আসাম মানচিত্র

Assam Map in Bengali

আসাম মানচিত্র
* মানচিত্রে প্রধান শহর, রেলপথ, নদী, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি দেখানো হয়েছে।

আসামের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.assam.gov.in
স্থাপনের তারিখ 1912 ( আসাম প্রদেশ-ব্রিটিশ ভারত), 15 আগস্ট, 1947
আয়তন 78,438 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 397/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা(2011) 31205576
পুরুষ জনসংখ্যা(2011) 15,939,443
মহিলা জনসংখ্যা(2011) 15,266,133
জেলার সংখ্যা 27
রাজধানী দিসপুর
নদীসমূহ ব্রক্ষপুত্র, মানস, সুবনশিরি, সোনাই
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, মানস জাতীয় উদ্যান, রাজীব গান্ধী ওরাং জাতীয় উদ্যান
ভাষা অসমিয়া, বোড়ো, কার্বি, বাংলা
প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়, অরণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা, মিজোরাম, পশ্চিম বঙ্গ।
সরকারি রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত ও মোর আপনার দেশ
রাষ্ট্রীয় পশু এক শৃঙ্গ গন্ডার
রাষ্ট্রীয় পাখি হোয়াইট-উইঙ্গড ডাক
রাষ্ট্রীয় ফুল কপৌ ফুল
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 30569
সাক্ষরতার হার (2011) 73.18%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 954
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 126
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র 14

আসাম সম্পর্কে

আপনি কি কখনও আপনার হোটেল রুমে বসে ভারতের সেরা চা পান করতে করতে কোনও আনন্দদায়ক ছুটি কাটানোর স্বপ্ন দেখেন, তাহলে আসাম এমনই একটি জায়গা যে সুযোগ আপনি হারাতে চাইবেন না। এই রাজ্যের রাজধানী হল দিসপুর, যা গুয়াহাটির মধ্যে অবস্থিত। সাতটি ভগিনী রাজ্যের মধ্যে একটি হল আসাম, যাকে ঘিরে রয়েছে অবশিষ্ট ভগিনী রাজ্যগুলি- ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ- এবং আরেকটি হল পশ্চিমবঙ্গ। এছাড়াও এই রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং ভূটানের আন্তর্জাতিক সীমানা বিভাজিত। রাজ্যটি স্হলভূমি দ্বারা বেষ্টিত।

কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান এবং সেখানকার বন্যপ্রাণীর জন্য এই শহর সুপরিচিত। আরোও উল্লেখযো্গ্য, এই রাজ্য বিলুপ্তপ্রায় ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষনের চেষ্টা করছে। এছাড়াও এই রাজ্যটি এক ধরনের অসমিয় সুবর্ণ রেশম-(মুগা নামে পরিচিত) এর জন্যও সুপ্রসিদ্ধ, যা একমাত্র আসামেই উৎপাদিত হয়। অন্য একটি দিক, যা আসামকে ভারতের হৃদয়ের সান্নিধ্যে এনেছে তা হল এর প্রথম এবং প্রাচীনতম পেট্রোলিয়াম সম্পদ ।

২০১৩ সালের ১৮ই নভেম্বর, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ “ও মোর আপনার দেশ”(ও আমার প্রিয় দেশ) গানটিকে, এই রাজ্যের রাষ্ট্রীয় সংগীত হিসাবে স্বীকৃত হবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন, যা হল আসাম রাজ্যিক জাতীয় সঙ্গীত। গানটি রচিত হয়েছিল বিখ্যাত সাহিত্যিক সাহিত্যরথী লক্ষীনাথ বেজবরুয়া দ্বারা এবং বিভিন্ন সরকারি ও বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপশি এই গানটিও গাওয়া হয়।

ইতিহাস

মধ্যযুগীয় সময়ে, আসাম দুটি রাজবংশ কোচ এবং অহম দ্বারা শাসিত হত। কোচদের উৎস ছিল তিব্বতী-বার্মা অঞ্চল এবং অহম ছিল তাই, যারা উত্তর আসাম শাসন করত। এইসময় ভারতবর্ষ অনেক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু ব্রিটিশদের আসা পর্যন্ত আসাম কোনও পশ্চিমী শক্তির দ্বারা শাসিত হয়নি। এমনকি মোঘলরা সতেরোবার আসাম আক্রমণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর পশ্চিম আসাম ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত হয়। এরপর, অবশেষে ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে এখানকার রাজা পুরন্দর সিংহ উচ্চ আসাম দখল করেন। এর পাঁচ বছর পরে এই এলাকা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়।

ভৌগোলিক অবস্থান

ভূ-তত্ত্ববিদেরা ইঙ্গিত করেছেন যে ব্রক্ষপুত্র নদ আসামের পূর্বগামী নদী এবং এটি এখানকার জীবনরেখা হিসাবে মানা হয়। এই নদীটি অরুণাচল প্রদেশ হয়ে এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। রাজ্যে প্রবেশ করার পর নদীটি বিস্তৃত হয়েছে এবং অনেক উপনদী গঠন করেছে। রাজ্যটি পেট্রোলিয়াম, কয়লা, চুনাপাথর এবং প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি সম্পদে সমৃদ্ধ । এছাড়াও অন্যান্য খনিজ যেমন মৃত্তিকা, চৌম্বকীয় কোয়ার্টজাইড, ফেলডসপার, সিলিমিনাইট, চীনামাটি ইত্যাদিও পাওয়া যায়। রাজ্যের পশ্চিম জেলাগুলিতে অল্প পরিমাণ লোহা পাওয়া যায়। রাজ্যের উত্তরদিকে গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম মজুদ আছে, যা ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়।

সরকার এবং রাষ্ট্রনীতি

আসাম রাজ্যে ২৭টি প্রশাসনিক জেলা রয়েছে, তাদেরকে আরও ৪৯টি উপ বিভাগীয় বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেগুলিকে অসমিয়াতে মহকুমা বলা হয়। জেলাগুলি তাদের নিজ নিজ সদর দপ্তর দ্বারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পঞ্চায়েত দপ্তর, জেলা প্রশাসক এবং জেলা আদালত কর্তৃক শাসিত ও পরিচালিত হয়। পাহাড়, নদী এবং অরণ্য দ্বারা রাজ্যের জেলাগুলির সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা পঞ্চায়েত দ্বারা এখানকার জেলার স্থানীয় সরকার এবং গ্রাম্য এলাকার দায়িত্ব নেওয়া হয়। তবে, শহর এবং নগরগুলি স্থানীয় শহুরে সংস্থা দ্বারা দেখাশোনা করা হয়। বর্তমানে এই রাজ্যের মধ্যে প্রায় ২৬,২৪৭টি গ্রাম রয়েছে। স্থানীয় শহুরে সংস্থাগুলি হল নগর-সমিতি(টাউন-কমিটি), পৌর-সভা(মিউনিসিপ্যাল বোর্ড) এবং পৌর নিগম(মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন)। আসামের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর হল গুয়াহাটি, নগাঁও, জোড়হাট, ডিব্রুগড়, জোড়হাট এবং শিলচর। এই রাজ্যের রাজস্বের হিসাব রাখার জন্য,২৭টি জেলাকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামের সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৩.১৮ শতাংশ, যার মধ্যে মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৬৭.২৭ শতংশ এবং পুরুষদের সাক্ষরতার হার ৭৮.৮১ শতাংশ। এখানকার বেশিরভাগ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যলয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাযার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। তবে, কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে অসমিয়া ভাষার ব্যবহার হয় । এই রাজ্যের, বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য রাজ্যগুলির ন্যায় গঠিত – যেমন প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক। আসামে ছাত্রদের ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত রাজ্য সরকার দ্বারা অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদান করা হয়। আসামে সরকারি বিদ্যালয় গুলির সাথে সাথে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিও চলে। আসামের প্রাথমিক শিক্ষাদপ্তর দ্বারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম নির্ধারিত হয়। তবে রাজ্যে, রাজ্য শিক্ষা পর্ষদ (এ এইচ এস ই সি) এবং কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সি বি এস ই)- এর অন্তর্ভূক্ত উভয় বিদ্যালয়ই আছে।

অর্থনীতি

দেশের পেট্রোলিয়াম চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণ করা সত্ত্বেও রাজ্যের বৃদ্ধির হার ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো একই পর্যায়ের নয়। রাজস্ব উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডিব্রুগড় , মহারাষ্ট্রের মুম্বাই-য়ের পর দেশের দ্বিতীয় বৈভবশালী জেলা হিসাবে পরিচিত। দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতো, কৃষিই এখানকার লোকেদের প্রধান জীবিকা। কৃষি আসামের আয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্হানে রয়েছে এবং প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ এই বৃত্তিতে নিযুক্ত রয়েছে। তবে, চা উৎপাদনে এই রাজ্য গোটা বিশ্বে এক বিশাল অবদান রেখেছে। আসাম চা, ক্যামেলিয়া আসামিকা নামেও পরিচিত, যা দামী চা পাতা ও সুন্দর স্বাদের জন্য পরিচিত। এছাড়াও অন্যান্য কৃষিজ দ্রব্য যেমন মিষ্টি আলু, আলু, হলুদ, লেবু জাতীয় ফল, রাইসরিষা, মশলা, ধান, পাট, সরিষা, পেঁপে, কলা, সুপারি, আখ, সবজি, শাক-সবজি ইত্যাদিরও ফলন হয়।

আসামের সমাজ

আসাম, ভারতের সবচেয়ে সুন্দর রাজ্যগুলির মধ্যে একটি এবং দেশের উত্তর পূর্বাংশের আকর্ষণীয় প্রবেশ দ্বার। সৌম্য ব্রক্ষপুত্র নদ, বিশাল পর্বত, এবং তার প্রসিদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলসহ এই রাজ্য পর্যটকদের কাছে এক স্বর্গউদ্যান। স্পন্দনশীল জীবন শৈলী, সমস্ত হাসিখুশি লোকজন, বিভিন্ন উপজাতি ও ভিন্ন সংস্কৃতির উপস্থিতি বিস্ময়কর আসাম সমাজের প্রধান কেন্দ্র। আসামের ইতিহাস, আর্যদের সময়কে ফিরিয়ে আনে এবং মহাকাব্য,তান্ত্রিক, বৈদিক, বৌদ্ধ সাহিত্যে এর উল্লেখ পাওয়া গেছে। এই রাজ্য বিভিন্ন মহান রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। এই রাজ্যের মানুষেরা খুবই বন্ধুবৎসল এবং তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।

বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

আসামের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলি বিভিন্ন প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য, গাছপালা, প্রাণী ও পাখির একটি ভিন্নধর্মী মিশ্রন। উপযুক্ত জলবায়ু ও আবহাওয়ার অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং সুবিশাল অরণ্যের ভান্ডার আসামকে বিভিন্ন পশু, পাখি এবং প্রাকৃতিক গাছপালার অনুকূল স্থান হিসাবে গড়ে তুলেছে। আসামের বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যান যা বিশ্বব্যাপী কিছু বিরল প্রজাতির প্রজনন স্থল হিসাবে গণ্য হয়। আসামের অনেক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সোনালী লেঙ্গুর থেকে একশৃঙ্গী গন্ডার সহ প্রচুর বন্যপ্রাণীকে তাদের আশ্রয় এবং অধিকার প্রদান করে।

জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আসামের জনসংখ্যা ছিল ৩১,১৬৯,২৭২ জন। রাজ্যে গত দশ বছরে ১৬.৯৩ শতাংশ জনসংখ্যার বৃ্দ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। আগামী ২০২১ এবং ২০২৬ সালে এই রাজ্যের জনসংখ্যা যথাক্রমে ৩৪.১৮ কোটি এবং ৩৫.৬০ কোটি-তে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১১ সালে এই রাজ্যের সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩.১৮ শতাংশ এবং নগরায়নের হার ছিল ১২.৯ শতাংশ।

ভারতের জন প্রকল্প অনুসারে এই রাজ্যে প্রায় ১১৫টি জাতিগত সমষ্টি রয়েছে। এইসব সমষ্টি ছাড়াও প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ তাদের নিজেদেরকে আঞ্চলিক, ১৯ শতাংশ স্থানীয় এবং ৩ শতাংশ জাতীয় সম্প্রদায় হিসাবে নিজেদেরকে চিহ্নিত করেছে। আসামের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তফসিলী উপজাতি হিসাবে চিহ্নিত আছে। বর্তমানে এই রাজ্যে ২৩টি নির্দেশিত উপজাতি রয়েছে, তাদের মধ্যে বরো উপজাতি, মোট উপজাতি জনসংখ্যার ৪০.৯ শতাংশ এবং মোট রাজ্যের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।

সংস্কৃতি

আসামের সংস্কৃতি, অহম বংশ এবং কোচ বংশ তাদের রাজত্বের শিকড় প্রতিষ্ঠিত করার পর ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় । এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রধান অবদান হল শ্রীমন্ত শঙ্করাদেবের (শঙ্করদেউর) বৈষ্ণব আন্দোলন। এই আন্দোলন আসামের সংস্কৃতিকে চারুকলা, শিল্পকলা, ভাষা ও সাহিত্য ইত্যাদির উন্নতির ক্ষেত্রে চরমভাবে সাহায্য করেছে। আসামের ভাষার সাথে ব্রজবলী ভাষার মিল আছে, যা ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার শব্দ মিশ্রণ করে তৈরী করা হয়েছিল। ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ পরবর্তী যুগ, আসামের আধুনিক সংস্কৃতিকে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে। রাজ্যের শিল্পকলা এবং সাহিত্যে উত্তর ভারত এবং পশ্চিমের একটা মিশ্রণ দেখতে পাওয়া যায়। কিছু বিখ্যাত নৃত্য এবং নাট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অঙ্কিয়া নাট, বিহু নাচ, কুষাণ নৃত্য, বাগুরুম্বা, বরদোইশিখলা, সাত্রিয়া, বানজার কেকন, মিসিং বিহু ইত্যাদি। বোরগীত ইত্যাদির মতো লোক সঙ্গীত এই রাজ্যের সঙ্গীতের এক ঐতিহ্য।

ভাষা

এই রাজ্যের সরকারি ভাষা হল অসমিয়া এবং বরো । এছাড়াও বাংলা ভাষা সেখানে সরকারী মর্যাদা পায় এবং এটিও সেখানের কথ্য ভাষা। আসামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং এই রাজ্যে প্রায় ৪৫টি কথ্য ভাষা রয়েছে। প্রাচীন বরো ভাষা আগে ভীষনভাবে অবহেলিত হত কিন্তু এখন ধীরে ধীরে কিছুটা স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে বিশেষভাবে ব্যবহৃত উপজাতীয় ভাষা হল সাঁওতালি। পশ্চিম আসামের লোকেরা রাজবংশী ভাষায় কথা বলে যা গোয়ালপারিয়া বা কামতাপুরী নামে পরিচিত। বরাক উপত্যকার কিছু সংখ্যালঘু মানুষেরা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষাতেও কথা বলে। আসামের কিছু অংশে কিছু মানুষকে নেপালি ভাষায় কথা বলতেও শোনা যায়।

আসামের পর্যটন

আসাম হল এমন একটি রাজ্য যার প্রতি প্রকৃতি মাতা তাঁর পূর্ণ আশীর্বাদ ছড়িয়ে দিয়েছেন। দেশের উত্তর পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বার, আসাম রাজ্য ঘন সবুজ বন, উর্বর সমভূমি, বিশালাকায় ব্রক্ষপুত্র নদ, সুন্দর পাহাড়, নীলাভ পর্বত, বিস্ময়কর চা চাষের উপত্যকা এবং প্রসিদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল দ্বারা সমৃদ্ধ। আশ্চর্য্যের কিছু নেই আসামের পর্যটন বহু বছর ধরে উন্নতিলাভ করেছে এবং এখনও প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরভর এক মনোরম জলবায়ু এবং ঘন জঙ্গলের উত্তেজক বন্যপ্রাণী সম্পদ আসাম পর্যটনের অতিরিক্ত সুবিধা। এটি প্রখ্যাত একশৃঙ্গী গন্ডার এবং আরো কিছু বিরল প্রজাতির প্রাণীর বাসস্থান। সুতরাং এটি পর্যটকদের সাথে সাথে অরণ্য প্রেমীদেরও প্রিয় গন্তব্যস্থান হিসাবে পরিচিত।

মিডিয়া

আসাম রাজ্যটি হল সম্ভবত দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য। এটি উত্তরপূর্ব ভারতের সবচেয়ে সুবিধাজনক প্রবেশদ্বার এবং পর্যটন, কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে এর অপরিমেয় তাৎপর্য্য রয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। সারা বছর ধরে দর্শক ও পর্যটকদের নিয়মিত প্রবাহ এই রাজ্যকে সর্বদাই ব্যস্ত রাখে। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বসবাস করে। এইসমস্ত কারণেই এই রাজ্য মিডিয়ার প্রিয় হিসাবে গড়ে উঠেছে। আশ্চর্যের কিছু নেই আসাম মিডিয়া তার সমস্ত ক্ষে্ত্রে তথ্য, শিক্ষা, বিনোদনের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার জন্য কাজ করছে।

পরিবহন

আসাম রাজ্যের অভ্যন্তরীণ এবং সেইসঙ্গে রাজ্য সংলগ্ন এলাকার বাস পরিষেবা আসাম রাজ্য পরিবহন নিগম (এ এস টি সি) দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজ্য সরকার, রাজ্য বাসিন্দাদের জন্য পরিষেবার ব্যবস্থা করেছিল। প্রাথমিকভাবে, নগাঁও এবং গুয়াহাটির মধ্যে ৪টি বাস যাতায়াত করত। অবশেষে, উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা এবং এ এস টি সি দ্বারা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। উত্তর পূর্বের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হল লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদোলোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেটি পূর্বে, গুয়াহাটির বোরঝার বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে, মাত্র সাতটি বিমান পরিষেবা আছে। যে কেউ বিমানবন্দর থেকে ১২টি শহরের মধ্যে অবিরত বিমান পেতে পারে। বিমানবন্দর থেকে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে গড়ে ১৪টি আন্তর্জাতিক এবং ৩১৫টি অন্তর্দেশীয় বিমান উড়ে যায়।

সর্বশেষ সংযোজন : ০৫ই জানুয়ারী , ২০১৫