দ্বারকানাথ মন্দির

Dwarkanath Temple of Gujarat in Bengali

দ্বারকানাথ মন্দির সম্পর্কে

গোমতী নদীর উপকূলে পবিত্র শহর দ্বারকায়, দ্বারকানাথ মন্দির অবস্থিত। প্রভু শ্রী কৃষ্ণের প্রাচীন সাম্রাজ্য হিসাবে বিবেচিত, দ্বারকায় বহু সংখ্যক ধর্মীয় স্থান এবং মন্দির রয়েছে। এটা বলা হয়যে এখানে আদি মন্দিরটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাতি, বজ্রনাভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি প্রভুর আবাসস্থলের উপরে একটি হরি গৃহ নির্মান করেন।

অনেক গবেষণার পর জানা গিয়েছে যে, এই মন্দিরটি ২৫০০ বছরেরও আগে নির্মিত হয়েছিল, অষ্টম শতাব্দীতে আদি গুরু শঙ্করাচার্য এই স্থান পরিদর্শন করার পর এটি অত্যন্ত সম্মানিত চার ধামের একটি অংশ হয়ে ওঠে। মন্দিরটির অভ্যন্তরে স্হাপিত একটি স্মারক এই দর্শনকে স্মরণ করায়।

১২৪১ খ্রিস্টাব্দে, এই মন্দিরটি মহম্মদ শাহ্ আক্রমণ করেন এবং এইসময় মন্দিরের কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মন্দিরটি পাঁচজন ব্রাহ্মণের উদ্দ্যেশে নিবেদিত যারা এই মন্দিরটি রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছিলেন। অগণিত হামলার কারণে এই মন্দিরটি উদ্বেগের একটি কারণ হয়ে দাঁড়ালেও, এর সেরকম ক্ষতি কখনও হয়নি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের নৌবাহিনী এই মন্দিরে শেষ আক্রমণ করার চেষ্টা চালায়।

পুষ্টিমার্গ মন্দিরটি বৈষ্ণব নিয়মরীতি অনুসরণ করে এবং প্রধান দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণসহ স্বামী বল্লভাচার্যের নির্দেশাবলী অনুসৃত হয়।

দুটি প্রবেশপথ সহ চুনাপাথর দ্বারা তৈরি পাঁচ তলা কাঠামোর মন্দিরটি ৭২-টি স্তম্ভ দ্বারা সমর্থিত। দক্ষিণ গেট বা স্বর্গ দুয়ার পবিত্র গোমতী নদী দ্বারা প্রবেশযোগ্য অন্যদিকে উত্তর গেট মোক্ষ দুয়ার বা পরিত্রাণ দুয়ার যা প্রধান বাজার দ্বারা প্রবেশযোগ্য। এই মন্দিরের মধ্যে উপস্থিত মূর্তি এবং ভাস্কর্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বহু ক্ষমতাসীন রাজবংশ তাদের চিহ্ন এবং প্রতীক রেখে গেছে।

মন্দিরটির উপরে বিদ্যমান একটি পতাকা ৫২ গজ কাপড় এবং ৫২-টি ছোট পতাকার সমন্বয়ে গঠিত। সূর্য ও চাঁদের প্রতীক বহনকারী বিভিন্ন বর্ণ সমন্বিত এই পতাকা জীবনের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলিকে প্রতীকায়িত করে।

অবস্থান

দ্বারকানাথ মন্দিরটি গোমতী নদীর তীরে দ্বারকা শহরে অবস্থিত।

পৌঁছানোর উপায়

১৩১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিকটতম বিমানবন্দর জামনগর থেকে বিমান দ্বারা দ্বারকা যাওয়া যেতে পারে। এখান থেকে বিভিন্ন অন্তর্দেশীয় বিমান এই শহরকে রাজ্যের অন্যান্য অংশে ও শহরের সাথে সংযুক্ত করে। মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের সকল অংশ থেকে জামনগর যাওয়ার সমস্ত প্রধান বিমানের সাথে সংযুক্ত।

দ্বারকার রেলওয়ে স্টেশন পশ্চিম রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অধীন এবং দ্বারকা রেলওয়ে স্টেশন প্রায় ১.৫ কিলোমিটারের স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত। পশ্চিম রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অধীনে থাকার সুবিধার দরুন এই শহর মুম্বাই, জামনগর, আহমেদাবাদ ও ভারতের অন্যান্য প্রধান মেট্রো শহরগুলি সাথে সুসংযুক্ত। এখানে দৈনন্দিন ভিত্তিতে অসংখ্য এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও এখানে কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেন উপলব্ধ যা শহরগুলির সঙ্গে সংযুক্ত।

রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক একটি ভাল সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে দ্বারকাকে রাজ্যের প্রধান শহর ও সেইসাথে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময়

দ্বারকায় সারা বছর ধরে আরামপ্রদ জলবায়ু থাকে, তাই আপনি তদনুসারে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে ২০ ডিগ্রী থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত একটি মধ্যপন্থী তাপমাত্রা থাকে। বর্ষা ঋতুর আগমন হয় জুলাই মাসে এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে। এই শহরে ভাল পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়। কখনও কখনও কম বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে আবহাওয়া আর্দ্র এবং চটচটে হয়। এছাড়াও এই নির্দিষ্ট সময়ে আপনি ঘন সবুজ গাছপালার সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন। এই শহর পরিদর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই সময় দিনের তাপমাত্রা খুব আনন্দদায়ক হয়, উজ্জ্বল সূর্য ঠান্ডায় তার উষ্ণতা প্রদান করে।রাত্রি অত্যন্ত ঠাণ্ডা হয়।

সর্বশেষ সংযোজন : ২২ - শে মে, ২০১৫