অরুণাচল প্রদেশ মানচিত্র

Arunachal Pradesh Map in Bengali

অরুণাচল প্রদেশ মানচিত্র
* জেলা, রেলপথ, নদী এবং প্রধান সড়ক সংযোগ সহ অরুণাচল প্রদেশের মানচিত্র৷

অরুণাচল প্রদেশের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.arunachalpradesh.gov.in
স্থাপনের তারিখ 20 ফেব্রুয়ারী, 1987
আয়তন 83,743 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 17/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা (2011) 1,383,727
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) 713,912
মহিলা জনসংখ্যা (2011) 669,815
জেলার সংখ্যা 18
রাজধানী ইটানগর
নদীসমূহ সিয়াং এবং তার উপনদীসমূহঃ ব্রক্ষপুত্র নদী বরাবর প্রবাহিত লোহিত, কামেং, ডিকরোং, তিরাপ, দিবাং, সুবনশিরি, দিহিং, কামলাং।
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান নামদফা জাতীয় উদ্যান, মৌলিঙ্গ জাতীয় উদ্যান
ভাষা মোনপা, মিজি, অকা, শেরদুকপেন, আপাতানি, অদি, পার্বত্য মিরি।
প্রতিবেশী রাজ্য অসম( আসাম) এবং নাগাল্যান্ড
রাষ্ট্রীয় পশু মিথুন
রাষ্ট্রীয় পাখি গ্রেট হর্নবিল
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ হোলোঙ
রাষ্ট্রীয় ফুল রেটুসা
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 55789
সাক্ষরতার হার (2011) 66.95%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 920
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 60
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 2

অরুণাচল প্রদেশ সম্পর্কে

অরুণাচল প্রদেশ- দক্ষিণে আসাম, পশ্চিমে ভূটান, উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে চীন এবং পূর্বে মায়ানমার (পূর্বে বার্মা নামে পরিচিত) দ্বারা বেষ্টিত, উপমহাদেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত একটি জনবিরল পাহাড়ী এলাকা। অরুণাচল প্রদেশ (সংস্কৃত ভাষায় “সূর্য উদয়ের দেশ”/”ল্যান্ড অফ দ্য রাইজিং সান”) ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

অরুণাচল প্রদেশের অধিকাংশ এলাকা পর্বতময়। এর উঁচুনিচু, এলোমেলো ভাবে বিস্তৃত ঢালযুক্ত ভূখন্ড, গভীর উপত্যকাকে আলাদা করে রেখেছে এবং বিশাল হিমালয়ের উচ্চ শৃঙ্গগুলি মাথা তুলেছে।

এই রাজ্যের প্রধান নদী হল ব্রক্ষপু্ত্র যা অরুণাচল প্রদেশে সিয়াং নামে পরিচিত এবং এর উপনদীগুলি হল তিরাপ, লোহিত(জাইউ কিউ), সুবণশিরি এবং ভারেলি। এর পাদদেশে ক্রান্তিয় জলবায়ু দেখা যায়। পর্বতের উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। এখানকার গড় বৃষ্টিপাত বছরে ২০০০ থেকে ৪০০০ (৮০-১৬০) এর মধ্যে থাকে।

অরুণাচল প্রদেশে একক কক্ষের বিধানসভা রয়েছে যার মধ্যে ৬০টি আসন রয়েছে। এই রাজ্য থেকে ভারতীয় জাতীয় সংসদে তিনজন সদস্য পাঠানো হয়। একজন রাজ্য সভায় (উচ্চ কক্ষে)এবং দুইজন লোকসভায়(নিম্ন কক্ষে)। স্থানীয় সরকার ১২টি প্রশাসনিক জেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে।

ইতিহাস

পুরাণে (সংস্কৃত ভাষায় লেখা বিশ্বের প্রারম্ভ সম্বন্ধে) এই অঞ্চলের উল্লেখ আছে যা বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশ, তবে এই রাজ্যের প্রথম দিকের ইতিহাস সম্পর্কে একটু কম জানা গেছে। ষষ্ঠদশ শতাব্দীর সময়কালে অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশ আসামের অহম রাজাদের দ্বারা অধিগৃহীত হয়।

১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে আসাম ব্রিটিশ ভারতের অংশ হয়ে ওঠে এবং অরুণাচল প্রদেশকেও ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে আনার প্রচেষ্টা করা হয় কিন্তু ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত এখানে ব্রিটিশ শাসন চালু করা যায়নি। ১৯১২ সালে এই অঞ্চল আসামের মধ্যে, যা উত্তর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল (এন ই এফ টি) নামে একটি প্রশাসনিক একক হিসাবে গড়ে ওঠে। ১৯৫৪ সালে এন ই এফ টি উত্তর পূর্ব সীমান্ত সংস্থা হয়ে ওঠে। যেহেতু ১৯১৩ সালে এর উত্তর সীমানা নিয়ে তিব্বতের সঙ্গে বির্তকের সৃষ্টি হয় তখন চীন ব্রিটিশ হিমালয়ের শৃঙ্গ বরাবর তাদের সীমান্ত অনুসরণ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রস্তাবিত সীমানা ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত এবং তখন থেকেই এটি কার্যকরী সীমানা হিসাবে কাজ করছে। ১৯৪৭ সালে, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর চীন- পূর্ব এবং পশ্চিম কামেং, উচ্চ এবং নিম্ন সুবণশিরি, পূর্ব এবং পশ্চিম সিয়াং এবং লোহিত- এর আচ্ছাদিত পুরো এলাকা দাবি করেছে, তাদের মতে চীন দ্বারা ম্যাকমোহন লাইন কখনও গৃহীত হয়নি, এটি ছিল ব্রিটিশ আগ্রাসনের ফল।

অরুণাচল প্রদেশের ভৌগোলিক অবস্থান

অরুণাচল প্রদেশ তার জাতীয় সীমানা, দক্ষিণে আসাম এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সীমানা, পশ্চিমে ভূটান, উত্তরে চীন, পূর্বে বার্মার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। এই রাজ্যের উত্তর অংশ হিমালয় পর্বতশ্রেণী দ্বারা আচ্ছাদিত। এই পর্বতশ্রেণী প্রকৃতপক্ষে পূর্বদিকে অরুণাচল প্রদেশকে তিব্বত থেকে আলাদা করে রেখেছে। হিমালয় পর্বতশ্রেণী ছাড়া, এর বেশিরভাগ অংশই পাটকাই পর্বত এবং হিমালয়ের পাদদেশ দ্বারা আচ্ছাদিত। এই রাজ্যের মোট এলাকা হল ৮৩৭৪৩ বর্গকিলোমিটার।

অরুণাচল প্রদেশের জলবায়ু

এই রাজ্যের আবহাওয়া উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে পরির্বতন হয়। এই রাজ্যের মধ্য হিমালয় পর্বত সীমায় যখন নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু থাকে তখন উচ্চ হিমালয় পর্বত সীমা তুন্দ্রা জলবায়ু উপভোগ করে। হিমালয়ের উপকূল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ এলাকা উপক্রান্তীয় এবং আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং হালকা শীতকাল উপভোগ করে।

সরকার এবং রাষ্ট্রনীতি

অরুণাচল প্রদেশ সরকার একটি একক কক্ষবিশিষ্ট বিধানসভা আসনের সঙ্গে জড়িত। ৬০জন সদস্যের পরিষদীয় আসন নিয়ে আইন পরিষদ গঠিত। তারাই অরুণাচল প্রদেশ সরকার এবং রাজনীতির কেন্দ্র। রাজ্যপাল নির্ভয় শর্মা হলেন রাজ্যের পরিষদীয় প্রধান। অরুণাচল প্রদেশে ১১জন মন্ত্রিসভার কার্যকরী সদস্য নিয়ে গঠিত একটি নির্বাহী কার্য মন্ত্রালয় রয়েছে। বিভিন্ন সচিবালয় এবং অধিদপ্তরের শাখা বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কাজকর্ম সুকৌশলে চালনা করে। তারা সকলেই অরুণাচল প্রদেশের পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত বিষয়ক বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সাথে যুক্ত রয়েছে।

অর্থনীতি এবং পরিকাঠামো

কৃষিই এই রাজ্যের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। ডাল, ধান, গম, আখ, ভুট্টা, তৈলবীজ এবং আদা এখানকার উৎপাদিত প্রধান ফসল। অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রধান অংশ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত এবং বনজ দ্রব্য এখানকার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত। অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের মধ্যে কিছু ফল সংরক্ষণ বিভাগ রয়েছে, এছাড়াও চাল কল, ফলের বাগান, তাঁত হস্তশিল্প এবং উদ্যান সংরক্ষনের একটি বিভাগ এখানে রয়েছে। রাজনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে অরুণাচল প্রদেশের অর্থনীতি পর্যটনের দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অরণ্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ, জলজ শক্তির সম্পদে অরুণাচল প্রদেশ সমৃদ্ধ। এখানকার প্রধান ফসল হল ভুট্টা, গম, ডাল(ভোজ্য মটর ও বিনস বীজ থেকে সংগৃহীত)। এছাড়াও আলু, আখ, ফল এবং তৈলবীজ ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ।

অরুণাচল প্রদেশ প্রশাসন

ইটানগর হল এই রাজ্য সরকারের সমাবেশীয় আসন এবং রাজ্যের রাজধানী। রাজ্যটিতে ১৬টি জেলা রয়েছে এবং প্রতিটি বিভাগ জেলা আধিকারিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই রাজ্যের রাজ্যপাল হলেন নির্ভয় শর্মা এবং মুখ্যমন্ত্রী হলেন নবম টুকি।

সমাজ এবং সংস্কৃতি

অরুণাচল প্রদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই মুল এশিয়াভিত্তিক এবং তিব্বত এবং মায়ানমার-এর মানুষের সাথে এদের অনেক শারিরীক মিল রয়েছে। এখানকার প্রচুর জাতি ও উপজাতি ভিত্তিক একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিমন্ডল রয়েছে। পশ্চিম অরুণাচল প্রদেশের প্রধান উপজাতিগুলি হল নিশি (নিশি বা দাফলা), সালাং, শেরদাকপেণ, আকা, মোনপা, আপা তানি এবং পার্বত্য মিরি। আদি, বৃহত্তম উপজাতি সম্প্রদায় এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল দখল করে আছে। মিশমি উপজাতি উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় দখল করে আছে এবং ওয়ানচো, নোকটে এবং টাংসা তিরাপের দক্ষিণ পূর্ব জেলায় অধিষ্ঠিত আছে। এই উপজাতীয় সম্প্রদায়গুলি প্রায় ৫০টি স্বতন্ত্র ভাষা ও উপভাষায় কথা বলে ও বেশিরভাগই চীন-তিব্বতী পরিবার ভাষীর তিব্বতী-বার্মা শাখার সাথে একাত্মতা প্রদান করে। এগুলি এমনই অবোধ্য যে আন্তর্জাতিক মিশ্র ভাষা হিসাবে অসমিয়া, হিন্দি এবং ইংরাজী ভাষাকে ব্যবহার করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, উপজাতিগুলি কখনোই ভিন্ন প্রজাতি বা ভিন্ন বংশের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হয় না এবং তারা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে চলে।

অরুণাচল প্রদেশের পর্যটন

প্রাকৃতিক বিস্ময হিসাবে, অনেক জনপ্রিয় পর্যটন স্থল এই রাজ্যে রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের বিখ্যাত জায়গাগুলি হল ইটানগর, তাওয়াং, বোমডিলা, ভীষ্মকানগর এবং আকাশিগঙ্গা। এই রাজ্যে ৪টি জাতীয় উদ্যান এবং ৭টি বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্র রয়েছে যা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র। অরুণাচল প্রদেশের চাঁদনী পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের প্রাচুর্য পর্যটকদের বহু বছর ধরে আকর্ষিত করে আসছে। পর্যটকদের কাছে এই রাজ্যের আকর্ষণের জায়গাগুলি হল বোমডিলা, তাওয়াং এবং তার নিকটবর্তী ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। ইটানগর তার ঐতিহাসিক ইটা দূর্গের খনন ধ্বংসাবশেষ এবং আকর্ষনীয় গায়কের সিনভি বা গঙ্গা লেকের জন্য বিখ্যাত। মলিনীথান এবং ভীষ্মকানগর হল এই রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং পরশুরাম কুন্ড এখানকার একটি বিশিষ্ট তীর্থস্থান। চাংলাং জেলার নামদফা বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্র এখানেই অবস্থিত যা বিরল হুলুক-এর গৃহ হিসাবে পরিচিত৷

সর্বশেষ সংযোজন : ০৫ই জানুয়ারী , ২০১৫