তেলেঙ্গানার উপর তথ্যাবলী |
|
---|---|
আধিকারিক ওয়েবসাইট | www.telangana.gov.in |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | তেলেঙ্গানা |
স্থাপনের তারিখ | 2 জুন, 2014 |
বৃহত্তম শহর | হায়দরাবাদ |
স্থানাঙ্ক | 18° উওর 79° পূর্ব |
মুখ্যমন্ত্রী | কে. চন্দ্রশেখর রাও |
রাজ্যপাল | ই.এস.এল. নরসিংহ |
উচ্চ আদালত | হায়দরাবাদের হাই কোর্ট অফ জুড়িকেচ্যার |
আয়তন | 114,840 বর্গ কিলোমিটার |
ঘনত্ব | 310/ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা(2011) | 35,193,978 |
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) | 17,704,078 |
মহিলা জনসংখ্যা(2011) | 17,489,900 |
জেলার সংখ্যা | 10 |
রাজধানী | হায়দরাবাদ |
নদী | গোদাবরী |
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান | শিবরাম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মঞ্জিরা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য |
ভাষা | তেলেগু, উর্দূ |
প্রতিবেশী রাজ্য | অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক |
সাক্ষরতার হার (2011) | 66.50% |
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা | 1010 |
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র | 119 |
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র | 17 |
২০১৪ সালের ২-রা জুন, তেলেঙ্গানা ভারতের ২৯-তম রাজ্য হিসাবে গঠিত হয়েছে। পূর্বে এটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের একটি অংশ ছিল। ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে এটি হায়দরাবাদ রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং এটি ওয়ারাঙ্গল ও মেডক এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সেই সময় এই অঞ্চল নিজামদের দ্বারা পরিচালিত হত। অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র দ্বন্দের কারণে সাম্প্রতিক কিছু সময়ে এই অঞ্চল বেশ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে একটি নতুন রাজ্য রূপে গড়ে তোলার স্বপক্ষে ছিল কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ এর অখণ্ডতার ভিত্তিতে তার বিরোধিতা করে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা হল ৩,৫২,৮৬,৭৫৭ জন যা অন্ধ্রপ্রদেশের জনসংখ্যার ৪১.৬ শতাংশ।
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তেলেঙ্গানাকে আলাদা করার এই আন্দোলন বহুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। এই বিষয়ে বেশ কিছু আন্দোলন হয়েছিল তবে, ১৯৬৯, ১৯৭২ এবং ২০০৯ সালে হওয়া আন্দোলনগুলি খুবই গরুত্বপূর্ণ ছিল, সময়ের সাথে সাথে এই আন্দোলনগুলি চরম আকার ধারন করে।
ভারতীয় সরকারের নিরপেক্ষ ঘোষণার মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে তেলেঙ্গানা পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে, রায়্যালসীমা এবং উপকূলবর্তী অন্ধ্র এলাকার বিধায়ক এবং সংসদেরা তাদের নিজস্ব পদ থেকে ইস্তফা দেন।
এই ঘোষণার পর, এই অঞ্চলে কিছু সহিংস প্রতিবাদ দেখানো হয়। এই সমস্ত কিছুর ফলস্বরূপ, ভারত সরকার ২০০৯ সালের ২৩-শে ডিসেম্বর পৃথক রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়াটিকে স্থিরাবস্থায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যদিও, এর পরেও হায়দরাবাদ ও এই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তেলেঙ্গানাকে নিয়ে আন্দোলন নিরন্তর চলতেই থাকে।
কংগ্রেস, কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে আত্মসমর্থন করায় ২০১৩ সালের ৩০-শে জুলাই ভারত সরকার তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্র্রক্রিয়াকে পুনরায় চালু করে। ভারত সরকার আগামী এক দশকের জন্য হায়দরাবাদকে, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার সংযুক্ত যৌথ রাজধানী হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৩ সালের ৩-রা অক্টোবর কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অমুমোদনের পর এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
একটি মন্ত্রীমন্ডল (জি.ও.এম) দ্বারা তেলেঙ্গানা সম্পর্কিত খসড়াটিকে, ভারত সরকার ২০১৩ সালের ৫-ই ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় এবং তারপর সেটিকে সংসদের দুটি ভবনে নির্বাচনের জন্য উপস্থাপিত করা হয়। ২০১৪ সালের ১৮-ই ফেব্রুয়ারী, ১৫-তম লোকসভা নির্বাচন, নতুন রাজ্য গঠনের স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০১৪ সালের ২০-শে ফেব্রুয়ারী রাজ্য সভাও এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রণব মুখার্জী, ২০১৪ সালের ১-লা মার্চ এই সিদ্ধান্তে তাঁর সম্মতি প্রদান করেন এবং এর জন্য ঐদিনই গ্যাজেট নোটিফিকেশন জারি করেন। ২০১৪ সালের ৪-ই মার্চ, ভারত সরকার, তেলেঙ্গানা নতুন রাজ্য গঠনের ঘোষণা করেন এবং ২০১৪ সালের ২-রা জুন, নতুন রাজ্য রূপে তেলেঙ্গানার গঠন হয়।
সীমানাঃ তেলেঙ্গানা রাজ্যটি তার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে মহারাষ্ট্র দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে। কর্ণাটক এই রাজ্যটিকে পশ্চিম দিক থেকে ঘিরে রেখেছে এবং এর উত্তর-পূর্ব দিকে ছত্তীসগঢ় রয়েছে। তেলেঙ্গানার পূর্বদিকে ওড়িশা অবস্থান করছে।
প্রসারণঃ সব মিলিয়ে, এই অঞ্চল প্রায় ১,১৪,৮৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রসারিত রয়েছে যা প্রায় ৪৪,৩৪০ বর্গ মাইলের বরাবর।
নদীসমূহঃ এই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি হল মুসি, কৃষ্ণা, মঞ্জিরা এবং গোদাবরী।
শহরসমূহঃ তেলেঙ্গানার বৃহত্তম শহরগুলি হল হায়দরাবাদ, নিজামাবাদ, ওয়ারাঙ্গল এবং করিমনগর।
যখন তেলেঙ্গানা গঠনের ঘোষণা করা হয়, তখন অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। যদিও, ২০১৪ সালের ১৩-ই ফেব্রুয়ারী একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যায় যখন অধ্যক্ষ মীরা কুমার ১২-টার সময় এই বিল পেশ করার অনুমতি দেন। বিজয়ওয়াড়ার তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ লাগড়াপতি রাজাগোপাল সেইসময় তীব্র স্লোগানের মধ্যে সংসদে পিপার স্প্রে ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে, তিনি বলেন যে সংসদের অন্যান্যদের আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আত্মরক্ষার তাগিদে তিনি এই পদক্ষেপ ওঠান। তাঁর এই কর্মে, লোকসভার কাজে অনেক বিঘ্ন ঘটে এবং সংসদের নিম্নকক্ষের বেশ কিছু সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
তেলেঙ্গানায় ১০-টি জেলা রয়েছে এবং ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী রাজ্যের জনসংখ্যা নিম্নলিখিত তালিকা রূপে দেখানো হয়েছে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী তেলেঙ্গানা রাজ্যের জনসংখ্যা হল ৩,৫১,৯৩,৯৭৮ জন। পুরুষ ও মহিলা জনসংখ্যা হল যথাক্রমে ১,৭৭,০৪,০৭৮ জন এবং ২,৪৬,৪৮,৭৩১ জন। রাজ্যের মোট আয়তন হল প্রায় ১,৩৩,১০৩ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যার ঘনত্বে এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৯৬ জন মানুষ বাস করে। এছাড়াও, অন্ধ্রপ্রদেশের জেলাগুলির মোট স্বাক্ষরতার হল প্রায় ৬৬ শতাংশ।
কৃষি, তেলেঙ্গানা রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। স্থানীয়ভাবে এখানে তুলা, আম এবং তামাকের ফলন হয়। কৃষ্ণা ও গোদাবরী, এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর অবস্থানের দরুণ রাজ্যে সেচের সুবিধা রয়েছে। ২০১২-১৩ সালের আর্থিক বছরে তেলেঙ্গানা রাজ্যের স্থূল ঘরোয়া উৎপাদন (জি.এস.ডি.পি) ছিল ১,৯৬,১৮২ কোটি টাকা। রাজ্যের নাগার্জুন সাগর বাঁধ এবং গোদাবরী নদী অববাহিকা সেচ প্রকল্পটি হল বহু-রাজ্যিক সেচ প্রকল্প। তথ্যপ্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তির দিক দিয়ে তেলেঙ্গানা, ভারতের শীর্ষস্থানীয় আই.টি উন্নয়নের রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। সিঙ্গেরনি কোলিয়ারীতে বিশাল পরিমাণ কয়লার ভান্ডার থাকার দরুণ তেলেঙ্গানা একটি খনিজ সমৃদ্ধ রাজ্য হিসাবেও গণ্য হয়। ২০১২-১৩ সালের আর্থিক বছরে, কৃষি ও কৃষিজাতীয় ক্ষেত্র থেকে ২৭,৪৫০ কোটি টাকা এবং শিল্প ক্ষেত্র থেকে ৫৪,৬৮৭ কোটি টাকা, রাজ্যের স্থূল ঘরোয়া উৎপাদন (জি.এস.ডি.পি) হয়েছে।
তেলেঙ্গানা রাজ্যের বাস পরিষেবা অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা (এ.পি.এস.আর.টি.সি) দ্বারা সঞ্চালিত হয় এবং সারা রাজ্য জুড়ে হাজার হাজার বাস চলাচল করে। এই বাসগুলি গ্রাম সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে চলাচল করে এবং সড়কের বিশাল সংযোগ ব্যবস্থার দরুণ রাজ্যের বিভিন্ন অংশের সাথে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব হয়েছে। রাজ্যটি দক্ষিণ-মধ্য রেলের অন্তর্ভূক্ত। দক্ষিণ-মধ্য রেলের দুটি প্রধান বিভাগ সেকেন্দ্রাবাদ ও হায়দরাবাদ, এই রাজ্যের মধ্যেই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। রাজ্যের সবচেয়ে বৃহত্তম বিমানবন্দর হল রাজীব গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এটি দেশের সর্ব্বোচ্চ ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসাবেও পরিচিত। সরকার, কোঠগুদাম ও করিমনগরে নতুন বিমানবন্দর তৈরী করার পরিকল্পনা করছে এবং রামাগুন্ডাম বিমানবন্দর, নিজামাবাদ বিমানবন্দর ও ওয়ারাঙ্গল বিমানবন্দরকে উন্নত করার জন্য কাজ করছে।
রাজ্যের অধিবাসীদের অধিকাংশই তেলেগু ভাষায় কথা বলে। রাজ্যের কিছু কিছু অংশে উর্দূ ভাষারও ভালো প্রচলন রয়েছে। রাজ্যের সংস্কৃতিতে ফরাসী রীতিনীতির এক মিশ্র প্রভাব রয়েছে, যা নিজাম ও মোঘল আমল থেকে এসেছে। রাজ্যে বিভিন্ন হিন্দু উৎসব যেমন দীপাবলি, শ্রী রামনবমী, গণেশ চতুর্থী, মহা শিবরাত্রি এবং মুসলিম উৎসব যেমন বকরি-ঈদ ও ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয়। বাতৌকাম্মা ও লস্কর বোনালু হল তেলেঙ্গানা রাজ্যের উৎসব।
তেলেঙ্গানার আধিকারিক ভাষা হল তেলেগু, যদিও কিছু মানুষ দাবি করেন যে তেলেঙ্গানায় প্রচলিত তেলেগু, অন্ধ্রপ্রদেশে প্রচলিত সাধরণ তেলেগু ভাষার চেয়ে আলাদা। তেলেগু ভাষার মধ্যে সংস্কৃত, উর্দূ ও ইংরাজী শব্দের মিশ্রণ রয়েছে। ১৯৪৮ সালের আগে উর্দূ হায়দরাবাদের আধিকারিক ভাষা ছিল, কিন্তু হায়দরাবাদ ভারতের প্রজাতন্ত্রে যুক্ত হওয়ার পর, এটি সরকারি ভাষা হিসাবে পরিচিতি পায়। রাজ্যের বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে তেলেগু ভাষার ব্যবহার হয়।
দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির ন্যায় তেলেঙ্গানাও সংসদীয় প্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই প্রথা তিনটি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত রয়েছে। প্রধান অধ্যক্ষ স্বরূপ মুখ্যমন্ত্রীসহ, মন্ত্রী পরিষদের কাছে রাজ্যের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে। রাজ্যের বিধানসভা সমাবেশে ১১৯ জন সদস্য এবং বিধানসভা পরিষদে ৪০ জন সদস্য রয়েছেন। নিম্ন আদালত ও হায়দরাবাদ উচ্চ আদালত, তেলেঙ্গানা বিচার ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে। রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হল তেলেগু দেশম পার্টি (টি.ডি.পি), তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টি.আর.এস) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আই.এন.সি)। ২০১৪ অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন সংসদে পাশ হওয়ার পর, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে খন্ড রাজ্য হিসাবে তেলেঙ্গানার গঠন হয় যার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকের দশটি জেলা তেলেঙ্গানা রাজ্যের অধীনে চলে যায়। আধিকারিক ভাবে ২০১৪ সালের ২-রা জুন তেলেঙ্গানা রাজ্যের গঠন হয়।
বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মধ্য শিক্ষার বিদ্যালয় ছাড়াও এই রাজ্যে অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলি কেন্দ্রীয় মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সি.বি.এস.ই বা আই.সি.এস.ই বা রাজ্য পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। এখানে বেশ কিছু মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলিতে বিজ্ঞান, কলা, মানবিকতা, আইন, ডাক্তারি ইত্যাদি বিষয়ে পেশাগত শিক্ষা প্রদান করা হয়। রাজ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল দ্য ইউনিভ্যারসিটি অফ হায়দরাবাদ, হায়দরাবাদে অবস্থিত ইন্ট্যারন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফোরম্যাশন টেকনোলোজি (আই.আই.আই.টি) এবং ওয়ারাঙ্গল-এ অবস্থিত ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি (এন.আই.টি)। রাজ্যের কয়েকটি বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হল দ্য ইলেকট্রোনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং হায়দরাবাদে অবস্থিত টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ।
তেলেঙ্গানা এবং এই রাজ্যে প্রচলিত ভাষায় এই দুটি নামই ত্রিলিঙ্গ বা ত্রিলিঙ্গ দেশ নামক শব্দটি থেকে এসেছে, এর অর্থ হল তিন লিঙ্গ বিশিষ্ট দেশ। হিন্দু পৌরাণিকদের মতে, ভগবান শিব, লিঙ্গ রূপে তিনটি পর্বতে নেমে এসেছিলেন, সেগুলি ছিল কালেশ্বরম, দ্রক্ষরাম এবং শ্রীসইলম। এটি মনে করা হয় যে, কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর মাঝে কোনও এক জায়গায় অবস্থিত এই পর্বতগুলি সেই অঞ্চলের সীমানা রূপে কাজ করে। এই শব্দটি তেলেগু ভাষী অঞ্চলটিকে, মারাঠীদের দ্বারা প্রভাবিত এলাকা থেকে আলাদা করতে এবং এটিকে হায়দরাবাদ রাজ্যের অংশ হিসাবে মনোনীত করতেও ব্যবহৃত হয়।
তেলেঙ্গানা সমর্থকেরা নতুন রাজ্য গঠনের সমর্থনে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন জল সম্পদের বিতরণ, কর্মসংস্থান, বাজেটের বরাদ্দ ইত্যাদি থেকে গোলযোগ ও বঞ্চনার স্বীকার হওয়ার উদাহরণ দেয়। এই অঞ্চল অন্ধ্রপ্রদেশের রাজস্বে প্রায় ৬২ শতাংশ যোগদান দিত। এই তথ্যও জানা গেছে যে, এই অঞ্চল কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর প্রায় ৬৯ শতাংশ অববাহিকা অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও, এই ক্ষেত্র বিভিন্ন সেচ প্রকল্পের মাত্র ১৯ শতাংশ লাভের অংশ পেত। এছাড়াও একটি অভিযোগও করা হয়েছিল যে, তেলেঙ্গানার উন্নতির বিকাশের জন্য বরাদ্দ মূলধন, স্থানীয় রাজ্য সরকার তেলেঙ্গানার বিকাশে বহুদিন যাবৎ খরচ করেনি।
অধ্যাপক জয়শঙ্কর-এর অনুমান অনুযায়ী, এই অঞ্চল থেকে মাত্র ২০ শতাংশ কর্মচারিকে সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়। সচিবালয়ের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে এই বিষয়ে পরিসংখ্যান মাত্র ১০ শতাংশ এবং তেলেঙ্গানার মাত্র ৫ শতাংশ কর্মকর্তাই বিভিন্ন বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি এই বিষয়টিকেও নির্দেশ করেছেন যে রাজ্যের গত ৫০ বছরের অস্তিত্বে, তেলেঙ্গানা থেকে মুখ্যমন্ত্রীরা কেবলমাত্র সাড়ে ছয় বছরের জন্য পরিচালনা করেছেন।
তেলেঙ্গানা প্রবক্তারা এই বিষয়ের উপরও মন্তব্য করেন যে, বিধানসভা এবং এখানকার লোকসভার সদস্যেরা বিভিন্ন চুক্তি ভঙ্গ করে, বেশ কিছু পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না করে, রাজ্যটিকে শোষণ ও অবহেলার মাধ্যমে অনগ্রসরের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তেলেঙ্গানা গঠনের ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এই বিষয়ে তীব্র বিরোধিতা করেন। যদিও, ২০১৪ সালের ১৩-ই ফেব্রুয়ারী একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যায় যখন অধ্যক্ষ মীরা কুমার ১২-টার সময় এই বিল পেশ করার অনুমতি দেন। বিজয়ওয়াড়ার তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ লাগড়াপতি রাজাগোপাল সেইসময় তীব্র স্লোগানের মধ্যে সংসদে পিপার স্প্রে ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে, তিনি বলেন যে সংসদের অন্যান্যদের আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আত্মরক্ষার তাগিদে তিনি এই পদক্ষেপ ওঠান। তাঁর এই কর্মে, লোকসভার কাজে অনেক বিঘ্ন ঘটে এবং সংসদের নিম্নকক্ষের বেশ কিছু সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এই কার্যকলাপের পরিণাম স্বরূপ অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেইসব সদস্যরা ছিলেনঃ
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে
তেলেগু দেশম পার্টি থেকে
ওয়াই.এস.আর কংগ্রেস থেকে
এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা ও বিধানসভা পরিষদ এই ২০১৪, অন্ধ্র প্রদেশ পুনর্গঠন আইনের বিরোধিতা করেন। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ৯-টি আবেদনপত্রও দাখিল করা হয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে তেলেঙ্গানার গঠনে দেশে বিভিন্ন প্রকার প্রভাব পড়তে পারে। এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে, প্রধান যুক্তি হিসাবে বলা যেতে পারে যে, এতে তেলেঙ্গানার মতো একটি ছোট রাজ্যের পরিচালনা করা সহজ হবে। তবে, ঝাড়খন্ডের অভিজ্ঞতার অনুভূতি থেকে এই যুক্তিটিতে গুরুত্ব দেওয়া যায় না। এটাও প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, তেলেঙ্গানা গঠনের ফলে ভারতের মধ্যে অস্থিরতা আরোও বৃদ্ধি পাবে কারণ এর থেকে গোর্খাল্যান্ড, বিদর্ভা এবং বোড়োল্যান্ড-এর জন্য চলতে থাকা অন্যান্য আন্দোলনগুলি আরোও শক্তিশালী আকার ধারন করবে।
* সর্বশেষ সংযোজন : ২৩- শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
|