অবস্থান |
ভারতের উত্তর প্রান্তে, পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে আফগানিস্তান, পূর্বে চীন, দক্ষিণে হিমাচল প্রদেশ
|
অক্ষাংশ |
32 ডিগ্রী 17 মিনিট থেকে 36 ডিগ্রী 158 মিনিট উত্তর |
দ্রাঘিমাংশ |
37 ডিগ্রী 26 মিনিট থেকে 80 ডিগ্রী 30 মিনিট পূর্ব |
আয়তন |
2101437 বর্গ কিলোমিটার |
জলবায়ু |
জম্মু সমভূমিতে ক্রান্তীয়, লাদাখে অর্ধ-সুমেরীয় ঠান্ডা, কাশ্মীর ও জম্মু পাহাড়ী অঞ্চল শীতপ্রধান। |
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা |
44 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড |
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা |
4° ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড |
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত |
জম্মু – 1115.9 মিলিমিটার, লেহ – 92.6 মিলিমিটার, শ্রীনগর – 650.5 মিলিমিটার |
রাজধানী |
গ্রীষ্মে (মে থেকে অক্টোবর) – শ্রীনগর, শীতকালে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) – জম্মু |
জনসংখ্যা |
76.77 লক্ষ |
ভাষা |
কাশ্মীরি, উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি |
ধর্ম |
ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ |
পরিদর্শনের সেরা সময় |
জম্মু : অক্টোবর থেকে এপ্রিল, কাশ্মীর : মার্চ থেকে অক্টোবর, লাদাখ : মার্চ থেকে অক্টোবর |
পরিধান |
গ্রীষ্মকালে – হাল্কা সুতি, শীতকালে – ভারী / মাঝারি পশমী |
জম্মু ও কাশ্মীর পৌঁছানোর উপায়
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ভারতের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। যা একে দেশের এক অধিকাংশ পরিদর্শনযোগ্য রাজ্য করে তোলে এবং প্রায় চল্লিশ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক প্রতি বছর এই রাজ্য পরিদর্শন করতে আসেন। পবিত্র বৈষ্ণো দেবী মন্দিরের উপস্থিতি এই রাজ্যকে মানুষ-জনের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পর্যটকদের এই মনোহর গন্তব্য পরিদর্শন করা থেকে আটকাতে পারেনা।
বিমানপথ দ্বারা
এই রাজ্যের মোট চারটি বিমানবন্দর আছে যথা –
- জম্মু বিমানবন্দর (অন্তর্দেশীয়)।
- কারগি্ল বিমানবন্দর (প্রতিরক্ষা)।
- কুশক বাকুলা রিমপোচে বিমানবন্দর, লেহ্ (অন্তর্দেশীয়)।
- শ্রীনগর বিমানবন্দর (আন্তর্জাতিক)।
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, জেট এয়ারওয়েজ – এর মত প্রধান বিমান পরিবহন সংস্থাগুলি এই বিমানবন্দর গুলিতে নিয়মিত বিমান চালনা করে।
রেলপথ দ্বারা
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন হল জম্মু তাওয়াই স্টেশন যেখান থেকে সমস্ত প্রধান ভারতীয় শহরের ট্রেন চলাচল করে।
সড়কপথ দ্বারা
এই রাজ্য একটি ভাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্থান যথা – দিল্লি, অমৃতসর, আম্বালা, চন্ডীগড়, লুধিয়ানা, জলন্ধর, পাঠানকোট, সিমলা এবং মানালির মত শহর গুলির সাথে সংযুক্ত। ১-এ নং জাতীয় সড়ক, জম্মু ও ভারতের বাকি অংশের মধ্যে সংযোগ সাধন ঘটায়। আপনি এই রাজ্য ও রাজ্যের বাকি অংশ ভ্রমন করতে চাইলে জে.কে.এস.আর.টি.সি (জম্মু কাশ্মীর রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা)-এর বাস গ্রহন করতে পারেন।
জে.কে.এস.আর.টি.সি (জম্মু কাশ্মীর রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা)-এর বাস দ্বারা যে কেউ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের যেকোন স্থানে ভ্রমন করতে পারেন। এই রাজ্যের কয়েকটি ভূখণ্ডে যাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর, এই সব জায়াগায় ৪-ডাবলু.ডি. জীপ দ্রুততর হয়, কিন্তু এটি একটু বেশি ব্যয়বহুল। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীপ রাজ্যে ভ্রমণের জন্য উপলব্ধ।
জম্মু ও কাশ্মীর পর্যটন
জম্মু ও কাশ্মীর পর্যটন বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কার্যকলাপের প্রস্তাব দেয়। ট্রান্স হিমালয় জিপ সাফারি, ট্রেকিং এবং পর্বতারোহণ ইত্যাদি কিছু রোমাঞ্চকর কার্যকলাপ আপনি এখানে উপভোগ করতে পারেন। ট্রেকিং করার আদর্শ সময় হল এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস। কাশ্মীরের অন্যান্য রোমাঞ্চকর কার্যকলাপ গুলি হল –
- লাদাখের মোটরবাইক সাফারি।
- কায়াকিং ও ক্যানোয়ইং।
- লাদাখের মাউন্টেন সাইক্লিং।
- গুলমার্গে স্নো স্কিইং।
- লাদাখের রিভার র্যাফটিং।
- কাশ্মীর উপত্যকায় ট্রেকিং।
- জন্সকার ট্রেকিং।
- লাদাখের ট্রেকিং।
জম্মু ও কাশ্মীর পর্যটন
জম্মু ও কাশ্মীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য,পর্যটকরা রাষ্ট্র পরিচালিত বাস বা ৪-ডাবলু.ডি জীপ গ্রহণ করতে পারেন।
নিম্নলিখিত গন্তব্যগুলি পরিদর্শন না করলে জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রয়ে যায় –
গুলমার্গ, কার্গিল, পহলগাঁও, বৈষ্ণো দেবী, জন্সকর, জম্মু, লেহ্, লাদাখ, পাটনিটপ, শ্রীনগর, শোনমার্গ, জাংলা।
জম্মুতে স্থান পরিদর্শন
জম্মু
শ্রেণী: ইতিহাস ও সংস্কৃতি
জম্মু শহর “ভূ-স্বর্গ” হিসাবে বিবেচিত। এই শহর পুরাতন এবং নতুন দুটি অংশে বিভক্ত। এই শহরে বেশ কয়েকটি যুগবাহিত পুরাণাবৃত মন্দির ও কয়েকটি দুর্গ ও প্রাসাদ রয়েছে।
|
সানাসর
শ্রেণী : প্রকৃতি
জম্মু অঞ্চলের বিস্ময়কর শৈলশহর হিসেবে, এই জায়গাটির নাম এখানকার দুটি ছোট স্থানীয় হ্রদ ‘সানা’ এবং ‘সার’–এর নামে নামাঙ্কিত। এই শহরটি বিশাল সরলবর্গীয় বৃক্ষ এবং সুন্দর দৃশ্য দ্বারা বেষ্টিত। এই স্থান সাম্প্রতিক কালে প্রচুর পর্যটক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এখানে বহু রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপ উপলব্ধ আছে।
সানাসর
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
“মিনি কাশ্মীর” নামে জনপ্রিয় এই শহর চমকপ্রদ প্রতিভাশালী দৃশ্য সহ আকর্ষণীয় অরণ্য এবং শহরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে প্রবাহিত উজ্জ্বল নদী প্রবাহের মুগ্ধকারী সৌন্দর্যের আশীর্বাদ প্রাপ্ত। এখানে বহু ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্থান রয়েছে।
বৈষ্ণো দেবী
শ্রেণী : ধর্মীয়
ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের উত্তরদিকে অবস্থিত বৈষ্ণো দেবী পাহাড় বৈষ্ণো দেবীর উপস্থিতির জন্য সারা দেশ জুড়ে বিখ্যাত। এই মন্দিরটি দেশের এক পবিত্রতম হিন্দু মন্দির, যা বৈষ্ণোদেবীকে নিবেদিত এবং যিনি বৈষ্ণবী বা মাতা রানী হিসাবে পরিচিত। দেবী মা ছাড়াও তাঁকে শক্তির অবতার বলে মনে করা হয়।
পাটনিটপ
শ্রেণী : প্রকৃতি
এই অঞ্চলের একটি মুল শৈল শহর যা তার রোমাঞ্চকর কার্যকলাপের জন্য বিখ্যাত যেমন – শীতকালে স্কিইং এবং গ্রীষ্মকালে প্যারাগ্লাইডিং এবং চিত্রানুগ বনভোজন গন্তব্য।
জম্মুর অন্যান্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল –
- রণবীরেশ্বর মন্দির।
- রঘুনাথ মন্দির।
- বাহু দুর্গ ও উদ্যান।
- পীর বাবা।
- মহামায়া মন্দির।
- লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির।
- অমর মহল প্যালেস।
- শুদ্ধ মহাদেব মন্দির।
- গৌরী কুন্ড।
- মানসার লেক।
- পুরমন্ডল।
জম্মুর নিকটবর্তী পর্যটন গন্তব্য
অমরনাথ
অমরনাথ ভারতের উত্তরাংশে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে অবস্থিত একটি পর্বতের নাম। অমরনাথ পর্বত তার অমরনাথ গুহার জন্য প্রধানত বিখ্যাত যেখানে হিন্দুধর্মের সুপরিচিত পবিত্র মন্দির রয়েছে। এই মন্দির ৫০০০ বছরের অধিক পুরানো এবং প্রভু শিবকে নিবেদিত। অমরনাথের এই গুহা ৩.৮৮৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং এই গুহাটি এখানে উপস্থিত বরফের লিঙ্গ-র জন্য সুপরিচিত। পূর্বে এই স্থানটি “অমরেশ্বর” নামে পরিচিত ছিল। অমরনাথের এই মন্দিরটি ভারতের এক অন্যতম পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান। প্রত্যেক বছর, জুলাই ও আগস্ট মাসে বিখ্যাত অমরনাথ যাত্রা সঞ্চালিত হয়, তখন এই স্থানটি প্রায় ৪০০,০০০ মানুষ দ্বারা পরিদর্শিত হয়।
গুলমার্গ
আকর্ষণীয় তৃণভূমি এবং পর্বত বেষ্টিত শৈল শহর, গুলমার্গ পর্যটকদের বহু আকর্ষণীয় দৃশ্য প্রদান করে। গুলমার্গ শব্দের অর্থ হল তুষার-পরিহিত পর্বত শিখর এবং চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য সহ ‘ফুলের তৃণভূমি’। গুলমার্গের রাজকীয় এবং মার্জিত ঢাল, এশিয়ার একমাত্র হেলি-স্কিইং রির্সট। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত যার উচ্চতা হল ২৭৩০ মিটার।
শ্রীনগর
ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী, শ্রীনগর ভারতীয় উপমহাদেশের চিত্রানুগ শহরগুলির মধ্যে এক অন্যতম। শ্রীনগর, শুধুমাত্র এক ধর্মীয় জায়গার জন্য বিখ্যাত নয় বরং তার হ্রদ, হাউসবোটে, শুষ্ক ফল, কাশ্মীরি হস্তশিল্প এবং সুদৃশ্য বাগানের জন্য বিখ্যাত। কাশ্মীর উপত্যকায় অবস্থিত, এটি জম্মু ও কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর।
লেহ্
লাদাখ হিমালয় রাজতন্ত্রের প্রাক্তন রাজধানী, লেহ্ ভারতের এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য। এটি লে্হ জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত। লেহ্ তার স্থাপত্য বিস্ময়ের জন্য বিখ্যাত, যেমন- শান্তি স্তূপ, লেহ্ প্রাসাদ, লেহ্ মসজিদ এবং তার মহৎ ভূদৃশ্য। এলাকাগত দিক দিয়ে গুজরাটের কচ্ছের পর এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।
লাদাখ
লাদাখ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের একটি অংশ। লাদাখ দুটি জেলা নিয়ে গঠিত, যথা লেহ্ ও কারগিল। লেহ্ প্রায় ৩৫০৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত যেখানে কারগিলের উচ্চতা হল প্রায় ২৭৫০ মিটার। এখানে তিব্বতী সংস্কৃতির প্রবল প্রভাবের দরুন, লাদাখকে অনেকেই ‘ছোট তিব্বত’ বলে অভিহিত করেন। লাদাখে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এখানকার প্রাণিকুল সাধারণত মধ্য এশিয়ার অনুরূপ এবং গ্রীষ্মকালে ভারতের উষ্ণ অঞ্চল থেকে বহু পরিযায়ী পাখি এখানে শীতযাপন করতে আসে।
অভিগম্যতা এবং থাকার ব্যবস্থা
বহু সংখ্যক ভারতীয় শহরগুলি থেকে লেহ্ এবং শ্রীনগর বিমান পরিষেবা দ্বারা অত্যন্ত সুবিধাজনক উপায়ে জম্মু ও কাশ্মীর যাওয়া যায়। মানালি থেকে লেহ্ বাস পরিষেবা জম্মু ও কাশ্মীর পৌঁছানোর অন্য আরেকটি উপায়। জম্মু থেকে শ্রীনগরে ঘন ঘন বাস চলাচল করে। ভারতের কয়েকটি শহর থেকে বহু সংখ্যাক ট্রেন দ্বারা জম্মু রেলস্টেশন পর্যন্ত পরিষেবা উপলব্ধ।
জম্মু ও কাশ্মীরে বহু সংখ্যক হোটেল, রিসর্ট এবং হাউসবোট রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রখ্যাত হোটেল গুলির মধ্যে কয়েকটি হল – হোটেল আকবর, হোটেল জামরুদ, গ্র্যান্ড হোটেল, হোটেল জাহাঙ্গীর কন্টিনেন্টাল।
হাউসবোটে থাকা একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। শ্রীনগরের ডাল লেকের কয়েকটি স্বীকৃত হাউসবোট হল – প্রিন্স অফ ভ্যালে, মীনা হাউসবোট, নিউজিল্যান্ড হাউসবোট, ইয়ং মর্নিং স্টার ও সাফিনা হাউসবোট।
* সর্বশেষ সংযোজন : ১৭ - ই জুলাই, ২০১৫