রোজ্ গার্ডেন

The Rose Garden of Chandigarh in Bengali

রোজ্ গার্ডেন, চন্ডীগড়

আপনি যদি বিশ্রাম, শান্তি ও প্রকৃতির উপহার উপভোগ করার মতো কোনও একটি স্থান খোঁজেন, তবে রোজ্ গার্ডেন্-এ পরিভ্রমণ করতে আপনি অবশ্যই পছন্দ করবেন। এটি নিদারুণ সৌন্দর্য্য ও সুশৃঙ্খল বাগান সহ এক অগণিত ফুলের ভান্ডার, যা অনেকের হৃদয়কে স্পন্দিত করে তোলে। এটি একটি স্থানীয় কেন্দ্রস্থল যেখানে মানুষ সামাজিকভাবে, তাদের পরিবারদের সঙ্গে সময় কাটাতে এখানে জড়ো হয়। এছাড়াও এটি শরীর চর্চার স্থল হিসাবেও বিবেচিত হয়। এটি এমন একটি স্থান যেটি শুধুমাত্র গোলাপেই সমৃদ্ধ নয় বরঞ্চ অন্যান্য বিশিষ্ট ঔষধি গাছপালা এবং পর্যাবৃত্ত অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসাবেও এটি তার প্রভাব বিস্তার করেছে।

সম্পর্কে

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাকির হুসেন-এর নামানুসারে চন্ডীগড়ের এই দ্য রোজ্ গার্ডেন-টির নামকরণ করা হয়েছিল এবং এটি দ্য জাকির হুসেন রোজ্ গার্ডেন নামেও অভিহিত করা হয়। কথিত আছে যে, এই বাগানটি প্রায় ৮২৫-টি বৈচিত্র্যের গোলাপ এবং ৩২,৫০০-টিরও বেশি বৈচিত্র্যময় অন্যান্য ঔষধি উদ্ভিদ ও গাছপালার সমন্বয়ে প্রায় তিরিশ থেকে চল্লিশ একর জায়গা জুড়ে এটি প্রসারিত রয়েছে। প্রচুর ভেষজ উদ্ভিদকেও এখানে বেড়ে উঠতে দেখা যায় এবং সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হল কর্পূর, ভেল ইত্যাদি। এটি বিশেষজ্ঞ উদ্যানপালকদের দ্বারা পরিচর্যিত হয় এবং এটি পরিচ্ছন্ন ও সু-সংগঠিত প্রকৃতির। এটি এমন একটি বাগান যেখানে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা ও মুক্ত সময় কাটানোর জন্য জনসমাগম হয়, সুতরাং এখানে খাবারের দোকান, প্রয়োজনীয় বসার জায়গা ও হাঁটাচলার পথ সমন্বিত রয়েছে।

রোজ্ গার্ডেন, গ্রীষ্মকালের সময়ে এশিয়ার মধ্যে তিনদিন ব্যাপী সবচেয়ে এক বৃহত্তম উৎসবের আয়োজন করে, যেটিকে ‘ফেস্টিভ্যাল অফ গার্ডেন’ বা ‘বাগিচা উৎসব’ বলা হয়। গোলাপের এই উৎসব হল স্ফূর্তির এক প্রচেষ্টা যেটি নৃত্য, গোলাপের প্রদর্শনী, খেলাধূলা ও খাবারের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয়। দিগদিগন্ত থেকে মানুষজন এই উৎসবের ঋতুতে এই বাগিচা পরিদর্শন করতে আসে।

ইতিহাস

এশিয়ার এই বৃহত্তম বাগিচাটি ১৯৬৭ সালে, প্রথম মূখ্য কমিশনার এম.এস. রান্ধওয়া-র তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল।

স্থাপত্য

এই বাগানটির অনেকগুলি প্রবেশপথ ও পার্কিং-য়ের সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে কিন্তু খুব শীঘ্রই সেগুলি ভর্তি হয়ে যায়। এছাড়াও এখানে অনেক সবুজাভ ঘাসের প্রসারণ রয়েছে যা দর্শনের জন্য মনোরম। এখানে ভ্রমণার্থীদের তৃ্প্তি প্রদানের জন্য গাছের তলায় বেশ অনেকগুলি বেঞ্চ রাখা আছে। এই বাগানটি উদ্যানের মতন করে সু-পরিকল্পিত করা আছে এবং বিস্তৃত প্রসারণ ও হাঁটাচলার জন্য আঁকাবাকা পথ সমন্বিত রয়েছে। যে সমস্ত ব্যাক্তি জগিং ও শরীর চর্চা করেন তাদের জন্য এটি খুবই আরামদায়ক। এছাড়াও এখানে খাবারের দোকান এবং যেখানে সেখানে নোংরা ফেলা, গাছপালাকে আঘাত করা বা ক্ষতি করার জন্য জরিমানা ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি-ও রয়েছে।

সময়

বাগানটি গ্রীষ্মকালের সময় মোটামুটি ভোর ৫:০০-টা থেকে রাত ৯:০০-টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং সর্বাধিক উদ্দীপনা হল যে এই বাগানটিতে ঢোকার জন্য কোনও প্রবেশমূল্য লাগে না।

অবস্থান

এটি সেক্টর – ১৬, চন্ডীগড়ের নিকটে অবস্থিত।

পৌঁছানোর উপায়

মটকা চৌক ল্যান্ডমার্ক দিকের প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে এখানে পৌঁছানো যায়। এই স্থানে কোনও বাস, গাড়ি ও অন্যান্য মোটর গাড়ির দ্বারা সহজেই পৌঁছানো যায়। বিপূল ভিড়ের কারণে পার্কিং ক্ষেত্র পাওয়া কঠিন। এর পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু সংখ্যক প্রবেশ-পথ রয়েছে, যেগুলি দিয়েও বিভিন্ন পথে এই বাগানে পৌঁছানো যায়।

থাকার জায়গা

রোজ্ গার্ডেনের সান্নিধ্যে অবস্থিত থাকার বেশ কিছু হোটেলের মধ্যে রয়েছে তাজ চন্ডীগড়, দ্য ফার্ণ রেসিডেন্সী, দ্য লেমন্ ট্রি হোটেল, দ্য চন্ডীগড় অশোক এবং আরোও অন্যান্য।

রোজ্ গার্ডেন হল এশিয়ার এক অন্যতম বহুমূল্যবান বাগান। চন্ডীগড়ের রোজ্ গার্ডেন সমস্ত দেশের প্রকৃতি প্রেমীদের সফরের জন্য এক উপযুক্ত স্থান। এছাড়াও এটি চন্ডীগড়ের স্থানীয় মানুষদের কাছে সকাল বা সন্ধ্যায় তাদর মুক্ত সময় কাটানোর জন্যও মানানসই স্থান। রোজ্ গার্ডেনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কঠোর নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হয়; যেমন – এখানে খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ এবং গোলাপের কোনওরকম অন্তর্ঘাত বা ক্ষতির জন্য জরিমানা ইত্যাদি। এই সুন্দর বাগানের মধ্যে পায়চারি করতে করতে বিশ্বের বেশ কিছু সেরা গোলপের নমুনা দেখার দৃশ্য সত্যই শোভনীয়।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১ - লা জুন, ২০১৫