
মণিপুরের উপর তথ্যাবলী |
|
---|---|
আধিকারিক ওয়েবসাইট | www.manipur.gov.in |
স্থাপনের তারিখ | 21 জানুয়ারি, 1972 |
আয়তন | 22,327 বর্গ কিলোমিটার |
ঘনত্ব | 122/ বর্গ কিলোমিটার |
জনসংখ্যা (2011) | 2,966,889 |
শহুরে জনসংখ্যার অনুপাত % ( 2011) | 32.45% |
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) | 1,491,832 |
মহিলা জনসংখ্যা (2011) | 1,475,057 |
জেলার সংখ্যা | 9 |
রাজধানী | ইম্ফল |
নদীসমুহ | বরাক, ইম্ফল এবং আইরিল |
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান | কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান, শিরুই জাতীয় উদ্যান |
ভাষা | মণিপুরী, মেইতেই |
প্রতিবেশী রাজ্য | আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম |
রাষ্ট্রীয় পশু | সাঙ্গাই (লম্বা-শিংওয়ালা হরিণ) |
রাষ্ট্রীয় পাখি | নোনগিন |
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ | ভারতীয় মেহগনি |
রাষ্ট্রীয় ফুল | লিলিয়াম ম্যাকিনিয়ে (লিলি) |
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) | 29,684 |
সাক্ষরতার হার (2011) | 75.48% |
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা | 987 |
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র | 60 |
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র | 2 |
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মণিপুর রাজ্যটি অবস্থিত। মণিপুরের রাজধানী হল ইম্ফল। মণিপুরে বসবাসকারি বিভিন্ন মানুষ রয়েছে, যাদের সংস্কৃতি বিভিন্ন এবং তারা বিভিন্ন ভাষাতে কথা বলে যেমন কূকি, নাগা, পাঙ্গাল এবং মিজো।
রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত নাগাল্যান্ড এবং দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত মিজোরাম। মণিপুরের পশ্চিম ও পূর্ব অংশে আসাম ও বার্মা অবস্থিত। মণিপুর প্রায় ২২,৩৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বেষ্টিত।
দ্বিধাহীন ভাবে বলা যেতে পারে মণিপুর সত্যি করেই পৃথিবীর স্বর্গ। এর আক্ষরিক অর্থ হল “অলংকার ভূমি”। মণিপুর সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জাঁকজমকে ভরপুর। সাংগাই (একটি বিরল প্রজাতির হরিণ) হরিণের বাসস্থল এবং সিরই পর্বত শৃঙ্গে উৎপন্ন পার্থিব লিলি ‘সিরয় লিলি’ এখানে পাওয়া যায়। সেন্ট ক্লেয়ার গ্রীমউড মণিপুরকে “পৃথিবীর দর্শনীয় সমস্ত সুন্দর স্হানগুলির থেকে আরোও সুন্দর স্হান” রূপে বর্ণনা করেছেন। স্বর্গীয় পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু মণিপুরকে ‘ভারতের রত্ন’ হিসাবে বর্ণিত করে এই স্হানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। মণিপুর উত্তরে দিকে নাগাল্যান্ড, দক্ষিণে মিজোরাম, পূর্বদিকে উচ্চ মায়ানমার এবং পশ্চিমে আসামের কাছার জেলার দ্বারা বেষ্টিত।
মণিপুর নয়টি জেলা নিয়ে গঠিতঃ বিষ্ণুপুর, চান্ডেল, চূড়াচাঁদপুর, পূর্ব ইম্ফল, পশ্চিম ইম্ফল, সেনাপতি, তামেংলঙ, থোউবল এবং উখরুল।
মণিপুরের ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়। প্রথম আ্যংলো-মণিপুরী যুদ্ধের পর ১৮৯১ সালে এই রাজ্য ব্রিটিশ শাসনাধীনে চলে আসে। সেই সময় অনেক সংগ্রামী নায়ক এই যুদ্ধে তাদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ব্রিটিশরা ইম্ফল দখল করার পর যুবরাজ টেকেন্দ্রাজিৎ এবং জেনেরাল থাঙ্গালকে ফাঁসি কাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালে সরকারের গণতান্ত্রিক গঠন নিশ্চিত করার জন্য, মণিপুর সংবিধান আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ২১-শে জানুয়ারী মণিপুর পূর্ণ রাজ্যের খেতাব অর্জন করে। বহু দিন ধরে মণিপুর মৈতৈলৈপাক, কাঙ্গলেইপাক এবং মৈত্রবাক হিসাবে পরিচিত ছিল। এই নামগুলি ছাড়াও, অন্যান্য আরও ২০-টি নামে এই রাজ্যটি পরিচিত ছিল।
প্রসিদ্ধ এবং বিচিত্র ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই অধিকাংশ পর্যটকে এই জায়গা পরিদর্শন করার আগ্রহ দেখায়। এই রাজ্য প্রায় ২২,৩২৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দ্বারা আচ্ছাদিত। রাজ্যটি প্রায় ৭০০ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে একটি উপ-বৃত্তাকার উপত্যকায় অবস্থিত। নীল পর্বতশৃঙ্গরাজি বেষ্টিত রাজ্যটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সম্পূর্ণ উপত্যকাটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু। পর্বতশ্রেণীর অবস্থানের দরুণ উত্তুরে শীতল বাতাস এই উপত্যকায় পৌঁছাতে পারে না। প্রধান চারটি নদী অববাহিকার বর্ণনা ব্যতীত মণিপুরের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। রাজ্যে অবস্থিত চারটি প্রধান নদী অববাহিকাগুলি হল- মণিপুর নদী অববাহিকা, বরাক নদী অববাহিকা, ইয়ু নদী অববাহিকা এবং লানইয়ে নদী অববাহিকা। সমগ্র জল সম্পদ প্রায় ১.৮৪৮৭ মিলিয়ন হেক্টর মিটার। মণিপুর নদী অববাহিকায় আটটি নদী রয়েছে যেমন মণিপুর, আইরিল, চাকপি, সেকমাই, খুগা, থোউবল, নামবূল এবং ইম্ফল।
এটি সত্য যে মণিপুরের পর্যটন শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রাজ্যটিকে “রত্নের ভূমি” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিক দিয়ে প্রযোজ্য নয়; এটি বরং সমস্ত দিকেই প্রযোজ্য যেমন ভাস্কর্য, মার্শাল আর্ট, থিয়েটার এবং নৃত্য। ঘন সবুজ গাছপালা এবং সহিষ্ণু জলবায়ুর টানেই অধিকাংশ পর্যটক এখানে আসে। বিরল কিছু জিনিষ আপনি দেখতে পারেন- রাজ্যের ভাসমান দ্বীপ লোকটাক লেক, উখরুলে অবস্থিত সাংঘাই হরিণ ও শিরুই লিলি। প্রকৃতপক্ষে মণিপুরে উৎপত্তি পোলো খেলার কারণেই পর্যটকদের এক বিশাল অংশ আগ্রহের সাথে এই রাজ্য পরিদর্শনে আসে। এখানকার বেশ কিছু পর্যটন স্থল যেগুলি এখানকার পর্যটনকে শক্ত ভিতে মুগ্ধ করেছে সেগুলি হল শ্রী গোবিন্দজী মন্দির, কেইবুল লামজাও জাতীয় উদ্যান, লামকা, মোরেহ এবং লোকটাক লেক।
মণিপুরের রাজধানী হল ইম্ফল এবং ভারতের সুদূর উত্তরদিকের এটি পর্যটন স্থল হিসাবে প্রসিদ্ধ। পর্যটন শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের উন্নতির ফলে আধুনিক ইম্ফলের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯৭ সালে রাজধানীটি পূর্ব এবং পশ্চিম এই দুই ভাগে বিভক্ত হয় যা পূর্ব ইম্ফল ও পশ্চিম ইম্ফল নামে পরিচিত। সুন্দর উপত্যকা এবং ল্যান্ডস্কেপ সমন্বিত ধীরগতির এই ছোট শহরে এসে আপনি এক নতুন জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এটি দেশের এক সবচেয়ে প্রাচীণ নগর হিসাবে বিবেচিত হয়। শহরটি সমু্দ্র পৃ্ষ্ঠ থেকে ৭৯০মিটারস্কেল উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার জলবায়ু স্বাস্থ্যপ্রদ এবং প্রতি বছর এখানে ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অনুভূত হয়।
রাজ্য সরকার মণিপুর রাজ্যের সর্ব্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ শাসক হিসাবে বিবেচিত হয়। বিধান সভার শাখা, রাজ্যপাল এবং বিচার বিভাগ নিয়ে সরকার গঠিত। ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারাই মণিপুরের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। নিযুক্তকরণ প্রক্রিয়া, কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শেই সম্পন্ন হয়। মণিপুরের রাজধানী, ইম্ফলে সচিবালয় গৃহ ও বিধানসভা রয়েছে। মণিপুরের রাজ্যস্তরীয় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হল মণিপুরের ফেডেরাল পার্টি, নাগা ন্যাশন্যাল পার্টি, নিখিল মণিপুরী মহাসভা এবং পিপলস্ লিবারেশন আর্মি অফ মণিপুর। উপরিউক্ত রাজনৈতিক দলগুলি ছাড়াও, আপনি দেখতে পেতে পারেন ন্যাশন্যাল পিপলস্ পার্টি (ভারত) এবং ডেমোক্রেটিক রিভোলিউশেনারি পিপলস্ পার্টি। সরকার সম্ভাব্য এক সর্বোত্তম পদ্ধতি মেনে চলে, এটা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপরিউক্ত পরিষদগুলিকে আবার বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
মণিপুরী সমাজের বৈশিষ্ট্য তার সরলতা এবং সমমানতা। এখানকর মানুষ প্রাণবন্ত এবং সহযোগী। সমাজে নারীর সম্মান উচ্চ। বয়স্কদের শ্রদ্ধা ও সম্মান দেওয়া হয়। জনগণের অর্থনৈতিক স্তর কমবেশি অভিন্ন। মানুষ এখানে ক্রীড়া ও খেলাধূলো করতে ভালোবাসে এবং বিশ্বের পোলো খেলার উৎস এই রাজ্য। যদিও তারা ধর্মে হিন্দু, তবে ভারতীয় জাতিপ্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের ভিত্তিতে হয়না। পরিবর্তে, সমাজ মৈতেই, বামুন (ভারতীয় মতে ব্রাম্হন), পানগান (মুসলিম, ভারতীয় অঞ্চলের) এবং লুই (সামাজিকভাবে একঘরে, এরা ভারত ও বার্মার থেকে যুদ্ধ বন্দীদের থেকে অবর্তীর্ণ হয়েছিল) সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্ত রয়েছে। মণিপুরীদের মধ্যে অন্তর্বিবাহ বিরল এবং এমনকি আজকের দিনেও, সলাই তথা মূল দশটি গোষ্ঠীর মধ্যেও বিবাহ করে না। সমাজ প্রতিবেশীদের নিয়ে গঠিত হয়, যাকে বলা হয় লেইকাইস। সমস্ত কার্যক্রম, কান-বেঁধান থেকে শুরু করে, উৎসব এবং দাহ কেন্দ্র লেইকাইসদের ঘিরেই হয়। লেইকাইসের অনুমোদনই সর্ব্বোচ্চ বলে সংস্কারযুক্ত মণিপুরীদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
মণিপুরের অর্থনীতিও দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা প্রকৃতপক্ষে রাজ্যের অর্থনীতিকে সমৃ্দ্ধ করতে সাহায্য করেছে। এই রাজ্যে প্রায় ৭৭০০-এর বেশী ক্ষূদ্র-শিল্প গড়ে উঠেছে। তাঁত, গ্রামীণ শিল্প, কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প সহ বেশকিছু ছোট মাপের শিল্প রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
এখানে গোপনীয়তার কিছু নেই যে, সরকারের ইতিবাচক ভূমিকাও প্রকৃতপক্ষে রাজ্যের সমস্ত অর্থনীতিকে সমৃ্দ্ধ করতে ও আর্থিক মেরুদন্ডকে শক্তিশালীকরণে সাহায্য করেছে। এখানে অনেক উৎপাদন শিল্প রয়েছে যেখানে বিভিন্ন জিনিষ যেমন প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিন সামগ্রী এবং ইস্পাত রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনীতির শক্তিশালীকরণে এক বিশাল প্রভাব রেখেছে।
কয়েকটি সিমেন্ট শিল্পের প্রতিষ্ঠাকরণও রাজ্যের অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। রাজ্যের অর্থনীতিকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদে, সরকারি সংস্থা বেশ কিছু সংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার ফলস্বরূপ এখানকার স্থানীয় মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি সর্ম্পকে সচেতন হয়ে উঠবে এবং সমস্ত শিল্পায়নকে উপকৃত করবে।
মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতির দৃশ্য একটি বিশাল উন্নতির সাক্ষী হয়ে রয়েছে। আগেকার দিনে, রাজ্যের শিক্ষা প্রাথমিকভাবে মণিপুরী সমাজের অভিজাত বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর কিছু নেতিবাচক ফল হল যে এই কারণেই রাজ্য শিক্ষায় এতটা পিছিয়ে পড়েছে। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, অর্থনৈতিক অবরোধ, অনবরত সংঘর্ষ যা গত এক দশকে মণিপুরের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার গ্রহণ যা প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিস্থিতির দৃশ্যকল্পে এক আমূল পরিবর্তন এনেছে। এখানে এক বিশাল সংখ্যক ব্যাক্তি চিহ্নিত হয়েছেন যারা প্রথম বিভাগের যোগ্যতা অর্জন করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এটা অস্বীকার করা কঠিন যে, উচ্চ শতাংশ সহ যোগ্যতা অর্জনকারী সফল শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির এক ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
২০১১ সালের জণগণনার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মণিপুরের মোট জনসংখ্যা হল প্রায় ২৫,৭০,৩৯০ জন। এর মধ্যে গ্রামীণ জনসংখ্যা হল ১,৭৩৬,২৩৬ জন এবং ৮,৩৪,১৫৪ জন হলেন শহরবাসী। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব হল ১২২ জন; তবুও ২০১১ সালের প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মোট ১৯টি দিক তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিম ইম্ফল, জনঘনত্বে সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ের নজির সৃষ্টি করেছে এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব হল প্রায় ৮৫৬ জন। উদ্বিগ্ন জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে থোউবল দ্বিতীয় স্থান দখল করে রয়েছে এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব হল প্রায় ৭০৮ জন। তামেঙলং সর্বনিম্ন জনসংখ্যার নজির গড়েছে এবং ২০১১ সালের সময়ে এখানকার জনঘনত্বের মান প্রতি একক বর্গ কিলোমিটারে ২৫ থেকে প্রতি একক বর্গ কিলোমিটারে ৩২ এর মধ্যে ছিল। মণিপুরের অধিবাসীদের খুব বেশি হলে তিনটি জাতিগত সম্প্রদায়ে ভাগ করা যেতে পারে যেমন মেইতেয়ী, উপত্যকা নিবাসী ব্যক্তি এবং প্রধান উপজাতিগুলি পার্বত্য এলাকায় বসবাস করে। এই পার্বত্য গোষ্ঠীগুলিকে আবার কূকি-চিন এবং নাগা হিসাবে দুটি স্বীকৃত নিম্নতর গোষ্ঠীতে উপবিভক্ত করা যেতে পারে।
মণিপুরের অন্যান্য আরোও কিছু ভাষার মধ্যে মানুষ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীতে কথা বলতে ভালোবাসে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী হল কেবলমাত্র এমন একটি উপজাতি যারা এই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় কথা বলে। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে আপনি বিস্মিত হবেন যে সারা বিশ্ব জুড়ে ৪,৫০,০০০-এরও বেশি মানুষ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় কথা বলে। কিছু জায়গার মানুষ রয়েছে যারা অন্যান্য কিছু ভাষায় কথা বলে যেমন মায়ানমার, বাংলাদেশ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশ।
মণিপুর মিডিয়া রাজ্যের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের এক প্রতিফলন। মিডিয়ার গণতান্ত্রিক দিকটি মানুষের মনোভাব, তাদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির অনুমান করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্যাবলয়েড এবং ইলেকট্রোনিক মিডিয়া খুবই ভালোভাবে বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে, এখানে ১৮-টি স্থানীয় সংবাদ-পত্র এবং আই.এস.টি.ভি. নামে একটি একক ইম্ফল ভিত্তিক টেলিভিশন মিডিয়া রয়েছে। টেলিভিশন এবং স্যাটেলাইট সংযোগ প্রায় প্রতিটি ঘরে উপলব্ধ রয়েছে। এখানে কেবল সংযোগের বিশাল চাহিদা রয়েছে এবং সরকার স্যাটেলাইট সংযোগ বিতরণে ভালো কাজ করেছে। তবে, বিদ্রোহী সমষ্টি, রিভোলিউশনারি পিউপল’স ফ্রন্ট, রাজ্যে কিছু চ্যানেল যেমন এম.টি.ভি, এফ.টি.ভি, এবং চ্যানেল ভি-র সম্প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এছাড়াও ইম্ফল উপত্যকায় হিন্দি সিনেমা সম্প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মণিপুর পর্যটন, পর্যটকদের রাজ্যের বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান, আদিবাসী সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্যকে আলোকিত করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দ্বারা আশীর্বাদিত, এই জায়গার মায়াময় ও মোহময় চিত্তাকর্ষক স্থান প্রচুর পর্যটকদের আকর্ষিত করে। এই উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যাত্রকালে রাজ্যের বিভিন্ন ভূ-সংস্থান এবং রঙ্গিন উৎসব ভ্রমণার্থীদের মুগ্ধ করে। লোকটাকের চিত্তাকর্ষক লেকের স্বচ্ছ টলমলে জল, উদভাসিত সবুজ ক্ষেত্র, চিত্র অনুরাগী ভূ-খন্ড এবং মনোরম আবহাওয়া এই সুন্দর রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। বেশ কিছু আদিবাসী উপজাতি গোষ্ঠী, এদের এক অনন্য বংশোদ্ভূত সাংস্কৃতিক নিয়মাবলী এবং প্রথাগত ঐতিহ্য যা রাজ্যের বিভিন্ন লোকনৃ্ত্য ও সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এই রাজ্যের পর্যটন, পর্যটকদেরকে, এখানকার অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির বৈচিত্র্যতার সাথে পরিচিত হওয়ার এক চমৎকার সুযোগ করে দেয়।
মণিপুরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য এই রাজ্যে বিভিন্ন তারকা এবং অ-তারকা হোটেল রয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রিসর্ট, রেস্তোঁরা এবং ক্যাফে রয়েছে যেগুলি ভ্রমণার্থীদের সমস্ত রকমের চাহিদা পূরণ করে।
অধিকাংশ পর্যটকদের মণিপুর পরিদর্শন করতে পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এখানকার উন্নত সংযোগব্যবস্থা যা রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মণিপুর রাজ্য বিভিন্ন দিক থেকে যেমন বিমান, সড়ক এবং রেলপথ দ্বারা সু-সংযুক্ত। রেলপথ সংযোগের ব্যাপারে, নাগাল্যন্ডের দিমাপুরে অবস্থিত প্রান্তিক রেলপথ সংযোগ সহ, ৩৯ নং-জাতীয় সড়ক রাজ্যের নিরাপদ সংযোগ ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করে। প্রান্তীয় রেলপথের মধ্যে একটি উপযুক্ত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যা জিরিবাম এবং ইম্ফলে অবস্থিত। সড়ক সংযোগ ব্যবস্থায় এখানে খুব বেশি হলে তিনটি জাতীয় সড়ক রয়েছে। ১৫০ নং-জাতীয় সড়ক, ৫৩ নং-জাতীয় সড়ক এবং ৩৯ নং-জাতীয় সড়ক সহ তিনটি জাতীয় সড়ক যা মণিপুর রাজ্যে অবস্থিত। এই তিনটি জাতীয় সড়ক মণিপুরের সড়ক সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা অনুমান করা যায়। রাজ্যের সড়ক সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতির প্রচেষ্টায়, সৌরাষ্ট্র-শিলচর সুপার হাইওয়ে প্রকল্প মোরেহ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা একটা ঘটনা যে যদি মোরেহ থেকে মেই সট (থাইল্যান্ড) পর্যন্ত প্রধান সড়ক নির্মাণ করা যায় তবে মণিপুর রাজ্যটি দক্ষিণী এশিয়ার দিক থেকে ভারতের প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করবে।
|