দমন ও দিউ মানচিত্র

Daman and Diu Map in Bengali

দমন ও দিউ মানচিত্র
* মানচিত্রের মধ্যে দমন ও দিউ-এর আভ্যন্তরীণ সড়ক, রেলপথ, এলাকা, বিভাগ, পর্যটন কেন্দ্র ও বিশিষ্ট স্থান ইত্যাদি দেখানো হয়েছে৷

দমন ও দিউ-এর উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.daman.nic.in
স্থাপনের তারিখ 30 মে, 1987
আয়তন 111 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 2169/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 243,247
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 150,301
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 92,946
জেলার সংখ্যা 2
রাজধানী দমন
নদীসমূহ ভগবান, দমনগঙ্গা, কোলাক, কলাই, চাশি
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান গির জাতীয় উদ্যান, শাসনগির বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ফুদাম পক্ষী সংরক্ষণ
ভাষা ওয়ার্লি, আগ্রি, কোঙ্কনি, গুজরাটি, হিন্দি, ইংরাজী
প্রতিবেশী রাজ্য গুজরাট
সাক্ষরতার হার (2011) 92.28%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 618
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 0
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 1

দমন ও দিউ সম্পর্কে

ভারতের গুজরাটের নিকটে অবস্থিত, দমন ও দিউ হল দেশের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। দমন, গুজরাটের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। অন্যদিকে দিউ নামের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। এটি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে যথাক্রমে ভগবান ও কালেম নদী দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্বদিকে গুজরাট ও পশ্চিমে আরব সাগর দ্বারা আবদ্ধ রয়েছে।

দিউ, ভেরাবল বন্দরের নিকটে ক্যাম্বে উপসাগরের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি একটি জলজ সংকীর্ণ চ্যানেলের মাধ্যমে সৌরাষ্ট্র উপ-দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বিভাজিত রয়েছে। এই দ্বীপটি, উত্তর দিকের একটি সংকীর্ণ চ্যানেলের মাধ্যমে মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে। দমনে একটি হালকা এবং আর্দ্র জলবায়ু রয়েছে অন্যদিকে দিউ-তে একটি গুমোট জলবায়ু অনুভূত হয়। এর কোনও উপ-বিভাগ নেই। দমন অঞ্চলটি এক সংগ্রাহকের অধীনে ভারপ্রাপ্ত রয়েছে, অন্যদিকে দিউ একটি নাগরিক প্রশাসকের অধীনস্থ রয়েছে।

ইতিহাস

দমন ও দিউ-এর ইতিহাস ত্রয়োদশ শতকের সময়কে ফিরিয়ে নিয়ে আসে যখন এই ক্ষেত্রটি চৌড়া রাজপুতদের অংশ ছিল যারা বাঘেলাদের দ্বারা পরাজিত হয় এবং ১৩৩০ খ্রীষ্টাব্দে এই বাঘেলা-রাও মুসলিমদের দ্বারা পরাজিত হয়। এই অঞ্চলে মুসলিমরা পরবর্তী ২০০ বছর শাসন করে। অবশেষে ১৫৩৪ খ্রীষ্টাব্দে পর্তুগীজরা এই অঞ্চল দখল করে এবং ৪৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে এখানে রাজত্ব করে। পরবর্তীকালে গুজরাটের শাসকেরা, ব্রিটিশদেরকে এখান থেকে বিতাড়িত করার জন্য অনেক চেষ্টা চালায় কিন্তু তাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ১৫৫৯ খ্রীষ্টাব্দে দমন গুজরাট শাসকদের দখলে আসে। গোয়াতে স্থাপিত হওয়া ন্যায়-বিচার তদন্ত, পূর্ব দিকের পর্তুগীজ সাম্রাজ্যের পতনের এক বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৬২ সালের সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) আইনের অধীনে, গোয়াকে একটি ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ভারতীয় সংবিধানের সর্বপ্রথম সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবিধানের ৫৭-তম সংশোধনের মাধ্যমে দমন ও দিউ, গোয়া থেকে আলাদা হয়ে একটি স্বতন্ত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে ওঠে। ১৯৮৭ সালে দমন ও দিউ-কে ভারতের সংবিধান দ্বারা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে ঘোষনা করা হয়।

জনসংখ্যা

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন ও দিউ-এর মোট জনসংখ্যা হল প্রায় ২,৪৩,২৪৭ জন। বিভিন্ন অধিবাসীদের নিয়ে এই দমন ও দিউ-এর জনসংখ্যা গঠিত। জনসংখ্যার ঘনত্বে দমন ও দিউ-তে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২১৬৯ জন মানুষ বাস করে। প্রতি ১০০০ জন পুরুষের অনুপাতে এখানে মহিলার সংখ্যা হল ৬১৮ জন।

ভৌগোলিক অবস্থান

প্রকৃতপক্ষে দমন ও দিউ-য়ের জেলার ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে। দমন জেলাটি ভারতীয় পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। এই ক্ষেত্রটি তার দক্ষিণ দিকে কালেম নামের নদী দ্বারা, উত্তরে ভগবান নামের নদী দ্বারা, পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বদিকে ভালসাদ জেলা দ্বারা বেষ্টিত। দমন গঙ্গা নদীটি, দমন জেলাটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। ভগবান, দমন গঙ্গা ও কালেম এই তিনটি নদী, এই জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

ভারতের সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন, এক প্রশাসকের দ্বায়িত্বে থাকে। তেমনভাবেই, ভারতের রাষ্ট্রপতি দমন ও দিউ-এ একজন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। কিন্তু রাজ্যপালের ন্যায় এই প্রশাসক রাজ্যের প্রধান হিসাবে গণ্য হন না। অন্যান্য আরোও কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা তাঁর কাজকর্মে সহায়তা করেন।

অর্থনীতি ও পরিকাঠামো

এখানকার অর্থনীতির প্রধান উপায় হল মাছ ধরা। এখানে যন্ত্রচালিত নৌকা ও অন্যান্য জিনিষও উপলব্ধ হয়। কৃষির জন্য সেচের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদনের জন্য চাষের জমি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেচের মোট জমি হল ৫১৭ হেক্টর। এই অঞ্চলে ৫৫০-টি শিল্প একক রয়েছে। দমন ও দিউ-য়ের সড়কের মোট আয়তন হল যথাক্রমে প্রায় ১৯১ কিলোমিটার ও ৭৮ কিলোমিটার। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কোনও রেলওয়ে স্টেশন এবং বিমানবন্দর নেই।

সমাজ ও সংস্কৃতি

মানুষ, সংস্কৃতি, উৎসব ও মেলা এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সামাজিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে একটি বহুমুখী চরিত্র লক্ষ্য করা যায়, এর কারণ হল এক সময় এই অঞ্চলটি পর্তুগীজদের উপনিবেশ ছিল। এখানকার সাংস্কৃতিক জীবনে ইউরোপীয, উপজাতীয় এবং ভারতীয় উপাদানের একটি মিশ্র প্রতিফলন দেখা যায়। এই অঞ্চলের সমস্ত উৎসব এবং মেলাগুলি চরম ধুমধাম এবং জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। সঙ্গীত ও নৃত্য, দমন ও দিউ-য়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এখানকার স্থানীয়দের ঐতিহ্য ও রীতনীতির সঙ্গে গুজরাটের ঐতিহ্যের প্রচুর মিল রয়েছে। এখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে গুজরাট রাজ্যের মানুষের একটি আকর্ষণীয় সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। দমন ও দিউ-য়ের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ভূক্ত এবং এখানকার প্রধান প্রচলিত ভাষা হল গুজরাটি।

ভাষা

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বেশ কিছু প্রচলিত ভাষা রয়েছে। হিন্দি, ইংরাজী, মারাঠি এবং গুজরাটি ভাষা এখানে আধিকারিক ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিছু বয়স্ক মানুষ পর্তুগীজ ভাষা বোঝে এবং কথাও বলতে পারে, তবে এটি এখন প্রায় অস্বীকৃত এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমেও অন্তর্ভূক্তি নেই। আধিকারিক ভাষা রূপে ইংরাজী ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উপজাতি ভাষাগুলির মধ্যে কোঙ্কনি, আগ্রি ও ওয়ার্লি ভাষারও প্রচলন রয়েছে।

শিক্ষা

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির স্বাক্ষরতার হার হল প্রায় ৮৭.০৭ শতাংশ। এখানে অনেক বিদ্যালয়, উচ্চ-বিদ্যালয় ও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলি শিক্ষা প্রদানে সহায়তা করে। এখানকার জনপ্রিয় কিছু বিদ্যালয়গুলি হল- নানী দমনে অবস্থিত কোস্ট গার্ড পাবলিক বিদ্যালয়, সার্বজনিক বিদ্যালয়, মাচ্ছি মহাজন উচ্চ-বিদ্যালয় এবং মোতি দমনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ আওয়ার লেডি ফতিমা ইত্যাদি। দমন মহাবিদ্যালয় সমস্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা বিষয়ক সুবিধা প্রদান করে।

দমন ও দিউ-য়ের পর্যটন

দমনে, নানী দমনে অবস্থিত সেন্ট জেরোমের দূর্গ ঘুরে দেখা যেতে পারে, এখানে একটি জৈন মন্দিরও রয়েছে। মোতি দমনে অবস্থিত, সপ্তদশ শতাব্দীর পুরনো সেন্ট ক্যাথিড্রাল এবং দ্য চার্চ অফ আওয়ার লেডি অফ রোসারী-ও পরিদর্শন যোগ্য এবং এই গির্জার দেওয়ালে সুন্দর পর্তুগীজ খোদাই কার্যও ঘুরে দেখা যেতে পারে। প্রাচীন গথিক স্হাপত্য রীতিতে নির্মিত এই গির্জা পর্যটকদের আকর্ষিত করে। মহিমান্বিত লাইট হাউস, চিত্তবিনোদন উদ্যান এবং দমন জেটি-তে অবস্থিত গান্ধি পার্ক-ও হল আকর্ষণীয় পর্যটন স্থল। সমস্ত সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে দেবকা সৈকত খুবই উল্লেখযোগ্য। এটি ছাড়াও, গুজরাট সীমান্তের খুবই নিকটে অবস্থিত জামপোর সৈকতও সাঁতারুদের খুব পছন্দের স্থান। সত্য নগর উদ্যানে অবস্থিত দ্য লেক গার্ডেন তার ঝরনা ও ভ্রমণ-বিহারের জন্য প্রসিদ্ধ। দিউ-তে, জম্পা প্রবেশ-দ্বার খুবই আকর্ষণীয় স্থল। এখানে সিংহ, পরী এবং পুরোহিতদের ভাস্কর্য রয়েছে এবং ১৭০২ খ্রীষ্টাব্দের পুরনো শিলালিপি সহ একটি চ্যাপেল রয়েছে। এছাড়া কৃত্রিম জম্পা জলপ্রপাতও খুবই আকর্ষণীয়। এখানকার এখনও পর্যন্ত সক্রিয় একমাত্র গির্জা হল সেন্ট পল’স গির্জা। এর নিকটবর্তী একটি প্রাচীন সেন্ট থোমাস গির্জা ছিল, বর্তমানে কর্তৃপক্ষ এটিকে নিজেদের আয়ত্তে এনে দিউ যাদুঘর হিসাবে রূপান্তরিত করেছে। অশিশি-র সেন্ট ফ্রান্সিস গির্জাটিকে হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। মারোওয়াড় স্মারক পর্তুগীজদের বিজয় স্তম্ভ হিসাবে রয়েছে। ১৫৪১ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত এই বিশাল দূর্গ এখন পুরনো এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি একটি প্রধান আকর্ষণীয় স্থল। অন্য আরেকটি পর্যটন আকর্ষণ হল গঙ্গেশ্বর মন্দির।

নাগোয়া সৈকত, দিউ-য়ের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সমুদ্র সৈকত। এখানকার অন্যান্য বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলি হল গোমতীমাতা, চক্রতীর্থ এবং সানসেট পয়েন্ট। জামা মসজিদও উল্লেখযোগ্য; দমনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলি হল দেবকা সৈকত, জামপোর সৈকত, কচিগাম জলাধার, সত্য সাগর উদ্যান, দলওয়াড়া, কাড়াইয়া পুকুর, নানী দমন জেটি উদ্যান, পুরনো গির্জা, দূর্গ, লাইট হাউস ও সামার হাউস। জলন্ধর সৈকত, নগাঁও সৈকত এবং ঘোগলায় অবস্থিত শিশু উদ্যান হল দিউ-য়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।

পরিবহন

সড়ক ও বিমান মাধ্যম দ্বারা সহজেই দমন ও দিউ-তে পৌঁছানো যায়। দমন এক শক্তিশালী বিমান মাধ্যম দ্বারা ভারতের প্রধান শহরগুলির সাথে সু-সংযু্ক্ত রয়েছে। অধিকাংশ অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি দমন ও দিউ থেকে পরিচালিত হয়। দমন ও দিউ-য়ের নিজস্ব কোনও রেলওয়ে স্টেশন নেই, এখানকার নিকটবর্তী রেলস্টেশন হল গুজরাটের ভাপী ও ভেরাবল রেলওয়ে স্টেশন। দমন ও দিউ-য়ে সু-সংযুক্ত সড়ক সংযোগ রয়েছে। এই দ্বীপপুঞ্জগুলি গুজরাট, মুম্বাই ও গোয়ার সঙ্গে সু-সংহতভাবে যুক্ত রয়েছে। গুজরাটের বিভিন্ন শহর থেকে দমন ও দিউ পর্যন্ত নিয়মিত বাস চলাচল করে।

* সর্বশেষ সংযোজন : ০৯- ই মার্চ, ২০১৫