সূখনা লেক, চন্ডীগড়
সূখনা লেক বা সূখনা হ্রদ হল হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এক মনুষ্য-সৃষ্ট লেক বা সরোবর। এটি মরশুমি জল প্রবাহের দরুণ এক মহিমান্বিত সৌম্য আকার পায়। সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচের অধিকাংশই চন্ডীগড় প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পরিচালিত হয়। পর্যটকেরা এখানে বিভিন্ন কার্যকলাপ উপভোগ করতে পারেন; যেমন – বোটিং (নৌকা-বিহার), রোয়িং, কায়াকিং, ওয়্যাটার স্ক্যায়িং, স্যেলিং ও স্কালিং। শীত ঋতু এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি; যেমন সায়বেরীয় হাঁস, ক্রেন, সারস ইত্যাদি পাখিদের আগমনকে সূচিত করে।
ইতিহাস ও সংস্কৃতি
সূখনা লেক হল ভারত সরকারের দ্বারা সংরক্ষিত একটি জাতীয় জলাভূমি। এটি একটি বৃহৎ মনুষ্য-সৃষ্ট সরোবর। এটি চন্ডীগড়ের সবচেয়ে এক অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিশিষ্ট স্থান। লেকটি, মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার লে কোরবিউস্যয়র এবং পি.এল.ভার্মা-র উদ্ভাবনী ছিল। শিবালিক পর্বতশ্রেণীর একটি স্রোত রয়েছে যেটি সূখনা চোই নামে অভিহিত এক মরশুমি জলপ্রবাহ। এই স্রোতটি বিভাজিত হয়ে সূখনা লেকের সৃষ্টি করেছে।
এই সরোবরটি একটি প্রিয় পর্যটন স্থল। লেকের তীরভূমি বৃক্ষ ও গাছপালা দ্বারা বিভূষিত রয়েছে। এটি পদচারণা ও অবসর সময়ে পায়চারি করার জন্য এক আদর্শ জায়গা। এখানে প্রচুর গাছপালা রয়েছে যা এই ভূমিকে বিভূষিত করে রেখেছে, এটি অনেক পাখির জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে যা এই সরোবরটিকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছে। বহু বিদেশী পাখি পরিযাণের নিবৃত্তি হিসাবে এই স্থানটিকে ব্যবহার করে। সুন্দর-সুন্দর পাখি; যেমন – বারবেট, কোকিল, টিয়া, হর্নবিল, হুপো, ঘুঘু ইত্যাদি পাখিরা এই স্থানটিতে ব্যাপৃত রয়েছে। পক্ষী দর্শণার্থীদের জন্য সারা বছর ব্যাপী এটি একটি আদর্শ স্থান।
এখানকার সুন্দর দৃশ্য, এটিকে এক বিনোদনমূলক কেন্দ্র হিসাবে পরিবেশিত করে। বিভিন্ন ধরনের ওয়্যাটার স্পোর্টস (জল সম্বন্ধীয় ক্রীড়া); যেমন – স্যেলিং, উইন্ড সার্ফিং, রোয়িং এবং অন্যান্য অনেক কিছুই এখানে খেলতে ও উপভোগ করতে পারেন। ভালো জলাশয়যুক্ত ভূমিটি এক ঘন গাছপালা সমৃদ্ধ এলাকা যা চাষের সাথে জড়িত মানুষদের দ্বারা এটি অতি ব্যস্ততার সঙ্গে ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকে। যখন পদচারণকারী ও জোগার্সেরা সমৃদ্ধিসহকারে সকালের সুবাসিত তাজা হাওয়া উপভোগ করেন তখন শিশুরা লেকের সান্নিধ্যে উন্মুক্ত স্থানে খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকে। সন্ধ্যাবেলায় এই স্থান পর্যটকদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং ছোট ছোট দোকানগুলি, এখানে ঘোরাফেরা করতে আসা মানুষগুলির কাছে তাদের দ্রব্য বিক্রি করার চেষ্টাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
সময়সীমা
সূখনা লেক সারা সপ্তাহ ব্যাপী ভোর ৫.০০-টা. থেকে রাত ৯.০০-টা. পর্যন্ত খোলা থাকে। বোটিং বা নৌকা-বিহারের সুবিধা কেবলমাত্র সন্ধ্যা ৬.০০-টা. পর্যন্ত পেতে পারেন। সন্ধ্যার সময় এই স্থানটি নিয়মিত রূপে লোকজনে ভরে ওঠে। যদিও, ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় হল সকালবেলা। বিশেষ করে গ্রীষ্মের চরম প্রখরের দিনগুলিতে এই লেকটিকে সাময়িক অস্থায়ী রূপে এক শুষ্কতা সহ্য করতে হয়।
অবস্থান
হিমালয়ের শিবালিক পর্বত মালার পাদদেশে অবস্থিত এই লেক বা সরোবরটি ১৯৫৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপ্ত, এটি এক সুবিশাল জমির উপর বিস্তৃত রয়েছে। এটি চন্ডীগড়ের সেক্টর – ১ অবস্থিত।
পৌঁছনোর উপায়
বিমান, সড়ক ও রেল মাধ্যমে চন্ডীগড় সমস্ত প্রধান শহরগুলির সাথে সুসংযুক্ত রয়েছে। শহরের কেন্দ্র থেকে বিমানবন্দরটি প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনার চন্ডীগড়ে পৌঁছানোর জন্য প্রায় সমস্ত প্রধান মেট্রো শহরগুলি থেকে সুপারফাস্ট ট্রেনও উপলব্ধ রয়েছে। এই লেকটিতে যাতায়াতের আরোও সুবিধা উপলব্ধ করার জন্য শহরের প্রশাসন দ্বারা বিভিন্ন বিলাসবহুল বাস ও পরিবহন বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। লেকটির কাছাকাছি ট্রাফিক খুব নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সূখনা লেকে পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে উঠেছে। সরোবরটিতে সর্বদা কোলাহল মুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শহরের প্রশাসনের পরিবহন দপ্তর দ্বারা এই পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। সড়ক পরিবহন আরোও সহজসাধ্য ও দ্রুততর করার লক্ষ্যে মহাসড়ক নির্মাণকার্য চালু করা হয়েছে।
থাকার জায়গা
সূখনা লেকের নির্দিষ্ট কিছু হোটেল থেকে সরোবরটির একটি ভালো দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, এখানকার সান্নিধ্যে নিছক উপস্থিতির মাধ্যমে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়। হোটেল বেল্লা ভিস্তা চন্ডীগড়, এই লেক থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। এটিতে বিভিন্ন গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রিমিয়াম, কাবানা, পুল স্যূট ও বেল্যা ভিস্তা উপলব্ধ রয়েছে। একটি সুবিধাপূর্ণ জায়গায় হোটেল সিটি প্লাজাও রয়েছে। এটি সূখনা লেক ও রক গার্ডেনের খুবই সান্নিধ্যে অবস্থিত, একটি ২ তারা হোটেল। এই সরোবরটির নিকটবর্তী অন্যান্য হোটেলগুলির মধ্যে রয়েছে দ্য পেলিক্যান এবং হোটেল প্রেসিডেন্ট।
এই লেকটিতে হাঁটাচলার রাস্তা থেকে কফি শপ্ সমস্ত কিছুই রয়েছে। এই সরোবরটির নিজস্ব ক্লাব রয়েছে। লেকটিতে একটি বড় স্ক্রিন রয়েছে, যেটিতে এমনকি ক্রিকেট ম্যাচও প্রদর্শন করানো হয়। রাস্তাটি জগিং-এর চেয়ে হাঁটাচলার জন্য আদর্শ। এই স্থানটির এবং এমনকি এর চারপাশেরও শান্তি সমানভাবে রক্ষা করা হয়। এটির দক্ষিণদিকে অবস্থিত গল্ফ কোর্স এবং পশ্চিমদিকে রক গার্ডেনের উপস্থিতি, সরোবরটির নিস্তব্ধতাকে বৃদ্ধি করেছে। এই সরোবরটির সান্নিধ্যে কোলাহলের মাধ্যমে প্রাকৃতিক শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য এখানে মোটর চালিত বোট বা নৌকা নিষিদ্ধ ছিল। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যময় এমন একটি স্থান যেখানে শিল্পীরা তাঁদের অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
* সর্বশেষ সংযোজন : ২ - রা জুন, ২০১৫