারিত এবং জোয়াইয়ে গিয়ে এটি থেমেছে। ফলে এই আকস্মিক থেমে যাওয়ার স্থানটি এই স্থানের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেছে। আবার এটি ব্যপক শক্তির সাথে হঠাৎ নির্গত হয় যা অসংশয়ী দর্শকদের চকিত করে তোলে। সিন্তু সিয়ারের কোলে মিন্টদু নদী দ্বারা সঞ্চালিত এই হঠাৎ বিলীয়মান হওয়া এবং আবার চোখের পলক না ফেলতেই পুনরায় উপস্থিত হওয়ার এই দর্শনীয় ঘটনা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

মেঘালয়ের চিত্রানুগ স্থান সিন্তু সিয়ারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হল, কিয়াং নংবহ মনুমেন্ট যা সারা বছর জুড়ে দর্শক দ্বারা পরিদর্শীত হয়।

নারসিয়াং


মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলা বহু আনন্দদায়ক পর্যটক গন্তব্যের অধিকারী, যা পর্যটকদের মন ছুঁয়ে যায়। নারসিয়াং এমনই এক জায়গা যা পর্যটকদের হৃদয়কে দখল করে রেখেছে। একটি পর্যটন গন্তব্য হওয়ার পাশাপাশি নারসিয়াং-এর একটি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক তাৎপর্য রয়েছে।

জয়ন্তিয়া রাজবংশের রাজারা ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা উপত্যকার কেন্দ্রে এক ছোট প্রদেশে বসবাসকারী ছোটখাটো নেতাদের পরাস্ত করে তাদের সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেছিলেন। তবে মেঘালয়ের নারসিয়াং আরও বেশি গুরুত্ব অর্জন করেছে কারন এটি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অবস্থিত অহোম ও কাঞ্চেরি রাজ্যের সমস্ত প্রকারের বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক বিচারকার্য পরিচালনার স্নায়ুকেন্দ্র হিসাবে কাজ করে। মেঘালয়ের নারসিয়াং প্রায় ১৬ শতকের সমাপ্তের সময়ে জয়ন্তিয়া শাসকদের ক্রিয়ামূলক রাজধানী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মেঘালয়ের নারসিয়াং-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পৌরাণিক প্রত্নতাত্ত্বিক ভগ্নাবশেষগুলি হল নিম্নরূপ –

প্রভু শিবকে নিয়োজিত অত্যন্ত সুন্দরভাবে খোদাইকৃত মন্দিরটি জয়ন্তিয়া শাসকদের সব ধরণের অস্ত্র ও গোলাবারুদ গোপনে রাখার জন্য ব্যবহৃত হত। দুর্গা মন্দিরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত শিবের এই আলয় এক ছোট পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।

১০০ মিটার দৈর্ঘ্য যুক্ত এই বিস্তৃত স্থান বহু এককপাথরের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সবথেকে লম্বা পাথরটির প্রস্থ হল ২ মিটার, উচ্চতা ৮ মিটার এবং বেধ ০.৪৬ মিটার। ল মাওলং নামে পরিচিত নারসিয়াং-এর এক সাপ্তাহিক বাজার নারসিয়াং-এর উত্তর কিনারায় অবস্থিত।

জয়ন্তিয়া পাহাড়


মেঘালয়ের জয়ন্তিয়া পাহাড় জয়ন্তিয়া উপজাতিদের আবাস্থল। জয়ন্তিয়াপাহাড় জেলা ১৯৭২ সালে গঠিত হয়। জয়ন্তিয়া পাহাড় মেঘালয়ের এক সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সুন্দর অবস্থান। এটি প্রকৃতি দ্বারা বেষ্টিত এমন এক জায়গা যা শহুরে শশব্যস্ততা থেকে দূরে সব দিক দিয়ে এক আদর্শ পশ্চাদপসরণ।

পারিপার্শ্বিক তৃণভূমি, বন, জল হ্রদ, নদী, মালভুমি ইত্যাদি মেঘালয় জয়ন্তিয়া পাহাড়ের প্রধান সৌন্দর্য। এই জায়গাটি বহু বন্যপ্রাণী প্রজাতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পুষ্পের আবাস্থল। জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সদর দপ্তর জোয়াই শিলং থেকে মাত্র ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর গুয়াহাটি বিমানবন্দর এবং নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন গুয়াহাটি রেল স্টেশন। সেখান থেকে আপনি যেকোন বাস ধরে শিলং যেতে পারেন, এবং তারপর যেকোন স্থানীয় পরিবহণ দ্বারা আপনি জয়ন্তিয়াপাহাড় পৌঁছতে পারেন।

জয়ন্তিয়া পাহাড়ের আবশ্যক পরিদর্শনমূলক গন্তব্য গুলি হল –

  • সিন্তু সিয়ার : এটি একটি সেরা বনভোজন গন্তব্য, যেখানে প্রবাহিত মিন্টদু নদীর শীতল বাতাস আপনি উপভোগ করতে পারেন। এই নদী জোয়াই শহরকে সম্পূর্ণভাবে পরিবেষ্টন করে আছে ও এই ভূভাগ সোনালী পুষ্পের মত আলোকিত দেখায়।
  • থাডলাসকেন লেক : এটা জোয়াই থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি বলা হয় যে জয়ন্তিয়া পাহাড়ের বিখ্যাত নেতা সজার নংগলি-র অনুগামীরা মাটি খুঁড়ে এই হ্রদ তৈরি করে। এই হ্রদ জোয়াই থেকে শিলং এর যাত্রাপথের মধ্যে পড়ে।
  • সিন্ডাই : জোয়াই – দ্বাকি সড়কে অবস্থিত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম যা অসংখ্য গুহার সমন্বয়ে গঠিত। এই গুহা-কন্দরগুলি একত্রে সিন্ডাই গুহা নামে পরিচিত।
  • নারসিয়াং : এই স্থানটি এখানে অবস্থিত দন্ডায়মান প্রস্তর গুলির বিস্ময়কর দৃশ্যের জন্য সুপরিচিত। এই শিলা গুলির মধ্যে একটি শিলা, জয়ন্তিয়া কিংবদন্তি মার ফালিংকি-র হাঁটার লাঠি ছিল বলে মনে করা হয়। এখানকার কিছু কিছু শিলা গুচ্ছ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা। জায়গাটি জোয়াই থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্হিত।

জোয়াই


জোয়াই একটি চিত্রানুগ শহুরে বসতি যা জনপ্রিয় শৈল শহর শিলংয়ের পূর্ব প্রান্ত থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৮০ মিটারের একটি বিস্ময়কর উচ্চতায় অবস্থিত মেঘালয়ের জোয়াই এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং একটি নির্মল পরিবেশের আশীর্বাদ প্রাপ্ত যা অনন্তকালের জন্য পর্যটকদের অন্তরে একটি আরামদায়ক অবস্থান হয়ে রয়েছে।

বস্তুত, জোয়াই হল জয়ন্তিয়া জেলার সদর দপ্তর যেখানে এখানকার উপজাতিরা বসবাস করত এবং যারা মঙ্গোলিয়ান সাম্রাজ্যের পরম ক্ষমতাশালী উত্তরসূরী ছিলেন। যেহেতু, মেঘালয়ের জোয়াই অসাধারণ পর্যটন গন্তব্য শিলং থেকে একটি ঢিল ছোড়া দুরত্বে অবস্থিত তাই এটি শিলচর থেকে যেকোন বাস বা গাড়ি দ্বারা প্রবেশযোগ্য। এই বাসগুলি শিলংয়ের বড়বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রস্থান করে।

মেঘালয়ের জোয়াই শহরের অসাধারণ আড়ম্বর হল সমগ্র শহর জুড়ে বিস্তৃত আশীর্বাদপ্রাপ্ত মিন্টদু নদীর উপস্থিতি। আপনি যদি আপনার সমস্ত বিরক্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চান এবং আপনার পরিবার এবং প্রিয়জনের সঙ্গে যদি কিছু ভাল সময় অতিবাহিত করতে চান তাহলে জোয়াই অবশ্যই আপনাকে নিরাশ করবেনা।

জোয়াইয়ের নিকটে অবস্থিত বিশিষ্ট পর্যটক আকর্ষণগুলি হল – ইউ কিয়াং নংবাহ নামক একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধার সমাধি, যিনি ১৮৬৩ সালে পরাক্রমশালী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে হাসিমুখে শহীদ হন, বিরাটকার পাথর দ্বারা নির্মিত একটি সেতু যা ১৬ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং আরোও অনেক। এটা অনুমান করা হয় যে এই সুবৃহৎ সেতু নির্মাণের পিছনে মার ফালিংকি ও ইউ লিংসোর লামারের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা কাজ করে ছিল।

জোয়াইয়ের কাছাকাছি আরেকটি প্রদর্শনী হল সজার নংগলি দ্বারা নির্মিত থাডলাসকেন লেক নামক একটি কৃত্রিম হ্রদ। আপনি এই হ্রদে নৌবিহার উপভোগ করতে পারেন।

গারো পাহাড়


সুবিপুল গারো পাহাড় অত্যন্ত সুন্দরভাবে ভারতের মেঘালয় রাজ্য জুড়ে অবস্থান করে আছে। এটি গারো-খাসি পাহাড়ের একটি ভগ্নাংশ নিয়ে গঠিত যা মেঘালয় রাজ্যের এক অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসাবে কাজ করে। গারো পাহাড় মেঘালয়ের বিভিন্ন উপজাতিদের আবাস্থল।

মেঘালয়ের গারো পাহাড় পৃথিবীর বুকে এমন একটি গন্তব্যস্থল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে, যেখানে উপক্রান্তীয় জলবায়ু বিরাজ করার ফলে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়। এইরকম স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের ফলে এই উপ-ক্রান্তীয় প্রকৃতিতে বহু অসাধারণ সবুজ অরণ্য সহজেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে।

মেঘালয় রাজ্যের ক্রিয়ামূলক রাজধানী শিলং আসলে গারো পাহাড়ের কেন্দ্রে প্রতিপালিত। তিনটি সুস্পষ্ট জেলা মেঘালয়ের গারো পাহাড়কে পরিবেষ্টন করে আছে।

তবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহুরে বসতি হল তুরা যেখানে ৭০,০০০ বাসিন্দা বসবাস করে। মেঘালয়ের গারো পাহাড় প্রায় সারা বছর জুড়েই একটি মেঘাচ্ছন্ন আর্দ্র আবহাওয়ার অধীনে থাকে। এটি মেঘালয়ের সুবৃহৎ গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এছাড়াও গারো পাহাড় বহু সুন্দর উদ্ভিদকুল ও পর্যাপ্ত প্রাণিকুলের সমন্বয়ে গঠিত।

এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটক গন্তব্য রয়েছে যেগুলি নিঃসন্দেহে আপনাকে মুগ্ধ করবে, সেগুলি হল –

  • ৮৭২ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে তুরা শিখর। এখানে বহু সংখ্যক বাংলো আছে, যেগুলি আরামদায়ক বাসস্থান প্রদান করে।
  • জিঞ্জিরাম নামক একটি ছোটো নদী তীরে অবস্থিত ভেতবাড়ি নামক একটি গ্রামীণ বসতি।
  • কাটাবিল নামক একটি বিস্তৃত পুকুর।
  • হজরত শাহ কামাল বাবার দরগা বা পীরস্থান।
  • নকরেক নামক একটি বিস্ময়কর ছোট পাহাড় যা ১৪১২ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে।

অন্যান্য আকর্ষণগুলি হল মীর জুমিলার সমাধি, আরবেল্লা চূড়া, রংবাং ডারে এবং আরো অনেক।

নকরেক চূড়া


তুরা পরিসীমার সর্বোচ্চ চূড়া হল নকরেক চূড়া। পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার তুরা পরিসীমা এক অন্যতম প্রধান পর্বতমালা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং এটি পূর্ব-পশ্চিমে সিজু থেকে দক্ষিণ গারো পাহাড়ের জেলা তুরার দিকে প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে তুরা পরিসীমা বিখ্যাত নকরেক জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনার অধীনে রয়েছে। নকরেক চূড়া তুরার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

মেঘালয়ের নকরেক চূড়া শুধুমাত্র তুরা পরিসীমার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নয় বরং সমগ্র গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।নকরেক চূড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪১২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটা দীর্ঘকায় নিবিড় এবং সবুজ অরণ্যে আচ্ছাদিত। এটি জাতীয় জীবমণ্ডল হিসেবে বিবেচিত এবং মেঘালয় রাজ্যের বন বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত। একটি বিরল লেবু জাতীয় ফল নকরেক প্রজাতির পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। যা ‘মেমাং নারাং’ বলে অভিহিত।

এই ফল বিশ্ব জুড়ে পাওয়া বিভিন্ন ধরণের অন্যান্য সব লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে ঊর্ধ্বতন ফল হিসাবে ঘোষিত। এই প্রাচীন ফল সংরক্ষণ করার জন্য একটি জিন অভয়ারণ্য এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা বিশ্বের এই ধরনের প্রথম।

আপনি ডারিবোকরে-আসানাংগ্রে-তুরা সড়কের মাধ্যমে নকরেক পৌঁছাতে পারেন।আপনি ডারিবোকরে গ্রাম থেকে এক বা আধ কিলোমিটার হেঁটে মেঘালয়ের নকরেক চূড়ায় পৌঁছাতে পারেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী রয়েছে যেমন – বিরল প্রজাতির পক্ষী, বন্য হাতি, বিরল অর্কিডের ফল।

তুরা চূড়া


তুরা চূড়া তুরা পর্বতমালার এক প্রধান চূড়া। তুরা পর্বতমালা মেঘালয় জেলার পশ্চিম গারো পাহাড়ের প্রধান পর্বত মালাকে উপস্থাপন করে। এটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মেঘালয় জেলার পূর্ব থেকে পশ্চিমে সিজু থেকে তুরার পরিসীমাকে দক্ষিণ গারো পাহাড় বলা হয়। তুরা পরিসীমা নকরেক জাতীয় উদ্যান দ্বারা পরিচালিত এবং প্রতিপালিত।

একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, একটি পর্যটন বাংলো এবং একটি সিঙ্কোনা বাগান সুপরিচিত তুরা চূড়ার উপর অবস্থিত। মেঘালয়ের তুরা চূড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হল বাংলাদেশের সমতলভূমির একটি চমৎকার দৃশ্য, যা হল একটি হরিদ্রাভ রঙ ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নিম্নদেশ।

গারো পাহাড় অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার গ্রীষ্মের সময় তুরা চূড়ার উপর একটি কটেজে বাস করতেন। সেখান থেকে, তিনি নিয়মিত হাতির পিঠে চেপে তুরা শহরের নিচের দিকে ভ্রমণ করতে যেতেন।

সুবিপুল তুরা পাহাড়, তুরা শহরের পূর্বা ঞ্চলে অবস্থিত যা মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সমগ্র এলাকার সবচেয়ে বড় শহর। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৭২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। স্থানীয় বিশ্বাস যে মেঘালয়ের তুরা চূড়া একটি পবিত্র স্থান যেখানে দেবতার অধিষ্ঠান। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বলা হয় যে এর প্রকৃত নাম ছিল ডুরা, যা ব্রিটিশ সরকার তুরা বলে উচ্চারিত করত এবং তারপর থেকে এটি তুরা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তুরা শহর তুরা পর্বতের চূড়া ও অববাহিকা নিয়ে গঠিত এবং সেইজন্য তুরা পর্বতমালা একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।

বলপকরম্


বলপকরম্ মেঘালয়ের একটি বন্য প্রাণী উদ্যান। এটি বাগমারা নামক স্থান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী যেমন – বন্য গরু, বন্য মোষ এবং হাতি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ মেঘালয়ের বলপকরম্ মালভূমিতে পাওয়া যায়। বলপকরম্ মালভূমির দৃশ্যের কথা মাথায় রেখে সরকার এখানে বলপকরম্ জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেন। শিব বোরিভিয়া থেকে শিলং-বালুত-রানিকোর-মহেশখোলা-বাগমারা সড়কের মাধ্যমে সহজেই বলপকরম্ জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন করতে পারেন।

বলপকরম্ মালভূমি থেকে বাংলাদেশ সমভূমির একটি চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়, যা আঁকাবাঁকা নদনদী ও অভ্যন্তরীণ নদী দ্বারা সমৃদ্ধ। বর্তমানে, এই মালভূমি পাথরকুচি এবং পাথরের একটি দৃঢ় স্তুপ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। প্রচলিত গারো বিশ্বাস অনুযায়ী, গারোর সকল ধার্মিক মানুষজন বলপকরমে্ বসবাস করত। তাই, গারোরা ধার্মিক আত্মাদের আবাসস্থল হিসেবে জায়গাটকে বিবেচনা করেন।

মেঘালয়ের বলপকরমে্ কিছু রহস্যময় গন্তব্য রয়েছে, যেগুলি হল –

চিদমক : এটি বলপকরমে্র একটি ছোট কালো জলাশয়।গারোরা বিশ্বাস করেন যে মৃত মানুষের আত্মারা পরলোকে গমন করার আগে এই জলাশয়ে স্নান করে নিজেদের শুদ্ধ করে।এই অবাস্তব ধারণা অনুযায়ী মৃতদের পাপ ও শ্মশান প্রক্রিয়ার ফলে এই জল কালো।

ডিক্কিনি রিং : এটি একটি বিশাল সমতল শিলা যা বলপকরমে্র দক্ষিণ অঞ্চলে মহাদেব গ্রামের নিকটে অবস্থিত। এই শিলার আকৃতি একটি উল্টানো নৌকার অনুরূপ দেখতে হয়। গারো পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী জানা যায় যে, একজন মহান গারো নায়ক, ডিক্কি একটি নৌকা তৈরি করছিলেন এবং মোরগের ডাক তাকে বার বার বিভ্রান্ত করে এবং তখন সেই অর্ধনির্মিত নৌকা পাথরে রুপান্তরিত হয়ে যায়। এই প্রচলিত পৌরাণিক বিশ্বাস নিশ্চিত করে যে, আত্মা রাতের বেলাতেই কাজ করে।

ইমিলছাং ডারে


ইমিলছাং ডারে মেঘালয়ের একটি জলপ্রপাত যা পর্যটকদের এক অসাধারণ সৌন্দর্য প্রদান করে। এটি মেঘালয় জেলার পশ্চিম গারো পাহাড়ের চকপট-তুরা সড়কের অত্যন্ত নিকটে অবস্থিত। এই পুরু জলাশয় একটি দর্শনীয় জলপ্রপাত গঠন করে।মেঘালয়ের ইমিলছাং ডারের জল অবশেষে একটি বিস্তৃত গভীর পুকুরের মধ্যে পতিত হয় যা জলপ্রপাতের নীচের অংশে অবস্থিত। এই পুকুর প্রায়শই দর্শকদের দ্বারা একটি সুইমিং পুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে বিভিন্ন রং এবং আকারের বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। এটি একটি জনপ্রিয় বনভোজন গন্তব্য হিসাবে পরিচিত।

এই জলপ্রপাতটি একটি নদীর উপর অবস্থিত যা পাহাড়ের গা ধরে তার পথ গড়ে তোলে। এই নদীটি সংকীর্ণ গভীর এবং আঁকাবাঁকা। এই প্রবাহ অবশেষে একটি প্রশস্ত নির্গমনপথ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়।

বিমান মাধ্যমে

ইমিলছাং ডারে জলপ্রপাত যেতে হলে আপনাকে প্রথমে গারো পাহাড়ে পৌঁছতে হবে। গুয়াহাটি বিমানবন্দর এই স্থানের নিকটে অবস্থিত। গুয়াহাটি থেকে, একটি গাড়ী বা বাসে শিলং যেতে পারেন। গুয়াহাটি থেকে শিলং প্রত্যহ বাস পরিষেবা রয়েছে। ব্যক্তিগত কোম্পানি পবন হংস হেলিকপ্টার লিমিটেড নিয়মিত গুয়াহাটি থেকে শিলং এবং তুরা যায় এবং ফিরে আসে। মেঘালয় সরকারের অনুমতি নিয়ে হেলিকপ্টার ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়।

রেলপথ মাধ্যমে

গারো পাহাড়ের সর্বনিকটবর্তী রেলস্টেশন হল গুয়াহাটি যা ভারতের সমস্ত প্রধান জায়গার সাথে এই স্থানকে সংযুক্ত করে।

সড়ক মাধ্যমে

সাধারণ বাস ও ডিলাক্স বাস গারো পাহাড়ে পরিষেবা প্রদান করে। মেঘালয়ের সড়ক পরিবহন সমিতি নিয়মিত মেঘালয় রাজ্যে বাস পরিচালনা করে।

নাফাক হ্রদ


নাফাক হ্রদ, মেঘালয়ের একটি হ্রদ যা জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য উইলিয়ামনগর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এই হ্রদ পক্ষী পর্যবেক্ষণ এবং মাছ ধরার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। মেঘালয়ের নাফাক হ্রদ একটি প্রাকৃতিক হ্রদ যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট। একটি অতি উচ্চ নদীর উপনদী ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ফলে এই হ্রদ সৃষ্টি করে। নাফাক হ্রদ সিমসাং নদীর নিকটে তুরা অঞ্চল থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

গারোদের পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী নাফাক মৃত আত্মাদের ভূমি হিসাবে বিবেচিত। এটি মনে করা হয় যে, এখানে আগে আত্মারা বসবাস করত কিন্তু পরে তারা এখানে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় বলপকরমে্ স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হন।

বিমান মাধ্যমে

নাফাক হ্রদ পরিদর্শনের জন্য আপনাকে প্রথমে মেঘালয়ের তুরা অঞ্চলে পৌঁছাতে হবে। এই স্থানের সর্বনিকটবর্তী বিমানবন্দর গুয়াহাটিতে অবস্থিত। গুয়াহাটি থেকে বাস বা গাড়ি করে সহজেই শিলং যেতে পারেন। গুয়াহাটি ও শিলংয়ে নিয়মিত বাস চলাচল হয়। বর্তমানে হেলিকপ্টার ফ্লাইট গুয়াহাটি থেকে তুরা এবং শিলংয়ে নিয়মিত পরিষেবা প্রদান করে। এই ফ্লাইট পবন হংস নামক একটি প্রাইভেট কোম্পানীর দ্বারা পরিচালিত হয় যা মেঘালয় সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত।

রেলপথ মাধ্যমে

কাছাকাছি রেলস্টেশন গুয়াহাটিতে অবস্থিত। এখানে বহু ট্রেন চলাচল হয় যা ভারতের অন্যান্য স্থানের সাথে এই স্থানকে সংযুক্ত করে।

সড়ক মাধ্যমে

তুরা অঞ্চল থেকে সাধারণ এবং ডিলাক্স উভয় বাস পরিষেবা পরিচালনা করা হয়। মেঘালয়ের সড়ক পরিবহনের বাস এখান থেকে নিয়মিত পাওয়া যায়।

টেটেংগকোল


টেটেংগকোল তার গুহার জন্য বিখ্যাত যা সিজু থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নেংখং গ্রামে অবস্থিত। এর প্রবেশদ্বার যথেষ্ট বড় নয় এবং এর আকৃতি বৃত্তাকার। এই প্রবেশপথের ব্যাস ১ মিটার।

এই ছোট প্রবেশপথ ৫৩৩৪ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি বড় গুহার অধিকারী। বর্তমানে, মেঘালয়ের টেটেংগকোল গুহা ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম গুহা। টেটেংগকোল গুহা-উল্টো-পাত্তয়ালা বামন গুহা হিসাবেও অভিহিত।

বিমান মাধ্যমে

টেটেংগকোল গুহা যেতে হলে আপনাকে প্রথমে গারো পাহাড়ের পৌঁছতে হবে। গুয়াহাটি বিমানবন্দর এই স্থানের নিকটে অবস্থিত। বহু বাস ও গাড়ি গুয়াহাটি থেকে শিলং যায়।

পর্যটকরা গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে রাজধানী শহর শিলং পর্যন্ত সরাসরি বাস পরিষেবা পেতে পারেন। প্রাইভেট কোম্পানী পবন হংস হেলিকপ্টার লিমিটেড হেলিকপ্টার ফ্লাইট পরিষেবা প্রদান করে।

এই ফ্লাইট গুয়াহাটি, শিলং এবং তুরা এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে যোগাযোগ সাধন করে। এই ফ্লাইট গুলি মেঘালয় সরকারের দ্বারা লাইসেন্স প্রাপ্ত।

রেলপথ মাধ্যমে

রেলস্টেশন গারো পাহাড়ের কাছাকাছি গুয়াহাটিতে অবস্থিত। এই রেলস্টেশন শুধুমাত্র মেঘালয় রাজ্যের পর্যটকদের সাহায্য করে না বরং সারা দেশের পর্যটকদের সুবিধামতো গারো পাহাড় ভ্রমণ করতে সহায়তা করে, যেখানে ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গুহা টেটেংগকোল অবস্থিত।

সড়ক মাধ্যমে

পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে বহু বাস উপলব্ধ। এর মধ্যে সাধারণ ও ডিলাক্স উভয় বাসই উপলব্ধ। মেঘালয়ের সড়ক পরিবহন সমিতি দ্বারা এই বাসগুলি নিয়মিত ভাবে পরিচালিত হয়।

বক বাক ডোবাকোল


মেঘালয় রাজ্য বহু সংখ্যক অসাধারণ গুহা নিয়ে গঠিত যেগুলি এই স্থানকে ভারতের সবচেয়ে পরিদর্শনযোগ্য গন্তব্য করে তোলে। এখানে ১০০০-টি অসাধারণ গুহা রয়েছে যার মধ্যে বক বাক ডোবাকোল এক অন্যতম জনপ্রিয়। প্রায় ১০৫১ মিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে বিস্তৃত বক বাক ডোবাকোল সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে, মেঘালয়ের বক বাক ডোবাকোলের দৃশ্য এখানে অবস্থিত অন্যান্য গুহার থেকে পৃথক।

মেঘালয়ের বক বাক ডোবাকোল-এর সীমানার নদীর জন্য একটি ফাঁকা স্থান হিসাবে কাজ করে। এই নদীর পরিষ্কার নীল জল বক বাক ডোবাখোল নামক গুহার মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু এই অদ্ভুত ঘটনাটি সব সময় ঘটে না।

এইরকম অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যযুক্ত মেঘালয়ের বক বাক ডোবাকোল একমাত্র গুহা এবং সারাবছর ধরে বহু আগ্রহী পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শীত হয়।

বক বাক ডোবাকোলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এখানে বর্ষাকালে প্রচুর জল প্রবেশ করে যা এই গুহাকে কার্যত অনধিগম্য তোলে। তাই আপনি যদি এই গুহা পরিদর্শন করতে চান তাহলে বর্ষায় না আসারই চেষ্টা করবেন।

এছাড়াও আকস্মিক দুর্ঘটনাকে মাথায় রেখে এই গুহা পরিদর্শনকালীন আপনি অবশ্যই কিছু প্রতিরক্ষা মূলক যন্ত্রপাতি সাথে আনবেন।এছাড়াও সাথে একজন সুদক্ষ গুহা নির্দেশক নিয়ে আসবেন।

থাডলসকেন হ্রদ


পর্যটন হল মেঘালয়ের অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রাণ। মেঘালয়ের কিছু নিদারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে যা সত্যিই দেখার মত। মেঘালয়ের থাডলাসকেন হ্রদ এই স্থানে আরও সৌন্দর্য যোগ করে এবং মেঘালয়ের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

কিন্তু মেঘালয়ের থাডলাসকেন হ্রদ এবং অন্যান্য পর্যটন গন্তব্যের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল এটি কৃত্রিম উপায়ে নির্মিত হয়েছে, ঈশ্বরের হাতে নয়। থাডলাসকেন হ্রদ যাওয়ার সময় জোয়াই থেকে শিলং যাওয়ার পথে ধানক্ষেত, তৃণভূমি, ওক এবং পাইন গাছের পর্ণমোচী বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে, এই হ্রদ মেঘালয়ের দুটি জনপ্রিয় জায়গা শিলং এবং জোয়াই থেকে সহজে প্রবেশযোগ্য। থাডলাসকেন শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে এবং জোয়াই থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মেঘালয়ের থাডলাসকেন হ্রদটি জয়ন্তিয়া গোষ্ঠীর নেতা ইউ সজার নংগলি (জয়ন্তিয়ার প্রাক্তন সামরিক নেতা)-এর অনুগামীদের দ্বারা ধনুকের ডগা দিয়ে খনন করে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে, এটি বিরল অর্কিড তৃণভূমি এবং মিন্দু নদীর অভ্যান্তরে অবস্থিত। এই হ্রদের পার্শ্ববর্তী উদ্ভিদকুল এবং প্রাণিকুল এখানকার অসাধারণ আকর্ষণ। এখানকার নির্মল এবং সতেজতাদায়ক পরিবেশের জন্য হাজার হাজার পর্যটক মেঘালয়ের থাডলাসকেন হ্রদে ভিড় করে আসে। এই রাজ্যের প্রাণবন্ত ভূদৃশ্য এবং জলবায়ু বহু রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপের প্রস্তাব দেয়, তাছাড়াও মেঘালয়ের থাডলাসকেন হ্রদ তার নির্মল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের দ্বারা পর্যটকদের এক আনন্দদায়ক অনুভূতি প্রদানে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।

থাডলাসকেনহ্রদ প্রায় সারা বছর ধরে পর্যটকদের সম্মোহিত করে কিন্তু এই হ্রদ সেপ্টেম্বর থেকে মে মাসে তার পূর্ণ গরিমা লাভ করে।

স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাত


মেঘালয় বিভিন্ন উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুলে পরিপূর্ণ এবং এটি রাজ্যের জলপ্রপাতের সঙ্গে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। বস্তুত, মেঘালয়ে ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট দুটি নির্ঝর আমরা দেখতে পাই, একটি হল – জলপ্রপাত ও আরেকটি হল বৃষ্টিপাত। প্রাক্তনগুলির কিছু বিধ্বংসী প্রভাব থাকলেও পরবর্তী গুলি শুধু পর্যটকদের অন্তরে নিখাদ আনন্দ প্রদান করে। মেঘালয়ের স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাত আনন্দধারার উৎসের এক অসাধারন উদাহরণ। এর নাম অনুযায়ী স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাতটির কাঠামোটি একটি ব্যাপক ডানা বিস্তার সহ একটি ঈগলের অনুরূপ।

মেঘালয়ের স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাত রাজধানী শহর শিলংয়ের উপকণ্ঠে অবস্থিত। তাই এই জলপ্রপাত পরিদর্শন করা খুবই সহজ। এটি পোলো গ্রাউন্ড থেকে ঠিক এক মাইল দূরে অবস্থিত। পাথুরে ভূখণ্ডের উপর পতিত মেঘালয়ের স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাতের জলের বুদবুদের দৃশ্যটি সারা বছর ধরে দর্শকদের মনে চমৎকার সাড়া জাগায়। মেঘালয়ের স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাত তার নামের মতন মহান উচ্চতা সম্পন্ন বা প্রকৃতির সাথে প্রাণবন্ত নয়। কিন্তু বর্ষাকালে এই জলপ্রপাত তার পূর্ণ গরিমা লাভ করে। এখানের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৬০০০ থেকে ১০০০০ মিলিমিটার, এই সময় এই জলের আয়তন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও এই জল ব্যপক ভয়ঙ্কর শব্দের সাথে পাথরের উপর পতিত হয়।

মেঘালয়ের স্প্রেড ঈগল জলপ্রপাতের সৌন্দর্য প্রতি বছর ব্যপক সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এটা মেঘালয় পর্যটনের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য। সুতরাং, মেঘালয় পরিদর্শন করার সময় আপনার পরিদর্শনীয় স্থানের তালিকার মধ্যে এই স্থানটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে একেবারেই ভুলবেননা।

ক্রিনোলাইন জলপ্রপাত


মেঘালয়ের ক্রিনোলাইন জলপ্রপাত এই সুন্দর শহরের মাঝখানে অবস্থিত। এই জলপ্রপাতের নিকটে লেডি হায়দারি পার্ক নামক একটি ছোট চিড়িয়াখানা রয়েছে। ক্রিনোলাইন জলপ্রপাত তার সুস্পষ্ট সৌন্দর্যের সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে দর্শকদের আকর্ষণ করে। এই জলপ্রপাতের জলোচ্ছাসের কলতান কয়েক মিটার দূর থেকে শোনা যায়।

উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয় তার চিত্রানুগ সৌন্দর্য ও নির্মলতার জন্য বিখ্যাত। একদা এই রাজ্য উপেক্ষিত হত ও ভারতের পর্যটনের তালিকায় এর নাম কোথাও ছিলনা। কিন্তু ঘটনাচক্রে অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। তাই মেঘালয়ের রাজ্য সরকার মানুষদের তাদের পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে কিছু আনন্দের সময় কাটানোর জন্য কিছু পর্যটন গন্তব্য তৈরি করে চলেছেন। এই জলপ্রপাতের শীর্ষস্থান বেশিরভাগই সবুজ ঝোপ দ্বারা আবৃত থাকে যা দর্শকরা খুব কমই দেখতে পায়। এই জলপ্রপাতের নীচে একটি বড় সুইমিং পুল রয়েছে, যা সাঁতারপ্রেমীদের এই ঠাণ্ডা জলে ডুব দেওয়ার জন্য অত্যন্ত আকর্ষিত করে।

এই হ্রদের নিকটবর্তী রেস্তোরাঁ মেঘালয়ের ক্রিনোলাইন জলপ্রপাতকে এক অতিরিক্ত সৌন্দর্য প্রদান করে। বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের কথা মাথায় রেখে এই রেস্তোরাঁ আঞ্চলিক, ভারতীয় এবং মহাদেশীয় ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের রান্না এখানে চালু করেছে। মেঘালয়ের পর্যটন বিভাগ এই সুইমিং পুলের তীরে কিছু অন্যান্য উৎসব ও কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেগুলি এই স্থানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

মেঘালয়ে কেনাকাটা

ভারতের সমগ্র উত্তরাঞ্চলে সত্যিই হস্তশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে এবং মেঘালয়ে এর ব্যতিক্রম নয়। ভাল ভাবে বলা যায় যে মেঘালয়ের উপজাতিদের বয়ন – তা বেত হোক বা কাপড় – সেটি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সূক্ষ্ম হস্তশিল্প মেঘালয়ে কেনাকাটার জন্য আদর্শ।

মেঘালয়ে যেহেতু একটি বিশাল বনাঞ্চল রয়েছে এবং সেখানে দীর্ঘ অতীতকালের প্রচুর কাষ্ঠ উপাদান রয়েছে, তাই মেঘালয়ের উপজাতিরা কাষ্ঠ খোদাই ও বেতের এবং বাঁশের কাজে একটি বিশেষ ঐতিহ্য অর্জন করেছে।

হাতে বোনা বেতের মাদুর এবং মেঘালয়ের ঝুড়ি তাদের টেকসইতার জন্য বিখ্যাত, এছাড়াও এখানকার বস্ত্রে খুব সুন্দর পুষ্পশোভিত নকশা করা থাকে। এখানকার হস্তনির্মিত পণ্য দেখে আপনি নিঃসন্দেহে মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

মেঘালয়ে কেনাকাটা করার সময় কিছু দিকে নজর রাখবেন –

কাষ্ঠ – খোদাই আনারসের তন্তু দ্বারা পণ্য
বেত ও বাঁশের পণ্য গহনা
গালিচা ও রেশম বস্ত্র

আপনি, মেঘালয়ে বহু বাণিজ্যিক প্লাজা দেখতে পাবেন না কিন্তু এখানকার স্থানীয় বাজারগুলি আপনাকে এক আনন্দদায়ক কেনাকাটার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। এই রাজ্যে বহু সরকারী এম্পোরিয়ার উপস্থিতি দেখা যায়।

* সর্বশেষ সংযোজন : ০৫ - ই আগস্ট, ২০১৫