গুজরাট
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

গুজরাট মানচিত্র

Gujarat Map in Bengali

গুজরাট মানচিত্র
* প্রধান সড়ক, রেলপথ, নদী, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি এই মানচিত্রে দেখানো হয়েছে।

গুজরাটের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.gujaratindia.com
স্থাপনের তারিখ 1 মে, 1960
আয়তন 1,96,244 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 308/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা (2011) 60,439,692
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) 31,491,260
মহিলা জনসংখ্যা (2011) 28,948,432
জেলার সংখ্যা 33
রাজধানী গান্ধিনগর
নদী সবরমতী
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান গির জাতীয় উদ্যান, বন্য গর্দভ অভয়ারণ্য, নাল সরোবর পক্ষী সংরক্ষণ, কৃষ্ণ মৃগ জাতীয় উদ্যান, ভেলাভাদর, ভাঁসদা জাতীয় উদ্যান
ভাষা ইংরাজী, গুজরাটি, সিন্ধি, মারওয়াড়ী, কচ্ছি, উর্দূ, হিন্দি, সৌরাষ্ট্র, ভাশাভি
প্রতিবেশী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দমন ও দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি
রাষ্ট্রীয় পশু এশিয় সিংহ
রাষ্ট্রীয় পাখি গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ আমগাছ
রাষ্ট্রীয় ফুল গাঁদা (গালকোটা)
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 75115
সাক্ষরতার হার (2011) 76.64%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 918
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 182
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 26

গুজরাট সম্পর্কে

গুজরাট বা “মণিষীদের দেশ” (“দ্য ল্যান্ড অফ দ্য লিজেন্ডস”) হল দেশের পশ্চিমাংশে অবস্থিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। পশ্চিমে সুবিশাল আরব সাগর এবং সিন্ধুর পাকিস্তানি প্রদেশ, উত্তরদিকে রাজস্থান, দক্ষিণ দিকে দমন, দিউ, দাদরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি সহ মহারাষ্ট্র এবং পূর্বে মধ্য প্রদেশের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত এই রাজ্য, গুজরাট তার গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে এক অনন্য স্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই রাজ্যের রাজধানী গান্ধিনগর এবং আহমেদাবাদ হল এই রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর।

গুজরাটের মোট এলাকা প্রায় ১৯৬,০২৪ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের মোট জনসংখ্যা ৬০,৩৮৩,৬২৮ জন। অনেক ভারতীয় মহান ব্যক্তিত্ব যথা মহাত্মা গান্ধী এবং বল্লভভাই পটেলের জন্মস্থান হওয়ার ফলে, এই স্হানের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরম্পরা রয়েছে যা এই রাজ্যকে মহিমান্বিত করেছে। এখানে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতকাল কোমল ও মনোরম। রাজ্যের দক্ষিণ অংশে যেখানে বর্ষা হতে দেখা যায় সেখানে উত্তর পশ্চিম অংশ সারা বছর ধরে শুষ্ক থাকে। গুজরাট পর্যটন শিক্ষার জন্য আদর্শ, এখান থেকে যে কেউ ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য জানতে পারবেন। গুজরাটের সরকার খুবই সক্রিয় এবং সেখানে বিধানসভার জন্য প্রায় ১৮২টি আসন রয়েছে। আগে, গুজরাট বোম্বে রাজ্যের অন্তর্গত ছিল (বর্তমানে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট, ১৯৬০ সালে এই রাজ্যদুটি পৃথক হয়ে ব্যক্তিগত রাজ্য হিসাবে গড়ে উঠেছে)।

গুজরাটের ইতিহাস

গুজরাটের ইতিহাস প্রাচীন, মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক উপবিভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রাচীন ইতিহাস, সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আগত, যারা প্রথম গুজরাটে বসতি স্থাপন করেছিল, তারা হল গুজার। তারপর এখানে মৌর্য্য রাজবংশ আসে যার শাসক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য এবং তার পৌত্র সম্রাট অশোক, এই অঞ্চলের উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, অনেক রাজবংশ যেমন শুঙ্গ্য, শক্, মৈত্রকা, চৌরা, সোলাংকি এবং বাঘিলাহ ইত্যাদিরা গুজরাটের শাসনকার্য চালায়, এরপর মুসলিমরা এই রাজ্য আক্রমণ করে এবং পরবর্তী প্রায় ৪০০ বছর ধরে সেখানে শাসন চালায়। গজনীর মেহমুদ থেকে শুরু করে আলাউদ্দীন খিলজী থেকে সম্রাট আকবর, সকলেই খুবই বীরত্বের সঙ্গে গুজরাটে রাজত্ব করেন কিন্তু শীঘ্রই মারাঠা সম্রাট শিবাজীর দ্বারা মুসলিমরা বহিষ্কৃত হয়। সপ্তদশ শতকের সময়কালে, ব্রিটীশদের উদ্ভবের সাথে সাথে মারাঠা শক্তির আধিপত্য কমতে থাকে এবং এই রাজ্য বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজ্যে বিভক্ত করা হয় যেমন আহমেদাবাদ, ভারুচ, পঞ্চ মহল, কৈরা, এবং সুরাট যা পরে তাদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। যখন ভারত স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছিল, তখন গুজরাট দেশের বিভিন্ন জায়গার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কেন্দ্রস্থল হিসাবে গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার পরে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃ্ত্বে গুজরাট, বোম্বে রাজ্যের একটি অংশ ছিল। ১৯৬০ সালে বোম্বে রাজ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয় এবং মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট নামক দুটি রাজ্য নিজস্ব পৃথক পরিচয় পায়।

ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ু

ভারতের উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত, দেশের তৃতীয় দীর্ঘতম তটরেখা হিসাবে এটি প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত। এখানে রাজ্যের তিনটি ভৌগোলিক উপবিভাগ রয়েছেঃ উত্তর পূর্ব দিকে অনুর্বর পাশাপাশি পাথুরে কচ্ছ, যা বিখ্যাত কচ্ছের রণ বা মরুভূমির সমন্বয়ে গঠিত, ছোট ছোট পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত পার্বত্য অঞ্চল যা সৌরাষ্ট্র এবং কাথিয়াবাড় নামে পরিচিত। প্রধান জমি শুরু হয়েছে কচ্ছ থেকে দমনগঙ্গা নদী পর্যন্ত এবং এটি সাধারণ পাললিক মাটি দ্বারা পূর্ণ। এখানকার নদীগুলি হল সবরমতী, নর্মদা, তাপ্তি এবং দমনগঙ্গা যেগুলি গুজরাট রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রাজ্যের উত্তর এবং পূর্ব অংশ আরাবল্লী, সাতপুরা, বিন্ধ্য এবং সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত। রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত রয়েছে এবং গির, পঞ্চ মহল এবং দাঙ এলাকাগুলি এর জন্য সুপরিচিত। এই অরণ্য আর্দ্র ও সেইসঙ্গে শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের সমন্বয়ে গঠিত। তার মধ্যে কিছুকিছু কন্টকপূর্ণ প্রধানত কচ্ছের এলাকায়। গুজরাটের দক্ষিণ অংশের জলবায়ু সাধারণত আর্দ্র এবং উত্তর অংশ শুষ্ক। এখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৩ থেকে ১৫২ সেমি, কিছু নির্দিষ্ট এলাকা যেমন দাঙ যেখানে ১৯০ সেমি বৃষ্টিপাত হয়। কর্কট ক্রান্তি রেখার উপর অবস্থিত হওয়ায়, চরম জলবায়ু কাম্বে উপসাগর এবং আরব সাগরের দ্বারা প্রশমিত হয়।

পর্যটন

“পশ্চিমের মণি” (“জুয়েল অফ দ্য ওয়েস্ট”) হিসাবে পরিচিত গুজরাটের যাদুঘর, দূর্গ, অভয়ারণ্য, মন্দির, এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় জায়গা, গুজরাটের পর্যটকদের আনন্দ দিতে পারে। যেহেতু এই স্থানের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেহেতু এখানে ঘোরার জন্য প্রচুর ঐতিহাসিক স্থল রয়েছে যেমন- হৃদয় কুঞ্জ বা মহাত্মা গান্ধির বাড়ি, লোথাল বা সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, কীর্তি মন্দির বা মহাত্মা গান্ধির জন্মস্থান, বড়নগর যা হাটকেশ্বর মন্দির এবং তোরাণের জন্য বিখ্যাত, ঢোলাবীরা এবং আরও অনেক কিছু।

পর্যটকরা কিছু ধর্মীয় স্থানও পছন্দ করেন যেমন দ্বারকা, পাভাগড়, সোমনাথ, শ্যামলাজি, পলিতানা পর্বতে অবস্থিত জৈন মন্দির এবং গিরনর পর্বত। আগ্রহী পর্যটকেরা আহমেদাবাদ, পাটান, দাবলোই, মোধেরা ইত্যাদি জায়গার বিস্ময়কর স্থাপত্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক মিনারের সাক্ষী থাকতে এইসব স্থানে যান। সাতপুরার পার্বত্য রিসর্ট অনেক পর্যটকের জন্য গন্তব্যস্থল হিসাবে গড়ে উঠেছে, তারা সকলেই কোরওয়াড, তিথাল এবং মান্ডভী ইত্যাদি সৈকতে ভিড় জমাতেও ভালোবাসেন। এগুলির পাশাপাশি, গির সিংহ অভয়ারণ্য এবং কচ্ছের অভয়ারণ্যও প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে খুবই প্রিয় গন্তব্যস্থান। এগুলি ছাড়াও, এখানে অনেক দূর্গ যেমন উপরকোট দূর্গ, নজরবাগ প্রাসাদ, দাভোই দূর্গ ইত্যাদি এবং যাদুঘর যেমন গান্ধি স্মারক সংগ্রহালয়, গান্ধি মিউজিয়াম এবং বারোদা মিউজিয়াম এবং চিত্রশালা রয়েছে যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসেন।

সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

গুজরাট রাজ্যের মধ্যে ২৬টি জেলা রয়েছে, যার মধ্যে গান্ধিনগর রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল হিসাবে রয়েছে। ১৮২জন সদস্য নিয়ে গুজরাট সরকারের বিধানসভা গঠিত, যাদের মধ্যে ৩৯টি আসন তপশীলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যান্য ভারতীয় রাজ্যগুলির ন্যায়, মুখ্যমন্ত্রীই বিধানসভা পরিষদের নেতা হিসাবে গণ্য হন এবং তাঁর কাছে কিছু স্বতন্ত্র কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা নির্বাচিত রাজ্যপাল, রাজ্যের প্রধান হিসাবে গণ্য হন এবং বিধানসভা সমাবেশ দ্বারা নির্বাচিত সভাপতিই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাধীনতার পর গুজরাট রাজ্যকে বোম্বে থেকে আলাদা করা হয়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদি কিছু নেতা এই রাজ্যের সরকার ও রাজনীতিতে ছিল। ৯০-এর মাঝামাঝি সময়ে কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত হয় এবং বিজেপি এখনও এই রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে। প্রচুর রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সত্ত্বেও বিজেপি সরকার গত কয়েক বছর ধরে এই রাজ্যে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি, আনন্দিবেন পটেল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয়েছেন এবং শ্রীযুক্ত ও পি কোহলি রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল।

শিক্ষা

গুজরাট, দেশের কিছু সবচেয়ে সুপরিচিত এবং মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা ‍প্রতিষ্ঠানের গৃহ হিসাবে গড়ে উঠেছে। রাজ্য এখানে মৌলিক শিক্ষার উন্নতি করার লক্ষ্যে মনোযোগ দিয়েছে এবং অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছে ও পাশাপাশি রা্জ্যের সকল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করেছে। এই রাজ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলি সি.বি.এস.ই অথবা সি.আই.এস.সি.ই পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। নারীদের শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব সহকারে যত্ন নেওয়া হয়। উচ্চ শিক্ষার জন্য, এখানে বহু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেমন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়, সৌরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়, হেমচন্দ্রাচার্য্য নর্থ গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিগুলি গুজরাট রাজ্যের উচ্চ স্তরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। আই.আই.এম, আহমেদাবাদ, বরোদার মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়, সর্দার বল্লভভাই পটেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি, পাশাপাশি সুরাট ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন, আহমেদাবাদে কিছু বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলির সারা দেশ জুড়ে সুনাম রয়েছে। এই রাজ্যে অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে এবং এগুলির মধ্যে কয়েকটি যেমন সর্দার বল্লভভাই পটেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি এবং ধীরুভাই অম্বানী ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন এ্যন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলোজি ভারতের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। সেন্ট্র্যাল সল্ট এ্যন্ড মেরিন কেমিক্যালস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ন্যায় গুজরাটের উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধানত সামুদ্রিক লবণ, দেশীয় হ্রদ লবণ এবং সামুদ্রিক উপ-মাটি ইত্যাদির উপর বিভিন্ন গবেষণায় উৎসাহিত করে।

অর্থনীতি

গুজরাটকে গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে শিল্পোন্নত রাজ্য হিসাবে ধরা হয়, ভারতের কিছু বৃহত্তম ব্যবসা এখানে নিয়ন্ত্রিত হয়। টেক্সটাইল, রাসায়নিক, তড়িৎ উদ্ভাবন, উদ্ভিজ্জ তৈল, ক্ষার পদার্থ এবং সার ইত্যাদি উৎপাদনের কাজ এই রাজ্যে সম্পন্ন হয়। খনিজ সমৃ্দ্ধ রাজ্য হওয়ায় দেশের প্রয়োজনীয় লবণের ৬৬ শতাংশ এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিকের ৩৫ শতাংশ এই রাজ্য থেকেই পূরণ করা হয়। আঙ্কলেশ্বর এবং খাম্বাত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তৈল উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। রাজকোট হল গাড়ির ইঞ্জিন, গাড়ির উপাদান, সি.এন.সি যন্ত্রপাতি, কাটা এবং ঢালাইয়ের উপাদান ইত্যাদি তৈরির কৌশল ও উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র। গুজরাট রত্ন এবং অলংকারের উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য সুপ্রসিদ্ধ। সুরাট হীরা বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়াও গুজরাট তুলা, তামাক, ধান, বাদাম, গম, জোয়ার, বাজরা, ভূট্টা ইত্যাদির প্রধান উৎপাদক এবং এই কারণেই কৃষিই রাজ্যের প্রধান অর্থনীতি। পশুপালন ও দুগ্ধ ব্যবসাও রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির একটি উৎস। আমূল দুগ্ধ সমবায় সমিতির মাধ্যমে এই রাজ্য ভারত তথা এশিয়ার বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক কেন্দ্র হিসাবেও পরিচিত। তৈল, সাবান এবং পেট্রোল ছাড়াও এই রাজ্য পশুধন, ডিম ও পশমেরও প্রধান উৎপাদক। পর্যটনও রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম উৎস। বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ ক্ষেত্র এখানকার ভাবনগরে অবস্থিত এবং রিল্যায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর একটি অংশ রিল্যায়েন্স পেট্রোলিয়াম জামনগরে অবস্থিত, যেটি বিশ্বের বৃহত্তম তৈল শোধনাগার।

জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, গুজরাট রাজ্যের মোট জনসংখ্যা হল ৬০,৩৮৩,৬২৮ এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে মোটামুটি প্রায় ৩০৮ জন লোক বাস করে যা অন্যান্যদের তুলনায় কম। পুরুষ ও মহিলাদের অনুপাতের হার শালীন, যেখানে ১০০০ জন পুরুষের মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৯১৮ জন, যেটা আবারও অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটা কম। গুজরাটের প্রধান ধর্ম হিন্দু, যা মোট জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ নিয়ে গঠিত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রধান পূজ্য দেবতা যাঁকে এই রাজ্যে শ্রীনাথ রূপে পূজো করা হয়। পরবর্তী মুসলিম ধর্মই প্রধান খন্ড, যা জনসংখ্যার প্রায় ৯.১ শতাংশ নিয়ে গঠিত, বাকিরা হল জৈন, শিখ এবং খ্রীষ্টান। হিন্দু জনসংখ্যার অধিকাংশ জায়গাতেই গুজরাটিরা রয়েছে যারা বেশ স্পন্দনশীল এবং আন্তরিক প্রকৃতির। মারওয়াড়ী এবং বিহারিদের এক বৃহৎ সম্প্রদায় গুজরাটে বাস করে। পর্তুগীজদের একটি ছোট অংশ আহমেদাবাদে বসবাস করে। গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত অন্যান্য মানুষের মধ্যে, ভারতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত হল তামিল, তেলেগু, মালায়ালি, কোঙ্কনি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, তিব্বতি, নেপালি, ওড়িয়া, আসামি, বাঙালি পাশাপাশি বিদেশী সম্প্রদায় হল যেমন পার্সি, ইহুদী, দক্ষিণ কোরিয়ান, অ্যংলো-ইন্ডিয়ান এবং গ্রীক ইত্যাদি।

সংস্কৃতি

বিবিধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতার কারণে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ গুজরাট রাজ্য উন্নয়নশীল ও স্পন্দনশীল। বিভিন্ন উৎসব ও মেলার ক্ষেত্র হিসাবে এই রাজ্য খুবই সুপরিচিত। হোলি, দীপাবলি, দশেরার মতো ঐতিহ্যময় ভারতীয় উৎসবগুলি ছাড়াও অন্যান্য হিন্দু উৎসব যেমন মকর সংক্রান্তি বা ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব, মোধেরা, কচ্ছ মহোৎসব এবং ভাদ্র পূর্ণিমা ইত্যাদি পালিত হয়। অন্যান্য উৎসব যেমন ঈদ, খৃষ্টমাস এবং মহাবীর জয়ন্তীও এই রাজ্যে সমান উৎসাহের সাথে পালিত হয়। বিভিন্ন উৎসব ও বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে নৃত্য এবং সঙ্গীত এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নৃত্য শৈলীগুলির মধ্যে ডান্ডিয়া রাস, গারবা, গারবি ও পাধার পৃথিবী বিখ্যাত। লোকসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এখানকার স্থানীয় তথা পাশাপাশি অভিজ্ঞ সঙ্গীতজ্ঞ দ্বারা নিয়মিতভাবে অভ্যাস করা হয় এবং অনেক প্রকারের রাগ এই রাজ্য থেকে উদ্ভুত হয়েছে যেমন খাম্বাভতী, লতি, টোডি, শোরাঠি ইত্যাদি।

এই রাজ্যের হস্তশিল্পে প্রাচীন ও আধুনিকতার মিশ্রন লক্ষ্য করা যায় এবং তাদের শৈল্পিক নিদর্শন এক আলোচ্য বিষয়। সুতোর কাজ, কাঠ খোদাই মুদ্রণ, গহনা সেইসঙ্গে পাথরের কারুকার্য সারা বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয় যা এই রাজ্যের সংস্কৃতির নিদর্শন দেয়। পাটোলা সিল্ক এবং শাড়ির উপকরণ হিসাবে সুরাট জরি চারিদিকে জনপ্রিয়। কিছু বিশেষ ধরনের সূতোর কাজ যা গুজরাটের বিশেষত্ব সেগুলি হল-সালামা, ছলাক, টিকি, কাঙ্গিরি। অভলা কারুকার্য এই রাজ্যের বিখ্যাত কাঁচের কাজ যেখানে কাপড়ের ওপর ছোট কাঁচ বুনে চমকপ্রদ সুতোর কাজ করা হয়।

ভাষা

গুজরাটের অধিবাসীরা বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় ও ভিন্ন ধর্মের হয়। অতএব প্রধান সরকারি ভাষা গুজরাটি ছাড়াও এই রাজ্যে অনেক রকমের ভাষা রয়েছে যেগুলিতে লোকেরা কথা বলে। এই গুজরাটি ভাষা ইন্দো-আর্য পরিবার থেকে উদ্ভূত হয়েছে যেমন ভারতের অন্যান্য অনেক ভাষার উৎপত্তির মূলে ছিল সংস্কৃত। গুজরাটে প্রায় ১১টি উপভাষা রয়েছে যেগুলিতে রাজ্যের ভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষ কথা বলে। এগুলির মধ্যে কিছু যেমন গুজরাটি, গামথি, কাথিওয়াড়ী, খর্ভা, খকারি এবং পারসী উপভাষা উচ্চস্তরীয়। পারসী গুজরাটি শুনতে খুবই মধুর হয় এবং প্রধানত এটি স্থানীয় জোরোয়াস্ট্রিস ধর্মাবলম্বী মানুষদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি সাধারন গুজরাটি ভাষা থেকে আলাদা, এবং এতে কিছু ফরাসী শব্দ রয়েছে যা কথা বলার পাশাপাশি লেখার জন্যও লোকেরা ব্যবহার করে। রাজ্যটি যেহেতু রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ তথা অন্যান্যদের সাথে সাধারণ সীমানা ভাগ করে নিয়েছে, তাই এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কাছাকাছি থাকা মানুষ তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলে। সুস্পষ্ট কারণেই, রাজ্যে মারওয়াড়ী, মারাঠি, হিন্দিও কথ্য ভাষা হিসাবে প্রচলিত আছে। জনসংখ্যার কিছু অংশ সিন্ধি ও উর্দূ ভাষাতেও কথা বলে। কচ্ছ, যেটি এ রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে এক ভিন্ন মাতৃভাষা রয়েছে, যা কচ্ছি নামে পরিচিত এবং এটি স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়। এটি সিন্ধি ও গুজরাটির মিশ্রণ হিসাবে ধরা হয়।

পরিবহন

রাজ্যের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, গুজরাট, দেশের বাকিদের সাথে সুসংযুক্ত এবং পাশাপাশি বিশ্বের সমস্ত অংশ থেকে সহজে প্রবেশযোগ্য হয়ে উঠেছে। গুজরাটে অনেক দেশীয় ও সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে যেখানে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যাতায়াতের বিমান রয়েছে যেমন আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে আহমেদাবাদ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে বিমান এই সমস্ত দেশে উড়ে যায়। অনেক সরকারি ও সঙ্গে বেসরকারি বিমানও রাজ্যে পরিষেবা দেয় যেমন জেট এয়্যারওয়েজ, ইন্ডিগো, ইন্ডিয়ান এয়্যারলাইনস, এয়্যার সাহারা এবং আরও অনেক। সুসংযুক্ত রেলব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে নিশ্চিন্তে গুজরাটে পৌঁছানো যায়। প্রধান শহরগুলি যেমন আহমেদাবাদ, বদোদরা এবং সুরাট দেশের প্রায় সমস্ত মহানগর সহ সকল শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত। করাচি এবং পেশোয়ারের মতো জায়গার রেলও এখানে উপলব্ধ রয়েছে। শহরের সেরা উচ্চনির্মিত সড়ক হিসাবে গুজরাটকে বিবেচনা করা হয়। এখানে সমস্ত রাজ্য থেকে প্রতিবেশী রাজ্যে যাতায়াতের জন্য বিলাসবহুল বাস উপলব্ধ রয়েছে এবং যা মসৃণ রাস্তার উপর দিয়ে কিছুটা কম ঘুরে গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর পক্ষে আরামদায়ক। সরকার দ্বারা ব্যবস্থিত বাস পরিষেবা শহরের মধ্যে পরিবহন-মাধ্যমকে আরামপ্রদ করে তুলেছে। নিজস্ব গাড়ি ছাড়া, সাইকেল রিক্সা, অটো-রিক্সা সচরাচর দেখা যায়। দৈনন্দিন ভিত্তিতে ঘোড়ায় টানা গাড়ি গোটা রাজ্য জুড়ে হাজার হাজার মানুষের পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

সর্বশেষ সংযোজন : ১৯- শে ফেব্রুয়ারী , ২০১৫