সিকিম মানচিত্র

Sikkim Map in Bengali

সিকিম মানচিত্র
* জেলা, রেলপথ, নদী এবং প্রধান সড়ক সংযোগ সহ সিকিম মানচিত্র৷

সিকিমের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.sikkim.gov.in
স্থাপনের তারিখ 15 মে, 1975
আয়তন 7,096 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 86/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 610,577
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 323,070
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 287,507
জেলার সংখ্যা 4
রাজধানী গ্যাংটক
নদীসমূহ তিস্তা, চোলামু, রঙ্গীত
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান খাংচন্দনোঙ্কগা(কাঞ্চনজঙ্গা) জাতীয় উদ্যান, ফামবোং লহো বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, কিয়ংনোসলা আ্যলপাইন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মেইনাম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ইত্যাদি।
ভাষা নেপালি, লিম্বু, মাঝি, মাঝওয়ার, সিকিমি, শেরপা, তামাং, ঠুলুং, তিব্বতী, ইংরাজী, হিন্দি,ইত্যাদি।
প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
রাষ্ট্রীয় পশু রেড পান্ডা
রাষ্ট্রীয় পাখি রক্ত মনাল (ব্লাড ফিসেন্ট)
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ রডোডেনড্রন
রাষ্ট্রীয় ফুল নোবেল অর্কিড
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 81159
সাক্ষরতার হার (2011) 87.75%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 889
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 32
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 1

সিকিম সম্পর্কে

নূ্ন্যতম জনবসতি এবং পাশাপাশি ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হলেও সিকিম, প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে এক স্বর্গ। দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত সিকিম রাজ্যটি দক্ষিণদিকে পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এটি তার আন্তর্জাতিক সীমানা ভূটানের সাথে ভাগ করে নিয়েছে, পশ্চিমদিকে নেপাল এবং উত্তর-পূর্ব দিকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত দ্বারা সীমান্তবর্তী রয়েছে। সুন্দর পাহাড়, গভীর উপত্যকা এবং জীব বৈচিত্র্যে ভরা সিকিম পর্যটকদের জন্য একটি পছন্দের জায়গা। গ্যাংটক এই রাজ্যের রাজধানী সহ সিকিমের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত এবং এটি শিবালিক পর্বতের উপরে ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত, কাঞ্চনজঙ্ঘার অতীব সৌন্দর্য এই গ্যাংটক থেকেও দেখা যায়। মোট ৬ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা সহ সিকিমের মোট আয়তন হল মোটমুটি প্রায় ৭০০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা পার্বত্যময় হওয়ায় সিকিমে গ্রীষ্মকাল বেশ মনোরম, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর বেশি অতিক্রম করে না। অন্যদিকে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কেরও নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা মেরুদন্ড শিহরিত কম্পন অনুভব করে। ১৯৭৫ সালে সিকিম, ভারতের একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং তারপর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিকাঠামো, দেশের বাকি রাজ্যগুলির মতোই মেনে চলে। সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩২ জন সদস্যকে নিয়ে এখানকার বিধানসভা পরিষদ গঠিত।

ভৌগোলিক অবস্থান

সিকিম ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং এটি ভৌগোলিকগত ভাবে ২৭.৩৩ ডিগ্রী উত্তর এবং ৮৮.৬২ ডিগ্রী পূর্বদিকে অবস্থান করছে। হিমালয় পর্বত দ্বারা বেষ্টিত, রাজ্যটি উত্তর-পূর্ব দিকে তিব্বত, পশ্চিমে নেপাল, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভূটান এবং দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা সীমান্তবর্তী রয়েছে।

সিকিমের রাজধানী শহর

ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত সিকিমের রাজধানী হল গ্যাংটক। এছাড়াও এটি রাজ্যের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত। এটি রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শিবালিক পর্বতের উপরে ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থান করছে। গ্যাংটক, স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ হল ‘পর্বত শৃঙ্গ’, এটি দেশের এক সর্বোত্তম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যস্থল। এছাড়াও এটি হিমালয় শৃঙ্গের মধ্যে অবস্থিত রাজ্যের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত। পাশাপাশি গ্যাংটক হল, পূর্ব সিকিমের জেলাগুলির সদর দপ্তর। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ, কাঞ্চনজঙ্ঘা-কে এই শহরের পূর্বদিক থেকে দেখা যায়।

সিকিমের বিভিন্ন আবহাওয়া

সিকিমের বাসিন্দারা দুই প্রকার জলবায়ু অনুভব করে। রাজ্যের উত্তর অংশ তুন্দ্রা জলবায়ু অনুভব করে, অন্যদিকে, রাজ্যের দক্ষিণ অংশে উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়। তুন্দ্রা জলবায়ুর উপস্থিতির কারণে, এই রাজ্যের উত্তর অংশ বছরের প্রায় ৪ মাস বরফাবৃত থাকে, এইসময় এখানে রাত্রের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রী-র নীচে নেমে যায়। রাজ্যের জলবায়ু প্রধানত ৫-টি ঋতুতে বিভক্ত রয়েছে, সেগুলি হলঃ

  • বসন্ত ঋতু
  • গ্রীষ্ম ঋতু
  • শরৎ ঋতু
  • বর্ষা ঋতু
  • শীত ঋতু

জনসংখ্যা

সিকিমের জনসংখ্যা ৬ লাখের বেশি হবে না, যার ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৫০ শতাংশ মহিলাদের নিয়ে গঠিত। এখানকার প্রকৃত স্থানীয় বসিন্দা হল লেপচা। সিকিমের অধিকাংশ শিল্পপতিই লেপচা সম্প্রদায়ভুক্ত। তিব্বতের খাম জেলা থেকে উঠে আসা মানুষ, ভূটিয়া হল সিকিমের দ্বিতীয় জাতিগত সমষ্টি। তারা এই জায়গায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু করে এবং এরা কৃষক ও ব্যবসায়ী রূপে পরিচিত। সিকিমের মোট জনসংখ্যার এক প্রধান অংশ নেপালীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে যারা এখানকার তৃতীয় জাতিগত সমষ্টি রূপে সুপরিচিত। রাজ্যের উত্তর ও পূর্ব অংশে কিছু তিব্বতি গোষ্ঠীকে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, বেশ কয়েক দশক আগে অন্য জায়গা থেকে আসা প্রচুর বাঙালি, মারওয়াড়ী, বিহারি অধিবাসীরাও এখানে একাত্মভাবে বসবাস করে। বৌদ্ধ এবং হিন্দু এই দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে এই রাজ্য জুড়ে রয়েছে। তাছাড়াও, এখানে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কিছু মানুষও রয়েছে যারা পূর্বে লেপচা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূ্ক্ত ছিল কিন্তু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের দ্বারা তারা খ্রীষ্টান ধর্মে রূপান্তরিত হয়। এমনকি এখানে কিছু সংখ্যক মুসলিমও রয়েছে। যদিও, এখানে বিভিন্ন অনুপাতে অনেক ধর্মীয় সম্প্রদায় রয়েছে, কিন্তু তবুও এখানে তাদের মধ্যে কোনওরকম মনোমালিন্য বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়নি।

ইতিহাস

সিকিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অতীত রয়েছে যা উপজাতি শাসক, ব্রিটিশ কতৃ্ত্ব এবং এই রাজ্যের ভারতে অন্তর্ভূক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করে। সপ্তদশ শতাব্দীতে লেপচা আক্রমণ ও আধিপত্যের পূর্বে তিনটি জাতি মোন, নাওঙ্গ এবং চাং এখানে শাসনকার্য চালাত। এই সময় সিকিমে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিল এবং এই সময় এখানে সবচেয়ে বিশিষ্ট ছোগ্যাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল যারা রাজ্যের অবিতর্কিত শাসক ছিল। যখন ব্রিটিশরা এই দেশে প্রবেশ করে তখন সিকিম রাজতন্ত্র, ধীরে ধীরে কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা নেপালী ও ভূটানিদের বিরুদ্ধে একসাথে মিলে আক্রমণের জন্য ব্রিটিশদের সাথে জোট-বন্ধন করে। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে, সিকিম ভারতের অধীনে এক সংরক্ষিত রাজ্য হিসাবে গড়ে ওঠে এবং ভারত, সিকিমের প্রতিরক্ষা, বহিরাগত সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক যোগাযোগের সমস্ত দ্বায়িত্ব গ্রহন করে। তবে, সময়ের সাথে সাথে, সিকিমের বাসিন্দারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং এইজন্যই এখানে ১৯৭৫ সালের আগে পাঁচটি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল।

অর্থনীতি ও পরিকাঠামো

সিকিমের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন, কৃষি, কয়েকটি শিল্প এবং উদ্যানপালনের উপর নির্ভর করে রয়েছে। অপরিমেয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অদ্ভূত জলবায়ু এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দরুণ দেশের এই অংশে পর্যটন দারুণভাবে বিকশিত হয়েছে যা এই রাজ্যের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ হয়ে রয়েছে।

রাজ্যের অধিকাংশ অংশ পাহাড় ও পর্বত দ্বারা আচ্ছাদিত থাকা সত্ত্বেও এখানে কৃষি যথেষ্ট পরিমাণে সম্ভব হয়েছে। এই জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উৎপাদন হল চা এবং এলাচ, এছাড়াও অন্যান্য উৎপন্ন ফসলগুলির মধ্যে ধান, ভূট্টা, আলু, গম, কমলালেবু এবং আদা হল গুরুত্বপূর্ণ।

সিকিমের সরকার

১৯৭৫ সালে সিকিম তার রাজতান্ত্রিক শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর, এখানকার সরকার ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির আদর্শ অনুসরণ করতে শুরু করে। এখানে সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বেশ কিছু মন্ত্রীদের নিয়ে বিধানসভা ক্ষেত্র গঠিত। রাজ্যের বিধানসভার ৩২ জন সদস্য, চারটি জেলায় বিস্তৃত ৩২-টি বিধানসভা নির্বাচন ক্ষেত্রে আয়োজিত বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এইগুলির মধ্যে একটি আসন, রাজাদের ঐতিহ্য অনুসারে বৌদ্ধ প্রতিনিধির জন্য সংরক্ষিত থাকে। বিধানসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হলেন অধ্যক্ষ এবং মন্ত্রীসভার সমস্ত সরকারি বিভাগের নেতৃ্ত্ব এবং নিয়ন্ত্রণের দ্বায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংসদের উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ উভয়ের জন্য একজন-একজন করে প্রতিনিধিত্ব করেন। সিকিমের রাজনীতিতে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব অবশ্যই রয়েছে কিন্তু তবুও সিকিম ডেমোক্রেটিক পার্টির ন্যায় স্থানীয় ও আঞ্চলিক দলগুলির উপর এখানকার বাসিন্দারা তীব্র রূপে প্রভাবিত। এখানে বিধানসভার কাজকর্ম দেখাশোনার জন্য সরকার দ্বারা চালিত, একটি আলাদা রাজ্য সংগঠন রয়েছে।

সমাজ ও সংস্কৃতি

লেপচা এবং তাদের সাথে যুক্ত হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মিশ্র সংস্কৃতির গঠনের কারণে সিকিম, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। যেহেতু সিকিমিরা বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে, সেহেতু তাদের উৎসবগুলি অতি সাধারণ ও সূক্ষ কিন্তু বর্ণময়। এখানকার অধিকাংশ স্থানে ব্যাপকভাবে পালিত সু্প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ উৎসবগুলি হল দ্রুকপা টেশি, পাঙ্গ লাহবশোল, সাগা দাওয়া, লোসুং এবং দাসাঁই। হিমালয়ের বাজরার নির্যাস থেকে তৈরী প্রসিদ্ধ পানীয় বিয়ার পান, এখানকার উৎসব ও বিবাহের ন্যায় বিশেষ অনুষ্ঠান পালনের সুচক হিসাবে মানা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে লোকসঙ্গীত ও লোকনৃত্য খুবই সাধারণ ব্যাপার। সিকিমের বৌদ্ধ-আশ্রমগুলির আঙিনায় লামাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বর্ণময় নৃত্যানুষ্ঠান- মুখোশ নৃত্য থেকে এখানকার সংস্কৃতির প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়।

ভাষা

সিকিমের বর্তমান জনসংখ্যার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে মোট ছয়টি ভাষা রয়েছে যা এখানকার অধিবাসীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। এখানকার জনসংখ্যার অধিকাংশই নেপালী হওয়ার কারণে নেপালী ভাষাই এই রাজ্যের প্রধান ভাষা হিসাবে গড়ে উঠেছে। যদিও এই ভাষার ইন্দো-আর্য পরিবার থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এরপরে এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ভাষা হল ভূটিয়া যার সঙ্গে তিব্বতি-বার্মা পারিবারিক ভাষার এক শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। এই পরিবারের অন্য কয়েকটি ভাষা রয়েছে যেগুলি এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ প্রচলিত, সেগুলি হল লেপচা, শেরপা এবং লিম্বু। এই সমস্ত ভাষাগুলিতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং এই ভাষাগুলিকে রাজ্যের আধিকারিক ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সিকিমের শিক্ষা

পর্যাপ্ত পরিমাণ সমভূমি ও সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে সিকিম, শিক্ষার দিক দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এখানে প্রায় ১১৫০টি বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলিতে শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক ও মধ্য শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই বিদ্যালয়গুলির মধ্যে অর্দ্ধেক রাজ্য সরকারের সাহায্যে পরিচালিত এবং বাকি অর্দ্ধেক বেসরকারি সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। এখানকার কিছু বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষা পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। এই রাজ্যে মোটামুটি প্রায় ১৫টি মহাবিদ্যালয় রয়েছে যেগুলিতে উৎসাহী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এখানকার কেন্দ্রীয় সিকিম বিশ্ববিদ্যালয় গ্যাংটকে অবস্থিত। এখানে অন্যান্য আরোও বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেমন গ্যাংটকে অবস্থিত সিকিম মণিপাল ইউনিভ্যারসিটি অফ টেকনোলোজি সায়্যন্সেস যেখানে মেডিসিন, ইঞ্জিনীয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়।

সিকিমের পর্যটন

সিকিম রাজ্য হিসাবে ছোট হলেও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অতীব সুন্দর পর্বত এবং সুন্দর জীববৈচিত্র্যের পরিমন্ডলের দৃশ্য নিঃসন্দেহে পর্যটকদের কাছে সিকিমকে এক স্বর্গ হিসাবে গড়ে তুলেছে। প্রকৃতিমাতা আশীর্বাদ স্বরূপ তার সমস্ত সৌন্দর্য ও প্রশান্তি এই জায়গার উপর ঢেলে দিয়েছেন। এখানকার মনুষ্যসৃষ্ট মন্দির ও কুঠি, জাদুঘর, জাতীয় উদ্যান সব কিছু সারা বিশ্ব থেকে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য। সমস্ত দিক দিয়ে হিমালয় পর্বত দ্বারা আবৃত হওয়া সত্ত্বেও বহু পর্যটক এই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে আসে, যেমন- কাঞ্চনজঙ্ঘার নিকটবর্তী দৃশ্য দেখার জন্য সকলে সিংঘিক-এ আসে, রিভার র‍্যাফটিং এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য দেখার জন্য চুংথাং আসে, গ্রামীণ সৌন্দর্য দেখার জন্য কবি লাংচুক, রাজ্যের উত্তর প্রান্তে তুষারাবৃত উপত্যকার অনুভব করার জন্য সকলে ইয়ামথাং-এ ঘুরতে আসেন।

পরিবহন

পর্বতময় ভূখণ্ড থাকা সত্বেও, সিকিম, দেশের বাকিদের সঙ্গে সু-সংযুক্ত রয়েছে। রাজধানী শহর থেকে কয়েক ঘন্টা দূরে অবস্থিত নিকটতম বিমানবন্দর হল বাগডোগরা। এখানে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা লক্ষ্য করা যায় যেমন ইন্ডিয়ান এয়্যারলাইনস, ডেক্যান এয়্যার সর্ভিস, জেট এয়্যারওয়েস এবং অন্যান্য কয়েকটি রয়েছে যেগুলি এই রাজ্যটিকে কলকাতা, দিল্লী ও গুয়াহাটির সঙ্গে সংযুক্ত করে। যেহেতু সিকিম পর্যটকদের আনন্দ স্থল, সেহেতু সিকিম পর্যটন দপ্তর বাগডোগরা থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত পাঁচ-আসন বিশিষ্ট হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করেছে, অর্থাৎ এর মাধ্যমে যে কেউ দ্রুত পৌঁছতে পারেন। এখানে দুটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যার মাধ্যমে এই রাজ্যটি, দেশের বাকিদের সাথে সংযুক্ত রয়েছে, এর মধ্যে একটি রাজধানী থেকে প্রায় ১১৪ কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়িতে অবস্থিত এবং অন্যটি রাজধানী থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে, জলপাইগুড়িতে অবস্থিত। এছাড়া সড়কপথ দ্বারাও গ্যাংটক-এ পৌঁছানো যেতে পারে।

* সর্বশেষ সংযোজন : ২০- শে ফেব্রুয়ারী , ২০১৫