মণিপুর পর্যটন

Travel to Manipur in Bengali

মণিপুর পর্যটন
* মণিপুর পর্যটন মানচিত্রে - মণিপুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ, হোটেল ও অন্যান্য পরিদর্শনযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে দেখানো হয়েছে।

মণিপুর পর্যটন

উত্তর-পুর্ব ভারতের প্রান্তে সবুজ ক্ষুদ্র রাজ্য মণিপুর অবস্হিত।

হিন্দি অর্থে মণিপুর শব্দের অর্থ হল – “মণির দেশ”, যা মণিপুর-এর জন্য সব দিক দিয়ে উপযোগ্য।

মণিপুর কল্পনায় আবৃত দেশ। কথিত আছে যে মণিপুর দেশটি আবিষ্কৃত হয় দেবতাদের নৃত্যের আনন্দের ফলে। এই ধারণাটি তার মনোহর লোক নৃত্যের মধ্যে জীবিত রয়েছে বলে মনে করা হয়।

১৮৯১ সালে ইঙ্গ-মণিপুরী যুদ্ধে পরাজয়ের পর এই প্রাক্তন দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশদের শাসনাধীনে আসে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনের পর এইরাজ্য ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৭২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের রূপ পায়।

এই রাজ্য একটি অনুপম সৌন্দর্যের আশীর্বাদ প্রাপ্ত। ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত ডিম্বাকৃতি আকারের উপত্যকা দেখে মনে হয় যেন ঈশ্বরের এক অনন্য শিল্পকর্ম। মণিপুর সৃষ্টি করতে প্রকৃতি তার সবচেয়ে পছন্দের উপহারগুলি ঢেলে দিয়েছেন। পাহাড় ও বনাঞ্চল একত্রিত হয়ে এটিকে একটি সরল শান্ত ত্ত মনোরম পশ্চাদপসরণ করে তুলেছে।

এখানকার গ্রাম্য রাস্তা মণিপুরকে এক অসাধারন সৌন্দর্য প্রদান করে। পর্যটন গন্তব্য হিসেবে মণিপুর এখনও প্রচারের ছটায় আসেনি। বিশ্বের মানুষ এখনও ঝাঁকে ঝাঁকে মণিপুর ভ্রমণ না করায় এই রাজ্য কলুষমুক্ত রয়েছে।

মণিপুরের জনপরিসংখ্যান
অবস্থান ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশে
উত্তরে নাগাল্যান্ড,
পূর্বে মায়ানমার (বার্মা),
দক্ষিণে মিজোরাম,
পশ্চিমে আসাম
অক্ষাংশ 23.83° থেকে 25.68° উত্তর
দ্রাঘিমাংশ 93.03° থেকে 94.78° পূর্ব
আয়তন 22,327 বর্গ কিলোমিটার
জলবায়ু গ্রীষ্মকালে – গরম
শীতকালে – অত্যন্ত ঠান্ডা
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 32° সেন্টিগ্রেড
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 1° সেন্টিগ্রেড
বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 147 সেন্টিমিটার
রাজধানী ইম্ফল
জনসংখ্যা 22,93,896
ভাষা মণিপুরী, হিন্দি, ইংরেজি, বর্মী, তিব্বতী
ধর্ম বৈষ্ণবীয় হিন্দু
পরিদর্শনের সেরা সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি
পরিধান গ্রীষ্মকালে – সূতি, শীতকালে – পশম

মণিপুর পৌঁছানোর উপায়

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের সাতটি ভগিনী রাজ্যের মধ্যে এক অন্যতম রাজ্য মণিপুর ধোঁয়াটে নীল পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত একটি ডিম্বাকৃতি উপত্যকার এক অক্ষয় সৌন্দর্যের অধিকারী।এখানকার অসাধরন ভূদৃশ্য প্রধানত ইম্ফল, থৌবাল, ইরিল, ইরাক ও বারাক নদীর জল দ্বারা সমৃদ্ধ বৃক্ষাচ্ছাদিত পাহাড়ী ভূখণ্ড।

এখানকার প্রাকৃতিক জাঁকজমক অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মনোরম নৃত্য-রূপের জন্যও মণিপুর বিখ্যাত, যা বিশ্বের শিল্প-প্রেমিকদের আকৃষ্ট করে। ‘মণিপুর পৌঁছানোর উপায়’ আপনাকে বিমান, সড়ক ও রেল দ্বারা সহজে মণিপুর পৌছাতে সাহায্য করবে।

বিমানপথ দ্বারা

মণিপুরের রাজধানী শহর ইম্ফলে একটি বিমান বন্দর অবস্থিত।ইম্ফল বিমানবন্দর দিল্লি কলকাতা ও গুয়াহাটির মত প্রধান ভারতীয় শহরগুলির সঙ্গে সুসংযুক্ত। ভারতের উত্তর-পূর্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং এই শহরে ভারতীয় বিমানের অনবরত আনাগোনা রয়েছে।

রেলপথ দ্বারা

মোদপুর হল মণিপুর রাজ্যের একটি রেল স্টেশন যেখানে দেশের কয়েকটি স্থানের ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলি; যেমন – গুয়াহাটি, দিমাপুর ও শিলচরে রেল স্টেশন রয়েছে, যেগুলি দেশের অন্যান্য অংশের ট্রেন দ্বারা পরিবেশিত হয়। এই শহরগুলি থেকে সড়ক পথ দ্বারা মণিপুর পৌঁছান যায়।

সড়ক পথ দ্বারা

মণিপুরের সড়কপথ বেশ দক্ষ। নং– ৩৯-নং জাতীয় সড়ক ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের শহর, যেমন – গুয়াহাটি, ডিমাপুর, কোহিমা, শিলচরের মত প্রধান শহরগুলোকে মণিপুরের সাথে সংযুক্ত করে।

মণিপুর প্রবেশের আনুষ্ঠানিকতা


আন্তর্জাতিক পর্যটন

ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মণিপুর দর্শনেচ্ছুক বিদেশীদের সংরক্ষিত এলাকা পরিদর্শন অনুমতিপত্র প্রদান করে। এটি পাওয়া যাবে ভারতীয় বিদেশ মিশন, মুম্বাই ও কলকাতার পররাষ্ট্র রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফ.আর.আর.ও), চেন্নাইয়ের ইমিগ্রেশন অফিস, ইম্ফল, মনিপুর সরকার ও হোম কমিশনারের কাছ থেকে।

জাতীয়/দেশীয় পর্যটন

মনিপুরে ভারতীয়দের ভ্রমনের জন্য অন্তঃসীমা অনুমতিপত্র প্রয়োজন যা নয়া দিল্লি, কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলং-এর নাগাল্যান্ড সরকারের সংযোগ কর্মকর্তা ও সাব-ডিভিশনাল অফিস (সিভিল) দিমাপুর, জেলা প্রশাসক ইম্ফল দ্বারা প্রদেয়।

মণিপুরের স্থান পরিদর্শন

ভারতের উত্তরপূর্বে কোণায় অবস্থিত সবুজ রাজ্য মণিপুর যথার্থই এই নামটির যোগ্য যার হিন্দি অর্থ হল “রত্নের দেশ”। এই চিত্রানুগ ভূদৃশ্য তার ঐশ্বরিক মণিপুরী নৃত্যের জন্য বিশ্ব পরিচিত। ধোঁয়াটে নীল পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত ক্ষুদ্র রাজ্য মণিপুর কল্পনা এবং রহস্যের একটি দেশ। মণিপুরের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থানগুলি হল তার চমকপ্রদ ভূদৃশ্য, প্রাচুর্যময় প্রকৃতি এবং তার সাংস্কৃতিক সম্পদ।

ধোঁয়াটে নীল পাহাড় এবং সবুজ সতেজ বনাঞ্চল একটি অত্যাশ্চর্য সমন্বয়কে তুলে ধরে যা আপনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য পাগল করে দেওয়ার মত ও নির্মলতা অপ্রতিরোধ্য।

মণিপুরের পরিদর্শনমূলক স্থান

  • ইম্ফল।
  • গোবিন্দজি মন্দির।
  • ওয়্যার সেমেট্রি।
  • খোংঘাম্পট অর্কিডারিয়াম।
  • জুওলোজিক্যাল গার্ডেন।
  • লাংঠাবল।
  • বিষ্ণুপুর।

* মণিপুরের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থলগুলির বিষয়ে নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে –

ইম্ফল


রাজ্যের ব্যস্তবাগীশ রাজধানী শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৯০ মিটার উপরে একটি হৃদয় আকৃতির উপত্যকার উপর অবস্থিত। এটি মণিপুরের উপজাতিদের বসবাসের এলাকা। মণিপুরের অধিকাংশ পর্যটন আকর্ষণ এই শহরের মধ্যেই অবস্থিত।

গোবিন্দজি মন্দির


মণিপুরের প্রাক্তন রাজা দ্বারা নির্মিত এটি একটি বৈষ্ণব মন্দির। এটি ২-টি গম্বুজ ও একটি বৃহৎ ধর্মসভার সমন্বয়ে গঠিত অত্যন্ত সুন্দর ও সাধারণ একটি মন্দির। এর একপাশে রয়েছে কৃষ্ণ এবং বলরামের মন্দির এবং জগন্নাথ হল এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।

ওয়্যার সেমেট্রি


কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি কমিশন এই কবরস্থানটি প্রতিপালন করে। ব্রোঞ্জের ফলক সহ ছোট পাথরের চিহ্নিতকারী এই সমাধিগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সৈন্যদের স্মৃতিরক্ষা করে।

খোংঘাম্পট অর্কিডারিয়াম


২০০ একর বিস্তৃত এই জমি ১১০-টিরও বেশী প্রজাতির অর্কিড ও এক ডজন অন্যন্য প্রজাতির উদ্ভিদের আশীর্বাদপ্রাপ্ত।

লোকটাক হ্রদ


ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বৃহত্তম প্রাকৃতিক মিঠাপানির হ্রদ ইম্ফল শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই লেক ‘ফুমদি’ নামক ভাসমান উদ্ভিদ দ্বারা পরিপূর্ণ। সেন্দ্রা বদ্বীপ এই হ্রদে অবস্থিত এবং এখানে একটি পর্যটন বাংলো রয়েছে যেখান থেকে এই হ্রদের একটি চিত্তাকর্ষক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

জুওলোজিক্যাল গার্ডেন


এর পাইন-পরিহিত পর্বত চূড়ায় সাঙ্ঘাই (শিংওয়ালা হরিণ) রয়েছে।

লাংঠাবল


এখানে ঐতিহাসিক প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ সমন্বিত একটি ছোট পাহাড় এবং সুন্দর মন্দির স্থাপত্য রয়েছে।

বিষ্ণুপুর


এখানে বিচিত্র চীনা প্রভাব সহ একটি বিষ্ণু মন্দির রয়েছে। এর পাশে রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম মিঠাপানি হ্রদ লোকটাক হ্রদ, এবং লাল পাহাড় যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও জাপানিদের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

মণিপুরে কেনাকাটা

মণিপুরে কেনাকাটা নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা তাঁত ভালবাসেন। মণিপুর রাজ্য তার তাঁত বস্ত্র এবং অন্যান্য ঐতিহ্যগত হস্তনির্মিত পণ্যের জন্য বিখ্যাত।

এখানে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য আছে, যেগুলি ছাড়া মণিপুরে কেনাকাটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। নিম্নলিখিত জিনিস গুলি খুবই বিখ্যাত :

  • মইরাংফি নকশার বিছানার চাদর।
  • সিল্ক শাড়ী।
  • সুতি শাড়ী।
  • ওড়না।
  • কম্বল।
  • শাল।
  • বাঁশের তৈরি পণ্য।
  • কাগজ দ্বারা নির্মিত পণ্য।
  • গজদন্ত দ্বারা নির্মিত পণ্য।
  • পুতুল।
  • গহনা।

মণিপুরের ট্রাভেল এজেন্ট

পর্যটকদের আকর্ষণীয় পর্যটন প্যাকেজ প্রদান ও অবিস্মরণীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য মণিপুরের ট্রাভেল এজেন্টরা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। উত্তরপূর্ব ভারতের মুকুট, মনিপুর, একটি আসন্ন পর্যটন গন্তব্য। এই রাজ্য তার প্রাচীন ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী, সামরিক মহিমা, প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, সাংস্কৃতিক উন্মাদনা ও তার পাশাপাশি উপজাতীয় উত্তরাধিকারের জন্য বিখ্যাত। অতএব, এই রাজ্য দেশের পর্যটনের অগ্রদূত হিসাবে উদ্ভূত।

পর্যটনের দৃষ্টিকোণ থেক মণিপুরের সবকিছু আছে। প্রাচীন মন্দির থেক শুরু করে মিউজিয়াম, যুদ্ধ ক্ষেত্র, বিস্তৃত ফলের বাগান, অসাধারণ উপজাতীয় গ্রাম, নির্ঝর জলপ্রপাত বা অরণ্যময় হ্রদ – উত্তরপূর্ব ভারতের কুমারী ভূখণ্ড এই সবকিছুর অধিকারী।

মণিপুরে বিভিন্ন পর্যটন পরিচালক আছে যারা পর্যটকদের এই রাজ্য অন্বেষণ করার জন্য বিভিন্ন বিকল্প প্রদান করে। এই ভ্রমণ সাধারণত ১৫ দিনের হয় এবং এই ভ্রমণে মণিপুর জুড়ে পর্যটকদের সামগ্রিক দৃশ্য দেখানো হয়। তারা পর্যটকদের আবশ্যক যত্ন গ্রহণ করে, তাদের পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং আরামদায়ক হোটেল প্রদান করে যেগুলির মূল্য বা ভাড়া পর্যটকদের সামর্থ্য অনুযায়ী হয়।

ট্রাভেল এজেন্টরা পর্যটকদের মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল পরিদর্শন করানোর পাশাপাশি চিত্রানুগ জেলা তামেংলং ও চান্ডেল উপজাতীয় গ্রাম পরিদর্শন করায়। এখানে পর্যটকরা কিছু রোমাঞ্চকর ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নিতে পারেন, যেমন – পোলো বা ট্রেকিং বা পর্বত আরোহণ।

মণিপুরের ট্রাভেল এজেন্ট পর্যটকদের এক অবিস্মরণীয় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। মণিপুরের পর্যটন এজেন্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিম্নলিখিত ভ্রমণ নির্দেশকদের সাথে যোগাযোগ করুন –

  • অ্যাক্সেস ইন্ডিয়া ট্রাভেল।
  • রমা মুভার্স।
  • ওয়েস্ট ইন্ডিয়া ট্রাভেল ট্যুর।
  • ইন্ডিয়া ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস্।
  • বুদ্ধিস্ট ইন্ডিয়া।
  • লাক্সারি ইন্ডিয়া ট্রাভেল।
  • ইন্ডিয়া ট্রাভেল ফোরাম।
  • ইন্দাস দ্য ইন্ডিয়ান স্পেশালিস্ট।
  • কম্পাস ট্যুরস্ অ্যান্ড ট্রাভেলস।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১৩ -ই জুলাই, ২০১৫