চন্ডীগড়ের উপর তথ্যাবলী |
|
---|---|
আধিকারিক ওয়েবসাইট | www.chandigarh.nic.in |
স্থাপনের তারিখ | 1 নভেম্বর, 1966 |
আয়তন | 114 বর্গ কিলোমিটার |
ঘনত্ব | 9252/ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা (2011) | 1,055,450 |
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) | 580,663 |
মহিলা জনসংখ্যা (2011) | 474,787 |
জেলার সংখ্যা | 1 |
রাজধানী | চন্ডীগড় |
নদী | পাতিয়ালা-কি-রাও |
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান | সুখনা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য |
ভাষা | হিন্দি, পাঞ্জাবি, ইংরাজী |
রাষ্ট্রীয় পশু | ভারতীয় ধূসর মঙ্গুস |
রাষ্ট্রীয় পাখি | ভারতীয় ধূসর হর্নবিল |
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ | আম গাছ |
রাষ্ট্রীয় ফুল | ঢাক ফুল |
প্রতিবেশী রাজ্য | পাঞ্জাব, হরিয়ানা |
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) | 128634 |
সাক্ষরতার হার (2011) | 87.07% |
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা | 818 |
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র | 0 |
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র | 1 |
চণ্ডীগড় ভারতের সর্বপ্রথম সুপরিকল্পিত শহর। এর পরিকল্পনা এক ফরাসী স্থপতি লে.কোরবিউসায়ের তৈরী করেছিলেন। দেশের অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তুলনায় সর্বোচ্চ মাথা পিছু আয়ের কারণে, এই শহর ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকায় গুরুত্বপূর্ণরূপে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে।
সুপরিকল্পিত শহর হওয়ার দরুণ এবং জীবনযাত্রায় গুণগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বিশ্বের বিখ্যাত শহরগুলির তালিকার মধ্যে পড়ে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা, এই দুই রাজ্যের যৌথ রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠার কারণেও চন্ডীগড় এক মর্যাদাপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছে। আজকের দিনে, এটিকে আধুনিক ভারতের এক শহর হিসাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়।
আপনি এটিকে আধুনিকীকরণের সাথে সাথে প্রকৃতির সংরক্ষণের উদাহরণ রূপেও দেখতে পারেন। এর পরিকল্পনা ও নির্মাণে অন্তর্ভূক্ত বৃক্ষ ও চারাগাছ এটির দুর্লভ উদাহরণস্বরূপ। তথ্য অনুযায়ী, এই শহরটি দেশের সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে সুপরিচিত। এখানে শুধুমাত্র সেই সমস্ত শিল্পকে গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া হয় যেগুলি কোনওভাবে বায়ূকে দূষিত না করে। এই কারণেই আপনি চন্ডীগড়ের বায়ূ একদম শুদ্ধ ও দূষণমুক্ত অনুভব করতে পারবেন। ১৯৬৬ সালের ১-লা নভেম্বর এই শহরের প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকেই, এটি সমগ্র উত্তর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। সুন্দর পরিকল্পনা ও স্থাপত্যের দরুণ, আপনি এখানকার সুবিকশিত পর্যটনও দেখতে পাবেন এবং এটি উত্তর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এখানকার ইতিহাস প্রায় ৮০০০ বছরের পুরনো যখন হরপ্পার অধিবাসীরা এখানে বসতি স্থাপণ করেছিল, যা সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা নামে পরিচিত।
মধ্যযুগীয় সময়ে এক প্রসিদ্ধ স্থানের পাশাপাশি এটি পাঞ্জাব প্রদেশের একটি অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর, পাঞ্জাব, পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যায়। বিভাজনের পর লাহোর পাকিস্তানের অধীনে চলে যায়, ফলে পূর্ব পাঞ্জাবের জন্য কোনও রাজধানী রইল না। তারপর, পাঞ্জাবের রাজধানী গঠনের লক্ষ্যে চন্ডীগড়ের পরিকল্পনা করা হয়। তাই, চন্ডীগড়ের গঠনের স্থান হিসাবে শিবালিকের পাদদেশীয় অঞ্চলটিকে বেছে নেওয়া হয়। এই শহরটিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্ট কিছু কর্মকর্তার আদেশের অধীনে নির্মিত করা হয়। কিন্তু প্রকৃত শহর গড়ে ওঠার আগে পর্যন্ত অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। শহরটি গড়ে তোলার উপযুক্ত জায়গা নির্বাচনের জন্য একটি সংগঠন তৈরী করা হয়েছিল। আবহাওয়ার পরিস্থিতি, সামরিক সংবেদনশীলতা, জল-সংস্থান ইত্যাদি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই স্থানটিকে পরে নির্বাচিত করা হয়।
হরিয়ানা গঠনের পর, উভয় রাজ্যেরই রাজধানীর চাহিদা ছিল। নৈকট্য এবং তাৎপর্যের কথা বিচার করে এই জন্য চন্ডীগড় উভয় রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, চন্ডীগড়ের জনসংখ্যা হল প্রায় ১০,৫৫,৪৫০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্বে এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯২৫২ জন মানুষ বাস করে। প্রতি ১০০০ জন পুরুষের অনুপাতে মহিলার সংখ্যা হল ৮১৮ জন। পুরুষ ও মহিলার অনুপাতের দিক দিয়ে এই রাজ্যটি দেশের মধ্যে এক সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। স্বাক্ষরতার হার হল প্রায় ৮৬.৪৩ শতাংশ যা দেশের অন্যান্যদের তুলনায় কিছুটা উন্নত। মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শিশুদের নিয়ে গঠিত।
বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে এই শহরটি গঠিত যেমন হিন্দু, শিখ, খ্রীষ্টান, মুসলিম। এখানকার জনসংখ্যার বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত এবং এরপরেই রয়েছে শিখ সম্প্রদায়। চন্ডিগড় অত্যন্ত প্রগতিশীল শহর এবং এর প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকাই উন্নত। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীই শহর কেন্দ্রিক, মাত্র ২ শতাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে।
এখানকার নারী স্বাক্ষরতার হার এবং মহিলা অনুপাত উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। সরকার এখানকার নারীদের এই স্থিতির উন্নতির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। গ্রামাঞ্চলে এই মহিলা অনুপাত খুবই সংঙ্কীর্ণ, যেখানে প্রচুর উন্নতির প্রয়োজন।
হিমালয়ের শিবালিক পর্বতমালার পাদদেশে চন্ডীগড় অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩২১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি ৩০ ডিগ্রী ১৪’’ ইঞ্চি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৬ ডিগ্রী ১৪’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এখানে উর্বর জমি রয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে ফসলের ফলন হয়। এখানকার জমি উর্বর পাললিক মৃত্তিকা নিয়ে গঠিত এবং এর উপরি পৃষ্ঠে আপনি বড় পাথর, নুড়ি, কাদামাটি, পলি, বালি, কাঁকড় এবং ইট দেখতে পাবেন।
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি ৫-টি নগর ও প্রায় ২৫-টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এছাড়াও এখানে একটি তালুক ও সামুদায়িক উন্নয়ন ব্লক রয়েছে। এই রাজধানীটির প্রকৃতি ক্রান্তীয় ধরনের এবং এর বৈশিষ্ট্য হল উষ্ণ গ্রীষ্মকাল, অবিশ্বাস্য বৃ্ষ্টিপাত এবং শীতল শীতকাল। এখানকার তাপমাত্রার প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে এবং ১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে ৪৬ ডিগ্রী পর্যন্ত থাকে। শীতকাল এখানে সঙ্গে করে তুষারপাতও নিয়ে আসে। এখানে উপ-ক্রান্তীয় মহাদেশীয় মৌসুমি জলবায়ু অনুভূত হয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হল প্রায় ১১০০ মিলিমিটার। সমগ্র শহর সুখনা চৌ এবং পাটিয়ালী রাও-এর ন্যায় মরশুমি নির্ঝর দ্বারা প্লাবিত হয়।
এই স্থানের উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের প্রসঙ্গে আলোচনা করলে, আপনি এখানে প্রচুর জল গহ্বর এবং সুন্দর গাছপালা দেখতে পাবেন, প্রাকৃতিক পুনর্জন্ম রূপে বিভিন্ন প্রজাতি ও বন্যপ্রাণীর কাছে এটি একটি আদর্শ স্থান হিসাবে গড়ে উঠেছে। সুখনা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষ, তৃণজাতীয় গাছ, ঝোপঝাড়, ঘাস এবং লতা-পাতা এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, পক্ষী এবং সরীসৃপ ইত্যাদিও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, আপনি এখানে সাইবেরিয়া এবং জাপানের পরিযায়ী পাখিও দেখতে পাবেন।
আজকের দিনে ৩২৪৫ হেক্টরের এক সুবিশাল সম্প্রসারণকে অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকায় রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং এটি এখন বন্যপ্রাণীদের জন্য এক স্বর্গ হয়ে উঠেছে। এই স্থানে দুটি জাতীয় সংরক্ষিত অরণ্য রয়েছে এবং এগুলি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাসস্থান হয়ে উঠেছে।
চন্ডীগড় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সরকারের ভিত হিসাবে স্বীকৃত হওয়ায় এই অঞ্চল প্রধান সরকারী নিয়োগকর্তা হয়ে উঠেছে। এখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশই সরকারি দপ্তরে কর্মরত। এই রাজধানীতে প্রায় ১৫-টি মাঝারি থেকে বৃহৎ শিল্প এবং সার্বজনীন উদ্যোগ ক্ষেত্র গড়ে উঠেছে। এখানে প্রায় ২৫০০-টি ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে। এটি আউটসোর্সিং ও আই.টি পরিষেবার কেন্দ্রস্থল রূপে উন্নতি করছে।
এখানে বেশ কিছু শিল্প রয়েছে যেগুলিতে কাগজ, স্যানিটারি পণ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতির সরঞ্জাম, মৌলিক ধাতু, অটো সরঞ্জাম, ঔষধি দ্রব্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নির্মাণের কাজ হয়। এখানে খাদ্য উৎপাদনের উপর ভিত্তি করেও অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। অবিশ্বাস্য পরিকাঠামোর দরুণ, আজকে চন্ডীগড়ে অনেক শিল্প ও কারখানা গড়ে উঠেছে। এখানে উন্নত সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও এই শহরটিকে কখনও শিল্পের কেন্দ্রস্থল হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয় নি, তবে এই ক্ষেত্রে চন্ডীগড় বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যটনের দিক থেকেও এটি খুব সমৃদ্ধ এবং ভারতীয় ও বিদেশীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই কারণে এই শহরের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থব্যবস্থায় এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ভারতের অন্যান্য প্রধান শহরগুলির তুলনায় এখানকার অধিক মাথা পিছু আয়ের কারণেও এটি সুপরিচিত।
শিল্পের ক্ষেত্রে আলোচনা করলে বলা যেতে পারে কাগজ, স্যানিটারি পণ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতির সরঞ্জাম, মৌলিক ধাতু, অটো সরঞ্জাম, ঔষধি দ্রব্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ইস্পাত ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ হল চন্ডীগড়ের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। অন্যান্য শিল্পগুলি খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।
চন্ডীগড়, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের যৌথ রাজধানী হিসাবে কাজ করার জন্য এটিকে আলাদাভাবে পরিচালিত করা হয়। এটি ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে স্বীকৃত। প্রশাসনের প্রধান ব্যাক্তি হলেন রাজ্যপাল যিনি প্রশাসক রূপে পরিচিত এবং ইনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত হন। এঁনার কাছে অধিকাংশ কার্য নির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে। এর প্রশাসন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের অধীনে আসে।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নিজস্ব সংসদীয় নির্বাচন ক্ষেত্র রয়েছে এবং যার মধ্যে সমগ্র চন্ডীগড় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এখানে হরিয়ানা ও পাঞ্জাব এই উভয় রাজ্যের বিধানসভা সমাবেশও রয়েছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগকে দেখাশোনা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করা হয়েছে যেমন শিক্ষা, সমাজ কল্যাণ, সতর্কতা, পরিবেশ, আবাসন, পশুপালন, আবগারি এবং কর আরোপণ, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সরবরাহ এবং নগর উন্নয়ন।
চন্ডীগড় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের অধীনে আসে। উপদেষ্টার ভূমিকায় আই.এ.এস সেবার একজন উচ্চপদস্থ আধিকারি, দ্বিতীয় কমান্ড হিসাবে থাকেন। এই উচ্চপদস্থ আধিকারি আই.এ.এস-এর এ.জি.এম.ইউ ক্যাডারের হন। উপ-মহাধ্যক্ষ আই.এ.এস থেকে হন এবং ইনি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাধারণ প্রশসনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। উচ্চপদস্থ পুলিশ-অধীক্ষক বা আই.পি.এস এখানকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেন।
চন্ডীগড়ে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে যেগুলি এই শহরের সরকার ও রাজনীতির দেখাশোনা করে। তার মধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল হল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা দল এবং বহুজন সমাজ পার্টি।
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি তার লোক-নৃত্য ও লোক-সঙ্গীতের জন্য সুপরিচিত। এখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্য পাঞ্জাবি সংস্কৃতি এবং হিন্দু, শিখ ও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। স্থানীয় সংস্কৃতি খাদ্য, উৎসব, সঙ্গীত ও নৃত্য, ধর্মীয় রীতিনীতি এবং ধর্মানুষ্ঠান সব নিয়েই গঠিত। নৃত্য এখানকার মানুষের প্রাণবন্ততার বর্ণনা দেয়। এখানকার বিখ্যাত কিছু লোক-নৃত্য হল ভাঙরা, গিড্ডা, জুল্লি, সাম্মি, তিইয়ান। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পালিত প্রধান উৎসবগুলি হল বৈশাখী, গুরুপরব, লোহরি, টিকা, রাখী বন্ধন এবং আরোও অনেক কিছু। উৎসবগুলি বিভিন্ন প্রকার খাবার, মিষ্টান্ন তৈরী এবং পূজোর মাধ্যমে পালিত হয়।
এখানকার সংস্কৃতি বেশ আধুনিক প্রকৃতির এবং আপনি এখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের দেখতে পাবেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু মানুষ চন্ডীগড়ে বসতি স্থাপণ করায়, আপনি এখানকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক সুবিশাল মিশ্রণ দেখতে পাবেন।
এখানকার অধিবাসীরা হিন্দি বা পাঞ্জাবি অথবা দুটিরই মিশ্রণে কথা বলে। এই শহরের একটি সাংস্কৃতিক পরিসর রয়েছে যেখানে তার শিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। এখানকার ঐতিহ্যগত খাদ্য হল খুবই মশালাদার পাঞ্জাবি ঘরানার খাবার। বিভিন্ন নিরামিষ এবং আমিষ উভয় প্রকার খাবারই সু-স্বাদু রূপে তৈরী করা হয়।
এখানকার পোশাক-পরিচ্ছদে, অন্যান্য রাজ্যের লোকেদের সঙ্গে মিল রয়েছে। উৎসব ও মহত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলিতে, এখানকার পুরুষেরা শেরওয়ানী পরতে এবং মহিলারা লেহেঙ্গা চোলি বা সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ী পরতে পছন্দ করে।
চন্ডীগড় উত্তর ভারতে অবস্থিত হওয়ার দরুণ এখানকার লোকপ্রিয় ভাষা হল পাঞ্জাবি। হিন্দি ভাষারও এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে। এখানকার উন্নত পরিকাঠামোর জন্য, এই শহর অন্যান্য রাজ্যের মানুষদেরকে আকৃষ্ট করে। বহুসংস্কৃতির শহর হয়ে ওঠায় এখানে এক বহুভাষী পরিমন্ডল সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু এটি হরিয়াণা- রও রাজধানী, তাই এখানকার অধিকাংশ মানুষ হরিয়াণভী ভাষাতেও কথা বলে। অধিকাংশ মানুষ হিন্দি ও ইংরাজী এই উভয় ভাষাতেই কথোপকথন করে। বাইরের রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের যদি পাঞ্জাবি না জানা থাকে তবে তারা এই দুটি ভাষারই ব্যবহার করে। সরকারি দপ্তরগুলিতে ইংরাজী ভাষার ব্যবহার হয়। এই শহরের আধিকারিক ভাষা হল পাঞ্জাবি। চন্ডীগড়ের যুব সম্প্রদায় হিন্দি ও ইংরাজী ভাষায় মিলিতভাবে কথা বলে।
এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই উন্নত মানের। তথ্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় গঠন পদ্ধতি শিক্ষাকে এক নতুন দিশা প্রদান করেছে। চন্ডীগড়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উচ্চ মানের শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং এখান থেকে অত্যন্ত দক্ষ ও পারদর্শী শিক্ষার্থী তৈরী হয়। এখানকার সরকার প্রতিটি শিশুকে তাদের ঘর থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষা প্রদান করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে আপনি প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় পেতে পারেন। বেশ কিছু প্রাইভেট বিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে স্বীকৃত এবং এগুলি অনুদান ও সহযোগিতাও পায়।
এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা ত্রিস্তরীয় গঠনে গঠিত এবং চন্ডীগড় শিক্ষা বিভাগ এগুলির দেখাশোনা করে। এখানে বেশ কয়েকটি সরকারি মহাবিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি পরিকাঠামো, পরিসর, অডিটোরিয়াম এবং ক্রীড়ার দিক দিয়ে বেশ উন্নত। মহাবিদ্যালয়গুলি, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা অনুমোদিত। এখানে যে কেউ বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা, কলা ও বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়েও শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই মহাবিদ্যালয়গুলি বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদান করে এবং যন্ত্রসঙ্গীত ও পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি বিষয়েও শিক্ষা প্রদান করে।
চন্ডীগড়ের কলেজগুলিতে বৃত্তিমূলক শিক্ষাও বেশ জনপ্রিয়। এই শিক্ষা মূল ধারার শিক্ষার সমতুল্য। এগুলি স্বাস্থ্য, ব্যবসা, প্যারা-মেডিসিন এবং ইঞ্জিনীয়ারিং-বিভাগের মধ্যে আসে।
সুন্দর শিবালিক পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই শহর, পর্যটন স্থল রূপে ভালো খ্যাতি অর্জন করেছে। সু-পরিকল্পনা, স্বচ্ছ পরিবেশ, উন্নত কাঠামো এবং চমৎকার উদ্যান-শহরটিকে উন্নত পর্যটন স্থলে পরিণত করেছে। একটি উন্নত সড়ক সংযোগ ব্যবস্থা সহ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শহরটি অতুলনীয়। অর্থাৎ, বিনা বাধায় কোনওরকম সমস্যা ছাড়াই এখানে ঘোরাঘুরি করতে পারেন। আজকের দিনে, এটি ভারতের এক অন্যতম পর্যটন স্থল হিসাবে গড়ে উঠেছে। এই শহরের জলাধার ও উদ্যানগুলি প্রকৃতি-প্রেমিকদের খুবই পছন্দ হবে।
পর্যটকদের কাছে, এখানকার বেশ কিছু আকর্ষণ কেন্দ্র খুবই জনপ্রিয়। এই ক্ষেত্রটি ‘বাগানের মালা’ রূপেও বর্ণিত হয়। অনেক লোক এখানে ধীরে সুস্থে পদচারণা করতে পছন্দ করে। সেক্টর ১-এ অবস্থিত রক গার্ডেন, বর্জ্য পদার্থ দিয়ে তৈরী সূক্ষ শিল্পকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ। এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের অনুপোযোগী উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য শিল্প রয়েছে। সুখনা লেক মনুষ্য-সৃষ্ট এক দর্শনীয় হ্রদ। এটি অত্যন্ত সু-দৃশ্য অঞ্চলে অবস্থিত এক মহান পিকনিক স্থল। এখানকার নির্মল বাতাবরণ, যা পাখিদের গুঞ্জন শোনার জন্য আদর্শ জায়গা।
চন্ডীগড় সড়ক, রেল এবং বিমান মাধ্যম দ্বারা অন্যান্য রাজ্য ও শহরগুলির সঙ্গে সুসংযুক্ত রয়েছে। এখানকার বেসরকারি বাস পরিষেবাগুলি চন্ডীগড় পরিবহন উদ্যোগ (সি.টি.ইউ)-এর দ্বারা সঞ্চালিত হয় এবং সেক্টর ১৭ ও সেক্টর ৪৩-এ অবস্থিত আন্তঃ রাজ্য বাস টার্মিনাল (আই.এস.বি.টি) দ্বারা পরিচালিত হয়। আন্তঃ রাজ্য বাসগুলি পাশাপাশি রাজ্য যেমন দিল্লী, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের মধ্যে যাতায়াত করে এবং এগুলিও সি.টি.ইউ দ্বারা পরিচালিত হয়। সড়ক মাধ্যম দ্বারা, এটি ২২-নং জাতীয় সড়ক ও ২১-নং জাতীয় সড়ক দ্বারা সু-সংযুক্ত রয়েছে। চন্ডীগড় রেলওয়ে স্টেশন ভারতের অনেক প্রধান শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ভারতীয় রেলপথ সংযোগের মধ্যে, এটি উত্তর রেলপথ অঞ্চলের অধীনে পড়ে। এখানে চন্ডীগড় বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন শহরে যেমন দিল্লী, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর এবং আরোও অন্যান্য জায়গায় উড়ানের জন্য সরাসরি বিমানের ব্যবস্থা রয়েছে। এই শহরের মধ্যে চন্ডীগড় মেট্রো রেলেরও প্রস্তাব করা হয়েছে যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালু হয়ে যাবে।
সর্বশেষ সংযোজন : ২৪- শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
|