মহারাষ্ট্র পর্যটন

Travel to Maharashtra in Bengali

মহারাষ্ট্র পর্যটন
* মহারাষ্ট্র পর্যটন মানচিত্রে - মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ, শৈল শহর হোটেল ও অন্যান্য পরিদর্শনযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে দেখানো হয়েছে।

মহারাষ্ট্র পর্যটন

মহারাষ্ট্র ভ্রমণ পর্যটকদের ভারতের পশ্চিম অংশে অবস্থিত সুন্দর অঞ্চলটি অন্বেষণ করার সুযোগ প্রদান করে। মহারাষ্ট্র, ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র যা দুটি প্রধান ভূমিরূপ নিয়ে গঠিত এবং এটি অত্যন্ত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী। কঙ্কন উপকূলীয় অঞ্চল এবং দাক্ষিণাত্য টেবিল মালভূমি হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরূপ যা দর্শকদের বহু পরিদর্শনীয় গন্তব্য অন্বেষণের সুযোগ দেয়। এই রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তীসগড়, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, গোয়া এবং কর্ণাটক দ্বারা বেষ্টিত। সুতরাং পর্যটকদের মহারাষ্ট্রের চারপাশে ঘোরার জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

এই অঞ্চলের অধিকার রক্ষার জন্য, এই রাজ্য রক্ত-স্নাত বহু ভীতিকর যুদ্ধের প্রসিদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। মুঘলরা সবসময় এই অঞ্চলকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতেন কিন্তু খুব কমই সফল হতেন। শিবাজি, মারাঠাদের প্রথম মহান শাসক, যিনি জাতির উত্থানের পিছনে বীর যোদ্ধার একটি আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসাবে দাঁড়িয়ে আছেন, এমনকি তিনি ব্রিটিশদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন।

বানিজ্যিক চিত্র এবং বলিউডের খ্যাতি, মহারাষ্ট্রকে পর্যটকদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কিন্তু এখানে পর্যটন সম্ভাব্যের সম্পদের কারণেও মানুষ মহারাষ্ট্র ভ্রমণ করতে আসেন।

অজন্তা এবং ইলোরা এই রাজ্যের দুটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান যা সর্বদা পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। আজ থেকে তিন হাজার বছর পূর্বের ধর্ম এবং মানুষের কল্পনার নিদারূণ অঙ্কন এবং ভাস্কর্যগুলি অন্বেষণ করতে চাইলে অবশ্যই অজন্তা ভ্রমণ করুন।

মহারাষ্ট্রের জনপরিসংখ্যান
অবস্থান ভারতের পশ্চিম উপকূল,
পশ্চিমে আরব সাগর,
পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশ,
উত্তরে গুজরাট ও মধ্য প্রদেশ,
পূর্ব দিকে মধ্যপ্রদেশ,
দক্ষিণে কর্ণাটক ও অন্ধ্র প্রদেশ
অক্ষাংশ 20 ডিগ্রী উত্তর
দ্রাঘিমাংশ 76 ডিগ্রী পূর্ব
আয়তন 307,690 বর্গ কিলোমিটার
জলবায়ু ক্রান্তীয়।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 32 ডিগ্রী সেলসিয়াস
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 14 ডিগ্রী সেলসিয়াস
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 146 সেন্টিমিটার
রাজধানী মুম্বাই
জনসংখ্যা 96,752,247
ভাষা হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, ইংরাজি
ধর্ম হিন্দু, মুসলিম, জৈন, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ
পরিদর্শনের সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ
পরিধান গ্রীষ্মকালে – হালকা সূতি, শীতকালে – পশমী

মহারাষ্ট্রে পৌঁছানোর উপায়

মহারাষ্ট্র রাজ্য ভারতের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পোন্নত রাজ্য। এই রাজ্যে অনেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এবং মহারাষ্ট্রে পর্যটন বিকাশের সুবিধার্থে একটি ভাল পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। বিমান, রেল বা সড়কপথ দ্বারা ঝঞ্ঝা মুক্ত ভাবে মহারাষ্ট্রে পৌঁছাতে হলে মহারাষ্ট্র পৌঁছানোর উপায় আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। কৌশলগত অবস্থানের জন্য এই রাজ্য বিমান, সড়ক, রেল এবং জাহাজ ইত্যাদি যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা সহজে প্রবেশ যোগ্য। এখানকার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, এই রাজ্যকে ভারতের এক অন্যতম সমৃদ্ধ স্থান করে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিমানপথ মাধ্যমে

রাজ্যের রাজধানী শহর মুম্বাইয়ে দুটি বিমানবন্দর আছে – একটি হল আন্তর্জাতিক (ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) এবং অন্যটি অন্তর্দেশীয় (সান্তা ক্রুজ অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর)। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলি যথা – এয়্যার ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এয়্যার-লাইন্স, জেট এয়্যার-ওয়েজ, এয়্যার সাহারা, কিংফিশার এয়্যারলাইনস, স্পাইস জেট, এয়্যার ডেকান, রোজ মুম্বাই থেকে নিয়মিত আসা যাওয়ার বিমান পরিচালনা করে।

রেলপথ মাধ্যমে

মুম্বাই, রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন। বিপুল সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন ভারতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং রাজ্যের সাথে এই শহরকে সংযুক্ত করে। এই রাজ্যের পর্যটক গন্তব্যের কাছাকাছি কয়েকটি প্রধান রেল স্টেশন রয়েছে।

সড়কপথ মাধ্যমে

১৭-নং জাতীয় সড়ক এবং ৬-নং জাতীয় সড়ক ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে মহারাষ্ট্র রাজ্যকে সংযুক্ত করেছে। এই রাজ্য অত্যন্ত ভাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উপভোগ করে। অন্যদিকে, একটি জাতীয় মহাসড়ক এবং রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক একে অপরকে ছেদ করে থাকায়, ভারতের যেকোন অংশ থেকে মহারাষ্ট্রের যেকোন শহর সহজেই প্রবেশযোগ্য। এম.এস.আর.টি.সি. (মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন) বিভিন্ন শহরে ও রাজ্যে বহু বাস পরিচালনা করে।

মহারাষ্ট্রের পরিদর্শনমূলক স্থান

মহারাষ্ট্র ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য এবং অসাধারণ পর্যটন গন্তব্যের অধিকারী। মহারাষ্ট্র রাজ্য অসংখ্য গুহা, আকর্ষণীয় শৈলশহর, সুন্দর সমুদ্র সৈকত, প্রচুর বন্যপ্রাণী এবং বহু মার্জিত পবিত্র স্থান, যা নামই করুন মহারাষ্ট্র রাজ্য এসবেরই অধিকারী। তবে, বলিউড মহারাষ্ট্রকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনন্য করে তুলেছে।

এই সমস্ত কিছুর পাশাপাশি মহারাষ্ট্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিদর্শনমূলক শহরও বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলির মধ্যে বিশিষ্ট কয়েকটি শহরের নাম নিম্নলিখিত রূপে উল্লেখ করা হয়েছে –

মহারাষ্ট্রের দর্শনীয় শহর

  • সিরডি ভ্রমণ।
  • খান্ডালা ভ্রমণ।
  • মাথেরান ভ্রমণ।
  • মুম্বাই ভ্রমণ।
  • নাগপুর ভ্রমণ।
  • পঞ্চগনি ভ্রমণ।
  • মহাবালেশ্বর ভ্রমণ।
  • লোনাভালা ভ্রমণ।
  • পুনে ভ্রমণ।
  • অজন্তা ভ্রমণ।
  • ইলোরা ভ্রমণ।

মহারাষ্ট্রের দর্শনীয় স্থান

মহারাষ্ট্র একটি সম্পূর্ণ পর্যটন গন্তব্য এবং ভ্রমণ অনুরাগীদের জন্য একটি আনন্দ উদ্যান। এই সব আকর্ষণ সহ মহারাষ্ট্র একটি মনোহর বাতাবরণের অধিকারী যা উপেক্ষা করা কঠিন। মহারাষ্ট্রের অসংখ্য পরিদর্শনমূলক স্থানগুলিকে তাদের গুণগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভক্ত করা যেতে পারে; যেমন –

  • মহারাষ্ট্রের দুর্গ।
  • মহারাষ্ট্রের গুহা।
  • মহারাষ্ট্রের সৈকত।
  • মহারাষ্ট্রের শৈলশহর।
  • মহারাষ্ট্রের মন্দিরসমূহ।
  • মহারাষ্ট্রের মিউজিয়াম।
  • মহারাষ্ট্রের জ্যোর্তিলিঙ্গ।
  • মহারাষ্ট্রের বিনোদনমূলক কেন্দ্র।
  • মহারাষ্ট্রে নদী ও হ্রদ।


* মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণগুলির বিষয়ে নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে –

মুম্বাই


মুম্বাই মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর। এই শহর তার অঢেল সম্পদের কারণে অনেক স্বপ্নকে আকার দিয়েছে তাই একে ‘ভারতের স্বপ্ন নগরী’ বলে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও মুম্বাই ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী।

এই শহরের পরিদর্শনযোগ্য স্থানগুলি হল গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া, হ্যাঙ্গিং গার্ডেন, হাজী আলী মসজিদ, মেরিন ড্রাইভ, জুহু সৈকত এবং চৌপাটি। মুম্বাই শহর বলিউডের সদর দপ্তর।

রাত্রি বেলায় নবনির্মিত বান্দ্রা-ওরলি সমুদ্র লিঙ্কের একটি ড্রাইভ আপনাকে একটি চিরবিস্মরণীয় স্মৃতি প্রদান করবে।

এসেল্ ওয়ার্ল্ড এই দেশের মধ্যে শিশুদের জন্য এক অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশমূল্য আলাদা। বরিষ্ঠ নাগরিকদের প্রবেশ মূল্যে বিশেষ ছাড় রয়েছে। সাপ্তাহিক কর্মদিন গুলিতে প্রবেশ মূল্য ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা হতে পারে আবার সপ্তাহান্তে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।

এলিফ্যান্টা গুহা


মুম্বাই উপকূল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের নিকটবর্তী দ্বীপগুলিতে বহু গুহা রয়েছে। এই গুহা গুলিতে ৪৫০ থেকে ৭৫০ খ্রীস্টাব্দ প্রাচীন প্রভু শিবের মহিমা সম্বলিত নিদারুণ ভাস্কর্য দেখা যায়। বোট-জেটি থেকে নিয়মিত মোটর-বোট গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে আপনাকে দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাবে। এই গুহা ইউনেস্কো দ্বারা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষিত হয়েছে।

ঔরঙ্গাবাদ


ঔরঙ্গাবাদ শহর বিশেষত অজন্তা এবং ইলোরার ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলির জন্য বিখ্যাত। ২৯-টি পাহাড় কর্তিত গুহার আধিক্য সহ এই গুহা দেশের স্থাপত্য সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত। অজন্তার ম্যুরাল চিত্র এবং চিত্রানুগ অবস্থান সহ ইলোরার ভাস্কর্য আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। এই শহরের নাম মুঘল সম্রাট, ঔরঙ্গজেবের নামে নামাঙ্কিত যিনি দাক্ষিণাত্যের উপর রাজত্ব করার জন্য একে রাজপ্রতিনিধিত্বমূলক রাজধানী হিসাবে তৈরি করেছিলেন। সম্রাট তার মাকে শ্রদ্ধা জানাতে এখানে বিবি-কা-মকবরা নির্মিত করেন। এটি বিখ্যাত তাজমহলের একটি অনুকরণ। পান চাকি এবং দরওয়াজা প্রাচীন কালের অসাধারণ দক্ষ স্থাপত্যের উদাহরণ।

গণপতিপুলে


গণপতিপুলে মহারাষ্ট্রের একটি ছোট গ্রাম যা এক সুন্দর সৈকতের নিকটে অবস্থিত। এই সৈকতটির নাম গণপতিপুলে যা এখানকার সব সৈকতের চেয়ে সুন্দর এবং অত্যাশ্চর্য। সূর্য-চুম্বিত সমুদ্র সৈকত এবং ঘন সবুজ গাছপালা গণপতিপুলের বিশুদ্ধ ভূমিকে একটি শাশ্বত প্রণয়লীলার রূপ দেয়। এখানে কয়েকটি জল ক্রীড়া উপলব্ধ হয়। এছাড়াও এই সৈকতের পাশে একটি গণপতি (প্রভু গনেশ) মন্দির অবস্থিত।

মহাবালেশ্বর, লোনাভালা এবং খান্ডালা


আপনারা অনেকেই বাস্তবে না দেখলেও মহারাষ্ট্রের শৈলশহরগুলির সৌন্দর্য অন্ততপক্ষে টেলিভিশনে দেখেছেন। আমির খান এবং বলিউডকে ধন্যবাদ, খান্ডালা প্রত্যেক ভারতীয়দের মনে একটি জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে অমর হয়ে আছে। মহাবালেশ্বর এখানকার মন্দিরগুলির জন্য খ্যাত এবং এটি একটি জনপ্রিয় মধুযামিনী (হানিমুন) গন্তব্য। এখানকার বিশুদ্ধ বাতাস, নির্মল পরিবেশ, শান্ত হ্রদ এবং নির্ঝর জলপ্রপাত শশব্যস্ততা থেকে দূরে এই গন্তব্যটিকে একটি আকর্ষণীয় পশ্চাদপসরণ করে তোলে।

পঞ্চগনি


পাঁচটি পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত, পঞ্চগনি পৃথিবীর একটি স্বর্গরাজ্য। এই স্থানের পরম সৌন্দর্য এবং চিত্রানুগ পারিপার্শ্বিক লক্ষণীয়। এই শৈল শহর পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। আপনি পঞ্চগনিতে অনেক সমৃদ্ধ এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের খামার-বাড়ী দেখতে পাবেন।

পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান


দক্ষিণে সাতপুরা পর্বতমালার পাদদেশে ২৫৭ বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই স্থানটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভিন্ন বন্যপ্রানী দেখার জন্য একটি চমৎকার সুযোগ দেয়। পেঞ্চ জাতীয় উদ্যানে বাঘ, চিতাবাঘ, চিতল সাম্বার, খেঁক হরিণ, নীল গাই, কালো হরিণ, গাউর, বন্য শূকর, চৌসিংহ, আলস্য ভল্লুক, লেঙ্গুর, বানর, ইঁদুর হরিণ, হায়েনা এবং উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী দেখা যায়।

সিরডি


মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলায় অবস্থিত সিরডি, একটি শহর। শ্রী সাঁই বাবার সমাধির উপর নির্মিত সিরডি সাঁই মন্দিরে সারা বিশ্ব জুড়ে ভক্তদের ভিড় হয়। আপনি সিরডি ভ্রমণ করতে এলে এই মন্দিরের পাশে শনি মন্দির, নরসিংহ মন্দির, কান্দোবা মন্দির, সাকোরি আশ্রম এবং চাংদেব মহারাজের সমাধি দেখতে পাবেন।

পুণে


“প্রাচ্যের অক্সফোর্ড” বা “দাক্ষিণাত্যের রানী” হিসেবে সুপরিচিত মহারাষ্ট্রের পুণে শহর তার সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক অতীত ও উজ্জ্বল আধুনিকতার জন্য পরিদর্শনযোগ্য। পুণের সবুজ পাহাড় ও সুন্দর হ্রদ দর্শকদের অবশ্যই মুগ্ধ করবে।

মহারাষ্ট্রের নিকটবর্তী পর্যটন গন্তব্যস্থল

মহারাষ্ট্র রাজ্য পশ্চিমে গুজরাট রাজ্য, উত্তর-পূর্বে মধ্য প্রদেশ, পূর্বে ছত্তীসগঢ় এবং দক্ষিণে কর্ণাটক দ্বারা পরিবেষ্টিত। আপনার হাতে যদি সময় থাকে তাহলে এখানকার প্রত্যেকটি জায়গা পরিদর্শন করতে ভুলবেন না।

গুজরাট রাজ্যে বিভিন্ন মন্দির এবং দুর্গ আছে যা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলি হল ভাবনগরের পালিতানা মন্দির, অক্ষরধাম মন্দির এবং সূর্য মন্দির ইত্যাদি। গুজরাটের গির অরণ্য বিভিন্ন ধরণের সংরক্ষিত পশুদের জন্য বিখ্যাত।

অন্ধ্র প্রদেশের তিরুমালা ভেঙ্কেটেশ্বর মন্দির, পৃথিবীর মধ্যে তীর্থযাত্রীদের দ্বারা সর্বাধিক পরিদর্শনীয় মন্দির।

যোজ্ঞ জলপ্রপাত, বানেরঘাটা এবং বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান এবং হোয়সালা মন্দির কর্ণাটক রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য। সুতরাং এই রাজ্যে অনেক কিছু দেখার আছে যা শুধুমাত্র এই রাজ্য পরিদর্শন করেই উপলব্ধি করা যাবে।

জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে নৌবিমান পরিষেবা

মেরিটাইম এনার্জি হেলি এয়ার সার্ভিসেস প্রাঃ লিমিটেড (এম.ই.এইচ.এ.আই.আর) একটি অনন্য নৌবিমান সেবা চালু করেছে ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যের পর্যটন বিভাগ মুম্বাইয়ের জুহুর সাথে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটক গন্তব্যগুলির সংযোগ স্থাপন করবে।

জুহু এবং আম্বি উপত্যকার মধ্যে ২৪-শে ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালে চার্টার বিমান পরিষেবা চালু করা হয়েছিল। চার জনের বসার উপযোগী একটি সেসনা ২০৬ নৌবিমান এই যাত্রাপথে পরিষেবার জন্য মোতায়েন করা হয়। যাতায়াতের খরচ নির্ধারণ করা হয় ৪,০০০/- টাকা থেকে ৪,৫০০/- টাকা। তবে, নরিমান পয়েন্ট পর্যন্ত পরিষেবা খরচ হল ৭৫০/- টাকা।

এই সংস্থা ও মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এম.টি.ডি.সি.)-এর যৌথ প্রচেষ্টা মুম্বাইকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর করে তুলেছে যেখানে পোর্ট ব্লেয়ারের পরে নৌবিমান অপারেশন চালু হয় যা ২০১১-সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকরী হয়েছে। পরিবহনের এই অভিনব মাধ্যম লাভাসা, আম্বি ভ্যালি, নাসিক, পঞ্চগনি এবং লোনাভালার সঙ্গে জুহুকে সংযুক্ত করে। এটি ভ্রমণ যাতায়াতের সময় সংরক্ষণের সহায়ক হয়। জুহু বিমানবন্দর থেকে প্রতিটি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের যাত্রা আধ ঘন্টারও কম সময় অপচয় করে। বর্তমানে এই প্রকল্পে আরও সুবিধাজনক বিকল্প ব্যবহৃত হওয়ায় এই প্রকল্প বহু পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

* কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় –

  • ভাসমান জেটি এবং স্পিডবোট যাত্রীদের জন্য উপলব্ধ রয়েছে যা বিমান পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য জলের ভিতর দিয়ে তাদের বহন করে।
  • এই প্রকল্পকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায় সম্ভবত এপ্রিল ২০১৪ সালে শুরু করা হয়, অন্যদিকে দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হতে আরো কয়েকটি মাস সময় লাগতে পারে।
  • কর্তৃপক্ষ বলেন যে প্রথম পর্যায়ের অন্য চারটি গন্তব্যস্থল পরিষেবা মার্চের ২০১৪-সালের শেষ নাগাদ কার্যকরী হবে।
  • বিমান চার্টার সার্ভিসের দ্বিতীয় পর্যায় হরিহরেশ্বর, গনপতিপুলে, মুরুদ জঞ্জিরা এবং তারকারলি সহ কোঙ্কন অঞ্চলে নৌবিমান অপারেশন প্রদান করবে।

মহারাষ্ট্রে কেনাকাটা

মহারাষ্ট্রে কেনাকাটার জন্য মুম্বাই সেরা জায়গা।

এটি ভারতের এক পরম কেনাকাটার স্থান, যেখানে আপনি যা কিছু কিনতে পারেন। এছাড়াও আপনি ঔরঙ্গাবাদে কেনাকাটা করতে পারেন।

এছাড়াও ভাল কেনাকাটার জন্য মহারাষ্ট্র একটি ঐতিহ্যময় হস্তশিল্পে সমৃদ্ধ। আপনি যদি সত্যিই ফ্যাব্রিক প্রেমী হন, তাহলে কিছু নিদারূণ পণ্য কেনার জন্য মহারাষ্ট্র অবশ্যই আপনার আদর্শ জায়গা। ২০০০ বছরের পুরাতন হাতে বোনা পৈঠানি শাড়ির জন্য ঔরঙ্গাবাদ অঞ্চল অত্যন্ত বিখ্যাত।

যেহেতু রাজধানী শহর মুম্বাই ভারতের একটি মেট্রোপলিটান শহর, তাই এখানকার অন্যান্য অঞ্চলে হরেক রকমের কেনাকাটার পণ্য খুঁজে পাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।

মহারাষ্ট্রে কেনাকাটার সময় আপনি এগুলি দেখতে পারেন –

  • পৈঠানি এবং হিম্রু শাড়ি।
  • গালা নি্র্মিত পাত্র।
  • কোলহাপুরি চপ্পল।
  • ওয়ারলি উপজাতীয় চিত্রাঙ্কন।
  • বিদ্রি ওয়্যার।
  • নারায়ণ পেট্ শাড়ি, ইত্যাদি।

আপনি এই রাজ্যে প্রায় সর্বত্রই ব্যক্তিগত দোকান এবং সরকারী এম্পোরিয়া খুঁজে পেতে পারেন। মুম্বাইয়ের মত শহরে বহু বিভাগীয় অভিজাত দোকান এবং শপিং মল আছে। আপনি এম.জি. রোডের ফ্যাশন স্ট্রীট থেকে দরাদরি করে বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনতে পারেন।

পর্যটক গন্তব্যগুলিতে বহু ব্যক্তিগত দোকান আছে। আপনি যদি আরেকটু বেশী আগ্রহী হন তাহলে আপনি স্থানীয় কারিগরদের কারখানা পরিদর্শন করতে পারেন, বিশেষ করে পৈঠানি ও হিম্রু শাড়ির জন্য।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৩ -ই জুলাই, ২০১৫