তামিলনাড়ু পর্যটন

Travel to Tamilnadu in Bengali

তামিলনাড়ু পর্যটন
* তামিলনাড়ু পর্যটন মানচিত্রে - তামিলনাড়ুর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ, শৈল শহর, হোটেল ও অন্যান্য পরিদর্শনযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে দেখানো হয়েছে।

তামিলনাড়ু পর্যটন

তামিলনাড়ু রাজ্যটি বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর অবস্থিত। একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতাকে লালিত করে এই রাজ্যটি অগ্রগতিকে আশ্রিত করে সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। এই রাজ্যের ২০০০ বছরের অধিক একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে যা অনেক রাজবংশ যেমন চেরা, চোল, পল্লব এবং পান্ড্যদের উত্থান এবং পতনকে প্রত্যক্ষ করেছে। প্রতিটি যুগ তাদের রীতি এবং সৃষ্টির দ্বারা এই রাজ্যের ভূমিকে সমৃদ্ধ করেছে এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছে।

তামিলনাড়ু কিছুটা বিলম্বে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে শুরু করে। তামিলনাড়ুর পর্যটনের সময় আপনারা একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন অতীত কিভাবে গতিশীল বর্তমানে রুপান্তরিত হয়েছে তা পরিলক্ষিত করে থাকেবেন।

অসংখ্য ভ্রমনার্থী তামিলনাড়ু আসেন প্রাচীন মন্দিরগুলি দর্শন করতে যেখানে পাথরের উপর বিভিন্ন কাল্পনিক এবং পৌরাণিক কাহিনী খোদাই করা রয়েছে। তামিলনাড়ু পর্যটনের মাধ্যমে, মহাবলীপুরম ও কাঞ্চিপুরমে কঠিন প্রস্তরীভূত নিছক সঙ্গীতের কারিগরিতার বিকাশ লক্ষ্য করা যায়।

তামিলনাড়ুর জনপরিসংখ্যান
অক্ষাংশ 8 ডিগ্রী 5 মিনিট থেকে 13 ডিগ্রী 35 মিনিট উত্তর
দ্রাঘিমাংশ 76 ডিগ্রী 15 মিনিট থেকে 80 ডিগ্রী 20 মিনিট পূর্ব
আয়তন 130058 বর্গ কিলোমিটার
জলবায়ু গ্রীষ্মকাল – গরম
শীতকাল – ঠান্ডা
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 42.8 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 4.6 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 100 সেন্টিমাটার
রাজধানী চেন্নাই
জনসংখ্যা 62405679
ভাষা হিন্দি, ইংরাজী
ধর্ম হিন্দু, খ্রীষ্টান, ইসলাম এবং অন্যান্য
পরিদর্শনের সেরা সময় অক্টোবর থেকে মার্চ
পরিধান গ্রীষ্মকালে – হালকা সূতি,
শীতকালে – পশম

তামিলনাড়ু পৌঁছানোর উপায়

তামিলনাড়ু রাজ্যটি মন্দির, স্মৃতিসৌধ, সমুদ্রসৈকত, শৈল শহর এবং বন্য জীবনের একটি আকর্ষণীয় সমন্বয়। মনোযোগ সৃষ্টিকারী মন্দির এবং সৌধগুলির স্থাপত্য ভারতীয় সভ্যতার ঐশ্বর্যকে পরিস্ফুটিত করে। প্রশান্ত পাহাড়ি অঞ্চল এবং চিত্রানুগ সমুদ্রসৈকত আপনাকে একটি আদর্শ ছুটি কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এই সমস্ত মিলে তামিলনাড়ুর আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন।

বিমান মাধ্যমে :
তামিলনাড়ুর, চেন্নাই এর কাছাকাছি একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে যা এই রাজ্যের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে। শ্রীলঙ্কা, দুবাই, জার্মানি, জাকার্তা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, এবং সিঙ্গাপুর থেকে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলি চেন্নাইয়ে নিয়মিত বিমান চালনা করে থাকে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থার দ্বারা চেন্নাই থেকে আপনি দেশের যে কোন অংশে যোগাযোগ করতে পারেন।

রেল মাধ্যমে :
তামিলনাড়ুর প্রধান রেল স্টেশনটি চেন্নাইয়ে অবস্থিত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চেন্নাইকে দেশের বাকি প্রধান রেল স্টেশনগুলির সাথে সংযুক্ত করে।

সড়ক মাধ্যমে :
একটি বিস্তৃত সড়ক সংযোগ তামিলনাড়ু জুড়ে রয়েছে। অসংখ্য জাতীয় মহাসড়ক এবং রাজ্য মহাসড়ক এই রাজ্যের ভুমিকে আড়াআড়ি ভাবে সংযুক্ত করেছে। তামিলনাডু স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (টি.এন.এস.টি.সী) বাস রাজ্য জুড়ে চালিত রয়েছে এবং এটি পার্শ্ববর্তী শহর এবং রাজ্যগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে।

তামিলনাড়ুর মন্দির

তামিলনাড়ু মন্দির ও মঠের মহিমান্বিত ইতিহাস, বিগত শতাব্দীর স্থাপত্য প্রতিভাকে পরিদর্শিত করে। পুণ্যভূমি বলে পরিচিত তামিলনাড়ুর অনেক মন্দির কাঠামোর মধ্যে চোল, পল্লব, পান্ড্য এবং নায়ক সাম্রাজ্যের সৃজনশীল দক্ষতার ছাপ রয়েছে। প্রভু ভেঙ্কটেশ, বিনায়ক এবং শিব থেকে মুরুগান এবং বিষ্ণু প্রভৃতি বিভিন্ন দেব-দেবীর অবিশ্বাস্য মূর্তি এই সব স্থানের মন্দিরগুলিতে সন্নিবেশিত রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক সময়কাল থেকে সাম্প্রতিক বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মন্দিরগুলি স্থাপত্যের উভয় সময়কাল এবং সমসাময়িক শৈলীকে তুলে ধরে। শিল্প, সংস্কৃতি এবং প্রাচীন শাসকদের মনগড়া কাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মন্দির ও মঠগুলি তামিলনাড়ুর একটি দৃষ্টি আকর্ষক ধারাবাহিকতার উপস্থাপন করে।

একটি সাধারণ টাওয়ার যা গোপুরাম নামেও পরিচিত, তামিলনাড়ুর মন্দিরগুলি ৭০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত এমনকি তারও প্রাচীন বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে ইট এবং চূণ কাঁচামাল দ্বারা নির্মিত, এই পবিত্র পূজা স্থানগুলি তাদের ঐশ্বর্যশালী স্তম্ভ, প্রশস্ত প্রাঙ্গন এবং প্রসাধিত প্রবেশপথের জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মানিত।

তামিলনাড়ুর সমুদ্রসৈকত

তামিলনাড়ুর সমুদ্রসৈকতগুলি হল এই রাজ্যের পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম এবং এইগুলিই তামিলনাড়ুকে ভারতের একটি প্রিয় পর্যটক গন্তব্যস্থল হিসাবে উপস্থাপিত করেছে। এই রাজ্যে দক্ষিণ ভারতের কিছু সেরা সৈকত ক্রীড়া রয়েছে যেগুলির নিজস্ব আকর্ষণীয় ক্ষমতা রয়েছে। সূর্য স্নান, বিশ্রামের জন্য এবং জলক্রীড়া কার্যক্রমের জন্য এই সৈকতগুলি হল আদর্শ গন্তব্যস্থল। যে সমস্ত পর্যটকরা নিখুঁত নির্জনতায় তাদের অবসর সময় ভোগ করতে চান তারা ছুটির গন্তব্যস্থল হিসেবে চেন্নাই থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কোভেলং-কে বেছে নিতে পারেন। সারিবদ্ধ লম্বা তাল ও নারিকেল গাছগুলি কোভেলং সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এখানে পর্যটকরা জলক্রীড়ার মাধ্যমে আনন্দলাভ করার একটি চমৎকার সুযোগ পায় এবং পার্শ্ববর্তী জায়গায় পর্যটকরা নিজেদের ক্রীড়া দক্ষতা পরীক্ষা করতে পারেন।

তামিলনাড়ুর অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যান

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হওয়ায়, দক্ষিণ ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তামিলনাড়ু উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তামিলনাড়ুর মুকুটে আরেকটি পালক যোগ হয়েছে। তামিলনাড়ুর বন্যপ্রানী ভ্রমন স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকদের মধ্যে একটি উন্মাদনা সৃষ্টি করে থাকে। তামিলনাড়ুকে একটি বৈচিত্রময় ভূসংস্থান দ্বারা চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই রাজ্যটির আয়তন হল ১,৩০,০৫৮ বর্গ কিলোমিটার যার মধ্যে ১৭.৬ শতাংশ অরণ্য দ্বারা আচ্ছাদিত। এই ভূখণ্ডটি উর্বর নিচু সমতল, সুউচ্চ পর্বতমালা এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দ্বারা গঠিত। শুষ্ক এবং আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য, আর্দ্র চিরহরিৎ অরণ্য, সোলা, তৃণভূমি এবং কন্টকাকীর্ণ ঝেপঝাড় এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য রাজ্যের প্রাকৃতিক ভাণ্ডারকে পরিপুষ্ট করেছে।

তামিলনাড়ুর স্মৃতিসৌধ

এই রাজ্যে ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধগুলির একটি পরিসর রয়েছে এবং সেইগুলি হল : –

  • ভারাথিয়ার ইল্লাম
  • মাদ্রাজ ওয়ার সেমেট্রি
  • কামরাজ মেমোরিয়াল হাউস
  • রিপ্পন বিল্ডিং
  • সেনেট হাউস চেন্নাই
  • ভাল্লুভার কোট্টাম চেন্নাই
  • বিবেকানন্দ ইল্লাম চেন্নাই
  • তাঞ্জাভুর প্যালেস তাঞ্জোর
  • রক ফোর্ট টেম্পল তিরুচিরাপল্লী আয়ান্তিকা
  • পদ্মানাভাপুরাম প্যালেস কন্যাকুমারী
  • অরাত্তানাদ
  • শিবগঙ্গা প্যালেস

এই সব সমুদ্রসৈকতগুলি বিভিন্ন উত্তেজনাপূণ ক্রীড়া এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রম যেমন প্যারাগ্লাইড়িং, রৌদ্র স্নান, সাঁতার, সার্ফিং এবং প্যারাসেলিং-এর জন্য আদর্শ স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

তামিলনাড়ুর শৈল শহর

নিম্নলিখিত শৈল শহরগুলির জন্য এই রাজ্য বিখ্যাত : –

  • কোটাগিরি হিল স্টেশন
  • কুন্নুর
  • ইয়েরকাড় হিল স্টেশন
  • উদাগামণ্ডলম হিল স্টেশন
  • ইয়েলাগিরি হিল স্টেশন
  • উটি হিল স্টেশন
  • কোদাইকানাল হিল স্টেশন

এই সমস্ত শৈল শহরগুলি আপনাকে সম্মোহিত করে দেবে। উটিকে শৈল শহরের রানী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এটি সবচেয়ে চিত্রানুগ শৈল শহর হিসাবে পরিচিত। মাদুরাই থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোদাইকানাল তার ভ্রমনার্থীদের অরণ্যের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং চিত্রানুগ হ্রদ দেখার সুযোগ করে দেয়।

তামিলনাড়ুার পরিদর্শনমূলক স্থান

ভারতের সর্বদক্ষিণস্থ রাজ্য তামিলনাড়ু তার আকর্ষণীয় পর্যটক গন্তব্যস্থলগুলির আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত। তামিলনাড়ুর পর্যটক গন্তব্যস্থলগুলি শুধুমাত্র চিত্রানুগ উপত্যকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে অত্যাশ্চর্য সৈকত, প্রশান্ত পাহাড়ি অঞ্চল, বন্যপ্রাণী উদ্যান, চমৎকার মন্দির, নয়নাভিরাম পাহাড়ী এলাকাও উপস্থিত রয়েছে।

  • ভেদারান্যাম
  • কোদাইক্কারী
  • থিরুনাল্লার
  • মুন্দান্থুরাই-কালাকাড় অভয়ারণ্য
  • জেলা সায়েন্স সেন্টার
  • কুন্থানকুলাম পক্ষী অভয়ারণ্য
  • কোর্টাল্লম
  • স্বামী নেল্লাইআপ্পার-কান্থিমাথি আম্বাল মন্দির
  • রক ফোর্ট
  • শ্রীরাঙ্গাম
  • থিরুভানাইক্কাভাল অথবা জাম্বুকেশ্বরার মন্দির
  • ভাইগাই বাঁধ
  • মাভুথু ভেল্লাপ্পার মন্দির
  • দেভাদানাপাত্তি
  • তাঞ্জাভুর
  • শ্রী বৃহদেশ্বর মন্দির
  • শ্রী ব্রাগাধাম্বাল মন্দির
  • তাঞ্জাভুরের গীর্জা
  • মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর মন্দির

ভেল্লানকান্নি


বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম হল ভেল্লানকান্নি। এটি তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ভেল্লানকানিতে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খ্রীষ্টান তীর্থক্ষেত্র ব্যাসিলিকা অফ্ আওয়ার লেডি হেল্থ গীর্জাটি রয়েছে। এটি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল তীর্থযাত্রীদের এখানে আকর্ষিত করে। এই সুন্দর প্রাসাদটি গথিক স্থাপত্য শৈলী দ্বারা সুশোভিত এবং নিজেই একটি বিস্ময় হিসাবে অবস্থিত রয়েছে। এখানে রহস্যময় এবং অলৌকিক ঘটনার-গল্প সাধারণ বিষয় বলে মনে করা হয় এবং গীর্জাটি মনস্কামনা পূরণের ক্ষেত্রে উচ্চাসনে রয়েছে। এখানকার পার্শ্ব দেওয়ালগুলি বাইবেলের ঘটনা দ্বারা সুন্দর ভাবে সুসজ্জিত রয়েছে। আরো অদ্ভুত হল তীর্থযাত্রীরা এখানে হিন্দু ধর্ম অনুসরণ করে মস্তক মুণ্ডিত করেন এবং কানের ফুটো করে থাকেন।

ভেদারান্যাম


ভেদারান্যাম রাজাগোপালাচারীর লবণ অভিযান এবং গান্ধীজীর ডান্ডি মার্চের সাক্ষী হয়ে রয়েছে, এটি থিরুমারাইক্কাদু নামেও পরিচিত। নাগাপট্টিনাম থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই স্থানটি শ্রী ভেদারান্যায়েশ্বরার মন্দিরের আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত।

কোদাইক্কারী


নাগাপট্টিনাম থেকে ৬৬ কিলোমিটার এবং ভেদারান্যাম থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, কোদাইক্কারী হল একটি জনপ্রিয় সমুদ্রতীরবর্তী শহর। পয়েন্ট ক্যালিমেরে নামেও পরিচিত, এখানে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এবং পরিযায়ী পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসাবে বিভাত্স অভয়ারণ্য রয়েছে। এই সমস্ত পাখিরা তাদের ভ্রমণের জন্য পরিচিত এরা রাশিয়া, সাইবেরিয়া, ইরান, অস্ট্রেলিয়া এবং হিমালয় থেকে এখানে আসে। এখানে যেসমস্ত পাখিদের প্রজাতিগুলি দেখা যায় সেইগুলি হল ফ্লেমিংগো, ইবিসেস, হেরনস, স্পুনবিল, উডকক, হর্নবিল, স্টর্ক, উইলো ওয়ারব্লের, দোয়েল এবং বন্য হাঁস। এখানে অবস্থিত বাতিঘরটি চোল সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং জনশ্রুতি আছে যে এখানে প্রভু রামের পদচিহ্ন আছে যা রামের পদম্ নামে অভিহিত।

থিরুনাল্লার


প্রভু ‘শনিশ্বর’-এর আসন হল থিরুনাল্লার, যা কারাইক্কাল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

থিরুনেলভেলি


তামিলনাড়ুর থিরুনেলভেলি বা নেল্লাই-এর ইতিহাস ২০০০ বছরের পুরাতন। থিরুনেলভেলি তাম্রাপর্নি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এক সময় এটি পাণ্ড্যদের রাজধানী ছিল, কান্থিমাথি নেল্লাইয়াপার শিব মন্দিরের নামানুসারে এই শহরটির নামকরন করা হয়েছে।

মুন্দান্থুরাই-কালাকাড় অভয়ারণ্য


মুন্দান্থুরাই-কালাকাড় অভয়ারণ্যটিতে জাতীয় ব্যাঘ্র প্রকল্পটি ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই অভয়ারণ্যটি ৮১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রসারিত। আম্বাসামুদারাম (২০ কিলোমিটার) এবং কালাকাড় (১৫ কিলোমিটার) এর মাধ্যমে সড়কপথ দ্বারা এখানে প্রবেশ করা যায়। এখানে বাঘ ছাড়া অন্য শিকারী পশুগুলি হল চিতা, জঙ্গলী বিড়াল, গন্ধগোকুল, বন্য কুকুর, শিয়াল ও ডোরাকাটা হায়েনা। এই অভয়ারণ্যটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী যেমন নীলগিরি গাই, মালাবার দৈত্য কাঠবিড়াল, আলস্য বিয়ার, ভারতীয় বাইসন, ভারতীয় হাতি, মাউস হরিণ এবং পেঙ্গোলিন (নেউল)-দের কাছে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এছাড়াও বিষাক্ত সরীসৃপ, উভচর এবং বিভিন্ন ধরনের পাখি এই অভয়ারণ্যে দেখতে পাওয়া যায়। ট্রেকাররা (ভ্রমনার্থীরা) এখানে উত্তেজনাপূর্ণ ও সাহসিক ২৪-টি ভিন্ন প্রকৃতির পছন্দের ভ্রমন করতে পারেন। ব্যাঘ্র প্রকল্পটি সারা বছর সকাল ৬-টা. থেকে সন্ধ্যা ৬-টা. পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। মুন্দান্থুরাই এবং থালায়ানাই বন বিশ্রাম ঘর রয়েছে যা পর্যটকদের এখানে বসবাসের সুযোগ করে দেয়।

জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্র


থিরুনেলভেলি জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রটি বৈজ্ঞানিক আবেদনের ভিত্তিতে এবং আবিষ্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান শিক্ষায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সৃজনশীল প্রতিভাদের অনুপ্রানিত করার জন্য এই কেন্দ্রের সমুদ্রের উপর ৩-টি স্থায়ী গ্যালারী, জনপ্রিয় বিজ্ঞানের জন্য একটি অর্ধ স্থায়ী গ্যালারি এবং একটি ছয় একরের বিজ্ঞান পার্ক রয়েছে যেখানে চিত্র প্রদর্শনীর দ্বারা সচেতনতা তৈরি করতে এবং জ্ঞান-পিপাসা মেটাতে সাহায্য করে। এটি একটি তারামন্ডল, একটি আ্যনিমাটোরিয়াম এবং একটি মানমন্দির দিয়ে সজ্জিত। এছাড়াও এই বিজ্ঞান কেন্দ্রটি মোবাইল বিজ্ঞান প্রদর্শনী, চলচিত্র প্রদর্শনী, অস্থায়ী প্রদর্শনী, বিজ্ঞান নাটক ও বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে থাকে।

কুন্থানকুলাম পক্ষী অভয়ারণ্য


থিরুনেলভেলির দক্ষিণে এটি হল একটি জনপ্রিয় পক্ষী অভয়ারণ্য, এই স্থানটি পরিযায়ী পাখিদের একটি উন্নয়নশীল আশ্রয়স্থল। শীতকালে এখানে প্রায় ৩৫ রকমের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়।

কোর্টাল্লম


পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সুন্দর পরিপ্রেক্ষিতে থিরুনেলভেলির কাছাকাছি এখানে একটি চিত্রানুগ স্বাস্থ্যকর স্থান গড়ে উঠেছে। কোর্টাল্লম তার চমৎকার জলপ্রপাতের জন্য পরিচিত, এটি নিজে আরও আটটি চমৎকার জলপ্রপাতে বিভক্ত হয়েছে এবং সার দিন ধরে স্নান করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত স্থান। এই জল ভেষজ গুণাবলী সমৃদ্ধ এবং নিয়মিত ব্যবহারের ফলে বাতগ্রস্ত সন্ধি, মাথাব্যথা এবং নার্ভের বিশৃঙ্খলাতা দূর হয়ে থাকে।

স্বামী নেল্লাইআপ্পার-কান্থিমাথি আম্বাল মন্দির


স্বামী নেল্লাইআপ্পার-কান্থিমাথি আম্বাল মন্দিরে মনি মন্ডপের বাদ্যযন্ত্র স্তম্ভকে তাড়িত করলে মিষ্টি শব্দ উৎপন্ন হয়ে থাকে। হাজার স্তম্ভ সমন্বিত সমাভারা মন্ডপ, ভাসান্থা মন্ডপ এবং তাম্র সভার সুন্দর ভাস্কর্যগুলি ৭০০ খ্রীস্টাব্দ প্রাচীন।

তিরুচিরাপল্লী


তিরুচিরাপল্লী নির্মল কাবেরী নদীর তীরে মাদুরাই এর নায়েকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিরুচিরাপল্লী দুর্গ প্রথম দিকে চোলদের এবং তারপর পল্লবদের অধীনে ছিল এবং এটি ১৪৬,৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই প্রাচীন শহরটি তার স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিখ্যাত, অনেকে ভালবেসে ত্রিচী বলেও ডাকে। এটি তামিলনাড়ুর একটি সদাব্যস্ত শহর যা রঙিন কাঁচের চুড়ি, কৃত্রিম হীরা, সিগার, তাঁত কাপড় এবং কাঠ এবং কাদামাটির খেলনার জন্য বিখ্যাত।

রক্ দুর্গ


রক্ দুর্গ শহরের মধ্যে একটি আকস্মিক বিশাল পাথরের উপরে অধিষ্ঠিত এবং উচ্চতা ৮৩ মিটার। এই শিলা ৩,৮০০ লক্ষ বছরের প্রাচীন এবং নিজেই একটি বিস্ময়। এই দুর্গের ভিতরে অবস্থিত মন্দিরটি পর্যটকদের আকর্ষন করে। প্রভু বিনায়ককে উৎসর্গীকৃত উছিপিল্লাইয়ার কইল মন্দির তিরুচিরাপল্লীর একটি দর্শনীয় দৃশ্য দেখার প্রস্তাব দেয়। ধ্বংসাবশেষের অভ্যন্তরে, ৩৪৪ ধাপের একটি আরোহনের মাধ্যমে খ্রীষ্ঠীয় তৃতীয় শতাব্দীর শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়।

শ্রীরঙ্গমগ


৬০০ একর দ্বীপ জুড়ে বিস্তৃত, তিরুচিরাপল্লী থেকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এটি ভারতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র। শ্রীরঙ্গম-এর এক দিকে কাবেরী নদী এবং অন্য দিকে কল্লাইডাম উপনদী এবং শ্রীরঙ্গানাথাস্বামী মন্দিরের সাত দেওয়াল দ্বারা পুরো শহরটি পরিবেষ্ঠিত। এখানে ২১-টি গোপুরম্ আছে যার মধ্যে রাজাগোপুরমটি হল বৃহত্তম এবং অনেক দূর থেকে এটি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

থিরুভানাইক্কাভাল অথবা জাম্বুকেশ্বরার মন্দির


এটি শ্রীরঙ্গম এর কাছাকাছি অবস্থিত, এখানকার শান্ত এবং নির্মল শিব মন্দিরটি তার চমৎকার স্থাপত্যের জাঁকজমকের জন্য সুপরিচিত। এখানে একটি প্রাচীন জম্বু গাছের নীচে একটি লিঙ্গ আংশিকভাবে জল দ্বারা নিমজ্জিত রয়েছে এবং জলকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে।

থেনি


দক্ষিণ তামিলনাড়ুর থেনি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান এবং এটি তার নির্মল পরিবেশের জন্য পরিচিত। আকর্ষণীয় বাঁধ, সম্মোহিত জলপ্রপাত, অনেক তীর্থক্ষেত্র এবং সবুজ ভূদৃশ্য থেনিকে অন্যান্য কোলাহলমুখর এবং ব্যস্ত পর্যটন স্থানগুলির থেকে আলাদা করেছে।

ভাইগাই ড্যাম


১১১ ফুট উচ্চ ভাইগাই বাঁধ ৭১ ফুট জল সংরক্ষণ করতে পারে। থেনি অরণ্য থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এটি একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্থান।

মাভুথু ভেল্লাপ্পার মন্দির


এই পবিত্র মন্দিরটি ভারুশানাদের ঘন পাহাড়ী পরিসরের মধ্যে, আন্দিপাত্তি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এছাড়াও এই স্থানে বিনায়ক এবং সপ্তকান্নিকাস-এর মন্দির রয়েছে। এখানে আদি অমাবস্যা (নীল চাঁদ) এবং থাই অমাবস্যা মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। চিথিরাই মাসে একটি বার্ষিক উৎসব হয়ে থাকে।

দেভাদানাপাত্তি


দেভাদানাপাত্তির প্রধান মন্দির হল কামাতছি আম্মা মন্দির, কিন্তু এই পবিত্রস্থানের অন্তর্দেশ কখনও খোলা হয় না। এখানে শুধুমাত্র গোপুরম্-এ পূজা প্রদান করা হয়। সান্ধ্য পূজার সময় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনের মাধ্যমে একটি সুন্দর পরিবেশ রচনা করা হয়ে থাকে।

তাঞ্জাভুর


পূর্ব তামিলনাড়ুর একটি শহর হল তাঞ্জাভুর, এটি কাবেরী (কাবেরী) নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে ২৯,২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি ১০ থেকে ১৪ শতকে চোল (কোলা) সাম্রাজ্যের ক্ষমতার আসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবং বিজয়নগর, মারাঠা, এবং ব্রিটিশ আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এবং ব্রোঞ্জ, হস্তশিল্প ও দক্ষিণ ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত।

শ্রী বৃহদেশ্বর মন্দিরের


এটি মহান চোল রাজা, প্রথম রাজা ১০-ম শতাব্দীতে শ্রী বৃহদেশ্বর মন্দিরটি তৈরী করেছিলেন এবং এই মন্দিরটি চোল স্থাপত্যের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। এটি ২১৬ ফুট উচ্চতার সন্ত্রস্ত ১৪ তলার একটি গ্রানাইট মন্দির, মন্দিরের কেন্দ্রীয় থাম ৪৫,৭২ বর্গ মিটার এবং মন্দিরের সঠিক পরিমাপ হল ৩০,৪৮ বর্গ মিটার। শ্রী বৃহদেশ্বর মন্দিরের ভীমানাম ৬০.৯৬ মিটার উচ্চতা সহ এক বর্গক্ষেত্র আকারের ভিত্তির উপর উল্লম্বভাবে অবস্থিত এবং এর উপরে রয়েছে ৩৩৯.৫ কিলোগ্রাম ওজনের সোনার প্রলেপ দেওয়া তামার কলসী। প্রায় ২০ টন ওজনের একটি বিশাল ষাঁড়, নন্দী একটি একক পাথর থেকে খোদাইকৃত এবং এই পবিত্র মন্দিরের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। এর ভিতরে রয়েছে শ্রী বৃহদেশ্বর মন্দিরের এক বিপুল পরিকাঠামো যা হল ৭ মিটার উচ্চ একটি শিবলিঙ্গ। এই মন্দিরটি সুন্দর চিত্রাঙ্কন দ্বারা সুশোভিত এবং এর ভেতরের দেওয়াল এবং ছাদে অসাধারণ ভাস্কর্য রয়েছে।

প্রাসাদ


এই সুন্দর প্রাসাদের স্থাপত্যটি ১৫৫০ খ্রীষ্ঠাব্দে আংশিক নায়েকদের দ্বারা এবং আংশিক মারাঠাদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি ১৫ ফুট উঁচু দেওয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং ৫৩০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই প্রাসাদের ভিতরে ১৯০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ঠ আট তলার রাজকীয় আর্সেনাল টাওয়ার দাঁড়িয়ে রয়েছে যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে থাকে। আর্সেনাল টাওয়ারের উত্তরে নির্মিত সেরগিনায়াক শৈলীতে নির্মিত মারাঠা দরবার হলের বিখ্যাত বেল টাওয়ারটি সূক্ষ্ম পেন্টিং-এ সমৃদ্ধ। সরস্বতী মহল গ্রন্থাগারে অনেক অমূল্য প্রাচীন বই ও পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত রয়েছে এবং এখানকার আর্ট গ্যালারিটি গ্রানাইট দ্বারা সমৃদ্ধ, এখানে চোল সময়কালের ব্রোঞ্জ এবং পাথরের ভাস্কর্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সঙ্গীত মহল একটি বিস্ময় এখানে বাদ্যযন্ত্রের একটি নিখুঁত ধ্বনিতাত্বিক প্রতিফলিত হয়ে থাকে যা সেই সময়ের প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে বহন করার জন্য পরিচিত। এই রাজপ্রাসাদের বাগানে শোয়ার্জ গীর্জাটি অবস্থিত।

তাঞ্জাভুরের গীর্জা


প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ধুমধাম এবং উৎসাহের সহিত হাজার হাজার তীর্থযাএী পোকরা স্ট্রিটের সরোস্ চার্চের বার্ষিক গাড়ী উৎসবে অংশগ্রহন করে থাকে। তাঞ্জাভুরের ধর্মীয় সম্প্রীতির সাক্ষ্য হিসাবে ভক্তিমূলক হার্ট ক্যাথিড্রাল চার্চ, সেন্ট পিটার্স চার্চ, ফোর্ট চার্চ এবং লুথেরান চার্চ বিদ্যমান রয়েছে।

পুদুকোত্তাই


দেশীয় রাজ্য পুদুকোত্তাই বর্তমানে তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি অংশ। ১৭ শতাব্দীর পূর্বে এই রাজ্যটির উৎপত্তি হয়েছিল। এই শহরের একটি সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যা পুদুকোত্তাই-এর বিভিন্ন অংশে নিহিত রয়েছে। বিভিন্ন রাজবংশ দ্বারা নির্মিত মন্দির, ট্যাঙ্ক এবং খালের একটি প্রাচুর্য পুদুকোত্তাই-এ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

পুদুকোত্তাই তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই শহর থেকে 390 কিমি দূরত্বে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি রেল এবং সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে রাজ্যের অন্যান্য শহরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। স্মৃতিসৌধের কাঠামো থেকে এই শহরের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য দৃশ্যত হয়ে থাকে এবং এই অঞ্চলে প্রচুর পবিত্র মন্দির পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

শ্রী ব্রাগাধাম্বাল মন্দির


এটি দক্ষিণ ভারতের একটি প্রাচীনতম মন্দির। এই মন্দিরটি গরকর্ণেশ্বর দেবীকে নিবেদিত। এই মন্দিরে চমৎকার স্থাপত্যশিল্প পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। মন্দিরটির দীর্ঘ সময়কাল ধরে উপস্থিতির ফলে মন্দিরের মধ্যে নির্দিষ্ট বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন লক্ষ্যিত হয়েছে।

মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর মন্দির


এই মন্দিরটি মীনাক্ষী দেবীকে নিবেদিত এবং ব্রাগাধাম্বাল মন্দিরের কাছে অবস্থিত। এই মন্দিরের কাছে পেরিয়া-কুলাম জলাধার অবস্থিত রয়েছে। পেরিয়া-কুলাম জলাধারের দক্ষিণ প্রান্তে একটি মন্দির রয়েছে যেখানে ভগবান গণেশের ষোল ধরনের রূপ পরিলক্ষিত হয়।

চেন্নাই


ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম শহর হল তামিলনাড়ুর চেন্নাই। পূর্ব উপকূলে অবস্থিত চেন্নাইকে দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বার বলে গন্য করা হয়ে থাকে। ভারতের প্রথম প্রধান ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল তামিলনাড়ুর চেন্নাই। চেন্নাই শহর হল ঐতিহ্য ও আধুনিকতার একটি চিত্তাকর্ষক মিশ্রন। এর বর্ধনশীল এবং পরিবর্তন শীলতা একে উপস্থাপন করে একটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বজনীন রুপে, এই শহরের অভ্যন্তরে ঐতিহ্যগত এবং ধর্মীয় ভাবাবেগ বর্তমান রয়েছে। ইন্দো সারসেনিক শৈলী ভবন, প্রশস্ত বৃক্ষ রেখাযুক্ত রাজপথ এবং পুরাতন অট্টালিকার উপস্থিতির কারনে চেন্নাইয়ে ব্রিটিশদের প্রভাব এখনও পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

তামিলনাড়ুর চেন্নাই পূর্বে মাদ্রাজ নামে পরিচিত ছিল, এটি ১৭৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। শহরের মোট জনসংখ্যা হল প্রায় ৪২,১৬ লাখ। এই শহরটি ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসাবে ফোর্ট সেন্ট-এর কাছাকাছি অবস্থিত। ধীরে ধীরে কিছু পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই শহর একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র এবং দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের সাথে সড়ক, রেল ও বিমান দ্বারা খুব ভালভাবে সংযুক্ত রয়েছে। কামরাজ জাতীয় এবং আন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তিরুসুলামে অবস্থিত। সেন্ট্রাল এবং এগমোর হল চেন্নাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। চেন্নাইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর রয়েছে।

চেন্নাইয়ের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি হল কাঞ্চিপুরম, পুদুচেরি, বেঙ্গালুরু, তিরুপতি, ভেলোর এবং মামাল্লাপুরাম। খুব ভাল সড়ক সংযোগদ্বারা এই শহরগুলি তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের সাথে সংযুক্ত রয়েছে।

তামিলনাড়ুর হোটেল

তামিলনাড়ু রাজ্যে অনেক তারকা এবং সাধারণ উভয় ধরনের হোটেল রয়েছে যা এই রাজ্যে পরিদর্শন করতে আসা পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এছাড়াও এখানে অনেক রিসর্ট, রেঁস্তোরা এবং ক্যাফে আছে যা পর্যটকদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করে থাকে। ভারতের ২৮-টি রাজ্যের একটি হল তামিলনাড়ু, যেটি ভারতীয় উপদ্বীপমূহের দক্ষিণে অবস্থিত। এই রাজ্যটি কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং পন্ডিচেরি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই রাজ্যটি উত্তরে পূর্বঘাট পর্বত এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে মান্নার উপসাগর এবং পক্ প্রণালী দ্বারা পরিবেষ্টিত। নীলগিরি, পালাক্কাড় এবং আন্নামালাই পাহাড় তামিলনাড়ুর পশ্চিম অংশ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত রয়েছে। তামিলনাড়ুর রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর, উভয় হিসাবেই চেন্নাই পরিগণিত হয়।

তামিলনাড়ুতে কেনাকাটা

তামিলনাড়ুতে কেনাকাটা করা একটি সত্যিকারের আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। এই অঞ্চলটি চারু ও কারুশিল্পের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। তামিলনাড়ুতে কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় বস্তু হল তার সিল্ক বুনন। তাঞ্জাভুর, কোয়েম্বাটুর এবং কাঞ্চিপুরাম- সিল্ক এর জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে, অন্যদিকে মহাবলীপুরমে আপনি পাথরের ভাস্কর্য কিনতে পারেন। তামিলনাড়ুতে কেনাকাটার জন্য আরেকটি প্রখ্যাত বস্তুসামগ্রী হল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র। একই সঙ্গে ব্রোঞ্জ ও পিতলের মূর্তি এবং হস্তনির্মিত বস্তুসামগ্রীর মধ্যে থেকে কোনটি বেছে নেবেন সে ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে যাবেন।

* সর্বশেষ সংযোজন : ২৪ - শে জুলাই, ২০১৫