পশ্চিম বঙ্গ
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

পশ্চিমবঙ্গ বিচার-ব্যবস্থা

Judiciary of West Bengal in Bengali

পশ্চিমবঙ্গ বিচার ব্যবস্থা

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য একটি নিয়মানুগ এবং সংগঠিত বিচার ব্যবস্থার আশীর্বাদ প্রাপ্ত, যা দ্রুত বিচার বিতরণে সাহায্য করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মত ভারতে, ভারত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা অনুসরণ করে না। ভারত ঐকিক শাসন ব্যবস্থা পালন করে, যার অধীনে সুপ্রিমকোর্ট হল সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ এবং যা প্রতিটি রাজ্যের উচ্চ আদালত দ্বারা সমর্থিত হয়।

রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষ হল কলকাতা হাইকোর্ট। যা মুখ্য বিচারপতি, শ্রীমতি মণ্জুলা চেল্লুর-এর নেতৃত্বাধীন। ভারতের প্রাচীনতম উচ্চ আদালত হিসাবে এই রাজ্যের উচ্চ আদালত দাবী রাখে। গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত, এই উচ্চ আদালত তার ভাব গম্ভীর কাঠামোর সঙ্গে কলকাতার ব্যস্ত ও জনাকীর্ণ রাস্তার অভ্যন্তরে লম্বা ভাবে দন্ডায়মান। কলকাতা উচ্চ আদালতের অধীনে দুই ধরনের আদালত আছে। একটি হল ফৌজদারি আদালত যা অপরাধ মূলক বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে এবং অন্যটি হল দেওয়ানী আদালত যা নাগরিকদের সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করে।

জেলার সর্বোচ্চ আদালত, সেশন জজ্ কোর্ট অপরাধের মামলাগুলোর উপর কাজ করে। কলকাতার মত মহানগর এলাকায়, অপরাধের মামলাগুলো মহানগরী হাকিম দ্বারা কার্যকারী হয়। নাগরিক মামলায় অভিজ্ঞ বিচারবিভাগীয় কর্মচারীগণ শহরের দেওয়ানী আদালত গুলিতে কাজ করে থাকে।

শ্রম আদালত ও শিল্প ট্রাইব্যুনাল, শ্রমিক এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিল্প বিরোধ সংক্রান্ত মামলার কাজ করে।

পশ্চিমবঙ্গীয় বিচার ব্যবস্থা একটি পিরামিড আকৃতির অনুক্রমে সাজানো। এখানের আদালতের দুটি সমান্তরাল পিরামিড হল – দেওয়ানী আদালত ও ফৌজদারি আদালত। এই দুই পিরামিড এর শিখর উচ্চ আদালতে গিয়ে মিলিত হয়। অন্যান্য সমস্ত আদালত কলকাতার উচ্চ আদালতের কঠোর তত্ত্বাবধানের অন্তর্ভুক্ত।

পশ্চিমবঙ্গ শহর দেওয়ানী আদালত

কলকাতা শহরের দেওয়ানী আদালতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সব দেওয়ানী বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে এবং আবেদনকারীদের দ্রুত বিচার প্রদান করতে সহায়তা করে। কলকাতার কিরণ শংকর রায় রোডে অবস্থিত, এই শহুরে দেওয়ানী আদালত ভারতের প্রাচীন দেওয়ানী আদালতের মধ্যে এক অন্যতম বলে দাবী রাখে। কলকাতা শহরের দেওয়ানী আদালত তার স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতার জন্য সুপরিচিত, যা দিয়ে বিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা বিভিন্ন মামলার সাথে কারবার করেন।

কলকাতা শহরের দেওয়ানী আদালতের একটি সমৃদ্ধ বিচারবিভাগীয় ইতিহাস রয়েছে। এই আদালত আবেদনকারীদের স্বার্থে বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দান করেছেন। বর্তমানে এই শহুরে দেওয়ানী আদালত বিচার বিভাগীয় ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দ্বারা চালিত হয়। এই আদালতের বিচারকর্তৃগণ মামলার স্বচ্ছতার জন্য সুপরিচিত।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উচ্চ আদালতের কঠোর তত্ত্বাবধানে, কলকাতার এই শহুরে দেওয়ানী আদালত অসাধারণ স্বচ্ছতা এবং স্পষ্টতার সঙ্গে সব রকমের দেওয়ানী বিষয়গুলি নিয়ে কাজ কারবার করেন। উকিল এবং আইনজীবীরা কঠোর বিধি এবং প্রবিধান অনুযায়ী তাদের মামলা প্রস্তুত করেন।

পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ আদালত

ভারতের এক অন্যতম প্রাচীন উচ্চ আদালত, কলকাতা উচ্চ আদালত ১৮৬২ সালের ১৪-ই মে ক্ষমতা পত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিচারপতি পি.চক্রবর্তী ছিলেন প্রথম ভারতীয় বিচারকর্তা যিনি আদালতের বিভিন্ন মামলা উপর তত্ত্বাবধান করতেন। কলকাতা উচ্চ আদালতের একটি সমৃদ্ধ বিচারবিভাগীয় ইতিহাস রয়েছে, যা বিখ্যাত যুগান্তকারী রায় প্রদান করার জন্য সুপরিচিত।

কলকাতা উচ্চ আদালত অসংখ্য অমীমাংসিত মামলার দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করার জন্য সুপরিচিত। রাজ্যের নিম্ন আসালত গুলির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে, রাজ্যের যে কোন নাগরিক উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারেন।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ আদালত রাজ্যের শিল্পায়নের সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে শান্তি পুনঃস্থাপনে এবং শালীনতা প্রদানে সহায়তা করেছে।

শ্রম আদালত এবং পশ্চিমবঙ্গের বিচারালয়

পশ্চিমবঙ্গের শ্রম আদালত ও বিচারালয় শিল্প সংক্রান্ত বা শ্রমিক সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে দ্রুত বিচার প্রদানে সাহায্য করে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য একটি নিয়মানুগ এবং সংগঠিত শ্রম আদালত ও বিচারালয়ের আশীর্বাদ প্রাপ্ত, যা শ্রম সঙ্ঘ, শ্রম প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিচারবিভাগীয় সমস্যা বা কার্য বলের মনোভাবকে আঘাত করে এরকম কিছু সমস্যার সমাধান করে।

শ্রম আদালত ও শ্রম বিচারালয় শ্রম-বিবাদ আইন ধারার অধীনে ১৯৪৭ সালে স্থাপন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শ্রম আদালত ও শ্রম বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শ্রম আদালত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত প্রদানে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন, যেমন কর্মক্ষেত্র থেকে শ্রমিক স্থগিত সংক্রান্ত বিষয়, রাজ্যের পৃথক শ্রমিক কল্যাণ সম্পর্কিত ধর্মঘট ও অন্যান্য অনেক বিষয়ের আইনগত মাত্রা। শ্রম বিচারালয়গুলি মজুরি সংক্রান্ত, কাজের সময়ের মেয়াদ, এবং সাধারণ শ্রমিকদের যৌথ সমস্যার সাথে সম্পর্কিত অন্য যে কোন বিষয়গুলিতে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।

শ্রম আদালত এক কর্মকর্তার দ্বারা সভাপতিত্ব হয়, যিনি ন্যুনতম ৭ বছর ধরে এক বিচার বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিবেশন করেন অথবা রাজ্যের আইন ধারা অনুযায়ী রাজ্যের শ্রম আদালতে অধিশয়িত কর্মকর্তা হিসাবে ন্যুনতম ৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এছাড়াও, অধিশয়িত কর্মকর্তা এক জেলা বিচারপতি বা অতিরিক্ত জেলা বিচারপতি হিসাবে একটানা তিন বছরের জন্য বা উচ্চ আদালতের একজন বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১০ - ই এপ্রিল, ২০১৫