নীল পর্বতমালার দেশ মিজোরাম তার চিত্রানুগ সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্য এবং আসামের সন্নিহিত সমভূমি থেকে দূরে মিজোরামের একটি অসাধারণ অবস্থান, যা বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সঙ্গে তার এক তৃতীয়াংশের বেশী সীমানা ভাগ করে আছে।
এটি সুবিশাল হিমালয়ের পাদদেশ এবং মেঘালয় মালভূমির মধ্যে অবস্থিত। মিজোরামের রাজধানী,আইজল চমৎকার কাঠের ঘর এবং ফুলের প্রাচুর্য দ্বারা সমৃদ্ধ। এখানকার প্রতিটি ঘরের জানালায় পুষ্পিত অর্কিড দেখা যায়। এখানকার বাতাস আরামপ্রদ এবং বিশুদ্ধ। এখানকার প্রায় প্রতিটি রাস্তার কোণায় আইজলের তরুণদের দ্বারা গিটার বাজানোর শব্দ চারিদিকে প্রতিধবনিত হয়।
মিজোরামের ভূ-দৃশ্যের অসীম বৈচিত্র্য রয়েছে যা উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল, নীরব পাইন গুচ্ছ এবং অসাধারণ গ্রাম দ্বারা সমৃদ্ধ। ঘন ক্রান্তীয় অরন্যের বিস্ময়কর জাঁকজমক, শ্যামল সবুজ ধানক্ষেত এবং প্রশংসনীয় দ্রাক্ষাক্ষেত্র মিজোরামের মাতৃসুলভ প্রকৃতিকে প্রদর্শন করে। মিজোরামে সারা বছর ধরে একটি মনোরম এবং সুষম জলবায়ু দেখা যায় এবং এটি বিভিন্ন বৈচিত্রের উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুল সমৃদ্ধ চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি আদর্শ ভূমি। মিজোরাম ভারতের পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ বিচিত্র পাহাড়ী ভূখণ্ডের আশীর্বাদপ্রাপ্ত। এই পাহাড়গুলি খাড়া এবং নদী দ্বারা বিভক্ত যা কখনও উত্তর বা দক্ষিণ দিক দিয়ে পর্বতমালা ও গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি মিজোরামে অসংখ্য নদী দান করেছে, যেমন – লাওয়াং, সোনাই, তুইভাই, কোলোদাইন এবং কর্নফুল্লি।
মিজোরামের পরিদর্শনমূলক স্থান
মিজোরামের পুরু অরণ্য ও স্পন্দনশীল গ্রাম যে কোন পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য। প্রকৃতি প্রেমী এবং রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপে উৎসাহী পর্যটকদের জন্য মিজোরামে বহু আকর্ষণ রয়েছে। এই রাজ্য উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি প্রধান ইকো-পর্যটন এবং রোমাঞ্চকর পর্যটন গন্তব্য হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে। বিগত পাঁচ বছর ধরে মিজোরাম পর্যটন অর্ন্তদেশীয় ও সেইসাথে বিশ্বের সকল প্রান্তের আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। একটি পর্যটক গন্তব্য হিসাবে মিজোরাম অনেক কিছুর প্রস্তাব দেয়। মিজোরামের পরিদর্শনমূলক স্থানগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল –
- তুলাচাং।
- সিবুতা লাং।
- ভানহিমালিয়ান-এর সমাধি।
- ফাঁগুই।
- মংকাহিয়া লাং।
- লংভনদাওত।
- তড়মিল।
- ভনতাওয়াং জলপ্রপাত।
- ডাম্পা অভয়ারণ্য, ইত্যাদি।
মিজোরামের দর্শনীয় স্থান
মিজোরাম অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অতিথিপরায়ণ রাজ্য। ইংরেজি সাধারনভাবে এখানকার কথ্য ভাষা। স্থানীয় জনসাধারণদের আনন্দদায়ক উৎসাহ এবং সঙ্গলিপ্সু মনোভাব এই সুন্দর রাজ্যের আকর্ষণীয় পর্যটনের সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য। এখানকার আনন্দদায়ক, কলুষমুক্ত প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অনুভব করুন ও কিছুদিনের জন্য শান্তি, নির্মলতা ও বিনোদনযুক্ত স্থানীয় সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার পথ উপভোগ করুন। মিজোরাম পর্যটন পরিকাঠামো, বাসস্থান এবং অন্যান্য উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন গন্তব্যস্থল ও পর্যটন স্হান চিহ্নিত করেছে।
* মিজোরামের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থলগুলির বিষয়ে নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে –
তুলাচাং
তুলাচাং হল মিজোরামের বৃহত্তম মনোলিথ। তুলাচাংআইজল জেলার তুলাচাংগ্রামের নিকটে অবস্থিত। তুলাচাং একটি পাথুরে ভূখণ্ড।
সিবুতা লাং
সিবুতা লাং মিজোরামের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। সিবুতা লাং একটি স্মারক পাথর যা পালিয়ান প্রধান কর্তৃক প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে নির্মিত হয়। সিবুতা লাং স্মারক একটি হতাশ প্রেম এবং প্রতিশোধের লিপ্সা মূলক এক কাহিনীর বর্ণনা দেয়।
ভানহিমালিয়ান-এর সমাধি
ভানহিমালিয়ান-এর সমাধি ভানহিমালিয়ান সাইলোর স্মরণে নির্মিত করা হয়েছিল। ভানহিমালিয়ান সাইলো চম্ফাইয়ের একজন মহান নেতা ছিলেন। এটা সুবিশাল চম্ফাই সমভূমির অন্তর্ভুক্ত। চম্ফাই আইজল জেলায় অবস্থিত এবং ভারতের মিজোরামের থেকে প্রায় ১৯৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ফাঁগুই
নীল পর্বত নামে পরিচিত ফাঁগুই মিজোরামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং ঈশ্বরের আবাসস্থল বলে অভিহিত। ছিমতুইপুই জেলায় অবস্থিত ফাঁগুই রডোডেনড্রন এবং অর্কিডের জন্য বিখ্যাত। দর্শনীয় গাছপালা এবং সকল রঙের ফুল সহ ফাঁগুই-এর নীল পাহাড় এবং উপত্যকা একটি রুপকথার দেশের মতন দর্শনীয়।
মংকাহিয়া লাং
মংকাহিয়া লাং একটি স্মারক প্রস্তর যা ১৭০০ খ্রীস্টাব্দে মংকাহিয়ার স্মরণে নির্মিত হয়। এটি একটি খুব বড় স্মারক পাথর যা মংকাহিয়া প্রস্তর হিসাবে পরিচিত। মংকাহিয়া লাং ৫ মিটার উঁচু যার মধ্যে মিথুন (উত্তর-পূর্ব ভারতে উপলব্ধ পশু)-এর মস্তক খোদিত আছে।
লংভনদাওত
লংভনদাওত কথার অর্থ হল প্রস্তর দ্বারা স্বর্গে উপনীত। লংভনদাওত পাথর দিয়ে খোদাইকৃত একটি অত্যন্ত লম্বা সুন্দর স্তম্ভ, যার ব্যাস প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতা ৩ মিটার। মিজোরামের লংভনদাওত, আইজল জেলার পূর্ব অংশে বিয়েট এবং লংদারের মধ্যে অবস্হিত।
তড়মিল
আইজল থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে এটি একটি নির্মল হ্রদ। এই নির্মল জলের মধ্যে দিয়ে আপনি নৌবিহার উপভোগ করতে পারেন। এখানকার নিকটবর্তী জঙ্গলে উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুলের আধিক্য রয়েছে।
ভনতাওয়াং জলপ্রপাত
সবুজ পাহাড়ের পশ্চাদ ভাগে একটি চিত্রবৎ জলপ্রপাত।
ডাম্পা অভয়ারণ্য
মিজো পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে একটি অভয়ারণ্য রয়েছে; যেখানে সোয়াম্প হরিণ, বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি এবং হনুমান রয়েছে।
মিজোরামে কেনাকাটা
ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো, মিজোরামও হস্তশিল্পের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, যা মিজোরামের কেনাকাটাকে বিস্ময়কর করে তুলেছে। মিজোরামের হস্তশিল্পের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় আছে, যা আপনি না দেখে বুঝতে পারবেন না। এগুলি দেখলে আপনি অবশ্যই এখানে কেনাকাটা না করে থাকতে পারবেন না।
মিজোরা অত্যন্ত দক্ষ বুননদার। এই ঐতিহ্য গভীরভাবে তাদের উপজাতীয় চেতনায় প্রোথিত। নকশা এবং পরিকল্পনা তাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি মিজোরাম প্রচুর বাঁশজাতীয় পণ্য দ্রব্যের অধিকারী। প্রকৃতিগতভাবে, মিজো কারিগররা ঐতিহ্যগত বাঁশের তৈরি চমৎকার ঝুড়ি, বাসনপত্র, টুপি, ফুলদানি ও আসবাবপত্র ইত্যাদিতে অত্যন্ত দক্ষ। কোন পণ্য সামগ্রী হোক বা শিল্পকলা হোক বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোক, মেঘালয়ে কেনাকাটা করার সময় বাঁশের তৈরি একটা বা দুটি পণ্য তো আপনার ঝুলিতে অবশ্যই থাকা উচিত।
মিজোরামে কেনাকাটা করার সময় দেখে নিন –
হাতে বোনা ফ্যাব্রিক |
বাঁশের কারুশিল্প |
বেতের পণ্য |
মিজোরামে কেনাকাটার জন্য বহু দোকানপাট আছে। এদের মধ্যে কিছু সরকারী এবং অন্যান্যগুলি ব্যক্তিগত কিন্তু অধিকাংশই রাজধানী শহর আইজলের কাছাকাছি অবস্থিত। বড় বাজার এই শহরের প্রধান কেনাকাটার এলাকা। ঋৎজ্ মার্কেট, বর্মা লেন, বাজার বাংকাও, থাকথিং বাজার, নিউ মার্কেট ও সলোমন গুহা মিজোরামে কেনাকাটার জন্য অত্যন্ত ভাল জায়গা।
* সর্বশেষ সংযোজন : ২৫ - শে জুন, ২০১৫