পাঞ্জাব পর্যটন
পঞ্চ নদীর দেশ এবং অসাধারণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ পাঞ্জাব তার রান্না, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত।
উজ্জ্বল সবুজ উর্বর কৃষি জমি, চকমকে জল, নীল রঙের বিভিন্ন বৈচিত্র্যের আকাশ আপনার ইন্দ্রিয়কে একটি সদা চিরস্থায়ী প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
পাঞ্জাবের ঐন্দ্রজালিক দেশ প্রফুল্ল, প্রাণবন্ত এবং আনন্দ প্রেমী মানুষদের আবাসস্থল যারা আপনাকে সাদরে এবং হাসি মুখে স্বাগত জানায়। রামধনু রঙের পাগড়ী পরিহিত প্রফুল্ল পুরুষ, চিত্তাকর্ষক রঙ্গিন পোশাক, বালা, ফিতা এবং ওড়না দ্বারা সুশোভিত নারী এবং ভাঙরা সঙ্গীত-এই সমস্তই পাঞ্জাবকে একটি আনন্দময় এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতি প্রদান করে।
এই রাজ্যের মনোহর শহর আকর্ষণীয় স্মৃতিসৌধ, গুরুদ্বার, পবিত্র মঠ, মন্দির, আশ্রম, বিপুল হ্রদ, মিউজিয়াম এবং বিরল প্রজাতির বিভিন্ন পশুর অভয়ারণ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এটি প্রাচীনকালের সভ্যতা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, মুখে জল আনা রান্না এবং নিদারূণ কেনাকাটার অন্বেষণ করতে পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য।
পাঞ্জাবের জনপরিসংখ্যান |
---|
অবস্থান | ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশ, পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপূর্বে হিমাচল প্রদেশ, দক্ষিণে হরিয়ানা ও রাজস্থান, |
অক্ষাংশ | 29 ডিগ্রী 30 মিনিট এবং 32 ডিগ্রী 32 মিনিট উত্তরের মধ্যে |
দ্রাঘিমাংশ | 73 ডিগ্রী 55 মিনিট এবং 76 ডিগ্রী 50 মিনিট উত্তরের মধ্যে |
আয়তন | 50362 বর্গ কিলোমিটার |
জলবায়ু | গ্রীষ্মকাল – গুমোট, শীতকাল – ঠান্ডা |
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা | 47 ডিগ্রী সেলসিয়াস |
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা | -4 ডিগ্রী সেলসিয়াস |
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত | 58 – 96 সেন্টিমিটারের মধ্যে |
রাজধানী | চণ্ডীগড় |
জনসংখ্যা | 24,289,296 |
ভাষা | পাঞ্জাবি এবং হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি |
ধর্ম | শিখ, হিন্দু ও ইসলাম |
পরিদর্শনের সেরা সময় | অক্টোবর থেকে মার্চ |
পরিধান | গ্রীষ্মকালে – সূতি, শীতকালে – সুতি বা হালকা পশমী |
পাঞ্জাব পৌঁছানোর উপায়
পাঞ্জাব ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশের একটি রাজ্য। এটি পঞ্চ নদীর দেশ এবং শিখদের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। পাঞ্জাবের প্রধান শহরগুলি হল – অমৃতসর, জলন্ধর, লুধিয়ানা, পাটিয়ালা, ভাতিন্ডা ইত্যাদি। এই শহরগুলি ছাড়াও এই রাজ্যে বহু পর্যটক আকর্ষণ রয়েছে। পাঞ্জাবের সমগ্র রাজ্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় যা উপেক্ষা করা সত্যিই কঠিন।
বিমান মাধ্যমে
এই রাজ্যের ছয়টি বিমানবন্দর রয়েছে। এই ছয়টি বিমানবন্দরের মধ্যে প্রধান বাণিজ্যিক বিমানবন্দরগুলি হল –
- অমৃতসরের শ্রী গুরু রাম দাস জি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
- লুধিয়ানার সাহনেওয়াল বিমানবন্দর।
- পাঠানকোটের পাঠানকোট বিমানবন্দর।
প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ বিমান পরিবহন সংস্থা, যেমন – স্পাইসজেট, এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ এবং জেটকানেক্ট যা নিয়মিত বিমান চালনা করে প্রধান ভারতীয় শহরগুলির সাথে এই বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করে।
রেল মাধ্যমে
এই রাজ্য একটি ভাল রেল পথ ব্যবস্থার অধিকারী। এই রাজ্যের প্রায় সমস্ত শহর রেলপথ দ্বারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এই রাজ্যের প্রধান রেলস্টেশনগুলি হল – চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, ফিরোজপুর, জলন্ধর, অমৃতসর এবং ভাতিন্ডা।
সড়ক মাধ্যমে
পাঞ্জাবের একটি ব্যাপক সড়ক যোগাযোগ রয়েছেযা উত্তর ও পূর্ব ভারতের অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলিকে সরাসরি এই রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করে। ১-নং (গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জি.টি. রোড), ১৫-নং, ১৯-নং, ২০-নং, ২১-নং, ৭১-নং, ৫৪-নং এবং ১এ-নং জাতীয় সড়ক এবং অসংখ্য রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক এই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে পরিচালিত, যা এই সড়কপথকে আরও সহজতর করে তোলে। এই রাজ্যের জাতীয় মহাসড়ক তার ভাল সড়ক পরিকাঠামোর জন্য ভারতে সেরা।
পাঞ্জাবের পরিদর্শনমূলক স্থান
পাঞ্জাব বা পাঞ্চালের চিত্রানুগ রাজ্য তার বিস্তৃত কৃষিজমি সহ যথাযোগ্যভাবে “ভারতের হাসিখুশি প্রাণ “ডাকনামের সাথে আখ্যায়িত। এর উর্বর ভূভাগ ঐশ্বর্যশালী রবি, বিপাশা, শতদ্রু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলাম দ্বারা নিষ্কাশিত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা সুসজ্জিত। পাঞ্জাব পর্যটন এইভাবে বিশ্ব জুড়ে সকল পর্যটকদের কাছে অনেক কিছু তুলে ধরে।
প্রজ্বলিত পাঞ্জাবি সূর্যাস্তের সময় আকাশ সোনালী রঙ ধারন করে এবং ভূট্টা রঙের পাহাড় কখনও নীল এবং বেগুনির বিভিন্ন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে এবং তার পাদদেশে অর্ধ লুক্কায়িত তাল গাছের সারি দ্বারা নির্জন পুকুর একটি রত্নের মত চকচক করে, যা সূর্যালোকের শেষ কিরণে একটি পিতলের প্রভা পায় যেটি সত্যিই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
পাঞ্জাব সরকার পর্যটন বিভাগ কিছু ব্যাপক প্যাকেজ ট্যুর চালু করেছেন, যা একটি সাশ্রয়ী মূল্যে পাঞ্জাবের সমস্ত পর্যটন আকর্ষণগুলি পরিদর্শন করায়। এর পাশাপাশি এই রাজ্য রাজকীয় স্বর্ণ মন্দির, যা গভীর পবিত্রতার একটি অন্তর্নিহিত বাতাবরণ সৃষ্টি করে-এর জন্য বিখ্যাত। রাম তীর্থ, অমৃতসর এবং বাল্মিকির আশ্রম পাঞ্জাবের দুটি প্রখ্যাত হিন্দু তীর্থস্থান অন্যদিকে মাজার, পীর বাবা হাজী রত্তন, ভাতিন্ডাশহর এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পৌরাণিক মসজিদ।
ভারতের একটি প্রাক্তন দেশীয় রাজ্য এবং মহারাজা রঞ্জিত সিং-এর প্রাক্তন সাম্রাজ্য পাঞ্জাব, ঐশ্বর্যশালী বিপুল প্রাসাদ এবং খাঁজকাটা দুর্গ দ্বারা সমৃদ্ধ। এই রাজ্য এছাড়াও জালিয়ানওয়ালা বাগের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাক্ষী রয়েছে।
এই রাজ্য চন্ডীগড় এবং অমৃতসরের বিমানবন্দর দ্বারা সুসংযুক্ত ও বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন সহ সংযোগকারী জাতীয় সড়ক দ্বারা পাঞ্জাবের বাইরের রাজ্য গুলির সাথেও সংযুক্ত। এই আনন্দময় এবং সমৃদ্ধ রাজ্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ছাড়াও সারা বছর ধরে উল্লসিত অনুষ্ঠানে পরিপূর্ণ। ভাঙরা সঙ্গীত এবং ধাবা সংস্কৃতির এই রাজ্য পশমী হোসিয়ারি পণ্য, গালিচা, জুতি এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের সাথে এটি একটি কেনাকাটার স্বর্গোদ্যান।
পঞ্চ নদীর দেশ এবং অসাধারণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ পাঞ্জাব তার রান্না, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। উজ্জ্বল সবুজ উর্বর কৃষি জমি, চকমকে জল, নীল রঙের বিভিন্ন বৈচিত্র্যের আকাশ আপনার ইন্দ্রিয়কে একটি সদা চিরস্থায়ী প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এই মনোহর শহর চমৎকার স্মৃতিস্তম্ভ, গুরুদ্বার, পবিত্র মঠ, মন্দির, আশ্রম, প্রশস্ত হ্রদ, মিউজিয়াম, কেনাকাটার কেন্দ্র এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দ্বারা পরিপূর্ণ।
- স্বর্ণ মন্দির।
- জালিয়ানওয়ালা বাগ।
- ওয়াগা্ সীমান্ত।
- সীস মহল।
- গুরুদুয়ার আনন্দপুর সাহিব।
- হরমন্দির সাহিব।
- গুরুদুয়ার কিরাটপুর সাহিব।
- ডেরা বাবা নানক।
- গোয়িন্দওয়াল সাহিব।
পাঞ্জাবের দর্শনীয় স্থান
স্বর্ণ মন্দির
স্বর্ণ মন্দির একটি বিখ্যাত তীর্থ কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব তথা ভারতের এক অন্যতম বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণ। শিখ সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম এবং পবিত্রতম মন্দির বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার ভক্তদের দ্বারা পূজিত হয়। এই মন্দিরের অভান্তরে “অমৃত সরোবর” নামক একটি সুন্দর পুকুর অবস্থিত। মন্দিরের চুড়াটি সোনার গিলটি করা একটি স্তর দ্বারা আচ্ছাদিত যা গ্রীষ্মে সূর্যের উজ্জ্বল আলোতে অত্যন্ত চকমক করে, যার ফলে এর নাম হয়েছে স্বর্ণ মন্দির।
জালিয়ানওয়ালা বাগ
জালিয়ানওয়ালা বাগ হল সেই স্থান যেখানে ১৯১৯ সালের ১৩-ই, এপ্রিল শত শত নির্দোষ এবং নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনী দ্বারা বেপরোয়া ভাবে নিহত হন। গুলির চিহ্ন, অনুপ্রবিষ্ট দেয়াল, এবং একটি শহীদদের কূয়ার অবশিষ্টাংশ হাজার হাজার মানুষদের শ্মশান ভূমি হয়ে ওঠে যারা নিজেদের রক্ষা করার জন্য এই কূয়ায় ঝাঁপ দিয়েছিল এবং এই স্থানটি ভারতের সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে।
ওয়াগা সীমান্ত
অমৃতসর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে ওয়াগা্ সীমান্ত, ভারত ও পাকিস্তানকে পৃথক করে রেখেছে। এখানকার একটি প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হল “পতাকা হ্রাসকরণ” অনুষ্ঠান যা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং পাকিস্তান রেন্জার্স নামক ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়।
সীস মহল
ভারতের হাসিমুখ প্রাণ পাঞ্জাব, যথাযোগ্যভাবে বাগান ও প্রাসাদের শহর হিসাবে নামাঙ্কিত। পাঞ্জাব রাজকীয় প্রাসাদ অসাধারণ কৃষিজমি এবং ঐশ্বর্যশালী মন্দিরের সৌন্দর্য দ্বারা সমৃদ্ধ। সীস মহল হল পাটিয়ালার এরকম একটি নিদারূণ প্রাসাদ যা তৎকালীন মহারাজাদের অতিরিক্ত সুসজ্জিত জাঁকজমককে জাহির করে।
গুরুদুয়ার আনন্দপুর সাহিব
শিখধর্মের পবিত্র বার্তাকে ব্যাখায়িত করে আনন্দপুর সাহিব, চন্ডিগড়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। খালসা মাতৃভূমি হিসাবে এই স্থানটির একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। শ্রী গুরু তেগ বাহাদুর জি ১৬৬৪ সালে এই পবিত্র স্থানটিকে অস্তিত্বে আনেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
হরমন্দির সাহিব
অমৃতসরের হরমন্দির সাহিব জনপ্রিয়ভাবে স্বর্ণ মন্দির নামে পরিচিত। এটি শ্রী দরবার সাহিব নামেও পরিচিত। এই গুরুদুয়ারা পুরাতন অমৃতসরের কেন্দ্রে অবস্থিত। হরমন্দির সাহিব একটি আয়তক্ষেত্রাকার মঞ্চের উপর অবস্থিত যা অমৃত সরোবরের জল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই হ্রদ থেকে অমৃতসর শহরের নামটি উদ্ভুত হয়েছে।
হরমন্দির সাহিবের স্থাপত্য হিন্দু ও মুসলিম শৈলীর একটি সংমিশ্রণ। এটি দুই তলা মার্বেল পাথরের কাঠামো নিয়ে গঠিত। হরমন্দির সাহিব গুরু ব্রিজ দ্বারা পৌঁছান যায়। এই মন্দিরের ঊর্ধ্ব তল স্বর্ণের প্রলেপ দ্বারা আবৃত এবং সুবর্ণ গম্বুজ দ্বারা সুশোভিত। এই সুবর্ণ গম্বুজটি একটি উল্টানো পদ্ম আকৃতির মত দেখায়।
পুষ্প গুজরাল সায়েন্স সিটি
জলন্ধরের কাপুরথালা রোডে অবস্থিত পুষ্প গুজরাল সায়েন্স সিটি ৭২ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি হল উত্তর ভারতের বৃহত্তম বিজ্ঞান পার্ক। এই প্রকল্পতে সরকার ৭০ কোটি টাকার একটি সুবৃহৎ অর্থ সহায়তা প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গুরুদুয়ার কিরাটপুর সাহিব
গুরুদুয়ার কিরাটপুর সাহিব শিখ সম্প্রদায়ের ষষ্ঠ গুরু শ্রী হর গোবিন্দ সাহিব দ্বারা ১৬২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পাঞ্জাবের শিবালিক পর্বতমালার পাদদেশে একটি ছোট শান্তিপূর্ণ শহরে অবস্থিত।
তিনি তার পার্থিব জীবনের কিছু সময় কিরাটপুরে অতিবাহিত করেছিলেন। বর্তমানে রোপার জেলার শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থানে শিখ সম্প্রদায়ের অন্যান্য গুরুদের দ্বারা নিয়মিত ভাবে সভা আয়োজিত হত। এখানে সপ্তম শিখ গুরু, গুরু হর রাই এবং অষ্টম শিখ গুরু, গুরু হর কৃষাণ দেব জি জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রতিপালিত হন। এমনকি প্রথম শিখ ভাববাদী গুরু নানক জি তার জীবদ্দশায় এই স্থান পরিদর্শন করেছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও এই স্থানের সাথে প্রখ্যাত মুসলিম সন্ত পীর বুদ্দান শাহের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে যিনি একটি অত্যন্ত দীর্ঘ জীবনের উপহার পেয়েছিলেন।
ডেরা বাবা নানক
ডেরা বাবা নানক পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রবি নদীর বাম তীরে অবস্থিত। মহান গুরু নানক দেব জি তার মূল্যবান পার্থিব জীবনের শেষ বারো বছর এই ডেরা বাবা নানকে অতিবাহিত করেন।
এই সম্পূর্ণ স্থানটি আসলে গুরু নানক জি’র বাসভূমি ছিল কিন্তু তিনি এই তীর টিকে ধ্যান করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। একটি সুন্দর গুরুদ্বার এই স্থানটির স্মৃতিরক্ষা করার জন্যে বর্তমানে নির্মিত করা হয়েছে।
গোয়িন্দওয়াল সাহিব
গোয়িন্দওয়াল শহরে শিখ ধর্মের তীর্থস্থানগুলির অপরিমেয় তাৎপর্য পরিলক্ষিত হয়। এই শহর অমৃতসরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং এই শহর থেকে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গোয়িন্দওয়ালশহর কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুরুদুয়ারের অধিকারী যার মধ্যে গোয়িন্দওয়াল সাহিব হল এক অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ গুরুদ্বার। পাঞ্জাবের গোয়িন্দওয়াল সাহিব গুরুদ্বার এই রাজ্যের গর্ব এবং এটি একটি প্রধান তীর্থস্থান এবং পর্যটক আকর্ষণ।
পাঞ্জাবে কেনাকাটা
পাঞ্জাবে হস্তশিল্প এবং তাঁত পণ্যের একটি ব্যপক ঐতিহ্য রয়েছে; যা এই রাজ্যে কেনাকাটাকে একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতায় পরিণত করে। পাঞ্জাব হস্তশিল্প, তাঁত ও হোসিয়ারি পণ্যের ভারতের সবচেয়ে বড় নির্মাতা ও রপ্তানিকারক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।
পাঞ্জাবে কেনাকাটার স্থান
এই রাজ্যে ঐতিহ্যগত থেকে আধুনিক সমস্ত রকমের পণ্য রয়েছে যেগুলির মধ্য দিয়ে পাঞ্জাবের সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়। আপনি পাঞ্জাবের বড় বড় শহরগুলোর যে কোন স্থানে কেনাকাটা করতে পারেন, যেমন – অমৃতসর, চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, পাঠানকোট ইত্যাদি স্থানে কেনাকাটার প্রচুর সম্ভার রয়েছে।
পাঞ্জাবে কেনাকাটার জন্য প্রচুর সরকারি এম্পোরিয়াম এবং ব্যক্তিগত দোকান রয়েছে। রাজ্যের রাজধানী চণ্ডীগড়ে কিছু চমৎকার শপিং মল এবং বাণিজ্যিক দোকান রয়েছে। একই ভাবে রাজ্যের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও আপনি এগুলি খুঁজে পেতে পারেন। পাঞ্জাবে, আপনি বহু প্রাণবন্ত স্থানীয় বাজারে গিয়ে দরাদরি করে ভাল পণ্য কিনতে পারেন।
পাঞ্জাবের বিখ্যাত কারুশিল্প
পাঞ্জাবের বিখ্যাত কারুশিল্পের মধ্যে কয়েকটি হল –
দরি (হাতে বোনা সমতল কম্বল)
গালিচা বা বিছানার চাদর হিসাবে ব্যবহৃত, এই দরি অত্যন্ত সূক্ষ্ম দক্ষতার সাথে বোনা তাদের ঐতিহ্যগত নকশার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। একটি বড় জমায়েত বা অনুষ্ঠানে এগুলি বেশিরভাগই বসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। চন্ডীগড় এবং অমৃতসর দরি উৎপাদনের জন্য প্রধান কেন্দ্র।
জুতি (জুতা)
এই জুতিগুলি অভিনব সুন্দর উপকরণ, রঙ্গিন সুতো ও ছোট কাঁচ দ্বারা বিভিন্ন রকমের নকশা ও বিভিন্ন ধরনের হয়। এগুলি পাঞ্জাবের লালিত্য, মহিমা এবং রাজকীয় বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে।
ফুলকারী (শৈল্পিক সূচিশিল্প)
এটি শিল্পের একটি রূপ যা শাল, ওড়না, শাড়ি বা পোষাকে দেখা যায়। ফুলকারী বিবাহ এবং উৎসবের মত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।’পাট’ নামক একটি বিশেষ ধরনের সুতো এর জন্যে ব্যবহার করা হয়। এগুলি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের হয়, ধর্মীয় অলঙ্করণ ছাড়াও এগুলি নিজেদের মনের মত বিভিন্ন ধরনের নকশার হয়।
পারান্দি (কেশালঙ্কার)
এগুলি এক আকর্ষণীয় কেশালঙ্কার যা গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী পাঞ্জাবি মহিলাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। নারীরা তাদের লম্বা চুলের বিনুনি করে এবং বিনুনির নিচে এই পারান্দি লাগিয়ে সুশোভিত করেন। রেশম দিয়ে বোনা এই সুতো সুকৌশল ভাবে একত্রিত করা হয় এবং বিভিন্ন ধরন এবং নকশায় উপলব্ধ।
শাল
পশমিনা, ক্যশমিলন, জ্যাকার্ড ইত্যাদি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের শাল পাঞ্জাবে উপলব্ধ। এগুলি তাদের আকর্ষণীয় নকশা, আরামপ্রদতা এবং যুক্তিসঙ্গত দামের জন্য সুপরিচিত। এই শাল উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্রগুলি হল – অমৃতসর, জলন্ধর এবং লুধিয়ানা।
অলংকৃত আসবাবপত্র
পাঞ্জাবে নিদারূণ নকশা দ্বারা খোদাইকৃত বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কৃত আসবাবপত্র রয়েছে। আপনি এখানে আসবাবপত্রের এক অনন্য সংগ্রহ পেতে পারেন। অলঙ্কৃত আসবাবপত্র উৎপাদনের প্রধান এলাকাগুলি হল – জলন্ধর, অমৃতসর, ভেরা এবং হোসিয়ারপুর।
বিবিধ পণ্য
এই সমস্ত বিখ্যাত কারুশিল্প ছাড়াও আপনি এখানে অন্যান্য অসংখ্য পণ্য কেনাকাটা করতে পারেন; যথা – চামড়াজাত পোষাক, পাঞ্জাবের পুতুল, গহণা, হাত পাখা, ঝুড়ি, স্থানীয় খেলনা ইত্যাদি।
|