ছত্তীসগঢ় পর্যটন

Travel to Chhattisgarh in Bengali

ছত্তীসগঢ় পর্যটন
* ছত্তীসগঢ় পর্যটন মানচিত্রে, ছত্তীসগঢ়-এর প্রধান শহর, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলি দেখানো হয়েছে।

ছত্তীসগঢ় পর্যটন

ছত্তীসগঢ় কেবল এই সহস্রাব্দের শুরুতে অস্তিত্ব লাভ করে। ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে ছত্তীসগঢ়কে মধ্য প্রদেশ থেকে উৎকীর্ণ করা হয় ভারতীয় ইউনিয়নের ২৬-তম রাজ্য গঠন করার উদ্দেশ্যে।

ছত্তীসগঢ় ভ্রমণ করা কালীন এখানকার প্রকৃত সবুজ গালিচা আপনাকে স্বাগত জানাবে। ছত্তীসগঢ় বিশেষভাবে ভারতীয় বনাঞ্চল এবং হীরা সহ অন্যান্য খনিজ সম্পদের ১২ শতাংশ অংশ দ্বারা সমৃদ্ধ।

ঐতিহাসিকগণ বলেন প্রাচীন দণ্ডকারণ্য, যা বর্তমানে ছত্তীসগঢ়ের একটি অংশ, একদা ভারতের প্রাচীন বাসিন্দাদের বাসভূমি ছিল। প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতে এই স্থানের উল্লেখ রয়েছে।

কালচুরি রাজবংশ নামে পরিচিত, একটি শক্তিশালী রাজপুত পরিবার, দশম থেকে ষষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই অঞ্চলে শাসন করেন। শিবনাথ নদীর উত্তরে ১৮-টি গড় (দুর্গ) এবং দক্ষিণ আরও ১৮-টি দুর্গ ছিল যেগুলি কালচুরি রাজবংশের অন্তর্গত ছিল। তাই, মোট ৩৬-টি (হিন্দিতে ছত্রিশ) গড়ের (দুর্গ) সমন্বয়ে এই অঞ্চলের নাম ছত্তীসগঢ় হিসেবে নামাঙ্কিত হয়।

ছত্তীসগঢ় পৌঁছানোর উপায়

ছত্তীসগঢ় রাজ্য তার কুমারী বনাঞ্চল, আঁকাবাঁকা নদী, জলপ্রপাত, প্রাচীন গুহা এবং মন্দির ও সমৃদ্ধ আদিবাসী জনসংখ্যার প্রলোভনের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানায়।

ছত্তীসগঢ় পৌঁছাবেন কিভাবে এই নিয়ে চিন্তিত? ভারতের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত, ছত্তীসগঢ় রাজ্য সম্পূর্ণভাবে স্থলবেষ্টিত যা যোগাযোগের সহজ উপায় দ্বারা দেশের যে কোন অংশ থেকে প্রবেশযোগ্য। তাই ছত্তীসগঢ় কিভাবে পৌঁছবেন এই নিয়ে আপনাকে আর চিন্তিত থাকতে হবেনা।

বিমান মাধ্যমে

ছত্তীসগঢ়ে একটি অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দর আছে, যা দেশের প্রায় সব প্রধান বিমান বন্দরের সাথে সুসংযুক্ত। ভারতীয় বিমানসংস্থা রায়পুর থেকে নিয়মিত যাওয়া আসার বিমান পরিচালনা করে।

রেল মাধ্যমে

ছত্তীসগঢ়ের দুটি প্রধান রেলস্টেশন – রায়পুর ও বিলাসপুর ভারতের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। রায়পুর পশ্চিম ও পূর্ব ভারতে দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন যথাক্রমে মুম্বাই এবং হাওড়ার প্রায় মধ্যবর্তী পর্যায়ে পরে, যা নিয়মিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন দ্বারা পরিবেশিত হয়।

সড়ক মাধ্যমে

ছত্তীসগঢ়ের সড়কপথ চমৎকার। ৬-নং, ১৬-নং ও ৪৩-নং জাতীয় সড়ক ছত্তীসগঢ়ের সব প্রধান নগর ও শহরগুলির সাথে দেশের অন্যান্য অংশগুলির সংযোগ স্থাপন করে।

ছত্তীসগঢ়-এর পরিদর্শনমূলক স্থান

ছত্তীসগঢ়ে বিভিন্ন পর্যটন স্থান রয়েছে যার অধিকাংশই প্রায় অপরিচিত। ছত্তীসগঢ়ের কলুষমুক্ত সবুজ বন, চিত্রানুগ জলপ্রপাত, নাটুকে মালভুমি এবং আঁকাবাঁকা নদী চোখকে এক মুগ্ধতা প্রদান করে। পুরাতন যুগের গুহা এবং দুর্গ ছত্তীসগঢ়ের পর্যটন আকর্ষণে আরও সৌন্দর্য যোগ করে। ছত্তীসগঢ়ে লক্ষাধিক বন্য জীবন লুকিয়ে রয়েছে যা রাজ্যের ভূ-পৃষ্ঠের ৪২ শতাংশ দখল করে আছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যটি হল ছত্তীসগঢ়ের অসাধারণ আদিবাসী আকর্ষণ যা ছত্তীসগঢ় শহরে পর্যটক আকর্ষণ করতে একটি চুম্বক চুম্বক হিসাবে কাজ করে।

ছত্তীসগঢ়-এর দর্শনীয় স্থান

  • কাওয়ার্ধা।
  • চিত্রকূট জলপ্রপাত।
  • কাঁকের।
  • ভোরমদেব।
  • চম্পারণ।
  • বাস্তার।
  • শিবরিনারায়ন।
  • ইন্দ্রবতি জাতীয় উদ্যান।

কাওয়ার্ধা


  • শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • ছোট সুপ্রাচীন শহর কাওয়ার্ধা কটি শান্ত পশ্চাদপসরণ যা প্রকৃতির উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্য এবং একটি সমৃদ্ধ আদিবাসী জীবনের দৃশ্যের প্রস্তাব দেয়। কাওয়ার্ধার রাজকীয় প্রাসাদ ভারতীয় রাজপদের কিছু সূক্ষ্ম ঝলক আপনার কাছে পরিবেশন করে। এই প্রাসাদ ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৭ সালে নির্মিত হয়। এই প্রাসাদ এখন পর্যটক বাসস্থান হিসাবে কাজ করে। এর পাশাপাশি এই শহরে একটি রাধা কৃষ্ণ মন্দির আছে যা পর্যটক আকর্ষণের অন্য আরেকটি উৎস। ভোরমদেব মান্ডাওয়া মহল এবং মদন মঞ্জরী মহল কাওয়ার্ধার অন্যান্য দর্শনযোগ্য স্থান।

    চিত্রকূট জলপ্রপাত


  • শ্রেণী : প্রকৃতি
  • এই অশ্বখুরাকৃতি জলপ্রপাতের উচ্চতা হল ১০০ ফুট। এই জলপ্রপাতের কোণে আপনি বহু সুন্দর পাখি দেখতে পাবেন যা এই স্থানে সৌন্দর্য যোগ করে। এই জলপ্রপাত দ্বারা সৃষ্ট শব্দ এতটাই তীব্র যে এর পাশে সৃষ্ট অন্য কোন আওয়াজ শোনা প্রায় অসম্ভব। এই জলপ্রপাত বর্ষাকালে অত্যন্ত সুন্দর দেখায় যখন মাটি ক্ষয়ের কারণে জলের রং বাদামী বর্ণ লাভ করে।

    কাঁকের


  • শ্রেণী : প্রকৃতি
  • এই হাজার বছর পুরানো শহরে দর্শকদের পরিতৃপ্তির জন্য বহু চমকপ্রদ অরণ্য,জলপ্রপাত এবং নিদারূণ আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। কাঁকেরের প্রাসাদটিতে এখনও এই এলাকার রাজকীয় পরিবাররা বসবাস করেন। এই প্রাসাদ ছত্তীসগঢ় শহর পরিদর্শন করতে আসা বহু সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

    ভোরমদেব


  • শ্রেণী : প্রকৃতি
  • এর সুন্দর খোদাইকৃত প্রেমমূলক ভাস্কর্যের কারণে অনেকেই একে ‘ছত্তীসগঢ়ের খাজুরাহো’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই মন্দির নগর শৈলী অনুসরণ করে মত নির্মিত হয়েছে। এই মন্দিরের শিব লিঙ্গ স্থাপত্যের এক চমত্কার অংশ। এই মন্দিরের বহিঃস্থ প্রাচীর ৫৪ রকমের বিভিন্ন প্রেমমূলক ভঙ্গির ভাস্কর্য দ্বারা অলংকৃত।

    চম্পারণ


  • শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • চম্পারণ শহর ঋষি বল্লবাচার্যের জন্মস্থান ছিল। প্রত্যেক বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এই সম্মানিত ঋষির জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান পালিত হয়। এটা এমন এক উপলক্ষ যা বহু সংখ্যক মানুষদের ঘনসন্নিবেশের সাক্ষী বহন করে। এছাড়াও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক মেলা এই স্থানে বহু দর্শকদের আকর্ষণ করে।

    বাস্তার


  • শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • এই নিখুঁত আদিবাসী ভূমি বন্যপ্রাণী প্রেমীদের জলপ্রপাত সহ বন, বন্য প্রাণী, সুপ্রাচীন মন্দির, আদিবাসী নাচ এবং গান অন্বেষণ করার জন্য এক বন্য আমন্ত্রণ জানায়। এটি দেশের এক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ বান্ধব -পর্যটন গন্তব্যস্থল। বাস্তার একদা ভারতের এক বৃহত্তম জেলার ছিল।

    শিবরিনারায়ণ


  • শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • এই স্থান রামায়ণের পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। এই স্থানের নামটি শাবরি নামক একজন মহিলার নাম থেকে গৃহীত, যিনি নির্বাসনে থাকাকালীন প্রভু রাম এবং তার স্ত্রী সীতাকে সেবা করেছিলেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দশম ও একাদশ শতকের মন্দিরটি পুরীর প্রভু জগন্নাথের মন্দিরের চেয়ে আরও বেশী পবিত্র। শিবরিনারায়ণের নর নারায়ণ মন্দিরের দেয়ালে হিন্দু পুরাণের উপর বহু চিত্র নির্মিত আছে। এখানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক উত্সব সারা দেশ থেকে বহু সংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করে।

    ইন্দ্রাবতি জাতীয় উদ্যান


  • শ্রেণী : বন্যপ্রাণী
  • ইন্দ্রাবতি জাতীয় উদ্যান ছত্তীসগঢ় রাজ্যের একমাত্র ব্যাঘ্র সংরক্ষন হিসাবে দাবী রাখে। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন। এর পাশাপাশি এই রাজ্য ৩-টি জাতীয় উদ্যান এবং ১১-টি অভয়ারণ্যের অধিকারী। এদের মধ্যে, কাঙ্গের ঘাটি জাতীয় উদ্যান এবং আচানকমার অভয়ারণ্য ছত্তীসগঢ়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। কিছু লুপ্তপ্রায় প্রজাতি এখানে দেখা যায় যেমন বুনো মহিষ এবং পাহাড়ি ময়না।

    ছত্তীসগঢ়-এ কেনাকাটা

    ছত্তীসগঢ়ে কেনাকাটা একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ছত্তীসগঢ়ের উপজাতিরা বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্প তৈরীতে আশ্চর্যজনকভাবে দক্ষ। এই ধরনের হস্তশিল্প ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে এবং সেগুলি হল নিদারুণ সৌখিন শো-পিস, উপহার ও ব্যবহারিক সামগ্রী। তাই এই আকর্ষণীয় হস্তশিল্পের কেনাকাটা ছত্তীসগঢ় পরিদর্শন করতে আসা যারা পর্যটকদের জন্য একটি অনিবার্য কার্যকলাপ।

    ছত্তীসগঢ়ের কিছু জনপ্রিয় কেনাকাটার জিনিস –

    • কাষ্ঠ খোদাই এবং বাঁশের কারুশিল্প।
    • ধাতব ঘণ্টা।
    • পেটা লোহার জিনিস।
    • পোড়ামাটি।
    • পাথরের-ভাস্কর্য।
    • সুতির বস্ত্র।

    এই রকম কারিগরি দক্ষতা ভারত তথা বিশ্বে সত্যিই এক অসাধারণ দৃশ্য। আপনি ছত্তীসগঢ়ে কেনাকাটা করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যেতে পারেন।

    ছত্তীসগঢ়ে কেনাকাটা করার জন্য অগণিত সরকারি এম্পোরিয়া ও ব্যাক্তিগত দোকান রয়েছে।

    * সর্বশেষ সংযোজন : ১২ - ই আগস্ট, ২০১৫