কলকাতা পর্যটন
ভারতের বিভিন্ন মানচিত্র

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল

Victoria Memorial in Bengali

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জওহরলাল নেহেরু রাস্তার নিকটে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল, ভারতীয় ও বিদেশীদের জন্য একটি অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্যস্থল। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাফল্যকে চিহ্নিতকরণ এবং রানী ভিক্টোরিয়ার একটি স্মারক – এই দ্বৈত উদ্দেশ্যের পরিবেশন হিসেবে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছিল।

সম্প্রতি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল একটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে যা ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়। এই মিউজিয়ামে নকশা, অনুচিত্রকলা, চিত্রাঙ্কন, বই, মূর্তি ইত্যাদি তুলে ধরা হয়, পাশাপাশি তৎকালীন ভারতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অস্ত্রাদির উপরও দৃষ্টি প্রদান করা হয়।

রাণী ভিক্টোরিয়া সম্পর্কে

ভারতের সম্রাজ্ঞী, রাণী ভিক্টোরিয়া ৬৩ বছরেরও অধিক সময়ের জন্য রাজকীয়ভাবে গ্রেট ব্রিটেনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর কাকা চতুর্থ উইলিয়াম-এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের রাণী হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯০১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড শাসনভার গ্রহণ করেন।

ইতিহাস

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল রাণী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে ১৯০৬ এবং ১৯২১ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। ১৯০১ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন রাণী ভিক্টোরিয়ার সম্মানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাবনা করেন।

এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর ১৯০৬ সালের ৪-ঠা জানুয়ারি ওয়েলস্-এর রাজকুমার (রাজা পঞ্চম জর্জ) স্হাপন করেন। ১৫ বছর ধরে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধ ১৯২১ সালে জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। এই স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজটি মেসার্স.মার্টিন অ্যান্ড কোং কলকাতা-কে দেওয়া হয়েছিল।

প্রায় ১-কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছিল, যা ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলির দ্বারা প্রদেয়।

স্থাপত্য

এই স্মৃতিসৌধ ইন্দো-স্যারাসেনিক পুনর্জাগরণ স্থাপত্য শৈলীকে অনুসরণ করে সাদা মাকরানা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী হয়েছিল। মুঘল, ডেক্কানি, ব্রিটিশ, মিশরীয়, ভেনিশীয়, এবং পাশাপাশি ইসলামী পরিকল্পনার সমন্বয়ে, এই সাদা স্মৃতিসৌধ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্ট-এর রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম এমারসনের তত্ত্বাবধানে তৈরী হয়েছিল। মুম্বাই-এর ক্রফোর্ড মার্কেটের নকশা তৈরির কৃতিত্বও এমারসনের।

উত্তরের সেতু এবং বাগানের দরজা, দুটিই উইলিয়াম এমারসন-এর সহকারী, ভিনসেন্ট. জে.এস্ দ্বারা পরিকল্পিত। কেন্দ্রিয় গম্বুজের শীর্ষে ৪.৯ মিটার লম্বা ও পাঁচ টন ওজনের “এঞ্জেল অফ ভিক্টরি”-র একটি মূর্তি রয়েছে।

রয়্যাল গ্যালারি

গ্যালারিতে জ্যানসেন এবং উইন্টারহলটার- এর অসংখ্য চিত্রকর্ম রয়েছে, যেগুলিতে রাণী ভিক্টোরিয়ার এবং রাজকুমার আলবার্ট-এর জীবনের দৃশ্য চিত্রিত রয়েছে।

এই গ্যালারির অন্তর্ভুক্ত নিদর্শন ভাণ্ডারগুলি হলঃ –

  • একটি পিয়ানো, যা রাণী ভিক্টোরিয়া ১৮২৯ সালে তার ১০ বছর বয়সে উপহার পেয়েছিলেন। এই পিয়ানো একটি চমৎকার পিয়ানো হিসাবে বিখ্যাত। সম্প্রতি, পিয়ানোটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল-এর কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
  • উইন্ডসর দুর্গে অবস্থিত একটি লেখার টেবিল রয়েছে যেটি রাণী ভিক্টোরিয়া দ্বারা ব্যবহৃত হত।
  • জয়পুর মিছিল – এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তৈল-চিত্র। এটি রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড-এর ১৮৭৬ সালে রাজ্য পরিদর্শন বিষয়ে রচিত।

কিছু চিত্রকলার বর্ণনাঃ –

  • ১৮৩৮ সালের জুন মাসে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ভিক্টোরিয়ার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান।
  • ১৮৪০ সালে সেন্ট জেমস প্যালেস-এ আলবার্টের সাথে ভিক্টোরিয়ার বিবাহ।
  • ১৮৪২ সালে উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেল-এ ওয়েলসের রাজকুমার (সপ্তম এডওয়ার্ড)-এর নামকরণ।
  • ১৮৬৩ সালে রাজকুমারী আলেকজান্দ্রার সাথে ওয়েলসের রাজকুমারের বিবাহ।
  • ১৮৮৭ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে প্রথম জয়ন্তী সেবা।
  • ১৮৯৭ সালে সেন্ট পল-এর গির্জায় দ্বিতীয় জয়ন্তী সেবা।

কলকাতা গ্যালারি

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যাল-এর ক্যালকাটা গ্যালারি ভারতের সর্বপ্রথম শহুরে গ্যালারি। বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের এই স্মৃতিসৌধের প্রতি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে, এই গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন ভারতের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী অধ্যাপক এস.নুরুল.হাসান।

এই গ্যালারির চিত্রাঙ্কনগুলি হলঃ –

  • আর.বি.দত্ত-র দ্বারা বিপিন বিহারী দত্ত
  • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
  • রামমোহন রায়
  • কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে পন্টুন সেতু (হাওড়া ব্রিজ হিসেবে সুপরিচিত)
  • ভবানীচরণ লাহা দ্বারা কার্ড খেলোয়াড়
  • দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • মিসেস বেলনোস দ্বারা ফেরিওয়ালা
  • বেনি মাধব ভট্টাচার্য দ্বারা দেবী কালী

এই স্মৃতিসৌধের অন্যান্য কিছু গ্যালারীঃ –

  • জাতীয় নেতাদের গ্যালারি
  • পোর্ট্রেট গ্যালারি
  • সেন্ট্রাল হল্
  • ভাস্কর্য গ্যালারি
  • অস্ত্র ও অস্ত্রাগার গ্যালারি

বাগান

৬৪ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই স্মৃতিসৌধের পার্শ্ববর্তী বাগান ডেভিড প্রেন এবং রেডেসডেল দ্বারা পরিকল্পিত। ২১-জন সদস্যবিশিষ্ট মালিরা এই বাগানটির দেখাশোনা করেন।

উত্তর দ্বারের দিকে রাণী ভিক্টোরিয়ার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি আছে যা স্যার জর্জ ফ্র্যামটনের সৃষ্টি এবং এটি সিংহাসনে উপবিষ্ট রাণীকে নিয়ে বর্ণিত।

ভবনের দক্ষিণ অংশে এডওয়ার্ড লনে স্মৃতিসৌধ খিলানের নীচে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড-এর একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি দর্শকরা দেখতে পাবেন। এটি স্যার বারট্রাম ম্যাকেনাল দ্বারা পরিকল্পিত।

ফ্রেডরিক উইলিয়াম পোমেরয় দ্বারা নির্মিত, কার্জন স্থাপত্যের ধাঁচে কার্জন লন নামে অন্য আরেকটি আঙ্গন রয়েছে।

এই বাগানে আরও বহু মূর্তি রয়েছে, সেগুলি হল – কর্নওয়ালিস, হেস্টিংস, ক্লাইভ, ডালহৌসি, বেন্টিঙ্ক, ওয়েলেসলি, রিপন, অ্যান্ড্রু.এইচ.এল ফ্রেজার ও রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জী।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৮- ই মার্চ, ২০১৫