লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন

Travel to Lakshadweep in Bengali

লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন
* লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন মানচিত্রে - লাক্ষাদ্বীপের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ, হোটেল ও অন্যান্য পরিদর্শনযোগ্য স্থানগুলিকে দেখানো হয়েছে।

লাক্ষাদ্বীপ পর্যটন

লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ উপদেষ্টা, আরব সাগরের অভ্যন্তরস্থিত এই মহীয়ান দ্বীপটির বিশালতা ও সৌন্দর্য বিশ্লেষণে পর্যটকদের সহায়তা প্রদান করে। লাক্ষাদ্বীপ, তার ফিরোজা নীলাভ জল, অদূষিত সমুদ্র-সৈকত এবং বিস্তীর্ণ জল-ক্রীড়া ও সামুদ্রিক আকর্ষণ সহ ভারতের সবচেয়ে এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য, কেরালার উপকূল বা তটরেখা থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপপুঞ্জটি অবস্থিত। লাক্ষাদ্বীপ ভারতের এক ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশসিত অঞ্চল। লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জটি মোট প্রায় ৩২ বর্গ কিলোমিটার ভূমি এলাকা দ্বারা আবৃত রয়েছে।

এই দ্বীপপুঞ্জটি, কেরালার নিকটবর্তী, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। যে কোনও ভ্রমণ-উৎসাহী মানুষের এই দ্বীপপুঞ্জটি একবার পরিদর্শন করার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ নয় বলে দাবী করা যেতে পারে। এখানকার প্রকৃতি ও তার বিশুদ্ধ সৌন্দর্যতার আপনি প্রশংসা করতে পারেন।

সমুদ্র-সৈকত

লাক্ষাদ্বীপ, সমুদ্র-সৈকত ও প্রবালের এক বদ্ধ-ভূমি। এখানে আপনি সাদা ও উজ্জ্বল বালুকাময় এক দীর্ঘ প্রসারণ দেখতে পাবেন যা আপনাকে একটি স্নান বাথ(রৌদ্র-স্নান)নিতে ইশারা করবে। এখানে আরাম ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে আসা সকলের উদ্দেশ্যে এই আকর্ষণীয় সমুদ্র-সৈকতটি অনেক কিছু উপস্থাপনা করে। আপনি ভিড় কোলাহল থেকে দূরে একান্তে থাকতে চাইলে এটি একটি বিশিষ্ট স্থান। এই উপহ্রদগুলি নিরলসভাবে সময় কাটানো, বিভিন্ন পাখির পর্যবেক্ষণ এবং বাতাসের সুরে নারিকেল গাছের আন্দোলন উপভোগ করার জন্য আদর্শ। পান্না মিশ্রিত সবুজাভ জল স্বাগতপূর্ণ এবং এই জলে সন্তরণ হল আয়ু্প্রদ। এই সমুদ্র-সৈকতে যাওয়ার অন্য আরেকটি কারণ হতে পারে জল-ক্রীড়া। এছাড়াও, সারা দ্বীপপুঞ্জটি জুড়ে আচ্ছন্ন থাকা প্রবালের দৃশ্য দেখার অনুভূতিও আকর্ষণীয়। এই আকর্ষণীয় ও বর্ণময় প্রবাল এই স্থানকে স্বাতন্ত্র্যসূচক করে তুলেছে।
বিস্তারিত ….

লাক্ষাদ্বীপে সমুদ্র-ভ্রমণ

বর্তমানে লাক্ষাদ্বীপে সমু্দ্র-ভ্রমণ(ক্রুজ)খুবই জনপ্রিয়। এই ক্রুজগুলিতে বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা এই যাত্রাকে বিস্ময়কর ও আনন্দময় ভ্রমণ-যাত্রায় পরিণত করে। ১৯৬২ সালের পূর্বে, দ্বীপপুঞ্জ ও প্রধান স্থলভূমিতে সংযুক্তিকরণের জন্য সেখানে কোনও জাহাজ ছিল না। ১৯৬২ সালে এম.ভি সি ফক্স নামে প্রথম একটি জাহাজের প্রবতর্ন হয়। এরপরই ১৯৭৪ সালে এম.ভি. আমিন্দিভি, ১৯৮৮ সালে এম.ভি. ভারতসীমা এবং এম.ভি. টিপু সুলতান নামে আরোও তিনটি জাহাজ চালু করা হয়। এরপরে এম.ভি. মিনিকয় জাহাজটিও এগুলির সাথে সংযুক্ত হয়। পর্যটন, এই সুন্দর দ্বীপপুঞ্জটির আয়ের এক অন্যতম প্রধান উৎস এবং জাহাজ বা ক্রুজগুলি এখানে জনসাধারণকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।
বিস্তারিত ….

লাক্ষাদ্বীপ-এ পৌঁছানোর উপায়

লাক্ষাদ্বীপ কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, এটি ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দুইশত থেকে চারশত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে। এই দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং আরব সাগর এই দ্বীপপুঞ্জটিকে ভারতীয় মূল ভূ-খন্ড থেকে আলাদা করে রেখেছে।

এই দ্বীপপুঞ্জটিতে পৌঁছানো খুব সহজসাধ্য নয়, কিন্তু চিত্রবৎ এই দ্বীপপুঞ্জটি হল একটি অতুলনীয় গন্তব্যস্থল। আপনি কখনও লাক্ষাদ্বীপ পৌঁছাতে বিস্ময়ের উদ্রেগ হলে, চিন্তার কিছু নেই, এই দ্বীপপুঞ্জটি হয় সমুদ্র বা বিমান পথ দ্বারা ভারতীয় মূল ভূ-খন্ডের সাথে সু-সংযুক্ত রয়েছে। লাক্ষাদ্বীপ পরিদর্শনের জন্য পর্যটকদের এই দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হয়।

বিমান মাধ্যমে

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আগত্তি-তে একটি বিমান বন্দর রয়েছে, যা কেরালার রাজধানী কোচি (কোচিন) থেকে বিমান দ্বারা নিয়মিতভাবে সংযুক্ত রয়েছে। কোচি (কোচিন্)একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এটি প্রায় ভারতের সমস্ত প্রধান শহরগুলির সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।

এছাড়াও এই দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণের জন্য দ্য পবন হংস হেলিকপ্টার পরিষেবা উপলব্ধ রয়েছে। আগত্তি থেকে কোচি (কোচিন্)-র মধ্যে উড়ানের সময় লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা। আগত্তি থেকে এই অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর কাভারত্তি পৌঁছানোর জন্য সারা বছর ধরে এবং বর্ষার সময়ে বঙ্গারামে পৌঁছনোর জন্য আপনি হেলিকপ্টার পরিষেবা পেতে পারেন।
বিস্তারিত ….

সমুদ্রপথে

লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছানোর জন্য জাহাজে করে ভ্রমণও একটি ভালো বিকল্প। বেশ কিছু সংখ্যক যাত্রীবাহী জাহাজ কোচি (কোচিন্) থেকে লাক্ষাদ্বীপ পর্যন্ত রয়েছে। এই দূরত্ব যেতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘন্টার কাছাকাছি সময় ভ্রমণ করতে হতে পারে। এই জাহাজগুলি এক উচ্চমানের থাকার ব্যবস্থা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। তবে বর্ষার সময়ে জাহাজ পরিষেবা বন্ধ থাকে।

কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপ জাহাজ ভ্রমণের আনুমানিক খরচ হল ভারতীয় অধিবাসীদের ক্ষেত্রে ভারতীয় মূল্যে প্রতি জনের প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, অন্যদিকে বিদেশীদের জন্য এটি ভারতীয় মূল্যে প্রায় ২০০০ টাকা।

খাদ্য

লাক্ষাদ্বীপের অধিকাংশ খাবারই দক্ষিণ ভারতীয় রন্ধ্রনপ্রণালী থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে রান্না করা হয়। আপ্পাম, ধোসা, ইডলি ইত্যাদি খাবার যেমন সাধারণভাবে প্রাতরাশ (ব্রেকফাস্ট)-এর জন্য পছন্দ করা হয়। বাঁধাকপি, পীরা, ওলান, পারিপ্পু তরকারি, ইডিমাস ইত্যাদি মধ্যাহ্ন-ভোজনে খাবারের বিকল্প রূপে ব্যবহৃত হয়। এই দ্বীপপুঞ্জটি অতীতে মুসলিম শাসকদের দ্বারা শাসিত হওয়ার দরুণ যে কেউ এখানে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন আমিষ জাতীয় সু-স্বাদু খাবার যেমন কোঝি মশালা, ইরাচি ভারুথাথু ও চিকেন কারিও পেতে পারেন।

লাক্ষাদ্বীপে পরিদর্শনযোগ্য স্থান

ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ, এমন একটি স্থান যেটি ভারতের বহু মানুষ এখনও পরিদর্শন করেনি। এর প্রাথমিক কারণ হল এই দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের প্রত্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থান করে আছে। লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপপুঞ্জগুলি পর্যটন গন্তব্যস্থল রূপে খুব একটা জনপ্রিয় নয় তবে যে সমস্ত পর্যটক এখানে ভ্রমণে যান, এই দ্বীপপুঞ্জটি তাদের কাছে প্রচুর বিনোদন নিবেদন করে।

এছাড়াও, যে সমস্ত ব্যাক্তি প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং প্রকৃতির সমস্ত প্রতিকৃতির অন্বেষণ করতে পছন্দ করেন তাদের কাছে এটি এক যোগ্য গন্তব্যস্থল রূপে উপস্থাপিত হয়। লাক্ষাদ্বীপের বৃহত্তম পর্যটন আকর্ষণ হল এখানে আচ্ছাদিত আদিম সৌন্দর্য্যতা ও তাদের অধিশায়িত পুরনো অস্তিত্ব। শহুরে কলরব ও বিশৃঙ্খলা থেকে বহুদূরে অবস্থিত এই লাক্ষাদ্বীপে আপনি কেবল সমুদ্র-সৈকতে আছড়ে পড়া তীব্র জল তরঙ্গ এবং শঙ্খচিল-এর আর্তনাদের আওয়াজই শুনতে পাবেন। শহুরে উন্মত্ততা থেকে আপনি এই দ্বীপপুঞ্জে এক অনাবিল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারেন।

এই দ্বীপপুঞ্জে বেশ সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে; যেমন স্ক্যুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, কায়্যাকিং, ক্যানোয়িং, উইন্ডসার্ফিং, ইয়াচটিং এবং রোমাঞ্চ প্রেমীদের জন্য আরোও অনেক কিছু রয়েছে।

লাক্ষাদ্বীপে দর্শনীয় স্থান

  • কাভারত্তি
  • মিনিকয়
  • কালপেনি
  • আগত্তি
  • কাডমট
  • বঙ্গারাম, ইত্যাদি।
  • কাভারত্তি

    লাক্ষাদ্বীপের কাভারত্তি দ্বীপে একটি সুন্দর লেগুন বা উপহ্রদ রয়েছে। ভ্রমণার্থীদের চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে অনেক জল-ক্রীড়া (ওয়্যাটার স্পোর্টস) রয়েছে। এছাড়াও এই স্থানে বেশ কিছু সুন্দর মসজিদও রয়েছে; এগুলি ভারতের সমৃ্দ্ধ প্রাচীন স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও এই স্থানে জলজ জীবনের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সামুদ্রিক আ্যকোরিয়ামও রয়েছে।

    মিনিকয়

    অর্ধচন্দ্র আকৃতির এই দ্বীপপূঞ্জে এই অঞ্চলের এক অন্যতম বৃহৎ লেগুন বা উপহ্রদ রয়েছে। এখানে এক ক্রান্তীয় মালদ্বীপিয় চরিত্রের প্রতিরূপতা বিদ্যমান। এই দ্বীপের উল্লেখযোগ্য মিনারটি হল ১৮৮৫ সালের নির্মিত লাইট-হাউস (বাতিঘর বা আলোকস্তম্ভ)। পর্যটকদের থাকার জন্য এই দ্বীপে কটেজ বা কুটীর রয়েছে।

    কালপেনি

    এই দৃশ্যবৎ ক্ষুদ্র দ্বীপটি যদিও জনবসতিশূন্য তাহলেও এখানে একটি বিশাল অগভীর লেগুন বা উপহ্রদ রয়েছে। কালপেনির এই শহর আজও গর্বিত হয়ে রয়েছে কারণ এটি সেই জায়গা যেখানে ভারতের মেয়েরা শিক্ষার জন্য সর্বপ্রথম বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। কালপেনি শহরের মঈদিন মসজিদ হল এই দ্বীপপুঞ্জের এক অন্যতম জনপ্রিয় বিশিষ্ট স্থান।

    আগত্তি

    এটি প্রবাল-দ্বীপের একটি উত্তেজনাপূ্র্ণ দৃশ্য এবং নারিকেল গাছের সারিবদ্ধতায় সামুদ্রিক হাওয়ার দোলা উপস্থাপনা করে। আগত্তি দ্বীপটি লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের প্রবেশ-পথ হিসাবেও পরিচিত। এই দ্বীপের সমুদ্র-সৈকতগুলি ভারতের সেরা সমুদ্র-সৈকতগুলির মধ্যে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

    কাডমট

    এটি সান-বাথ (রৌদ্র-স্নান) ও ওয়্যাটার স্পোর্টস (জল-ক্রীড়া)-র জন্য আদর্শ স্থল। এই দ্বীপটি সামুদ্রিক সম্পদের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। কাডমট-এ ভ্রমণকারীদের জন্য স্ক্যুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং এবং সুইমিং-য়ের বিকল্প রয়েছে।

    বঙ্গারাম

    জনবসতিহীন এই অশ্রুবিন্দু-সম এই দ্বীপটিতে অনেক সমুদ্র-সৈকত ও সুন্দর সুন্দর লেগুন বা উপহ্রদ রয়েছে। এই সুন্দর দ্বীপটি সমস্ত মানসিক উদ্বেগ ও যন্ত্রণার উপশমে এক বিশাল সুযোগ করে দেয়।

    লাক্ষাদ্বীপের নিকটবর্তী পর্যটন স্থল

    লাক্ষাদ্বীপের নিকটবর্তী পর্যটন স্থলগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল –

    কেরালা

    লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ এবং কেরালার মধ্যবর্তী দূরত্ব হল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। ‘ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ’-নামে পরিচিত, কেরালা হল ভ্রমণের জন্য এক বিস্ময়কর স্থান। কেরালার নিস্তরঙ্গে একবার ভ্রমণ-যাত্রা আপনার অনুভূতিকে অবশ্যই ক্লান্তিহীন ও পুনুরুজ্জীবিত করে তুলবে। কুমারাকোম, কেরালার একমাত্র শৈলশহর মূন্নার ও আলেপ্পি হল এমন কিছু স্থান অবশ্যই আপনি ভুলে যেতে পছন্দ করবেন না।

    তামিলনাড়ু

    লাক্ষাদ্বীপ ও কোয়েম্বাতুরের মধ্যবর্তী দূরত্ব হল প্রায় ৪৮৮ কিলোমিটার। তামিলনাড়ুতে উটি নামের একটি শৈল-শহর দেখতে পাবেন যা ভারতের সবচেয়ে এক অন্যতম জনপ্রিয় শৈল-শহর। তামিলনাড়ুর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল কুন্নুর, ইয়েলাগিরি। এছাড়াও তামিলনাড়ু রাজ্যটি বেশ কিছু সমুদ্র-সৈকত দ্বারাও গর্বিত রয়েছে যেখানে আপনি আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।

    গোয়া

    লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ থেকে আনন্দ উপভোগ করতে আপনি যদি ভারতের অন্যান্য শহর পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করেন তবে গোয়া আপনার সেই তালিকায় থাকতে পারে। গোয়ার সমুদ্র-সৈকত, গির্জাসমূহ এবং খাদ্য, এই রাজ্যের সমস্ত কিছুই চমৎকার ও কল্পনাপ্রসূত। গোয়া হল ভারতের এক অন্যতম সেরা ভ্রমণমূলক গন্তব্যস্থল।

    ভ্রমণের সেরা সময়

    যদিও লাক্ষাদ্বীপের আবহাওয়া সারা বছর ধরেই মনোরম থাকে কিন্তু এই স্থানে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মধ্যে। এখানকার তাপমাত্রা সাধারণত ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড অতিক্রম করে না।

    লাক্ষাদ্বীপে কেনাকাটা

    লাক্ষাদ্বীপ ঠিক কেনাকাটার স্থল নয়। মানুষজন এই দ্বীপে খুব বেশি কেনাকাটার জন্য আসে না, তারা ব্যস্তহীন অবকাশ সময় কাটানো এবং জনপ্রিয় জল-ক্রীড়া স্ক্যুবা ডাইভিং-য়ের জন্য এখানে আসে।

    আপনি যদি তবুও এখানে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হন তবে আপনি কিছু স্মারক নিয়ে আসতে পারেন যা এখানে আপনার মহান ছুটি কাটানোর ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখবে, এছাড়াও আপনি এখানে প্রবালের খোলা এবং ঝিনুক দিয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক সৈকত হস্তশিল্পেরও সন্ধান করতে পারেন।

    এটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয় যে, এই লাক্ষাদ্বীপে কেনাকাটার জন্য খুব বেশি বাজার বা বড় এম্পোরিয়াম বা কোনও বিলাসবহুল মল্ নেই। আপনি দ্বীপের এদিক-ওদিক কোথাও গেলে একটি-দুটি আকস্মিক কোনও দোকান দেখতে পারেন অথবা আপনার চলার পথে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পথের ধারে কিছু দোকান পড়তে পারে। এই দ্বীপে খুবই কম, এমনকি এক লাখেরও কম জনবসতি হওয়ায় লাক্ষাদ্বীপে কেনাকাটার জন্য প্রসিদ্ধ কোনও দোকান নেই। এটি কেনাকাটার জন্য খুব একটা চাকচিক্যময় স্থান নয়, তবে আপনি এই দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দোকানগুলি থেকে ছোট ছোট সুন্দর উপহারদ্রব্য বেছে নিতে পারেন।

    লাক্ষাদ্বীপ-এ কেনাকাটা করার দ্রব্য

    • সমুদ্রিক দ্রব্যে নির্মিত কৃ্ত্রিম গহনা
    • সুন্দর আ্যকোয়ারিয়াম
    • রেডিমেড মাছ বিস্কুট
    • নরিকেল খোলার দুর্লভ শৈল্পিক বস্তু
    • কচ্ছপের খোলা দ্বারা নির্মিত গৃহ-সজ্জার বস্তু
    • ঝিনুক, ইত্যাদি।

    ভ্রমণ উপদেশ

  • লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণের সময় আপনি কোন জয়গায় যাবেন, তার সঠিক পরিকল্পনা নিশ্চিত করুন, যেহেতু এই দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণে অনুমতি পত্রের প্রয়োজন হয় এবং যার প্রক্রিয়াকরণে অন্তত দুই দিন সময় লাগে।
  • চূড়ান্ত মরশুমে আপনি যদি এখানে আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে এই সময় দ্বীপপুঞ্জে থাকার জায়গা পাওয়াটা এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং, এখানে ভলোভাবে থাকার জন্য আপনি অগ্রিম কোন থাকার জায়গার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে নিন।
  • যেহেতু এই দ্বীপপুঞ্জগুলি বেশিরভাগই প্রায় জনবসতিহীন তাই রাত্রিবেলায় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে ভ্রমণ করবেন না। আপনি এখানে হারিয়ে যেতে পারেন বা চোর-বাটপাড়ের অবাঞ্চিত নজরের সম্মুখীন হতে পারেন।
  • হোটেল

    পর্যটকদের থাকার জন্য বিস্তৃত পরিসরের বিকল্প নেই। তবে, বঙ্গারাম দ্বীপে, বেশ কিছু জনপ্রিয় রিসর্ট ও হোটেল রয়েছে। এখানে আপনি প্রাকৃতিক উপকরণে নির্মিত এবং পরিবেশ-বান্ধব অনেক সুন্দর কটেজ দেখতে পাবেন। এছাড়াও আপনি কাভারত্তি ও অন্যান্য জায়গায় থাকার জন্য হোটেলও নিতে পারেন। এখানে থাকার জন্য সরকার-চালিত কুটীর ও হোটেলও এক ভালো বিকল্প রূপে বিদ্যমান।

    রিসর্ট

    এই দ্বীপপুঞ্জে থাকার জায়গা খোঁজা সবসময় সমস্যা হয় না। প্রতি বছর পর্যটকদের পদার্পণ বৃদ্ধি হওয়ার দরুণ, অনেক নতুন হোটেল ও লজ গড়ে উঠতে চলেছে। এই হোটেলগুলি বিভিন্ন আস্বাদন এবং বাজেটের সঙ্গে পর্যটকদের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনায় তৈরী করা হয়েছে।

    এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ হোটেলগুলির অবস্থান খুবই সুন্দর। আপনার হোটেলের জানলা থেকে পরিদর্শনীয় সমুদ্রের নীলাভ জলের গভীরে সবুজ গাছপালার দৃশ্য, এই দ্বীপপুঞ্জটিকে পর্যটকদের স্বর্গ্যোদান হিসাবে বিবেচনা করার পিছনে কারণ ব্যাখ্যায়িত করবে। হোটেলের কক্ষগুলি রীতি-ভঙ্গিমা সহ পরিকল্পিত করা হয়েছে। বাসস্থানের বিভাগ অনুযায়ী এগুলিতে সুযোগ-সুবিধা পরিবর্তিত হতে থাকে, যা আপনার কাছে বিকল্প হিসাবে খোলা রয়েছে। তবে, এগুলির প্রাথমিক বা বুনিয়াদি পরিষেবাও যথেষ্ট উপলব্ধিজনক। এই দ্বীপপুঞ্জে থাকার জন্য বিভিন্ন বিভাগ উপলব্ধ রয়েছে। আপনি সেগুলিকে আপনার পছন্দ ও বাজেটানুযায়ী বেছে নিতে পারেন। যারা বিলাসিতাভাবে ছুটি কাটাতে ইচ্ছুক তাদের জন্য অনেক শোভনীয় হোটেল রয়েছে। তবে, যারা একটি নির্দিষ্ট বাজেটের সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে চান তাদের জন্যও এখানে বিভিন্ন বাজেট হোটেল এবং লজও রয়েছে।

    * সর্বশেষ সংযোজন : ১৩ -ই জুলাই, ২০১৫