গুজরাটে দুর্গ ও প্রাসাদ

Forts and Palaces of Gujarat in Bengali

গুজরাটের দূর্গ এবং প্রাসাদ

গুজরাটের দুর্গ ও প্রাসাদগুলি অসাধারণ স্থাপত্য নিদর্শন তুলে ধরে। গুজরাটের গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ও প্রাসাদগুলি হল উপারকোট দুর্গ, পভাগড় দুর্গ, কুসুম বিলাস প্রাসাদ, নজর বাঘ প্রাসাদ, এবং দাভোই দুর্গ। হিন্দু, ইসলামী এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের একটি অনন্য সংমিশ্রন গুজরাটের এই দুর্গ ও প্রাসাদগুলিতে লক্ষণীয়।

একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহ গুজরাট ভারতের একটি অগ্রণী ঐতিহাসিক স্থান। গুজরাটের দূর্গ এবং প্রাসাদ একটি চমৎকার স্থাপত্য আড়ম্বর প্রদর্শন করে। গুজরাটের প্রধান দূর্গ ও প্রাসাদগুলি হল উপারকোট দূর্গ, পভাগড় দূর্গ, কুসুম বিলাস প্রাসাদ, নজর বাঘ প্রাসাদ, এবং দাভোই দূর্গ।

উপারকোট দূর্গ

গুজরাটের উপারকোট দূর্গ একটি রণসজ্জিত ক্ষেত্র সহ মধ্যযুগীয় ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ।হিন্দু চুদশমা শাসক ও মুসলিম মহম্মদ বেগাড়ার স্থাপত্য শৈলী পুরোপুরি ভাবে গুজরাটের এই প্রাচীন উপারকোট দুর্গের মধ্যে মিশে আছে।

* অবস্থান : উপারকোট দূর্গ গুজরাটের জুনাগড় শহরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। জুনাগড় গিরনার পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।

* পরিদর্শনের সময় : জুনাগড়ে অবস্থিত উপারকোট দূর্গ পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল শীতকাল (অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে)

* পৌঁছনোর উপায় : জুনাগড়ের নিকটতম বিমানবন্দর হল কেশোদ (প্রায় ৪০ কিলোমিটার)। বোম্বে থেকে কেশোদ যাওয়ার দৈনিক বিমান পাওয়া যায়।

* উপারকোট দূর্গের ইতিহাস : উপারকোট দূর্গ নবাবী আমলে নির্মিত হয়েছিল। উপারকোট দূর্গ ষোল বার অবরোধ হয়েছে বলে মনে করা হয়, তার মধ্যে একটি বারো বছর স্থায়ী হয়।

দাভোই দূর্গ

গুজরাট ভারতের একটি সুপরিচিত ঐতিহাসিক স্থান।গুজরাটের দূর্গ এবং প্রাসাদগুলি অতীত যুগের চমৎকার স্থাপত্য দক্ষতাকে উপস্থাপন করে। গুজরাটের প্রধান দূর্গ ও প্রাসাদগুলি হল উপারকোট দূর্গ, পভাগড় দূর্গ, কুসুম বিলাস প্রাসাদ, নজর বাঘ প্রাসাদ, এবং দাভোই দূর্গ। হিন্দু, ইসলামী, এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের একটি অনন্য সংমিশ্রন গুজরাটের এই দুর্গে লক্ষণীয়।

গুজরাটের দাভোই দূর্গ ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি রাজপুত দূর্গ। চারটি সুবিশাল প্রবেশপথ সহ এটি ভারতের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ দূর্গ। এটা হিন্দু সামরিক স্থাপত্যের একটি চমৎকার উদাহরণ এবং তার চারটি প্রবেশপথের স্থাপত্য দক্ষতার জন্য লক্ষণীয়, বিশেষ করে হিরা ভাগল।

* অবস্থান : গুজরাটের দাভোই দূর্গ গুজরাটের দর্ভবতী শহরের নিকটে অবস্থিত।এটি বরোদার দক্ষিণ-পূর্বে ২৯ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

* পরিদর্শনের সময় : গুজরাটের নিকটস্থ গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য বরোদা পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

* পৌঁছনোর উপায় : ভারতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা দিল্লি, মুম্বাই, এবং আহমেদাবাদ থেকে বরোদা যাওয়ার দৈনন্দিন বিমান প্রদান করে। ভারতীয় বিমান সংস্থা কার্যালয় ইউনিভার্সিটি রোডে অবস্থিত।

* দাভোই দূর্গের ইতিহাস : গুজরাটের দাভোই দূর্গ ষষ্ঠ শতকের প্রথমদিকে গুজরাটের মহান রাজা সিদ্ধরাজ জয়সিংহ ( ১০৯৩-১১৪৩ খ্রিস্টাব্দ) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

* দাভোই দুর্গের ঐতিহ্য :

  • দাভোই দূর্গ বাস্তুশাস্ত্র ও প্রাচীন ভারতের বৃহৎ গ্রন্থের উল্লিখিত লেখাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়।
  • অতীতে, বহু জৈন পণ্ডিতরা এখানে থাকতেন এবং প্রাচীন জৈন পান্ডুলিপির একটি সংকলন জৈন গ্রন্থ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে।
  • দাভোই দুর্গের বৈশিষ্ট্য -দাভোই শহরের চারটি দুয়ার আছে, যার প্রতিটি মৌলিক দিকে অবস্থিত।
  • হীরা ভাগল- স্থাপত্যবিদ হীরাধরের নামানুসারে নামাঙ্কিত পূর্ব দিকের সবচেয়ে সুন্দরভাবে খোদাইকৃত দুয়ার।
  • পশ্চিমে ভাদোদরা দুয়ার।
  • উত্তরে চম্পানের দুয়ার।
  • দক্ষিণে নন্দোদ দুয়ার।

নজর বাগ প্রাসাদ

দূর্গ এবং প্রাসাদ সহ গুজরাট ভারতের একটি অগ্রণী ঐতিহাসিক স্থান যা আকর্ষণীয় স্থাপত্য নিদর্শনকে প্রদর্শন করে। গুজরাটের প্রধান দূর্গ ও প্রাসাদগুলি হল উপারকোট দূর্গ, পভাগড় দূর্গ, কুসুম বিলাস প্রাসাদ, নজর বাগ প্রাসাদ, এবং দাভোই দূর্গ। হিন্দু, ইসলামী এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের একটি অনন্য সংমিশ্রন গুজরাটের এই দুর্গে লক্ষণীয়।

গুজরাটের নজর বাগ প্রাসাদ অত্যন্ত শৈলীগতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি ভারতের গুজরাটের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক গন্তব্য এবং ব্যক্তিগতভাবে রাজকীয় সম্পত্তির মালিকানাধীন। তিন তলা নজর বাগ প্রাসাদ বরোদার প্রাচীনতম বিদ্যমান প্রাসাদ।

* অবস্থান : গুজরাটের নজর বাগ প্রাসাদ বরোদা শহরে অবস্থিত।

* পরিদর্শনের সময় : গুজরাটের বরোদা শহরের নজর বাগ প্রাসাদ পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ।

* পৌঁছনোর উপায় : ভারতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা দিল্লি, মুম্বাই এবং আহমেদাবাদ থেকে বরোদা যাওয়ার দৈনন্দিন বিমান প্রদান করে। ভারতীয় বিমান সংস্থা কার্যালয় ইউনিভার্সিটি রোডে অবস্থিত।

* গুজরাটের নজর বাগ প্রাসাদের আবশ্যক পরিদর্শনীয় গন্তব্য –

  • বিভিন্ন রাজকীয় আসবাবপত্র বরোদা শহরের আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য।
  • অত্যন্ত জনপ্রিয় সিস্ মহল।
  • ১২৭ কিলোগ্রাম অধিক ওজনের ভারী ধাতব ব্যারেল সহ রাজকীয় স্বর্ণ ও রৌপ্য বন্দুক।

* নজর বাগ প্রাসাদের ইতিহাস : নজর বাগ প্রাসাদ ১৭২১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়।অষ্টাদশ শতাব্দীতে বরোদার গায়কোয়াড় এবং পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছের মধ্যে কিছু স্থায়িত্ব এনেছিলেন। প্রথমে আর্থিক সম্পদগুলি যুদ্ধক্ষেত্রে খরচ করা হয় তারপর সুন্দর প্রাসাদ এবং অট্টালিকা নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কুসুম বিলাস প্যালেস

গুজরাটের কুসুম বিলাস প্যালেস একটি সমৃদ্ধ স্থাপত্য বিস্ময়কে প্রদর্শণ করে। গুজরাটের শহরগুলি দূর্গ এবং প্রাসাদে পরিপূর্ণ যা হিন্দু, ইসলামী এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যের একটি অসাধারণ সংমিশ্রনকে তুলে ধরে।

কুসুম বিলাস প্যালেস চম্পানেরের স্থাপত্যশৈলী, উত্তোলক এবং আধুনিক কার্যকরী প্রয়োজনীয়তাকে একত্রীভূত করেছে। গুজরাটের কুসুম বিলাস প্যালেস চিত্রবৎ এবং ঐতিহাসিকগত ভাবে গুরুত্বপুর্ন একটি পর্যটক গন্তব্য।

প্রেম ভবন প্রাসাদ ও তার পাশাপাশি কুসুম বিলাস প্যালেস গুজরাটের দ্বাদশ শতাব্দীর প্রাসাদ স্থাপত্যের দুটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

* অবস্থান : গুজরাটের বরোদার ছোট উদয়পুর শহর।

* পরিদর্শনের সময় : গুজরাটের বরোদা শহর পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ।

* পৌঁছানোর উপায় : নিকটতম বিমানবন্দর বরোদা (১০২ কিলোমিটার) -এ অবস্থিত। ভারতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা দিল্লি, মুম্বাই এবং আহমেদাবাদ থেকে বরোদা যাওয়ার দৈনন্দিন বিমান প্রদান করে।ভারতীয় বিমান সংস্থা কার্যালয় ইউনিভার্সিটি রোডে অবস্থিত।

* গুজরাটের কুসুম বিলাস প্রাসাদের বৈশিষ্ট্য :

  • একটি গম্বুজ সহ পাঁচতলা মধ্য শাখার অসাধারণ স্থাপত্য শৈলী।
  • অত্যন্ত সুন্দরভাবে খোদাইকৃত পাথরের “জালি” দ্বারা বেষ্টিত হালকা আলোকপ্রভা যুক্ত ব্রিটিশদের দ্বারা তৈরি একটি উত্তোলক।
  • বৃহৎ প্রবেশদুয়ার যুক্ত বিশাল বৈঠকখানা, একটি খোদাইকৃত সজ্জিত ছাদ, বেলজিয়াম আয়না, ফরাসি আসবাবপত্র এবং চমৎকার ইতালিয়ান মার্বেল মূর্তি।
  • ভারতীয় শিল্পী দ্বারা অঙ্কিত প্রাচীর চিত্রাঙ্কন গুলি পূর্ববর্তী রাজধানী ছোট উদয়পুর এবং মোহনের চিত্রানুগ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে।

* গুজরাটের কুসুম বিলাস প্রাসাদের ইতিহাস : কুসুম বিলাস প্যালেস মুম্বাইয়ের এক অত্যন্ত বিখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা ভাটকর অ্যান্ড ভাটকর দ্বারা ১৯২০ সালের গোঁড়ার দিকে নির্মিত হয়।

গুজরাটের কুসুম বিলাস প্রাসাদ এই শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক গন্তব্য।

পভাগড় দূর্গ

গুজরাটের পভাগড় দূর্গ এই শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি গুজরাট শহরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করে। এই দুর্গের নিদারূণ স্থাপত্য দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করে।

গুজরাটের পভাগড় দূর্গ একটি আদর্শ ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিগণিত যা তার স্থাপত্য দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। পভাগড় হিন্দু ও জৈনদের মধ্যে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

* অবস্থান : পভাগড় দূর্গ গুজরাটের আহমেদাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত।পভাগড়ের নিকটবর্তী পাহাড়গুলি একটি পাথুরে ভূখণ্ড গঠন করে।

* পরিদর্শনের সময় : আহমেদাবাদের, পভাগড় দূর্গ পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে।

* পৌঁছানোর উপায় : গুজরাটের পভাগড় দূর্গ ভাদোদরা এবং আহমেদাবাদ শহর থেকে সহজে প্রবেশযোগ্য। মুম্বাই, দিল্লি এবং ভারতের প্রধান শহরগুলি বিমান দ্বারা আহমেদাবাদের সাথে সুসংযুক্ত। আহমেদাবাদ এছাড়াও মাস্কাট, লন্ডন এবং নিউইয়র্কের সাথে সুসংযুক্ত। বিমানবন্দরটি আহমেদাবাদের উত্তর-পূর্বে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অটো রিকশা, ট্যাক্সি, ভাড়া করা গাড়ি এবং পর্যটন বাস এখানকার পরিবহণের মৌলিক উপাদান।

* পভাগড় দূর্গের পরিদর্শনীয় দ্রষ্টব্য :

  • মাকাই কোটা গৃহে পভাগড়ের শাসকরা তাদের শস্য সংরক্ষণ করে রাখতেন।
  • পাতাই রাওয়াল প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ।
  • নউলক্ষা কোঠা অট্টালিকা।

* পভাগড় দূর্গের ইতিহাস : এক ভারতীয় শাসক, সুলতান মোহাম্মদ বেঘাড়া মন্তব্য করেন যে পভাগড় দূর্গকে দমন করা সহজ হবে না। অত:পর, তিনি পভাগড় দুর্গের নিকটবর্তী একটা শহর তৈরী করেন যা বর্তমানে চম্পানের হিসাবে পরিচিত। তিনি পভাগড় দূর্গকে অবরোধ করার জন্য এরকম করেছিলেন।

তাই গুজরাটে থাকিকালীন সুপরিচিত পভাগড় দূর্গ পরিদর্শন করতে একবারেই ভুলবেননা।

* সর্বশেষ সংযোজন : ৪ - ই জুন, ২০১৫