অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন

Travel to Arunachal Pradesh in Bengali

অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন
* অরুণাচল প্রদেশ মানচিত্রে - অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ, মন্দির, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, তীর্থস্থান, হোটেল ও অন্যান্য পরিদর্শনযোগ্য স্থানগুলিকে দেখানো হয়েছে।

অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন

অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন বলতে অরুণাচল প্রদেশ অঞ্চল জুড়ে একটি অবিস্মরণীয় সফরকে বোঝায়। অরুণাচল প্রদেশ ‘প্রকৃতির গুপ্তধন’ হিসাবে পরিচিত। অতএব, অরুণাচল প্রদেশে পর্যটন, এক আকর্ষণীয় উপত্যকা, আবেগপ্রবণ পর্বত চূড়া, সুন্দর জেলা ও চকমকে নদী জুড়ে একটি আনন্দদায়ক সফরের জন্য আহ্বান জানায়।

অরুণাচল প্রদেশ ‘ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি’ হিসেবে পরিচিত। সারা বিশ্বের পর্যটকরা এই অঞ্চলের চিত্রানুগ সৌন্দর্য দেখতে অরুণাচল প্রদেশে আসেন। অরুণাচল প্রদেশ হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত যা অরুণাচল প্রদেশের প্রধান চিত্রানুগ বৈশিষ্ট্য এবং অরুণাচল প্রদেশ বহু সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

তাছাড়া, অরুণাচল প্রদেশের পর্যটন আকর্ষণীয় জায়গাগুলি হল নিম্নরূপ –

বৌদ্ধ মন্দির

বৌদ্ধ মন্দির একটি স্তূপ যা বহুলাংশে অরুণাচল প্রদেশের তিব্বতী প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। বৌদ্ধ মন্দিরের অবস্থান এমন যা ইটানগর শহরের একটি ঝকঝকে দৃশ্য প্রদান করে।

জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম

জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়ামের ঝুলিতে রয়েছে শিল্প এবং স্থাপত্যের বিস্ময়কর সংগ্রহ ,বাদ্যযন্ত্র, ধর্মীয় নিবন্ধ, বস্ত্র, অলঙ্কার, অস্ত্র ইত্যাদি। দেশের ঐশ্বর্যশালী অতীতের অন্বেষণে ও পরিদর্শনে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য এই মিউজিয়াম সোমবার ছাড়া সব দিন খোলা থাকে।

ইটা দুর্গ

ইটা ফোর্ট একটি প্রাচীন দুর্গ যা পেপাম পারে জেলায় অবস্থিত। এই দুর্গের তিন পক্ষের তিনটি দরজা অহম শাসকদের দ্বারা নির্মিত করা হয়েছে বলে মনে করা হয় এবং এটা অনুমান করা হয় যে এই দুর্গ নির্মাণ করতে প্রায় ৮০ লক্ষ ইট এবং ৪৫ ঘনমিটার পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল।

উপরোক্ত স্থানগুলি ছাড়াও অন্যান্য কিছু স্থান অরুণাচল প্রদেশ পর্যটনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে –

  • মৌলিং জাতীয় উদ্যান
  • ভীষ্মকনগর দুর্গ
  • বৌদ্ধ গুম্ফা
  • নামদফা জাতীয় উদ্যান
  • মালিনীথান
  • টিপি অর্কেডারিয়াম
  • পরশুরাম কুন্ড ইত্যাদি।

তাছাড়া, অরুণাচল প্রদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন অংশে সহজ অভিগম্যতার কারণে, অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন, ভবিষ্যতে উন্নতির পথে এগোচ্ছে। পরিবহনের বিভিন্ন মাধ্যম, যথা বাস, গাড়ি, ট্যাক্সি, রেলপথ, বিমান ইত্যাদি অরুণাচল প্রদেশের পর্যটনকে আরও উন্নত করে তুলছে।

অরুণাচল প্রদেশের পরিদর্শনীয় স্থান

অরুণাচল প্রদেশে প্রচুর পর্যটন আকর্ষণ আছে। সুউচ্চ শান্ত পর্বতের পশ্চাতে সবুজ বন, রঙিন উপজাতিদের কৌতুহলী সামাজিক আচার এই জমিকে এক বর্ণনামূলক রূপ দিয়েছে।

কলুষমুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উপজাতিদের আকর্ষণীয় জীবন শৈলী এবং পুরাণ অরুণাচল প্রদেশে পর্যটক আকর্ষণ গঠন করতে একটি বৃহৎ ভূমিকা পালন করেছে।

অরুণাচল প্রদেশের পরিদর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে –

  • ইটা দুর্গ
  • বৌদ্ধ গুম্ফা
  • ইটানগর গাইড
  • মনোরম কাজু গ্রাম
  • অরেঞ্জ শহর
  • তাওয়াং গুম্ফা মঠ।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল –

ইটানগর

এটি এই রাজ্যের রাজধানী ও অরুণাচল প্রদেশের বহু পর্যটক আকর্ষণ এরই অন্তর্ভুক্ত। ইট দিয়ে নির্মিত এই ঐতিহাসিক দুর্গের নামকরণ ১৪-১৫ শতাব্দী আগে হয়েছে। রাজ ভবন, রাজ্যপালের সরকারি বাসভবন, জওহরলাল নেহেরু রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম, কিংবদন্তি গঙ্গা লেক (গ্যাকার সিন্নি) হল এখানকার পরিদর্শনমূলক স্থান।

বোমডিলা (৮৫০০ ফুট)

এটি মোনপা, শেরদুকপেন, আকা, মিজি এবং বিগান (খাওয়াস) –এর মত বিভিন্ন উপজাতির আবাস। রঙিন গোম্ফার উজ্জ্বল উপস্হিতির মধ্যে এটি একটি আদর্শ হিমালয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

তাওয়াং

আঁকাবাঁকা পার্বত্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রানুগ উপত্যকা অরুণাচল প্রদেশের পর্যটক আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম। এইখানের ৪০০ বছর বয়সী প্রাচীন তাওয়াং মঠ, ষষ্ঠ দালাই লামার জন্মস্থান। এই মঠে পবিত্র বৌদ্ধ লিপির স্বর্ণ অক্ষরবিশিষ্ট প্রতিলিপি রয়েছে।

পরশুরাম কুন্ড

প্রাচীন ভারতীয় পুরাণ বিখ্যাত প্রাচীন ভারতের এক মহান ঋষি, পরশুরাম, লোহিত নদীর ধারে তাঁর মাতৃহত্যার পাপ ধুয়ে ছিলেন, যা পরে পরশুরাম কুন্ড হিসাবে পরিচিত হয়। জানুয়ারী মাসে আয়োজিত পরশুরাম মেলায় দূরদূরান্তের মানুষ অংশগ্রহণ করে।

ভীষ্মকনগর

পুরাণ মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার অনেক স্ত্রীদের মধ্যে একজন, রুক্মিণীকে তার পিতা ভীষ্মক যিনি এই রাজ্য শাসন করতেন – তাঁর কাছ থেকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। খনন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জানা যায় যে এখানে বহু আগে আর্যদের বসবাস ছিল।

মালিনীথান

মালিনীথান ৭ থেকে ৮ শতাব্দী পুরানো এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। খনন বিশেষজ্ঞদের এক দল ইতিমধ্যে একটি মন্দিরের সুসজ্জিত বুনিয়াদ, দেব-দেবীর প্রতীক, পশু এবং ফুলের নকশা, খোদাই করা স্তম্ভ এবং অজ্ঞাত অতীতের স্মারক প্যানেলের উদঘাটন করেছেন।

আকাশিগঙ্গা

এই স্থানটিরও পৌরাণিক গুরুত্ব আছে। উন্মত্তবৎ ভগবান শিব যখন তাঁর স্ত্রী পার্বতীর মৃতদেহ বহন করছিলেন, তখন প্রভু বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে তার শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেন। তার মধ্যে একটি টুকরো এই এলাকায় পরে এবং তারপর থেকে এটি একটি স্বর্গীয় স্থান বলে বিবেচিত হয়। এই স্থান থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর এক অত্যন্ত চমৎকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

অরুণাচল প্রদেশের বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য

সাতটিরও অধিক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, চারটি জাতীয় উদ্যান অরুণাচল প্রদেশ পর্যটক আকর্ষণে আরও গুরুত্ব যোগ করে, যেমন –

  • পাখুই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসা
  • ইটানগর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, নাহারলাগুন
  • ডঃ ডি ইরিং মেমোরিয়াল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পাসিঘাট
  • মিহাও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রোইং
  • কামলাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মিয়াও
  • ঈগল নেস্ট বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সেইজোসা
  • কেন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, আলোং, ইত্যাদি।

বিস্তারিত তথ্য….

অরুণাচল প্রদেশের জাতীয় উদ্যান

  • নামদফা জাতীয় উদ্যান (টাইগার প্রকল্প), মিয়াও
  • মৌলিং জাতীয় উদ্যান , জেঙ্গিং
  • সেসা অর্কিড অভয়ারণ্য, টিপি
  • দিহাং-ডিবাং জীবমণ্ডল সংরক্ষণ, ডিবাং উপত্যকা ইত্যাদি।

এই অঞ্চলে আপনি কয়েকটি বিভিন্ন রকমের বন্য প্রাণী দেখতে পাবেন, যেমন – হাতি, বাঘ, গৌড়, খেঁক হরিণ, কালো ভালুক ও লাল পান্ডা।
পাঁচটি প্রধান নদী , যথা – কামেং, সুবনসিড়ি, সিয়াং, লোহিত এবং টিরাপ ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে এছাড়াও বহু অগণিত অন্যান্য ক্ষুদ্র নদীর শাখাবিন্যাস এই বিস্ময়কর অঞ্চলে দেখা যায়। এই সব উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যের পাশাপাশি, এরা র‍্যাফটিং এবং মৎস শিকারের সুযোগও প্রদান করে।

অরুণাচল প্রদেশের হোটেল

প্রাথমিকভাবে অক্ষত অরুণাচল প্রদেশ বর্তমানে ধীরে ধীরে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নতি লাভ করছে। ক্রমবর্ধমান পর্যটক অন্তঃপ্রবাহের সঙ্গে উভয় বৈদেশিক এবং আভ্যন্তরীণ বহু হোটেল এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছে। অরুণাচল প্রদেশে বহু সংখ্যক বিলাসবহুল, ডিলাক্স এবং বাজেট হোটেল আছে যা তাদের আতিথেয়তা এবং পরিষেবার জন্য সুপরিচিত।

অরুণাচল প্রদেশ ভারতের এক উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য। অরুণাচল প্রদেশের আক্ষরিক অর্থ হল ‘ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি’ এবং ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’। এই রাজ্য তার কুমারী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এই রাজ্যের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল ইটানগর। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত অরুণাচল প্রদেশ ভারত এবং চীন মধ্যে একটি বিবাদের বিষয়। ভারত কর্তৃক শাসিত, এই রাজ্যের এলাকা প্রতিবেশী দেশ বলে দাবি রাখে। বিস্তারিত তথ্য….

* সর্বশেষ সংযোজন : ৮ - ই জুন, ২০১৫