আন্দামান ও নিকোবর দ্বী.পু. মানচিত্র

Andaman and Nicobar Islands Map in Bengali

আন্দামান ও নিকোবর দ্বী.পু. মানচিত্র
* আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিস্তারিত মানচিত্র।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপর তথ্যাবলী

আধিকারিক ওয়েবসাইট www.andamans.gov.in
স্থাপনের তারিখ 1 নভেম্বর, 1956
আয়তন 8,249 বর্গ কিলোমিটার
ঘনত্ব 46/ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা (2011) 380,581
পুরুষ জনসংখ্যা (2011) 202,871
মহিলা জনসংখ্যা (2011) 177,710
জেলার সংখ্যা 3
রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার
নদীসমুহ হুগলী, কালপং
অরণ্য ও জাতীয় উদ্যান লিটল নিকোবর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ল্যান্ডফল আইল্যান্ড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
ভাষা বাংলা, হিন্দি, তামিল, মালায়ালম, নিকোবরী, তেলেগু
রাষ্ট্রীয় পশু দুগোঙ্গ
রাষ্ট্রীয় পাখি বন পায়রা
রাষ্ট্রীয় বৃক্ষ আন্দামান পড়ৌক
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ মূল উৎপাদন (2011) 76883
সাক্ষরতার হার (2011) 77.65%
প্রতি 1000 জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা 878
বিধানসভা নির্বাচনক্ষেত্র 0
সংসদীয় নির্বাচনক্ষেত্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সম্পর্কে

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ভারতের এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।

  • প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে এটি জানা গেছে যে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সর্বপ্রথম বসতি পাললিক যুগের মধ্যকালে গড়ে উঠেছিল।
  • এটি জানা গেছে যে, আন্দামানিরাই, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রথম অধিবাসী ছিল।
  • ১৮৫০ সাল পর্যন্ত, আন্দামানিরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবে জীবনযাপন করত; ১৮৫০ সালের পর এরা বাইরের দুনিয়ার সংস্পর্শে আসে।
  • নিকোবরীরা, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মূল অধিবাসী ছিল; তারা নিকোবর দ্বীপ সমূহে শোমপেনদের সাথে বসবাস করত।

অষ্টদশ শতাব্দীতে, ব্রিটিশরা ভারতে আসার পর এই দ্বীপটি বিশ্বব্যাপী দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু, ব্রিটিশদের সময়কালে এটি ‘কালাপানি’ নামে কুখ্যাত ছিল কারণ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে, সেই অপরাধীদেরকে এখানে বন্দী বানিয়ে রাখা হত। ব্রিটিশরা এই সুন্দর দ্বীপটিকে ‘বন্দী শিবির’-এ রূপান্তরিত করে তুলেছিল, এখানে অভিযুক্ত অপরাধীদের আজীবনের জন্য কারারুদ্ধ করে রাখত। বহুদিন ধরে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ‘বন্দী শিবির’ হিসাবে পরিচিত ছিল। সাম্প্রতিক কিছু বছরে, এই ছবি অত্যন্ত রূপে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, এই দ্বীপপুঞ্জে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল এবং গণ্যমান্য ব্যাক্তিত্বরা এই স্থানে যেতে ঘৃণা বোধ করত। কিন্তু আজকের দিনে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের পর্যটনে সবচেয়ে সু-প্রতিষ্ঠিত স্থান হিসাবে গড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর স্থান এখানকার পর্যটনকে অনেক উন্নত করেছে। এখানে বেশ কিছু স্থান রয়েছে যেগুলির এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণঃ

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ

  • লং দ্বীপপুঞ্জ
  • নীল দ্বীপ
  • রঙ্গত
  • ডিগলিপুর
  • মায়াবন্দর
  • ক্ষুদ্র আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি।

নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

  • কাটচাল
  • কার নিকোবর
  • গ্রেট নিকোবর ইত্যাদি।

পোর্ট ব্লেয়ার

  • গান্ধি পার্ক
  • মহাত্মা গান্ধি জাতীয় উদ্যান
  • চিড়িয়া তাপু
  • সিপ্পিঘাট ফার্ম
  • কোল্লিনপুর
  • মিনি জু
  • মাউন্ট হ্যারিয়েট
  • মধুবন ইত্যাদি।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ-তথ্যসমূহ

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা থেকে প্রায় ১,২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং চেন্নাই থেকে ১,১৯০ কিলোমিটার পূর্বে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, বেশ কিছু আদিম উপজাতির বাসস্হান। আন্দমানের প্রধান দ্বীপপুঞ্জগুলি হল ল্যান্ড ফল দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য আন্দমান, দক্ষিণ আন্দমান, পোর্ট ব্লেয়ার এবং ক্ষুদ্র আন্দমান। দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নিকোবর-কার নিকোবর, বৃহৎ নিকোবর, চোয়ারে, তরসা, নানকওরি, কচল ও ক্ষু্দ্র নিকোবরকে নিয়ে গঠিত। দ্বীপপুঞ্জের দুটি সমষ্টি, আন্দামান ও নিকোবর একটি গভীর দশ ডিগ্রী চ্যানেলের মাধ্যমে বিভক্ত রয়েছে। এই দ্বীপপুঞ্জগুলির মধ্যে ১২-টি দ্বীপপুঞ্জ, বিশেষত কার নিকোবর প্রধানত উত্তর দিকে অবস্থান করছে, অন্যদিকে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত সর্ব্বোচ্চ দ্বীপটি হল গ্রেট নিকোবর, যেটি প্রায় জনমানব শূন্য। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানী হল-আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত পোর্ট ব্লেয়ার।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি “এমেরাল্ড আইলস” নামেও জনপ্রিয়। তৎকালীন ‘কালাপানি’ অথবা সেলুলার জেল যা বর্তমানে এক মিউজিয়াম রূপে ভারতের এক সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থল হিসাবে গড়ে উঠেছে।

ইতিহাস

নবম শতাব্দীতে আরব বেদুঈনদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম এই দ্বীপপুঞ্জের অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারা যায়, তারা সুমাত্রা যাত্রা করার সময় দ্বীপপুঞ্জের এই পথ ধরেই পাড়ি দিয়েছিল। সর্বপ্রথম পশ্চিমী পর্যটক মার্কো পোলো এটিকে ‘দ্য ল্যান্ড অফ হেড-হান্টারস’ রূপে আখ্যা দিয়েছিলেন। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে মারাঠারা এই দ্বীপপুঞ্জটিকৈ দখল করে নেয়। অষ্টদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এটি বারংবার ব্রিটিশ, ডাচ ও পর্তুগীজদের বাণিজ্যিক জাহাজ দখলকারী মারাঠা নৌসেনাপতি কানহোজী আংগ্রের ঘাঁটি হিসাবে গড়ে উঠেছিল। ১৭২৯ খ্রীষ্টাব্দে আংগ্রের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ব্রিটিশ ও পর্তুগাল নৌবাহিনীর মিলিত শক্তি আংগ্রে-কে পরাজিত করতে পারে নি। ১৮৬৯ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজরা নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে নেয় এবং ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে এই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে একটি একক প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের জন্য আন্দামানের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালে জাপানী সেনারা এই দ্বীপপুঞ্জটিকে দখল করে নেয় এবং ১৯৪৫ সালের বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত তাদের ক্ষমতার অধীনেই থাকে। পরবর্তীকালে, ভারত ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ভারতের উপর স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়।

ভৌগোলিক অবস্থান

ভৌগোলিকগতভাবে ১১ ডিগ্রী ৪১’’ উত্তর ও ৯২ ডিগ্রী ৪৬’’ পূর্বে অবস্থিত, এই দ্বীপপুঞ্জটি বঙ্গোপসাগরের একটি অংশ। দ্বীপপুঞ্জের দুটি সমষ্টি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি ভারতীয় মহাদ্বীপের, দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে আচ্ছাদিত রয়েছে। ক্ষুদ্র দ্বীপ, দ্বীপপুঞ্জ ও পাথরের প্রসারিত এলাকার সমষ্টি নিয়ে গঠিত, এখানকার মোট আয়তন হল ৮,২৪৯ বর্গ কিলোমিটার। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানী হল-পোর্ট ব্লেয়ার, যা এখানকার সর্ব বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত। এই দ্বীপপুঞ্জ-টির এসটিডি (স্ট্যান্ডার্ড ট্র্যাঙ্ক ডায়ালিং) কোড হল ০৩১৯২।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ুর অবস্থা

সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায়, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সারা বছর ধরে একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অনুভূত হয়। প্রায় ৮০ শতাংশ আর্দ্রতা সহ, সমুদ্র-বায়ু এখানকার তাপমাত্রার পরিমাণকে ২৩° সেন্টিগ্রেড থেকে ৩১° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। এখানকার অধিবাসীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে বর্ষা অনুভব করে। দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বর্ষাকাল মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপর দেড় মাসের অন্তরালে নভেম্বর মাসে পুনরায় উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বর্ষা শুরু হয়ে যায় এবং ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলতে থাকে।

জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দেশের এই জনপ্রিয় দ্বীপপুঞ্জটির লোকসংখ্যা হল ৩,৮০,৩৮১ জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্বে এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৬ জন ব্যাক্তি বাস করে। এই দ্বীপপুঞ্জে ১০০০ জন পুরুষের অনুপাতে মহিলার সংখ্যা হল ৮৭৮ জন।

ভাষা

এই দ্বীপপুঞ্জের প্রধান ভাষা হল নিকোবরী। তবে, আধিকারিক ভাষাগুলি যেমন হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু ও ইংরাজী ভাষারও এখানে ব্যাপকভাবে প্রচলন রয়েছে।

সরকার ও রাষ্ট্রনীতি

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সরকার ও রাজনীতি, ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলি ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির শাসন থেকে কিছুটা আলাদা। এই দ্বীপপুঞ্জটির সরকার ও রাজনীতি সম্পর্কে প্রথম উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এখানে একটি আইনসভার অভাব রয়েছে। উপ রাজ্যপাল স্বয়ং নিজেই আন্দামান ও নিকোবর সরকারের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে রয়েছেন। বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ব্যাক্তি দ্বারা সরাসরি পর্যবেক্ষণের অধীন নির্বাহী শাখা তার তত্ত্বাবধানে চলে। রাজ্যের বিচার বিভাগ কলকাতা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে পড়ে। লেফটেন্যান্ট গভর্নর বা প্রশাসক হলেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সরকার ও রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। নির্বাহী বিধানসভা পরিষদের অনুপস্থিতিতে, উপ রাজ্যপাল রাজ্যের সম্পূর্ণ বিধানসভা পরিকাঠামোর দেখাশোনা করেন। অনেকগুলি বিভাগ তার তত্ত্বাবধানে চালিত হয়। রাজ্যের সরকারি বিভাগগুলি অধিদপ্তর এবং সচিবালয় এই উভয় স্তরকে পরিচালনা করে এবং রাজ্যের কাজকর্ম দেখাশোনা করে। কেন্দ্রীয় সরকার সংগঠনের উপস্হিতি আন্দামান ও নিকোবরের প্রশাসনিক ও শাসন কর্মের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

অর্থনীতি

আন্দামানে অপরিমেয় সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তার উপযুক্ত প্রয়োগ হয় নি। এখানে উন্নয়নের বিকাশ তুচ্ছ পরিমাণে হয়েছে কিন্তু জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলাসবহুল বর্ষাবৃত অরণ্য আন্দামানকে কাঠের এক ‘সোনার খনি’-তে পরিণত করেছে। এই দ্বীপপুঞ্জের পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্রান্তীয় ফল উপলব্ধ হয়। এখানে মৎস্যপালনের খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে যা শিল্পের উন্নয়নে ভালো প্রেরণা যোগায়। আন্দামানের প্রধান অর্থকরী ফসল হল ধান, অন্যদিকে নিকোবরে প্রধান অর্থকরী ফসল হিসাবে নরিকেল ও সুপারির ফলন হয়। এছাড়াও জমি ফসলের মধ্যে ডাল, তৈলবীজ ও শাক-সবজি এবং মশলার মধ্যে মরিচ, লবঙ্গ, জায়ফল ও দারুচিনির চাষ করা হয়। রাবার, লাল তৈল, পাম এবং কাজু-ও এখানে সীমিত পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এই অঞ্চলের প্রধান প্রধান শিল্পগুলি হল পি.ভি.সি পাইপ ও জিনিষপত্র তৈরী, রঙ ও বার্ণিশ, ফাইবার গ্লাস, সফ্ট ড্রিঙ্ক ও পানীয় পদার্থ এবং ইস্পাতের আসবাবপত্র ইত্যাদি। এম.ভি হর্ষবর্ধন, এম.ভি আকবর, এম.ভি নিকোবর-এর ন্যায় নিয়মিত যাত্রিবাহী জাহাজ পরিষেবা পোর্টব্লেয়ার থেকে চেন্নাই, কলকাতা ও বিশাখাপত্তনমের মধ্যে চলাচল করে।

পরিকাঠামো

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পরিকাঠামো অন্যান্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তুলনায় খুবই কম উন্নত কিন্তু তবুও এখানে গড়ে ওঠা শিল্পের সমর্থনে যতটা পরিকাঠামো প্রয়োজন ততটা পরিকাঠামো এখানে রয়েছে। যে কোনও জায়গায় পরিকাঠমোর মূল উপাদান হল সেখানকার শিল্প, পরিবহন এবং সংযোগ ব্যবস্থা। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পরিকাঠামোর প্রধান উপাদান হল এখানকার পরিবহন ব্যবস্থা। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, এই দ্বীপ সমূহগুলির পরিবহন ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আরোও উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মোটর পরিবহন বিভাগ, তাদের পরিষেবা, পোর্ট ব্লেয়ার ছাড়াও আরোও অন্যান্য দশটি দ্বীপপুঞ্জে বিস্তৃত করেছে। অন্যদিকে, রাজ্য পরিবহন পরিষেবা বিভিন্ন রুটে অনেক বাস পরিষেবা চালু করেছে।

শিক্ষা

ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির ন্যায়, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও একই শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, এখানে ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এখানকার উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা, কেন্দ্রীয় মধ্য শিক্ষা (সি.বি.এস.ই) পর্ষদ দ্বারা অনুমোদিত। মহাবিদ্যালয়গুলি সাধারণত পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু পলিটেকনিক মহাবিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি নিউ দিল্লী-র দ্বারা অনুমোদিত। এখানে এমন মহাবিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ডাক্তারি, ইঞ্জিনীয়ারিং এবং আইন বিষয়ে পেশাগত শিক্ষা অর্জন করতে পারে। এখানে এই প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

সমাজ ও সংস্কৃতি

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দুটি স্বতন্ত্র স্থানীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল আন্দামানের নেগরিটো অধিবাসী এবং অন্যটি হল মোঙ্গলীয় নিকোবরী ও শোমপেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পূর্ব ও পরবর্তী কালে এবং এমনকি স্বাধীনতার পরেও, এই সংস্কৃতি দুটি তাদের নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। আন্দামানের মূল জাতিগত সমষ্টি হল ক্ষুদ্র আন্দামানে অবস্থিত ওঙ্গে। অন্যান্য আন্দামান উপজাতিদের ন্যায় ওঙ্গে-রাও নেগরিটো মূলভিত্তিক। এই উপজাতি মানুষেরা খাদ্য সংগ্রহ, শিকার, মধু-সংগ্রহ ও মাছ-ধরা ইত্যাদি কাজ করে এবং দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র এই উপজাতিই স্বতন্ত্রভাবে বাকি দুনিয়ার সাথে সংযোগ-স্থাপণ করে আছে। নিকোবরে, একমাত্র আদিবাসী সম্প্রদায় হল শোমপেন, যারা বাইরের দুনিয়ার সাথে বিমুখ রয়েছে। সবচেয়ে বৃহত্তম সমষ্টি নিকোবরী-বর্মী, মালয়, সোম এবং শান সম্প্রদায়ের মিশ্রণ। তারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও উচ্ছসিত হয় এবং তারা অর্থ সংগ্রহে বিশ্বাসী নয়, তারা বিনিময় প্রথা পছন্দ করে। মৃত আত্মার সঙ্গে কথোপকথন, নিকোবরে এক কৌতুহলপূর্ণ রীতি।

কিছু নির্দিষ্ট সমষ্টির, বিশেষ বিশেষ পালিত উৎসবগুলির মধ্যে রয়েছে- বাঙালীদের দূর্গাপূজা, তামিলদের পঙ্গুনি উথিরাম, তেলেগুদের পোঙ্গল এবং মালায়ালিদের জন্য ওনাম। আন্দামানে স্থানীয়ভাবে জন্ম নেওয়া মানুষ হিন্দু, মুসলিম ও খ্রীষ্টান ধর্মে বিভক্ত, যারা তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবগুলি পালন করে। তাদের প্রধান কিছু উৎসবগুলির মধ্যে রয়েছে শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী, হোলি, দীপাবলি, রামনবমী, ঈদ্, খীষ্টমাস, গুড ফ্রাইডে ইত্যাদি। এখানে তিনটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের উৎসব-অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণ করে।

যদিও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলভুক্ত, তাদের ধর্মও যাই হোক না কেন, তারা যে কোনও ভাষা বা উপভাষায় কথা বলুক না কেন, তাদের সাংস্কৃতিক রীতিনীতিতে অনেক মিল রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর সমাজের একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন ধর্মের মানুষের একইসাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান। সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা এখানে কখনও শোনা যায় নি। এখানকার ধর্মীয় উৎসবগুলিতে সকলে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে অন্তঃ-ধর্মীয় বিবাহের প্রথাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পর্যটন

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, এই স্থান হল ভাসমান পান্না দ্বীপ ও পাথরের একটি সমষ্টি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি নারকেল ও পাম গাছ দিয়ে ঘেরা সুন্দর সমুদ্র-সৈকত ও তার স্বচ্ছ নীল জল এবং তার জলের নীচে ডুবে থাকা কোরাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের অবস্থানের জন্য বিখ্যাত। ম্যানগ্রোভ সংযুক্ত খাঁড়ি বরাবর দূষণমুক্ত বায়ু এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের দরুণ আপনি এখানকার প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবেন।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কি জন্য বিখ্যাত?

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন, এই স্থান হল ভাসমান পান্না দ্বীপ ও পাথরের একটি সমষ্টি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জটি নারকেল ও পাম গাছ দিয়ে ঘেরা সুন্দর সমুদ্র-সৈকত ও তার স্বচ্ছ নীল জল এবং তার জলের নীচে ডুবে থাকা কোরাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের অবস্থানের জন্য বিখ্যাত। ম্যানগ্রোভ সংযুক্ত খাঁড়ি বরাবর দূষণমুক্ত বায়ু এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের দরুণ আপনি এখানকার প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবেন।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ

৫৭২-টি দ্বীপসমূহের সমষ্টি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং স্বচ্ছ জলোচ্ছাসের দরুণ যেকোনও প্রকৃতিবাদী ব্যাক্তির নিকট এটি স্বর্গের চেয়ে কম কিছু নয়। পর্যটকদের জন্য এই এলাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু স্থান হল ঘন সবুজ অরণ্যে আচ্ছাদিত বিভিন্ন পার্বত্য এলাকা এবং সূর্য চুম্বিত সমুদ্র সৈকত। এই দ্বীপপুঞ্জ স্কুবা ডাইভিং, ট্রেকিং, শ্নরকেলিং, ক্যাম্পিং এবং অন্যান্য বিভিন্ন জল ক্রীড়ার ন্যায় দুঃসাহসিক কার্যক্রমের জন্যও সুপরিচিত। ভারতের এই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সফরে গেলে নিম্নলিখিত কিছু বিখ্যাত পর্যটন স্থান ভোলা উচিত নয়:

  • বারাটাং
  • ব্যারেন দ্বীপ
  • সেলুলার জেল
  • হ্যাভলক দ্বীপ
  • কোর্বাইন’স কোভ সৈকত
  • রাধানগর সৈকত
  • ন্যাশনাল মেমোরিয়্যাল মিউজিয়াম
  • ফিশারিস মিউজিয়াম
  • রস দ্বীপ
  • চিড়িয়া টাপু
  • মাউন্ট হ্যারিয়েট
  • মহাত্মা গান্ধি সামুদ্রিক জাতীয় উদ্যান
  • গান্ধি পার্ক
  • নেইল দ্বীপ
  • কাটচাল

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি বিখ্যাত পর্যটন স্হলগুলি হল ন্যাশনাল মেমোরিয়্যাল, সামুদ্রিক যাদুঘর, নাভাল সামুদ্রিক যাদুঘর, স্মৃথিকা যাদুঘর, হাড্ডো জুওলোজিক্যাল গার্ডেন, কোর্বাইন’স কোভ ও অন্যান্য সৈকত এবং হামফ্রে গঞ্জ মেমোরিয়্যাল ইত্যাদি। অন্যান্য আরোও কিছু আকর্ষণীয় স্থানগুলি হল- পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত আন্দামান ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স, এশিয়ার সর্ব বৃহত্তম ছাতাম শ্য মিল, চিড়িয়া টাপু, সামুদ্রিক যাদুঘর, রেড স্কিন দ্বীপ এবং হ্যাভলক। এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি রোমাঞ্চকর স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে- কোর্বাইন’স কোভ, ওয়ান্ডুর সৈকত, সিপিঘাট ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সিনকি দ্বীপ, জলি বয় দ্বীপ ইত্যাদি।

পরিবহন

আন্দামান ও নিকোবরের দ্বীপপুঞ্জগুলি দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন অংশের সাথে জলপথ ও বিমানপথের মাধ্যমে সুসংযুক্ত রয়েছে। এই দ্বীপপুঞ্জগুলির অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য বাস এবং সড়ক পরিবহনের অন্যান্য মাধ্যমগুলি উপলব্ধ রয়েছে। দ্বীপ হওয়ার দরুণ, এই স্থানগুলি রেলপথ মাধ্যম দ্বারা দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করা সম্ভব হয় নি। পোর্ট ব্লেয়ারের বীর সাভারকর বিমানবন্দর, এই দ্বীপপুঞ্জ-গুলিকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে বিমান মাধ্যম দ্বারা সংযুক্ত করেছে। জলপথ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরিবহন পরিষেবা হিসেবে কাজ করে। পোর্টব্লেয়ার, এই দ্বীপপুঞ্জের প্রধান বন্দর হিসেবে কাজ করে। রাজ্য পরিবহন ও বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলির দ্বারা পরিচালিত বাস পরিষেবা ছাড়াও, এখানকার অধিবাসীরা ব্যাক্তিগত ট্যাক্সি ও অটো-রিক্সার ব্যবহার করেন। এমনকি তারা সহজ এবং দ্রুত ভ্রমণের জন্য মোটর-সাইকেল ও বাই-সাইকেলও ব্যবহার করেন।

সর্বশেষ সংযোজন : ২৪- শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৫