ওড়িশা
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

ওড়িশার মানচিত্র

Odisha Map in Bengali

ওড়িশার মানচিত্র
* প্রধান সড়ক, রেলপথ, নদী, জাতীয় সড়ক সহ ওড়িশা মানচিত্র৷

ওড়িশার উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.odisha.gov.in
স্থাপনের তারিখ 1 এপ্রিল, 1936
আয়তন 155,707 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 269/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা (2011) 41,974,218
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) 21,212,136
মহিলা জনসংখ্যা (2011) 20,762,082
শহুর কেন্দ্রিক জনসংখ্যার অনুপাত (2011) 16.69%
জেলার সংখ্যা 30
রাজধানী ভুবনেশ্বর
নদীসমুহ ব্রাহ্মনী, সালান্ডি, ইন্দ্রাবতী, মহানদী, বংশধারা, কোলাব ইত্যাদি
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্যান, মহানদী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ঊষাকোঠি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ভাষা ওড়িয়া, মগধি
প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, ছত্তীসগঢ়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ
রাষ্ট্রীয় পশু চিতল হরিণ
রাষ্ট্রীয় পাখি নীলকন্ঠ
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ অশ্বত্থ
রাষ্ট্রীয় ফুল অশোক
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 40412
সাক্ষরতার হার (2011) 76.68%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 978
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 147
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 21

ওড়িশা সম্পর্কে

ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব উপকূলে ওড়িশা রাজ্য অবস্হিত। এর রাজধানী হল ভূবনেশ্বর। রাজ্যটি আধুনিক পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা সহ দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার পর, রাজ্যের গ্রামীণ অংশগুলির অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।

এখানে অনেক সুন্দর খোদাইয়ের কারুকার্যময় মন্দির থাকায় রাজ্যটি ‘মন্দিরের ভূমি’ নামেও পরিচিত, যেগুলি এই রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সাম্রাজ্যের স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ দেয়। এই ভূমি তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও বিখ্যাত। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল শাস্ত্রীয় ওডিসি নৃত্য শৈলী। ওড়িশা শুধুমাত্র সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

ওড়িশার ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন ওড়িশায় বসবাস করত। মহাভারতের সময়কালে পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা সর্বপ্রথম উপজাতিগুলি সবর ও সাওরা নামে পরিচিত ছিল। রাজ্যটির প্রায় ৫,০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। ওড়িশা রাজ্যটি কলিঙ্গ শাসনের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। মৌর্য্য সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোক, প্রায় সমস্ত ভারতবর্ষ এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলিকে জয় করেন। যুদ্ধে প্রচুর মানুষের নৃশংস মৃত্যু দেখার পর সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শাসনের পর, চতুর্থ শতাব্দীতে গুপ্তরা এখানে শাসন চালায়। দশম শতাব্দীতে ভৌম-কারা রাজবংশ এবং তার পরবর্তীকালে সোম রাজবংশ এখানে রাজত্ব করে। ত্রয়োদশ শতাব্দী ও চর্তুদশ শতাব্দীর থেকে ১৫৬৮ সাল পর্যন্ত মুসলিমরাও এখানে রাজত্ব করে। এই রাজ্যটি মারাঠা এবং হায়দরাবাদের নবাবদের শাসনেরও সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এর আধুনিক ইতিহাস ব্রিটীশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে নিয়ে গঠিত, যারা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে এই রাজ্যে প্রবেশ করে এবং বাংলার উপকূলীয় এলাকাকে বিহার ও ওড়িশায় রূপান্তরিত করে। পরবর্তী ১৯৩৬ সালে ওড়িশা ও বিহার ভাগ করে দেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে, এটি ভারতের সার্বভৌম রাজ্যে পরিণত হয়।

ওড়িশার ভৌগোলিক অবস্থান

দেশের পূর্ব উপকূলে, বঙ্গোপসাগরের সুন্দর সমুদ্রতট বরাবর ওড়িশা রাজ্য অবস্হিত। এর আয়তন প্রায় ১,৫৫,৭০৭ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যটি পশ্চিমে মধ্যপ্রদেশ, দক্ষিণে অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরদিকে ঝাড়খন্ড রাজ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত।

রাজ্যের পূর্বদিকে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। রাজ্যটি বিচিত্র আবাসস্থল সহ ঘন সবুজ গাছপালা এবং পাহাড়ী ভূখণ্ড দ্বারা সমৃদ্ধ। উপকূলীয় সমভূমি এবং নদী উপত্যকাগুলি অবিশ্বাস্য প্রকৃতির। এই রাজ্যের প্রধান নদীগুলি হল মহানদী, ব্রাহ্মনী ও বংশধারা। এই রাজ্যটি তিনটি প্রধান অঞ্চল যেমন মালভূমি, পর্বত ও উপকূলীয় সমভূমি নিয়ে গঠিত। সুবর্ণরেখা, বৈতরণী, রুশিকূল্য ও বুদ্ধবলঙ্গা নদী দ্বারা নির্মিত বেশ কিছু ব-দ্বীপ এখানে রয়েছে। সমগ্র রাজ্যের তিন-চতুর্থাংশ পাহাড় এবং পূর্ব ঘাট পর্বত নিয়ে গঠিত। এখানকার এক প্রধান আকর্ষণ হল বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক বাসস্থান। ওড়িশায় অনেক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যও রয়েছে।

ওড়িশার পর্যটন

যেহেতু প্রাচীনকাল থেকেই ওড়িশা রাজ্যের অস্তিত্ব রয়েছে তাই এখানকার অনেক সৌধ বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্হান (ওর্য়াল্ড হেরিটেজ সাইট) হিসাবে পরিচিত এবং অন্যান্য আরোও বেশ কিছু সৌধ রয়েছে যেগুলি আজকের দিনে স্থাপত্যকলার এক বিস্ময়। প্রাচীনকাল থেকেই বহুশত মন্দির এবং শাসকদের দ্বারা নির্মিত তাদের সুবিশাল সাম্রাজ্য এখানে রয়েছে। মন্দিরগুলির অবর্ণনীয় সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো। ভূবনেশ্বরে অবস্থিত কোণারকের সূর্য মন্দির ও পুরী বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্হান হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সুবিশাল সমু্দ্রতট বিশ্ববিখ্যাত যেখানে জলক্রীড়া ও রৌদ্র অবগাহন উপভোগ করা যায়। চিল্কার বিখ্যাত কালো জলের হ্রদ লক্ষ লক্ষ প্রজাতির পাখির আশ্রয়স্থল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে ডলফিনও দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার প্রধান সৈকতগুলি হল গোপালপুর, চাঁদিপুর, পুরী এবং চন্দ্রভাগা। এছাড়াও এখানে আপনি পিকনিকের জন্য বেশ কিছু ছোট সৈকতও পেতে পারেন যেমন আর্যপল্লী, অস্তরঙ্গ, বলরামগড়ী, পারাদ্বীপ, তালাসারি এবং রামচাঁদি। এখানকার ঘন সবুজ গাছপালা এক বিশাল সংখ্যক উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের আবাসস্থলের ভূমিকা পালন করে যা বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাকে বৃদ্ধি করছে। রাজ্যের সমস্ত জায়গা গাছপালা সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানে অনেক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রয়েছে। পাশাপাশি এখানকার জলপ্রপাত, হ্রদ ও যাদুঘরগুলিও বেশ ভালো।

সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

ওড়িশায় প্রতিনিধি গণতন্ত্রের এক সংসদীয় প্রণালী রয়েছে। এখানকার রাজ্য সরকারের দুটি ভাগ রয়েছে-ওড়িশা বিধানসভা এবং আইন-সভা। বিধানসভা পরিষদ, নির্বাচিত সদস্য এবং অধ্যক্ষ ও উপ-অধ্যক্ষ নিয়ে গঠিত। ওড়িশার উচ্চ আদালতটি কটকে অবস্থিত এবং এর কতকগুলি নিম্ন আদালত রয়েছে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের প্রধান ব্যক্তি। বিজয়ী দল ও জোটবদ্ধ দলগুলির নেতাদের দ্বারাই মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। বিধানসভা পরিষদে ১৪৭ জন সদস্য রয়েছেন এবং একজন আ্যংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে নিযুক্ত হন। যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিধানসভা ভেঙ্গে না যায় তবে তারা পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হন। ভারতীয় সংসদে ওড়িশা থেকে লোকসভায় ২১টি ও রাজ্যসভায় ১০টি আসন রয়েছে। ওড়িশা ৩০টি জেলা নিয়ে গঠিত যেমন অনুগুল, বালেশ্বর, বোলাঙ্গির, বৌধ, বরাগড়, ভদ্রক, কটক, দেওগড়, ঢেঙ্কানল, গজপতি, জগৎসিংহপুর, কালাহান্ডি, ঝাড়সুগুডা, নয়াগড়, সুন্দরগড়, রায়গড়, পুরী, কেন্দ্রপড়া, কোরাপুট, খুর্দা, মালকানগিরি, গঞ্জাম, রায়গড়, সোনপুর, সম্বলপুর, কান্ধামাল, নবরঙ্গপুর, ময়ুরভঞ্জ এবং জয়পুর।

রাজনীতির বিষয়ে, রাজ্যে বেশ কিছু প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে যেমন বিজু জনতা দল, ভারতীয় জনতা দল, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। প্রতিটি দলে কিছু যোগ্য নেতা রয়েছে যারা রাজ্যের উন্নতিতে আগ্রহ রাখে।

ওড়িশার শিক্ষা

প্রাচীনকাল থেকেই ওড়িশা প্রাথমিক থেকে উচ্চ স্তরের শিক্ষার আবাসস্থল হয়ে এসেছে। এখানে অতীত যুগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। প্রাচীনকালে এই রাজ্য শিক্ষার কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত ছিল। সাম্প্রতিককালে, জাজপুর জেলার রত্নগিরিতে পুরনো যুগের একটি বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া গেছে।

বর্তমানে দেশের বেশ কিছু প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় এই রাজ্যে রয়েছে। মর্যাদাপূর্ণ এন.আই.টি রৌরকেল্লা একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে অনেক ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ভিত্তিক মহাবিদ্যালয়, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আরোও অনেক কিছু রয়েছে। দুটি জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম, আই.আই.এম.সি নামক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানটি এই রাজ্যে অবস্থিত। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বেশ কিছু বিখ্যাত মেডিক্যাল কলেজও রয়েছে। কিছু প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হল-বিজু পটনায়েক ইউনিভ্যারসিটি অফ টেকনোলোজি, কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়্যাল টেকনোলোজি, শ্রীজগন্নাথ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি, ওড়িশা ইউনিভ্যারসিটি অফ এগ্রিকালচ্যার এবং আরোও অন্যান্য।

ওড়িশার অর্থনীতি

ওড়িশার জনসংখ্যার অধিকাংশই কৃষিতে নিযুক্ত। চাষ-যোগ্য মোট জমির আয়তন হল ৮৭.৪৬ লাখ হেক্টর, এর মধ্যে ১৮.৭৯ লাখ হেক্টর এলাকায় সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার প্রধান উৎপাদিত ফসল হল ধান এবং এই রাজ্যটি দেশের এক প্রধান ধান উৎপাদক রাজ্য হিসাবে পরিচিত। জেলার ভিত্তিতে এই রাজ্যে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। ধানের পাশাপাশি, তৈলবীজ, পাট, ডাল, নারিকেল, মেস্তা, হলুদ এবং আখ হল গুরুত্বপূর্ণ উৎপন্ন ফসল। অর্থকরী ফসল হিসাবে চা, রবার এবং তুলার চাষ হয়। রাজ্যের দ্বিতীয় অধিক উৎপন্ন ফসলগুলি হল-রাগি, পাট, ছোলা, সরিষা, তিল, ভূট্টা ইত্যাদি।

এই রাজ্যে বেশ কিছু খনিজ পদার্থের উৎপাদন হয় যেমন কয়লা, চুনাপাথর, বক্সাইট, আকরিক লৌহ এবং আরোও কিছু খনিজ পদার্থ। দেশের বক্সাইট খনিজ দ্রব্য সংরক্ষণে এই রাজ্যটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে। রৌরকেল্লা ইস্পাত কারখানা ভারতের সর্বপ্রথম সংহত ইস্পাত কারখানা। কিছু প্রধান শিল্প যেমন জিন্দাল স্টিল, এসার (ই.এস.এস.এ.আর) স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া, নীলাচল ইস্পাত নিগম লিমিটেড এবং পস্কো ইত্যাদি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে বেশ কিছু ছোট মাপের হস্তশিল্প এবং তাঁতশিল্প রয়েছে যা ওড়িশার অর্থনীতিতে অবদান রাখে।

এছাড়াও মাছ ধরা রাজ্যের অর্থনীতির এক প্রধান উপাদান। বিশাল উপকূলীয় তটরেখার দরুণ, এখানে অন্তর্দেশীয়, লোনা পানি এবং সামু্দ্রিক মাছ ধরার বিশাল সুযোগ রয়েছে।

জনসংখ্যা

২০১১ সালে, ওড়িশার জনসংখ্যা ছিল ৪,১৯,৭৪,২১৮ জন। প্রতি ১০০০ জন পুরুষের হিসাবে মহিলার সংখ্যার অনুপাত হল ৯৭৮ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব হল ১৩.৯৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৬৯ জন মানুষ বাস করে।

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ওড়িশায় সাক্ষরতার হার হল প্রায় ৭৩ শতাংশ যার মধ্যে ৮২ শতাংশ পুরুষ ও ৬৪ শতাংশ হলেন মহিলা।

রাজ্যের জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজ্যে মহিলা সাক্ষরতার হার এবং শিশু মৃত্যুর হারের প্রতি মনোনিবেশ করে সরকার কর্তৃক অনেক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। এখানকার পরিকাঠামোর উন্নতির সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা যেমন হাসপাতাল, পরিবহন, শিক্ষা এবং রোজগারেরও উন্নতি হচ্ছে।

সমাজ ও সংস্কৃতি

ওড়িশা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এবং এখানে অবস্থিত ঐতিহাসিক সৌধ, ভাস্কর্য্য, শিল্পী, নৃত্য ও সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে তা স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠেছে। এই রাজ্যে একটি বিভাগ রয়েছে যা সংস্কৃতির প্রতি নজর রাখে এবং সাথে সাথে কলা ও সংস্কৃতির প্রথা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নতির জন্যও প্রচার করে। প্রাচীনকালের সৌধ ও মন্দিরগুলির স্মরকচিহ্ন থেকে ওড়িশার সংস্কৃতির একটা ধারণা করা যায়। মন্দিরপূর্ণ রাজ্যটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে।

পৃথিবী বিখ্যাত, শাস্ত্রীয় নৃত্য শৈলী ওডিসি নৃত্যের উৎপত্তি এখানেই। এই নৃত্য শৈলী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার সঙ্গিনী রাধার প্রেমের সম্বন্ধ নিয়ে তৈরী। এছাড়াও, এখানে অনেক লোকনৃত্য ও লোকনাট্যও রয়েছে। এখানকার সংস্কৃতি বিভিন্ন ধর্ম যেমন জৈন, হিন্দু ও বৌদ্ধ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত। ওড়িশার সংস্কৃতিতে উপজাতি এবং আদিবাসীদের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ওড়িশার বিখ্যাত “রথযাত্রা” পুরীতে অনুষ্ঠিত হয়, যা খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে বহন করে আনা হয়। এটি সমস্ত দেশ জুড়ে জনপ্রিয় এবং এখানে আপনি লোকেদের বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠান, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি লক্ষ্য করতে পারেন। এখানকার সমৃ্দ্ধ হস্তশিল্প ও তাঁত বস্ত্র খুবই উল্লেখযোগ্য। রুপোর তারের কারুকার্য, ছবির ফ্রেম, শাড়ি, ইক্কতের কাপড় বেশ প্রসিদ্ধ। রঘুরাজপুর নামক উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত চিত্র শৈলী এখানে দেখতে পাওয়া যায়। এই চিত্রগুলি ভারতীয় পৌরাণিকের বিভিন্ন দৃশ্য এবং পুরী মন্দিরের মুখ্য দৈব চরিত্র যেমন-জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা-কে নিয়ে গঠিত।

ভাষা

ওড়িয়া, ওড়িশার আধিকারিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা আর্য পরিবার থেকে এসেছে এবং এখানকার ভাষার সাথে বাংলা, অসমীয়া ও মৈথিলী ভাষার অনেক মিল রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ওড়িয়া ভাষার সাথে অন্যান্য বেশ কিছু ভাষারও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, যেমন বালেশ্বরী, ভাতৃ, লরিয়া, সম্বলপুরী, গঞ্জামি, ছত্তীসগঢ়ী এবং মেদিনীপুরী। পার্বত্য ভূ-খন্ডে ওড়িয়া ভাষা ভিন্ন স্বর ও পদ্ধতিতে বলা হয়। ওড়িয়া সর্বপ্রথম ১০৫১ খ্রীষ্টাব্দে উরাজাং-এ আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং এর লিপি ব্রাহ্মী থেকে শুরু হয়েছিল এবং দ্রাবিড়-এ শেষ হয়েছিল।

রাজ্যের প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষ ওড়িয়া ভাষায় কথা বলে। এটি ভারতের একটি প্রাচীনতম ভাষা এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও এই ভাষার বেশ ভালো প্রচলন রয়েছে। এখানে আরোও অন্যান্য কিছু ভাষা রয়েছে যেগুলিতে ভিন্ন রাজ্য থেকে আগত মানুষেরা কথা বলে। হিন্দি এখানকার দ্বিতীয় প্রচলিত কথ্য ভাষা হিসাবে খুবই জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও উর্দূ, বাংলার পাশাপাশি তেলেগু ভাষাতেও এখানকার বেশ কিছু মানুষ কথা বলে। শুধুমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তিরাই ইংরাজী ভাষার প্রয়োগ করেন।

ওড়িশায় পরিবহন

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের ন্যায় এখানকার পরিবহনও বেশ উন্নত। জাতীয় সড়কসহ রাজ্যে এক উন্নত সড়ক সংযোগ রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় সড়ক যেমন ৫নং, ৬নং, ২৩নং, ৪২নং এবং ৪৩নং জাতীয় সড়ক এই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। এছাড়াও ওড়িশায় রেলপথ, জলপথ ও বিমানপথ পরিষেবাও রয়েছে। ভুবনেশ্বর রেলওয়ে স্টেশন হল রাজ্যের মুখ্য রেলওয়ে স্টেশন। বেশ কিছু রেল যেমন কোণারক, রাজধানী এক্সপ্রেস ও করমন্ডল এক্সপ্রেস ইত্যাদি রেলগুলি এখান থেকে সুবিধাজনক ও আরামদায়ক যাত্রার সুবিধা প্রদান করে। আমদানি ও রপ্তানীর কেন্দ্র হিসাবে এখানকার একমাত্র প্রধান বন্দর হল পারাদ্বীপ। এছাড়াও ওড়িশায় একটি অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর রয়েছে যা রাজ্যের বিভিন্ন শহরগুলির সঙ্গে, পাশাপাশি ভারতের প্রধান শহরগুলির সাথে যুক্ত। পরিবহন সুবিধা এখানে বেশ উন্নত। রাজ্যে অনেক উন্নত প্রকল্প চালু হওয়ায় এবং রাজ্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করায়, এখানকার পরিবহন ব্যবস্থায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এই কথা মাথায় রেখেই সরকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গঠন ইত্যাদির ন্যায় বেশ কিছু প্রকল্পের দিকে মনোনিবেশ করেছেন।

Malkangiri Koraput Nabarangapur Rayagada Gajapati Ganjam Kandhamal Nayagarh Khordha Puri Jagatsinghpur Cuttack Dhenkanal Jajur Kendrapara Bhadrak Baleshwar Kendujhargarh Mayurbhanj Kalahandi Balangir Naupada Subarnapur Bargarh Bauda Angul Sambalpur Deogarh Jharsuguda Sundargarh JHARKHAND PASCHIM BENGAL CHHATTISGARH TELANGANA ANDHRA PRADESH * সর্বশেষ সংযোজন : ১৩-ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৫