চন্ডীগড়ের রক গার্ডেন

Rock Garden of Chandigarh in Bengali

রক গার্ডেন, চন্ডীগড়

চন্ডীগড়ে বিশাল সংখ্যক প্রসিদ্ধ বেসরকারী এবং সরকারী বিদ্যালয় রয়েছে। প্রকৃত শিক্ষা বিদ্যালয় স্তর থেকেই শুরু হয়।

ভারতবর্ষ তার অনন্য প্রকৃতি এবং মনুষ্য-সৃষ্ট আকর্ষণীয় স্থানগুলির জন্য সু-পরিচিত যা পর্যটন অর্থনীতির অবদানে এক প্রধান ভূমিকা পালন করে। বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জনকারী কয়েকটি স্থানের মধ্যে রয়েছে তাজমহল, লালকেল্লা, দ্য কেভ্ এবং দক্ষিণ ভারতের মন্দিরসমূহ ইত্যাদি। এই ধরনেরই একটি অনন্য স্থান চন্ডীগড়ের রক গার্ডেন্,যা শুধুমাত্র দেশের এক বিশাল সংখ্যক মানুষকে আকর্ষণ করে না, এমনকি বিশ্বের সমস্ত দর্শকদের আকৃষ্ট করে।

চন্ডীগড় রক গার্ডেন্ হল সুন্দর ভাস্কর্য্য ও আশ্চর্য্যজনক সৃজনশীলতা যুক্ত এক বিস্ময়কর স্থান যেগুলির রূপান্তরণে শিল্পকর্ম হিসাবে বর্জ্য পদার্থকে বিবেচিত করা হয়। এটি ভিন্ন জগতে ভ্রমণের ন্যায় যেখানে সমস্ত কিছুই মানুষের হাতের তৈরী এক কল্পনাপ্রসূত এবং এই বাগান সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হল যে সরকারের দ্বারা হস্তান্তকরণের পূর্বে কেবলমাত্র একজন ব্যাক্তির উৎকৃষ্টতায় এটি নির্মিত হয়েছিল। যদি কেউ খোলা হাওয়ার প্রাদুর্ভাবে ভ্রমণের জন্য কোনও স্থান খোঁজে ও কিছু সময় কাটাতে চায়, তাহলে রক গার্ডেন হল কার্যকর স্থান।

এখানে অবস্থান ও থাকার জায়গা সহ রক গার্ডেনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর একটি সহজ ভ্রমণ উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।

সম্পর্কে

চন্ডীগড়ের জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণগুলির মধ্যে রক গার্ডেনে প্রতিদিন গড়ে ৫০০০-জন ভ্রমণার্থী ভ্রমণ করতে আসে। রক গার্ডেন্ হল একটি ভাস্কর্য-সমন্বিত বাগান, এই বাগানটির নির্মাতা নেক চাঁদের নামানুসারে এটি নেক চাঁদ রক গার্ডেন্ নামেও সু-পরিচিত। নেক চাঁদ একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন যিনি এই বাগানটিকে সখ হিসাবে শুরু করেছিলেন। তবে, এটি শুরুর সময় থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি দর্শক সহ একটি প্রধান পর্যটন স্থলে পরিণত হয়েছিল। এটি শহরের এক অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পর্যটন আকর্ষণ এবং তার অপরিমেয় ও অনন্য ভাস্কর্য সমস্ত পৃথিবী থেকে আগত জনগণের মনোযোগকে আকর্ষণ করে।

ইতিহাস

১৯৫৭ সালে নেক চাঁদ এই বাগানটি, অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ ও বর্জিতাংশ দ্বারা নির্মাণ করেছিলেন। ইনি তার অবসর সময়ে এই সমস্ত পদার্থকে কাজে লাগিয়ে সুখনা লেকের ঘাটের মধ্যে একটি ঐশ্বরিক রাজত্বের পুনঃনির্মাণ করেন। যদিও এটিকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল, নেক চাঁদ ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এটির নির্মাণ অব্যাহত রেখেছিলেন। যখন তিনি এটির উদ্ঘাটন করেন এবং বাগানটির সক্রিয়তার সমর্থনে জনগণের জমায়েত শুরু হয়, সেইসময় সরকার এই বাগানটিকে হস্তান্তর করে নেয়। এটি ভাস্কর্য ও আন্তঃ-সংযুক্ত প্রাঙ্গন সহ প্রায় ১২ একর এলাকা জুড়ে বেড়ে উঠেছিল। নেক চাঁদ তার একক-হস্তে প্রচেষ্টার দরুণ সরব প্রশংসা অর্জন করেন এবং তাঁকে উপ-বিভাগীয় প্রাকৌশলিক (ইঞ্জিনীয়ার)-এর অবৈতনিক বা সম্মানীয় শিরোণামে ভূষিত করা হয়। তিনি বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অব্যাহত রাখেন।

স্থাপত্য

দ্য রক গার্ডেনের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এটি সম্পূর্ণরূপে বর্জ্য পদার্থ, গার্হস্থ্য বর্জ্য পদার্থ, শিল্পের বর্জিত পদার্থকে পুর্নব্যবহার ও অন্যান্য বর্জিতাংশের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। নেক চাঁদ সরকারের সহায়তায় ছেঁড়া-টুকরো জামাকাপড় ও সেরামিক (মাটির যাবতীয় জিনিষ) সংগ্রহের জন্য কেন্দ্র স্থাপিত করেন, এগুলিই পরে ব্যবহার করে তিনি বাগানের মধ্যে বিভিন্ন মিনার, মূর্তি এবং ভাস্কর্য নির্মাণ করতে থাকেন। সাম্প্রতিককালে এই রক গার্ডেনটি প্রায় চল্লিশ একর এলাকা জুড়ে আচ্ছাদিত রয়েছে। দ্য রক গার্ডেন হল শাখাবিহীন গতিপথ ও আন্তঃ সংযুক্ত পথ সহ এক গোলক-ধাঁধার ন্যায় নির্মাণ। অর্থাৎ, কেউ যদি সমস্ত প্রদর্শনী দেখতে চান তাহলে তাকে সতর্ক ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। যে কেউ সহজেই পথের দিক হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং যেহেতু দুই দিক দিয়ে তার গতিপথ রয়েছে তাই অনেক প্রদর্শন দেখা থেকে আপনি বঞ্চিত থেকে যেতে পারেন। যে কেউ অবশ্যই নিশ্চিত করে নিন যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যান এবং বেরোনোর সময় অন্য পথ দিয়ে বেরিয়ে আসুন।

সময়

রক গার্ডেনে ঘুরতে যাওয়ার স্থানীয় সময় হল সকাল ৯:০০-টা থেকে সন্ধ্যা ৬:০০-টা পর্যন্ত, গ্রী্মকালে এই সময় বাড়ানো হয়।

অবস্থান

এটি চন্ডীগড় জেলায় ক্যাপিটল কমপ্লেক্স ও সুখনা লেকের মধ্যবর্তী স্থানে সেক্টর-১ অবস্থিত।

পৌঁছানোর উপায়

বিমান বা রেলের মাধ্যমে চন্ডীগড়ে পৌছানো যেতে পারে। এখানে বিমানবন্দর বা রেলওয়ে স্টেশন বা স্থানীয় বাস, গাড়ির দ্বারা খুব সহজেই পৌঁছানো যায়।

থাকার জায়গা

এখানে থাকার জন্য নিকটবর্তী কিছু জায়গা হল হোটেল সিটি প্লাজা ৭, হোটেল দ্য বেল্লা ভিস্তা, হোটেল হোয়াইট প্যালেস, দ্য পেলিক্যান্, হোটেল প্রেসিডেন্ট এবং আরোও অনেক।

রক গার্ডেন এমন একটি জায়গায় অবস্থিত যেখানে পৌঁছানো সুবিধাজনক এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনেক স্থানীয় আকর্ষণ রয়েছে; যেমন – সুখনা লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন্ এবং অন্যান্য আরোও অনেক কিছু। এখানকার নিকটবর্তী স্থানে কেনাকাটা ও খাওয়ার জায়গাও রয়েছে। সুতরাং, পরবর্তীকালে আপনি চন্ডীগড় সফরের পরিকল্পনা করলে, আপনার দর্শনীয় স্থানের তালিকায় এই প্রসিদ্ধ নেক চাঁদের রক গার্ডেনকে সংযু্ক্ত করার কথা অবশ্যই স্মরণে রাখবেন।

* সর্বশেষ সংযোজন : ১ - লা জুন, ২০১৫